সাম্প্রদায়িক ঘৃণার বিষয়টা আর ভাল লাগছে না। এই ধরনের একটা করে ঘটনা ঘটবে, আর পাল্লা ভারি হবে চরমপন্থীদের। পাল্লা ভারি হবে চরমপন্থীদের সমর্থকের। সহজাত ভালবাসায় ভরা প্রতিবেশী মুহূর্তে পরিণত হবে তীব্র তীক্ষ্ণ ঘৃণার পাত্রে। এইযে প্রধান শিক্ষক, তার ওই ক্লাসের কয়টা ছাত্রছাত্রী তাকে শ্রদ্ধা করে, ভালবাসে এখনো?
বাচ্চার পেটে ঘুষি মারা। তাও আবার শুনতে না পাবার বা জবাব না দেয়ার অপরাধে। একাধিক। এরপর তাকে এন্টাসিড আর প্যারাসিটামল জোর করে খাওয়ানো। বাসায় যেতে চাইবার পরও না দেয়া। জোর করে ধরে রাখা। এরপর ক্লাসে এসে বিনা কারণে এমন উগ্র সাম্প্রদায়িক উক্তি!
শুধু বাচ্চাকে মারা এবং তাকে জোর করে অষুধ খাওয়ানো ও শেষে তাকে আটকে রাখা এই তিনটার যে কোনও একটা অভিযোগ প্রমাণিত হলেই ইউরোপ আমেরিকায় তার জেল তো হতই, শিক্ষক পেশাও নিষিদ্ধ হতো তার জন্য।
উগ্র সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ণ কথা একা বলা এক কথা। পুরো ক্লাসের উদ্দেশ্যে বলা অন্য কথা। আল্লাহর পাক নাপাকির কথা নাহয় পরে আনা যাবে। আল্লাহ্ আছে না নাই সেই খবরই যে জানে না আল্লাহর পাক নাপাকির কথা তার কাছ থেকে ধর্তব্য না।
তার ছাত্ররা আছে এটা একটা কংক্রিট ফ্যাক্ট। সে এই ছাত্র-ছাত্রীদের চূড়ান্ত অভিভাবক এবং মডেল এটাও একটা কংক্রিট ফ্যাক্ট।
শিশু কিশোরদের, নিজ ছাত্রদের নাপাক জানার মত তীব্র ঘৃণা ও বিতৃষ্ণার উৎসটা কোথায়?
অ্যাত্তো ঘৃণা নিয়ে একজন শিক্ষক কী শিখাবেন এবং তার ছাত্রদের কী যত্ন নিবেন?
আল্লাহকে নিয়ে বললে তো আল্লাহর কিছু যাবেও না, আসবেও না। কিন্তু এই ক্লাস টেনের ছেলেমেয়েগুলো কী যে ট্রমা নিয়ে বড় হবে! ঘৃণার বটবৃক্ষ সাম্প্রদায়িকতার চূড়ান্ত আগুন এদের ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়া হল।
যারা শিক্ষক বনাম ধর্ম দ্বন্দ্বে পড়বে তারা পড়বে ট্রমায়।
যারা এই দ্বন্দ্ব পদদলিত করে ধর্মের বিষয়ে স্থির থাকবে তারা পড়বে ঘৃণায়। এই ছেলেমেয়েগুলো হয়তো মডারেট মুসলিম হতো, কিন্তু ঘৃণা-উৎসারক মুসলিমে পরিণত করার জন্য তাদের সম্মানিত প্রধান অভিভাবকই যথেষ্ট ছিলেন।
বি. দ্র.
ওসমান ফ্যামিলির মত ধুরন্ধর পরিবার খোদ্ নারায়ণগঞ্জেও কম আছে। বিশেষ করে সেলিম ওসমানের ব্রেন তো চলে না, বুলডোজার চলে। সে মামলা-মোকদ্দমা এবং কোপাকুপি হামলা সবকিছু এক মিনিটের বৈঠকের মধ্যে শেষ করে দিয়েছে।
বি. দ্র.-২
স্যারের অপমানে কান ধরে উঠবস করে করে সেলফি দিয়ে সারা অনলাইন সয়লাব।
'সে একজন হেডস্যার। সে যা ভাল বোঝে তোমাদের বলছে।' কথাটা বলেছিলেন সেখানে উপস্থিত আরেক শিক্ষক। স্যার তার পুরো ক্লাসের ছাত্রদের অস্তিত্বগতভাবে অপবিত্র জানাটাকে ভাল মনে করেন। আমরা সেই স্যারকে ডিফেন্ড করাকে ভাল মনে করছি।
আরে বাবা স্যারের পরিচয় কাদের সাপেক্ষে? ছাত্রছাত্রীদের সাপেক্ষে। তাদের অভিভাবকত্বে, প্রদর্শনে। শিক্ষক সম্মানিত কারণ তিনি শিশু কিশোরদের আলোকিত করেন। আর কোনও কারণে না।
যে শিক্ষক শিশু কিশোরদের অপূরণীয় ট্রমার মধ্যে ফেলে, তাও আবার ক্লাস জুড়ে শিক্ষার্থীদের, তাকে শিক্ষকতার ক্ষেত্রে বিবেচনা করে সম্মান করা আর পরিমলের জন্য জাঙ্গিয়া পরে পোজ দেয়ার মধ্যে কোনও তফাত নেই এটা কি খুব বেশি অস্পষ্ট এবং উচ্চতর কথা হয়ে গেল?
যে তার ক্লাসের সমস্ত কিশোর ও শিশুকে অস্তিত্বগতভাবে অপবিত্র জানে সেই শিক্ষকের জন্য যে কানে ধরে উঠবোস করে ফেবুতে পোস্ট দেয় তার অস্তিত্বের প্রতি করুণার বাইরে কিছু হয় না।
শিক্ষক পদবীর কথা তার মনে আছে, শিক্ষক কী কারণে শিক্ষক সেটা মনে নাই।