একটা সূক্ষ্ণ সিঙ্কিঙ হোক। আমরা পিসি ব্যবহার করি, বিভিন্ন ব্রান্ডের নাম ভাঙাই। এইচপি, কোর আই ফাইভ, সেভেন, আট গিগা রেম... কিন্তু কম্পিউটার স্লো থাকে আর মনে করি আসলে এটা স্লো থাকারই ছিল। ভুল।
রীতিমত গ্যাঁট হয়ে বসে ছিলাম সিক্সথ জেনারেশনের প্রসেসরের জন্য। আমি মোটামুটি কম্পিউটার হার্ডওয়্যারের ফ্রিক, সেইসাথে সফটওয়্যার ভার্শনেরও। হুদাই। পনের বছরেও ওই অভ্যাসটা গেল না।
সিক্সথ জেনারেশন একটা ব্রেকথ্রু নিয়ে এসেছে। পিসি কিনতে গেলে কেন কিনবেন, কী কিনবেন, কীভাবে আপগ্রেড করবেন, বাজেটের সাথে কীভাবে মানাবেন এই নিয়ে একটু টালবাহানা হোক।
প্রথমত, পিসি আপনার কেন দরকার? আমরা সাধারণত এটা ক্লিয়ারলি জানি না, কারণ টেক-স্পেক নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় আমাদের নেই। তাহলে সোজা চলে আসুন সাবজেক্টে। বাংলা আলাপ, আপনাকে যত পরিচিত "দোকানদার" ই হোক না কেন, টেক-স্পেক ঠিকমত জানাবে না। কারণ, তার সেই সময় নেই। এমনকি, সে নিজেও অতটা জানে না, সেল করে।
তাই নিজের জন্য সঠিক পিসিটা নিতে গেলে এইসব প্রশ্ন দিয়ে বোঝা সম্ভব- যেন বাজেট ও পারফরম্যান্সে একটা ভারসাম্য আসে।
হাজার হাজার টাকা দামের প্রশ্ন:
ভারি গেইম কি আদৌ খেলবেন?
ভিডিও এডিটিঙ বা রেন্ডার দেয়ার মত জগদ্দল পাথর চাপাবেন মেশিনের ঘাড়ে?
আপনার কি ল্যাপটপ আসলেই দরকার?
নাকি বড়জোর ফটোশপ-ইলাস্ট্রেটর অটোক্যাড ডকফাইল ইত্যাদি?
ল্যাপটপ বিষয়ক:
ল্যাপি হল ফক্কিকার। নিয়ে ঘুরতেও কিন্তু বেশিদিন ভাল লাগবে না। কারোই লাগে না। একমাস গেলেই ভারি লাগে। ল্যাপটপের কোর আই ফাইভে যে পারফরম্যান্স পাবেন, তারচে বেশি পাবেন ডেস্কটপের ডুয়াল কোরে, যদি উভয়ই সিক্সথ জেনারেশন হয়। তবু। কারণ, ল্যাপটপের হার্ড ডিস্কগুলো হয় ৫৪০০ আরপিএম। অপরদিকে ডেস্কটপ যে নিবে সে তো অবশ্যই ৭০০০+ আরপিএম হার্ডডিস্ক নিবে। যত ডাটা প্রসেস হবে সব হাড্ডি থেকে হবে। তাই হাড্ডি ভাল গতির চাই। এরপর আসুন রেমের গতিতে। ল্যাপের রেমের গতি কখনোই ডেস্কটপের রেমের গতির সমান হয় না। ল্যাপের রেমের পিনও কখনো ডেস্কের রেমের ফিজিক্যাল পিনের সমান হয় না, আর ফিজিক্যাল পিন ম্যাটার্স। ল্যাপে গালভরা আট গিগা চার গিগা রেম থাকে। কিন্তু ডেস্কে আপনি একই সময়ে একই ব্র্যান্ডের একই মডেলের দুটা একই রেম লাগাবেন। পিন হয়ে যাবে ডবল। মানে, চার গিগা রেম শুনতে ভাল। আরো ভাল, যদি দুই গিগার দুটা হয়। এতে ফিজিক্যালি ডাটা বেশি এক্সেস করে। এরপর আসুন খোদ্ প্রসেসরে, প্রসেসর ডেস্কেও কোর আই আর লেপেও। কিন্তু গতিতে আকাশ পাতাল ফারাক। ক্যাশ মেমোরিতেও। তার বাইরে ল্যাপের মাদারবোর্ড বা মেইনবোর্ড দুর্বল। সবচে বড় কথা, ল্যাপ কখোনাই টার্বো মোডে যাবার জিনিস না।
ল্যাপ আমি অপছন্দ করি আরো কয়েকটা বিশেষ কারণে, স্ক্রিন বড় হওয়ার মধ্যে চোখের একটা ব্যাপার আছে। কম্পিউটার ফ্রিকদের চোখ সুস্থ রাখা দরকার। লাখ টাকা দিয়ে মেশিন কিনে ভেন্টিলেটরের দিকে কেন চেয়ে থাকব? মনিটরের নামে দরজা লাগিয়ে দিব। আরেকটা বড় বিষয়, না আপগ্রেড করা যায়, না আপগ্রেড করলে তা কাজে আসে। নষ্ট হলে ঠিক করা যায় না। ঠিক করলে ঠিক থাকে না।
সবচে বড় অসুবিধা, ব্যাটারির অস্বাস্থ্যকরতা। কিন্তু ক্যান্সারদায়ী রেডিয়েশনকে এই স্মার্টফোনের যুগে কে কেয়ার করে?
সিক্সথ জেন ডেস্কটপ:
বাজেট ডেস্ক:
পয়সা কম? কৌশল করুন। কিনে ফেলুন প্রসেসরের মধ্যে এইটা- Click This Link হাজার পাঁচেক টাকা দিয়ে। রেম কিনুন একটা। চার গিগ। অবশ্যই ২১০০ বাস স্পিডের। নো ১,৬০০; নো ১৩৩৩।
মাদারবোর্ড তো গিগাবাইটেরটা ভাল। পৌনে ছয় থেকে সাড়ে ছয় হাজারের একটা কিনে ফেলুন।
মনিটর এট লিস্ট সাড়ে আঠারো ইঞ্চি। হাজার সাতেকে পাওয়া যায়।
কেসিং দেড় হাজারি না কিনে দুই আড়াই হাজারি কেনা ভাল। এটা একটু দেখেশুনে।
কিবোর্ড মাউস অবশ্যই এফোরটেক। কী যে শান্তি এইটায় বলার মত না।
হুদাহুদি অপটিক্যাল ড্রাইভ না কিনে পেনড্রাইভ বরং বেশি দাম দিয়ে চৌষট্টি গিগ কিনে ফেলুন। এই যুগে কে সিডি ডিভিডি দেখে? আমার শয়ে শয়ে সিডি ডিভিডি পড়ে আছে, ধরার সময় পাই না। কেউ পায় না। খালি পোর্টেবল হার্ড ড্রাইভ থেকে কপি করে আর চলতে থাকে।
ইউপিএসটা কিন্তু কেনা উচিত।
কোন সাউন্ড কার্ড, ভিডিও কার্ড বা গ্রাফিক্স কার্ড লাগে না। এমনকি ফটোশপ ইলাস্ট্রেটর অটোক্যাড বা সাধারণ ভিডিও এডিটর রেন্ডার সফটগুলোতেও লাগে না। এগুলো এখন সুপার লাইট সব ভার্শন এসেছে।
একটা কথা ক্লিয়ার, প্রফেশনাল কাজের গ্রাফিক্স কার্ড আর গেম খেলার গ্রাফিক্স কার্ড আকাশ পাতাল তফাত। পয়সা যা ফেলার তা গেমের পেছনেই ফেলা হবে।
আমি মনে করি পয়সা খরচ করা উচিত হার্ড ডিস্কে। এক টেরার নিচে নয়। স্পিড ওইযে সাত হাজার প্লাস আরপিএম। তিন টেরা হলেও চলে, যদি বাজেট থাকে। দুনিয়ার যেখানে যা পাবেন সব ডাম্প করবেন মেশিনে। জীবনেও খুলে দেখা হবে না। তাও শান্তি।
সুবিধা:
পরে যখন আপগ্রেড করতে ইচ্ছা করবে, বিক্রয় ডটকমে সেল দিয়ে দিবেন প্রসেসর আর রেমটাও। এরপর ঠান্ডা মাথায় দুইটা চার গিগের একই মডেলের একই ক্ষমতার রেম কিনবেন ২১০০ বাসের। সেইসাথে একটা কোর আই থ্রি বা ফাইভ। ও কাজ করলে নিজের কম্পিউটারকে মনে হবে সুপার কম্পিউটার।
তবে সত্যিকার সুপার কম্পিউটার চাইলে::
দেশ থেকে না। অতি দাম। প্রয়োজনে সেকেন্ড হ্যান্ড হোক। বাইরে থেকে আনিয়ে নিবেন একটা স্যামসঙ বা ইন্টেলের সলিড স্টেট ড্রাইভ। অন্য কারোটা না। আর অবশ্যই সেটা ৫০০ গিগার রেঞ্জে হতে হবে। আড়াইশো না। আড়াইশোর ফিজিক্যাল ক্ষমতা কম। রিড স্পিড কম। রাইট স্পিডও কম। এসএসডির মূল বিষয় হল স্পিড। ভাব না। তাই স্পিড পেতে চাইলে কমপক্ষে আধ টেরা বা এক টেরা নিতে হবে। আর মডেলটা প্রো সিরিজ হলে ভাল, না হলেও ক্ষতি নেই, রিড আর রাইট স্পিড দেখে নিতে হবে।
সেক্ষেত্রে আরো ভাল দুদ্দাড় মেশিনের জন্য শুরুতেই কোর আই সেভেন বা ফাইভ নিয়ে, দুই তিন স্লটে প্রতিটা ২৪০০ বাস স্পিডের একই রেম নিয়ে, ছোটখাট গ্রাফিক্স কার্ড নিয়ে, ভাল একটা পাওয়ার সাপ্লাই নেয়া উচিত। মনিটর বাইশ ইঞ্চি বা বড়।
সব বাজেট কাভার্ড। এম্নিতে সূক্ষ্ণভাবে জিনিসটাকে মিলিয়ে নিলে আমরা কোর আই থ্রি আলগাতে পারব না।
হাপ্পি কম্পিউটিঙ। যন্ত্রমানব, এগিয়ে যান।