আজকে ভোরে জানতে পারি বিষয়টা। সাথে সাথে পুরো দৃশ্যপট স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
এটা কোন বিচ্ছিন্ন আক্রমণ নয়। কোন ক্রুদ্ধ আক্রমণও নয়। এটা স্রেফ এবং স্রেফ রাজনৈতিক পটে একটা ট্রাম্পকার্ডের চাল।
যে রাজনীতির বলি এবারের সংঘাতে শতাধিক মানুষ, যে রাজনীতির বলি পুড়ে মরা গণপিটুনিতে মরা বন্দুকযুদ্ধে মরা সাধারণ অথবা অপরাধী মানুষগুলো, সেই রাজনীতিরই প্রবল ধারাবাহিকতার একটা বুদ্ধিবৃত্তিক পদক্ষেপ অভিজিৎ রায় হত্যা।
বাংলাদেশের জনমত ইতোমধ্যে 'নাস্তিক' ইসুতে একদিকে টলে আছে। এখনকার রাজনীতির সংঘাতটা একটা বিশেষ জায়গায় এসে থেমেছে। এই সময়ে ইসুর বড় অভাব চলছিল। সেটা পুষে গেল অভিজিতকে হত্যার মাধ্যমে।
এখন দিশাহারা মানুষকে একটা দিশা দেয়া যাবে। আওয়ামীলীগ যেমন কিছু দিশা দিয়েছে- বিরোধীরা মানুষ পুড়ে মারে, তাই বিরোধীরা খারাপ। তেমনি এবার অন্তরালে থাকা অপশক্তি পুরনো রোল নতুন করে তুলতে পারবে যা তারা চাঙা করেই রেখেছিল শাহবাগ আন্দোলনকে সফলভাবে ডাইভার্ট করার সময়। নাস্তিক রোল। অভিজিৎ নাস্তিক তাতে তো কোন সন্দেহ নেই। এর ওপর তার ব্লগ মুক্তমনা নাস্তিকতার চাষাবাদের ক্ষেত্র, এও জানা কথা। মুক্তমনাতে যারা ব্লগ করে, তারা বিভিন্ন জায়গায় মহামহিম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা করেছে, তাও তো সত্য। মুক্তমনাতেও একেবারে কম হয়নি।
ব্যক্তিগতভাবে আমি অভিজিৎ রায়ের লেখাও ঠিকমত পড়িনি। কারণ, তার প্লাটফর্ম খুবই স্পষ্টভাবে রাসূল দ.'র অবমাননা করে এবং যারা করে, তাদেরকে খুবই বাহবা দেয়। সে নিজে কতটা কী করেছে তাও জানি না। ব্যক্তি নিয়ে পড়ে থাকার কোন মানে নেই- এ হল আমার দর্শন। ফলে কে কী করে না করে সেটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি বাধ্য না হলে করি না।
হ্যা, সরকার-বিরোধী এই দুই শক্তির মধ্যে ছায়াযুদ্ধ যখন প্রকট, তখন তাতে নাস্তিক ইসু ঢালতে পারলে লাভ কতটুকু, তা জামাতি শক্তি ইতোমধ্যেই জানে। নব্বইয়ের দশকে যখনি জামাতি রাজাকারগুলোর জন্য বাংলাদেশের মানুষ সোচ্চার হয়েছিল, তখনি 'নাস্তিক' 'নাস্তিক' সোরগোল তুলে তসলিমাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে তসলিমাবিরোধী নাস্তিক বিরোধী আন্দোলন করে রাজাকার বিরোধী আন্দোলনকে মাটির সাথে সফলভাবে মিশিয়ে দেয়া গিয়েছিল।
আবার সেই একই নাটকের তীব্র পুনরাবৃত্তি দেখেছি আমরা শাহবাগ আন্দোলনের সময়। প্রকৃতার্থেই বাংলাদেশের সব ধরনের মানুষ একত্র হয়ে একটা আন্দোলন চালালো, আর মাত্র শয়েরও কম 'নাস্তিক' এর কথা তুলে, এক প্রকৃত রাসূল দ.'র প্রতি বিদ্বেষী ও মনোবিকারগ্রস্ত নাস্তিককে হত্যা করে পুরো আন্দোলনকে একেবারে হেয়প্রতিপণ্ন করে দেয়া হল।
এবারো জামাতের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নিয়ে আন্দোলন চলছে, আমি এটাকে শুধু জামাতি দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখি। কেননা, বিম্পি-আমিলীগ কোনটাই আমার কাছে কোন অর্থ বহন করে না। আবারো জামাতি কোন না কোন রাজাকার নেতার ফাঁসির ক্ষেত্র প্রস্তুত হচ্ছে। সরকার ও বিরোধী শত্রুতা একটা চরমে অবস্থান করছে। যে কোন একটা ফলাফলের দিকে পৌছে যাবে বিষয়টা- এমন সময়ে আবারো একজন 'নাস্তিক' হত্যার মাধ্যমে পুরো দেশের মধ্যে গণ-অসন্তোষ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করা হল।
অভিজিতকে হত্যা করা একটা স্টেপমাত্র।
এবার অভিজিতের নামে এমন ব্লগ পাওয়া যাবে, যার লেখা প্রকৃতপক্ষে অভিজিতের, কিন্তু মালিকানা তার নয়। এবার কিছু পত্রিকায় তার লেখা ও তার প্লাটফর্মে অন্যদের লেখার কোটেশন আসবে। সেসব অসংখ্যবার শেয়ার হবে, রিপিট হবে। একেবারে গ্রামবাংলার সবচে পিছিয়ে পড়া মানুষটা, যে মুজিব-জিয়া ছাড়া বা হাসিনা-খালেদা ছাড়া আর কোন 'ন্যাশনাল ফিগার' এর নাম জানে না, সে-ও অভিজিৎ রায়ের নাম জানবে। জানানো হবে।
আর এগুলো সবই থার্ড পার্টি, ফোর্থ পার্টি মিশন, যার গোড়া ধরা প্রায় কখনোই সম্ভব নয়।
ওই মানুষগুলো স্বত:স্ফূর্তভাবে যেন সরকার পতনের আন্দোলনে যুক্ত হয়, তা তৃণমূলে নিশ্চিত করার সার্বিক প্রচেষ্টা করা হবে।
শুধু সূর্য চন্দ্র শীত আর গ্রীষ্ম ঘুরে ঘুরে আসে না, সবই ঘুরে ঘুরে আসে, আমাদের সচেতন মন সেগুলোকে ধরতে পারে না, মনে করে আচমকা কোন ঘটনা বুঝি!
আমরা শুধু কল্পনাই করে যাই, জানতেও পারি না, যে আমাদের কল্পনাও পরিকল্পনার শিকার।