somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

FREEDOM FIGHTER এর সামনে আমি যুদ্ধপরাধী

০৭ ই অক্টোবর, ২০১০ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পিজির বিছানায় শুয়ে আছি... গত কয়েকদিন ধরে ভর্তি...
আশেপাশের দুই-একটা বেডের পেশেন্ট এর সাথে টুক-টাক পরিচয়...
আমার পাশের বিছানার যে চাচা...বেশ মজার মানুষ...আমার বেশ খোঁজ-খবর রাখে...
হস্পিটাল থেকে যে খাবার দাবার দেয়,(যথেষ্ট ভালো খাবার)আমি খুব একটা খাই না...
কেন খাইনা??? খাওয়া উচিত... আমার জন্য খাবার রাখা... বেশ কেয়ারিং...
আবার বেশ দাবীও খাটান... ফোন করার সময়,সরাসরি 'মোবাইলটা দাও'...
মোবাইলে না ঢুকলে,'০২ দিয়া এই নাম্বারটা দাও'...
আমিও দেই... কান্নাকাটি চলে... অভিমান চলে... অভিমান গপ্লে...

মাঝে মাঝে পাশে শুয়ে বকবক করতে থাকে...দেশটার কি হইসে... এইরকম তো হওয়ার কথা ছিলো না... আমি শুনে যাই... ঘুমাই... উঠি... ঘুমাই... চাচা ঘুমায়... চাচা উঠে... বকর বকর চলে...
দুনিয়ার অসুখ চাচার... হস্পিটালে ভর্তি হইসে ৩০ বারের বেশি...'৮৪ সাল থেকে...
ডিউটি ডাক্তাররা হিস্ট্রি নেয়... শুনতে শুনতে আমার মুখস্ত...
বর্তমান কেইস, 'লিভার সিরোসিস'... অবস্থা ভালোনা... টিকবেনা মনে হয়...

শুয়ে আছি একদিন,হটাৎ ওয়ার্ডে একটু হইচই... মোহোনা টিভি থেকে রিপোর্ট করতে আসছে...
আমার পাশের চাচা চিৎকার করছে... 'এদিকে...এদিকে... I am a freedom fighter...' রিপোর্টাররা আসলো... কতো কথা... তার সুবিধা-অসুবিধা... কেউ তারে অসুধ দেয় না... এই সেই কত কি... রিপোর্টার চলে যায়...
চাচা আমার দিকে তাকিয়ে হাসে... তৃপ্তির হাসি!!!

চলে আসবো...রিলিজ নিয়ে... চাচা বলে,তার নাকি মন খারাপ... আমকে স্বান্তনা দেয়...
তার অসুখ ভালো হয়ে যাবে... লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হবে... সরকার করে দিবে...
তবে সময় লাগবে... বছর খানেক... মুখে হাসি...

চাচার সাথে শেষ কথোপকথন...
চাচা যাই...
চাচাঃ (মলিন মুখে) যাওন নাই...আসি... /:)

ক্যাম্পাসের ঘটনা...
কলেজের মালী... অনেকদিন ধরে পিছনে ঘুরছে...
মেয়ের শরীরটা নাকি ভালোনা... তারে ভিটামিন দেওয়া লাগবে...
আমি ভিটামিন পাবো কই...ইন্টার্ণীর ভাইয়ারা ফ্রি ভিটামিন পায়...
মেজাজ খারাপ হয়ে যায়...বিরক্ত হই... সামনা সামনি কিছু বলতে পারিনা...
বেটাও পিছু ছাড়েনা...ধৈর্য্য কারে বলে... দেখা হইলেই, দাঁত বের করে হাসি...
'মামা...আনসেন???'
শেষ-মেষ মহা বিরক্ত হয়ে ৪৫ টাকা দিয়ে কিনলাম এক শিশি...

আজব ঘটনা...
এখন আর তারে খুইজ্জা পাইনা...তিন দিন ঘুরলাম...
নাম ও জানিনা... শেষে একজন জিজ্ঞেস করলো,কারে খুজেন,মামা???
মুক্তিযোদ্ধা রে???
আমি একটু অবাক!!! 'অইযে,আপনার কাসে অসুধ খোঁজে??? '
আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, হুমম...
হাত দিয়ে দেখায় দিল... অইযে... মুক্তিযোদ্ধা মামা,খালি গায়ে ঘাস কাটছে...
ক্যাম্পাসে মামার নাম ই মুক্তিযোদ্ধা...
আমি আস্তে আস্তে হেঁটে যাই... আরো আস্তে শিশিটা ওনার হাতে দেই...
আরো আস্তে... ধীরে ধীরে রুমে ফিরি...

মুক্তিযুদ্ধ দেখিনাই...
খুব বেশী মুক্তিযোদ্ধা ও দেখিনাই...
আমাদের দেশের মানুষজনরে বলতে শুনি...মানুষজন কেন...আমরাই বলি...
দেশের কি অবস্থা...কি পাইলাম...কি পাচ্ছি...
একটা জিনিশ মনে হয়...
১৬ বছর বয়সের যে মুক্তিযোদ্ধাটা মরে গেছে,যুদ্ধ করতে গিয়ে... ও কি পাইসে???
ওতো মরেই গেসে... কিসের জন্য মরসে????
যুদ্ধটা আসলে শেষ হয়নাই... প্যাটার্ন টা চেইঞ্জ হইসে...
but চলছে... এখনের যোদ্ধা আমরা...
আমাদের আগের প্রজন্ম,যুদ্ধ করে দেশটারে স্বাধীন করে গেছে...আমাদের কাজ দেশটারে গড়া...

যুদ্ধটা যদি ঠিকমত না করি... এখন যেমন আমরা বিচার করছি 'যুদ্ধাপরাধীদের'...
একটা সময় আসবে... আমাদের ও বিচার হবে... 'যুদ্ধাপরাধী' হিসেবেই...
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১০ ভোর ৬:৪২
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি অবিশ্বাস্য ঘটনা

লিখেছেন জুয়েল তাজিম, ২৮ শে মে, ২০২৫ সকাল ৯:৩৫

লিবিয়ায় এক হজযাত্রীর ঘটনা আমাদের আবারও মনে করিয়ে দিল—"আল্লাহর হুকুম ছাড়া কোনো কিছুই হয় না!"
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা:
একজন হজযাত্রী পাসপোর্ট জটিলতায় আটকে যান, ফলে তাকে ছাড়াই বিমান উড়াল দেয়। তিনি কেঁদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত: ব্ল্যাক হর্স নাকি তুরুপের তাস?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৮ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:০৫



বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনকাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর যুদ্ধাপরাধ থেকে মুক্তি, এনসিপির সঙ্গে গোপন সম্পর্ক ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক—সব মিলিয়ে কী ইঙ্গিত দিচ্ছে?


বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বড়শি

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৮ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:৩৭


পুকুরে গোছল করা একদম নিষেধ ছিল আমার। কানের অসুখ,তাই গোছলের সময় তুলার ভেতর সামান্য নারিকেল তেল ভিজিয়ে নিয়ে দুই কানে সিপি দিয়ে গোছল করতে হতো। সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের পাঁঠারা দুধ দেবে, বীজ দেবে, গাভী-ছাগীদের চাকরি খাবে!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৮ শে মে, ২০২৫ রাত ৯:১২


গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া আর জয়পুরহাট - তিন জেলার তিন পাঁঠা মিলে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাতে এক নতুন বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। এই পাঁঠারা শুধু প্রজননেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এখন দুধ দিচ্ছে, এমনকি গাইবান্ধার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনাদের মতামত জানতে চাই।

লিখেছেন কাল্পনিক_ভালোবাসা, ২৮ শে মে, ২০২৫ রাত ১১:০২

প্রিয় ব্লগার,
আশা করি আপনারা ভালো আছেন।
বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে সামহোয়্যারইন ব্লগ শুধু একটি লেখার প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক ধরনের লেখালেখির মাধ্যমে সামাজিক সংলাপ তৈরির জায়গা—যেখানে গড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×