প্রতি বছর শীতকাল এলেই আমাদের আশপাশের জলাশয়, বিল, হাওড়, পুকুর ভরে যায় নানা রঙ বেরঙের নাম না জানা পাখিতে। এসব পাখিকে অতিথিপরায়ন বাঙালী আদর করে নাম দিয়েছে অতিথি পাখি।যাযাবর এই পাখিরা আমাদের দেশে শীতের ছুটি কাটাতে আসে।এই পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আমাদের দেশে হাজির হয় নিজেদের জীবন বাঁচাতে।আমরা যাকে অতিথি পাখি বলে চিনি, সেই পাখিকে ইংরেজিতে বলে মাইগ্রেটরি বার্ড (Migratory bird)। শুদ্ধ বাংলায় যার মানে দাঁড়ায় পরিযায়ী পাখি। অর্থাৎ যেসব পাখি বছরের নিদিষ্ট একটা সময় নিজের দেশ বা নিজের এলাকা ছেড়ে বিশেষ প্রয়োজনে অন্য কোন দেশে বা এলাকায় চলে যায় এবং কিছুদিন পর আবার নিজের এলাকায় ফিরে আসে তাদেরকেই সাধারত পরিযায়ি পাখি বলে।
এসব পাখিদের মধ্যে বাংলাদেশের অতি পরিচিতি অতিথি পাখি নর্দান পিনটেইল। এছাড়া স্বচ্ছ পানির বালি হাঁস, খয়রা চকাচকি, কার্লিউ, বুনো হাঁস (widgeon), ছোট সারস পাখি (egret), বড় সারস পাখি, হেরন (heron), নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি (great crested grebe), কাদাখোঁচা (snipe), গায়ক রেন পাখি (wrens), রাজসরালি, টিকিহাঁস, পাতিকুট, খরচা চকাচকি, মরচে রঙভুতিহাঁস, কালামাথা, গাঙচিল, সরালি, কালোকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুবেলার, কমন পোচার্ড, বিলুপ্ত প্রায় প্যালাস ফিস ঈগল (বুলুয়া) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও নানা রং আর কন্ঠ বৈচিত্রের পাখিদের মধ্যে রয়েছে ধুসর ও গোলাপী রাজহাঁস, বালি হাঁস, লেঞ্জা, চিতি, সরালি, পাতিহাঁস, বুটিহাঁস, বৈকাল, নীলশীর পিয়াং, চীনা, পান্তামুখি, রাঙ্গামুড়ি, কালোহাঁস, রাজহাঁস, পেড়িভুতি, চখাচখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতিবাটান, কমনচিল, কটনচিল প্রভৃতি।
পরিযায়ি পাখিরা আমাদের অতিথি। হাজার হাজার মাইল দুরের দেশ থেকে একটু আশ্রয়ের জন্য চলে আসে আমাদের দেশে। কিন্তু কিছু নিষ্ঠুর লোক এসব পাখিকে শিকার করছে অর্থের লোভে বা নিছক শিকারের আনন্দে। এদের আবার ‘সৌখিন শিকারী’ গালভরা নামে ডাকা হয়। তবে শুধু সৌখিন শিকারীরাই নয় অনেক পেশাদার শিকারীরা অতিথি পাখিদের যত্রতত্র শিকার করে টাকার লোভে। আপনারাই বলেন অতিথিদের সাথে কি কেউ এরকম অমানবিক আচরণ করে?
তবে খুশির কথা এসব সৌখিন শিকারীদের ঠেকাতে সরকারী পর্যায়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ইতোমধ্যে হাকালুকি হাওরের ৫টি বিল দহবিল, হাল্লা-জল্লা, হারামডিঙা, নাগোয়া-লবিরই ও চাতলা বিলকে অতিথি পাখির অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে।রাথমিক পর্যায়ে চাতলা ও দহবিলে হিজল, করচ, বরুন, মাটনা, আড়াং, মুর্তাসহ জলাভূমির উপযোগী বিভিন্ন উদ্ভিদের ডাল পোতা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে বাকি ৩টি বিলে পাকা খুঁটি বসিয়ে তার ওপর জারুল কাঠের তৈরি অতিথি পাখির কৃত্রিম বাসস্থান নির্মাণ করা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১২:১০