মাটিতে দাগ দিয়ে একটা নদী আঁকলাম। খুব সরু একটা নদী, কিন্তু কি যে তার ঢেউ! আর এমনই উতলা, এমনই অস্থির যে এখনি সব কিছু ভাসায়ে নিয়ে যাবে পৃথিবীর ঐ পারে। আর এই পারে ছোট্ট একটা মেয়ে একা একা খুব ভয় পাচ্ছে। ও ভেবেই পাচ্ছে না কিভাবে এই তুমুল নদী পার হবে। তখনি সন্ধ্যা দূর থেকে আগায়ে আসতে শুরু করলো আর চরম হতাশা ওকে চারপাশ থেকে শক্ত করে ধরে ফেললো। শেষে সন্ধ্যা এসে ওকে ছুঁয়ে ফেললো, আর ও মুছে যেতে লাগলো আঁধারে। ঠিক তখনি শুয়ে পড়া সূর্যটা শেষবারের মতো একবার ফিক করে করে হেসে উঠলো, তাতেই ছবির ভেতর থেকে একটা আলো ফুটে উঠলো সবখানে। ঐ পারের সব কিছুই তখন চোখের সামনে পষ্ট হয়ে গেল। বড় বড় ইটের ভাঁটার পাইপ থেকে অনবরত ধোঁয়া বের হচ্ছে, আর পুরা আকাশটা ঢেকে ফেলছে সেই ধোঁয়া।
আর দূরে বড় বড় বাড়িঘর, ফ্যাক্টরি, রাস্তা-ঘাট। সূর্যের শেষ আলোটা সেই বাড়িঘরের কাচে আছড়ে পড়ে তীর হয়ে চারিদিকে ছুটে আসলো। তার একটা তীর এসে বিঁধলো সেই ছোট্ট মেয়েটার বুকে। সে ঢলে পড়লো নরোম একটা লাল আলোর উপর। আকাশে তখন ভীষণ ঝড় শুরু হলো, যত নীল আর লাল রঙ ছিল সবই ঢলে পড়লো ছবিতে, নীল আর লাল মিলে গাঢ় আঁধার ঘনায়ে আসলো পুরা ছবিতে। আঁধারে ঢেকে গেল নদীটা, ঢেকে গেল ইটের ভাঁটাগুলা, উঁচু উঁচু বাড়িঘর। আর সেই ছোট্ট মেয়েটাও আঁধারে নিভে গেল। শুধু যে সূর্যের তীরটা বিঁধেছিল মেয়েটার বুকে সেটাই শুধু জ্বলতে লাগলো জ্বলজ্বল।
তারপর অনেক দিন হয়ে গেল। শেষে একটা শক্ত ফ্রেম দিয়ে ছবিটাকে দেয়ালে টাঙানো হলো। সব কিছুই সবাই খুব কাছ থেকে দেখলো। সব কিছুই যা যা আঁকা হয়ে ছিল ছবিতে। সেই উত্তাল নদীটা, ইটের ভাঁটাগুলা, বাড়িঘর, ধোঁয়া, ফ্যাক্টরি, রাস্তা-ঘাট, ঝড়, সূর্য সব। আর ঐ ছোট্ট মেয়েটাকেও অনেক সুন্দর দেখাচ্ছিল সেখানে, খুব কোমল একটা হাসির আভা ফুটেছিল ওর সারা মুখে। শুধু সেই তীরটা কেউই দেখতেই পেলো না, কারো চোখেই সেটা পড়লো না, যে তীরটা বিঁধেছিল সেই ছোট্ট মেয়েটার বুকে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১