কুষ্টিয়ায় স্মৃতি নামের ৮ বছরের বাচ্চাটি তরমুজ খেয়ে মায়ের বুক খালি করে দিয়ে পরপারে চলে গেছে । আশংকা জনক অবস্থায় আছে শিশু অনিক । পরিবারের আর সব সদস্যরাও অসুস্থ ।
উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বেড় কালোয়ায় গ্রামে আসকার আলীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। নিহত স্মৃতি আসকার আলীর মেয়ে। অসুস্থ সবাইকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরে আসকারের ছেলে অনিককে সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
হাসপাতালে চিকিত্সাধীন আসকার আলী প্রথম আলোকে জানান, ঢাকায় তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করেন তিনি। গত শুক্রবার রাতে ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে তিনি কুমারখালী রেলগেট বাজার থেকে ২০০ টাকা দিয়ে বড় আকারের তরমুজ কিনে বাড়ি যান।
শনিবার সকাল নয়টার দিকে তাঁর স্ত্রী ওই তরমুজ কেটে ছেলেমেয়েসহ বাড়ির অন্যদের দেন। বিকেলের দিকে কয়েকজনের পেট ও মাথাব্যথা দেখা দেয়। রাতের দিকে সবার বমি হতে থাকে। অবস্থা খারাপ দেখে আজ সকালে এলাকাবাসী তাঁদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিত্সক আবুল হাসনাত বলেন, খাদ্যে বিষক্রিয়ায় এক শিশু মারা গেছে। ভর্তি হওয়া কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে সবাইকে চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, তরমুজটি কোনো রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ছিল। এ কারণে বিষক্রিয়া হয়েছে।
প্রথম আলোর খবরের লিংক
অন্য খবরে এসেছে শিশু অনিক ও মারা গেছে । এখন বাকি ১৯ জন হাসপাতালে ভর্তি ।
এবার তরমুজ ,এর আগের বছর লিচু খেয়ে শিশু মারা গেছে ।প্রতিনিয়ত অধিক মুনাফার লোভে খাদ্যে বিষ মিশিয়ে চলেছে ব্যবসায়ীরা । শিশুরা সে বিষক্রিয়া সামাল দিতে না পেরে মৃত্যু মুখে পতিত হচ্ছে । মুরগীর মাংসে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক , মাছে রাসায়নিক । জনগণ কোন দিকে যাবে ?
প্রতিদিন টিভিতে দেখাচ্ছে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে এবার দেশে । তাও কেন বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানোর প্রয়োজন পড়লো ? ব্যবসায়ীদের আর কত লাভ দরকার ?
গর্ভবতী মায়েরা যখন জিজ্ঞেস করে , কি কি ফল খেতে পারবো বলে দেন ?
খুব ইতস্তত অবস্থায় পড়ে যেতে হয় । আসলে সে কি খাবে ? ইচ্ছে করে , আড়তদার দের জিজ্ঞেস করি আপনারা কোন খাবারে বিষ মিশান না কান্ডলি একটু যদি বলেন ? এই মা আর তার শরীরের ভিতর বেড়ে ওঠা শিশুটির জন্য মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস দরকার । আল্লাহর দেয়া শ্রেষ্ঠ নেয়ামত এই ফলফলালীর মধ্যে আছে তা । কিন্তু টাকা দিয়ে এগুলি খাওয়া আর বিষ খাওয়া একই । চোখের সামনে নিজের গাছের ফল ছাড়া আর কোন ফলমূল নাই যা সে খেতে পারে । সবগুলোতে বিষ মেশানো ।
আর এ গুলো থেকে হয় মারাত্মক জটিলতা । গর্ভপাত , পানি ভেঙ্গে যাওয়া , শিশু পেটে মারা যাওয়া .অপরিণত শিশু . শিশুর শ্বাসকষ্ট .বিকলাঙ্গ শিশু , মানসিক প্রতিবন্ধি ।
এ সব সিজনাল ফলমূল আম, জাম , কাঁঠাল , কলা , লিচু , পেঁপে তে রয়েছে পুষ্টি উপাদান যা বুদ্ধির বিকাশ আর শক্তির উৎস । সচেতন পরিবার শিশুদের এ গুলি দিচ্ছেনা । বিশ্বনন্দিত ক্রিকেটার “ সাকিব আল হাসান “ ও তার সাক্ষাতকারে বলেছেন যেগুলো খেলে শক্তি পাব তাও খেতে পারিনা , সব জায়গায় ফরমালিন । কিভাবে ভাল খেলবে আমাদের ছেলেরা ?
বাংলাদেশ সরকারের সাথে জনগণের সম্পর্ককে রুপায়ন করতে গেলে বলতে হয়
‘ সর্প হয়ে দংশন করো
ওঝা হয়ে ঝাড় “
একদিকে রয়েছে এসব বিষের সহজলভ্যতা । অন্যদিকে
কয়েকদিন পর পর মোবাইল কোর্ট বের হয় , খাদ্যে বিষ সনাক্ত করে । তারপর নষ্ট করা হয় ফলমূল গুলো ।
জানিনা , ফরমালিন মেডিকেল কলেজ আর হাসপাতাল ছাড়া আর কারো কোন কাজে লাগে কিনা । কিভাবে ফরমালিন ব্যবসায়ীদের হাতে যায় , সে টা না বের করে কিছু ফলমূল ডেস্ট্রয় করাটা জনগণের সাথে প্রহসন ছাড়া আর কিছু মনে হয়না ।
উৎপাদন আর বিপণন এর সাথে জড়িত এটা বের করে এগুলো নির্মূল করা কেন সম্ভব হচ্ছেনা , এটা এক বিস্ময় । ফরমালিন , কার্বাইড , ইথিলিন ও আরও কত কি যে তারা মেশায় তারাই ভাল জানে ।
এ সমস্ত রাসায়নিক শরীরের কিডনি বের করে দিতে পারেনা । বরং আস্তে আস্তে কিডনিই বিকল হয়ে যাচ্ছে । দেশে ক্রনিক রেনাল ফেইলুর এর রোগী ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে । ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে । ডায়াবেটিস বাড়ছে ।
দেশের স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ এ ব্যপারে কামনা করছি । মাননীয় প্রধান মন্ত্রী আপনি ও একজন মা , একজন নানী , দাদী । চোখের সামনে বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে গেলে কেমন লাগে আপনি জানেন । নিষ্ঠুর বিবেকহীন এ ব্যবসায়ীদের হাত হতে আপনি জনগণকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসুন । আজ আমরা বড় অসহায় আর জিম্মি । ছাড়াছাড়া ভাবে দেয়া জেল , জরিমানা , মোবাইল কোর্ট যেহেতু এ ভয়াবহ অপরাধ রুখতে পারছেনা , এর জন্য আরও বড় ধরনের শাস্তি দিয়ে এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুন ।
- ডাঃ নার্গিস পারভীন