"একবার খালি MBBS টা পাশ করে নিই , রাস্তার সাইন বোর্ড ও আর পড়বনা ।" পড়ালেখার প্রতি অতিষ্ঠ ,ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে এ কথা যিনি বলেছিলেন তিনি ছিলেন আমাদের প্রিয় ও পরম শ্রদ্ধেয় ফিজিওলজির এমদাদ স্যার ।ছাত্র থাকতে এটাই তিনি পণ করেছিলেন । তাঁর এই বাণীটার জন্যই আমি তাঁকে পছন্দ করতাম । তাঁর যোগ্য ছাত্রী হয়ে আমি বলি ,"পোস্টগ্র্যাজুয়েশন টা হয়ে যাক রাস্তার সাইন বোর্ডও আর পড়ব না ।"
MBBS এর পর আরও পড়তে এসে অকালে জীবনের সব প্রাণ শক্তি ক্ষয় করে "কী ভুল আমি করেছি ভুলে " ।
মেডিকেলের স্টুডেন্টদের বদনাম আছে ,এরা হাটে মাঠে ঘাটে বাসে খালি পড়ে আর পড়ে । কয়েকদিন আগে আমিও ফজরের ওয়াক্তে ঘুম থেকে উঠে প্রায় ২০ কেজি বই কাঁধে নিয়ে , পানির বোতল , টিফিন বক্স নিয়ে ইউনিফরম ( এপ্রন) পরে স্কুল বাসে থুক্কু বি,আর,টি,সি বাসে চড়ে বসতাম । বাসে উঠে হয় ঘুমিয়ে গেছি অথবা অসপি পড়তে পড়তে গেছি ।হায়রে , পড়া আর পড়া ; জীবন শুধু পড়াময় ।
" এত পড় কেন ,নাপা ? " এইটা বলে ছিলেন একজন। ( আমার নামের বিকৃতি করে কইতেন তিনি )
" আমার রোগী কে আমার কাছ থেকে নিরাপদ রাখতে চাই । এই জন্যই পড়ি । "হাজার হলেও মানুষের জীবন নিয়ে কথা । অবসে তো আবার একজনের জীবন নয় দুজনের জীবনের ব্যাপার । মা আর গর্ভস্থ সন্তান
সে যাই হোক "সৃষ্টির সেবার মাধ্যমে স্রষ্টার সেবা " এই আশা নিয়ে মেডিকেলে পড়তে এসে আসল পড়াই পড়া হয়নি । পড়া হয়নি জীবন যাপনের বিজ্ঞান । তাই সেদিকে চরম ভাবে ফেইল করেছি ।
রবি গুরুর বাণী আছে ," যাহাকে আমি রাখিয়াছি পিছে সে আমাকে টানিয়াছে পিছে ।" আমি সেই মানুষ যার সম্পর্কে ডাঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহও একটা কথা বলে গেছেন ।
আমি মণ , মণ (৪০ কেজিতে ১ মণ ) বই এর পৃষ্ঠা বড় উলটিয়েছি , জানিনা জ্ঞান কতটুকু অর্জিত হয়েছে , সময় পাইনি কুরানের অর্থ পড়ার , বুখারী পড়ার , মুসলিম পড়ার । হাদিস গ্রন্থ গুলোর নামই আমি জানতাম না । নিজের কম্পিউটার হওয়ার পর(২০১০এর শেষের দিকে ) বুখারী শরীফ ডাউন লোড করেছি ,তাও পড়ে শেষ করতে পারিনি । ধর্মীয় জ্ঞান বলতে স্কুল লাইফের ইসলামিয়াত বিষয়ে যা ছিল সে পর্যন্ত স্থির হয়ে ছিল । তয় স্কুল লাইফে আমি খুব আঁতেল ছিলাম । তাই ঐ টুকু ভাল মত পড়া ছিল ।
আমি হলাম ডিজুস জেনারেশনের প্রতিনিধি । আমাদের আসলে কোন বিষয়ে ডীপ জ্ঞান নাই ।সবই ভাসা ভাসা জ্ঞান । তবে অনেক ভাব নিয়ে চলি যেন আমিই সব জান্তা ।
একটা কথা বলা যায় জন্ম সূত্রে আমি মুসলিম আছিলাম । তবে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি বেশী দিন হয়নি । ধর্ম বিষয়ে আমি স্বশিক্ষিত । হুজুরদের কথা বেশীর ভাগ সময়ে আমার পছন্দ হয়না , তাই আমি ঠিক করেছি আমি নিজেই জানবো । যদিও আমি বেশিদূর আগাতে পারিনি । কারণ একটা খারাপ কাজ সহজে করা যায় , কারণ আযাযিল সাহেব ব্যাপক উৎসাহ দেয় ।
ভাল কাজ সে মোটেই করতে দিতে চায়না । যুদ্ধে বেশীর ভাগ সময় তার ই জয় হয় । নাকির ( আ: ) আমার গুনাহ খাতা লিখতেই থাকেন আর লিখতেই থাকেন ।
তো ধান ভানতে এই শিবের গীত গাওয়ার কারণ হল , আমার মত পাপী আর অল্পবিদ্যা ভয়ংকরীর পক্ষে ইসলামী পোস্ট দেয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত এটা আমার নিজের কাছে নিজেরই কিন্তু একটা প্রশ্ন ।
কুরআন কে বলা হয়েছে বিজ্ঞানময় কুরআন । অনেক কিছুই কিন্তু আমাদের বুঝে আসেনা । আমাদের বুঝে না এলেই সেটা মিথ্যা এরকম একটা গ্রুপ মনে করে ।আমিও মনে করতাম ।
আমিও কুরআন নিয়ে ব্যাপক সংশয়ে ছিলাম । তো কুরআনে একটা মাত্র আয়াত দেখে আমি ইসলাম গ্রহণ করি ,মানে হল এটা মেনে নিয়েছি আমার জ্ঞানের মধ্যে কমন পড়ুক আর না পড়ুক কুরআন আল্লাহর বাণী ।
আমার জ্ঞান খুব সীমিত । আমি যদি মেডিক্যালে না পড়তাম তাহলে এটা আমি ধরতে পারতাম না । তবু আমার আবিষ্কৃত কুরানের বিজ্ঞানময় অর্থ নিয়ে আজকের পোস্ট । তাহলে শুরু করি ? আপনাদের জানাই কোন সে আয়াত যা দেখে আমি মুসলিম হয়েছিলাম ।
কিছু গুহার অধিবাসীদের নিয়ে এই আয়াত। চারিদিকে বৈরী পরিস্থিতি তৈরী হওয়ায় কিছু যুবক গুহায় আশ্রয় নেয় আর আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে । আল্লাহর সাহায্য তারা পান ।
" আপনি কি গুহার অধিবাসী ও রাকিমের অধিবাসীদের আমার বিস্ময়কর নিদর্শন মনে করেন ?"( কাহফ ৯)
হ্যাঁ , আমি মনে করি । যুবকদেরকে লুকিয়ে রাখার জন্য সেই গুহায় ৩০৯ বছর ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয় । "অতঃপর তাদেরকে কয়েক বছর পর্যন্ত ঘুমন্ত অবস্থায় রাখলাম ।" (কাহফ ১১)
"তারা তাদের গুহায় ৩০৯ বছর পর্যন্ত অবস্থান করছিল' (কাহফ ২৫)
তো কি ঘটল সেখানে ? পাঠকের বোধগম্য করার জন্য এইবার এক ধরনের রোগীর চিকিৎসা পদ্ধতি বলি । আপনারা স্ট্রোকে প্যারালাইসিসের রোগী দেখে থাকবেন । এরা নিজেরা নড়তে চড়তে পারেন না । যদি একভাবে পড়ে থাকে তবে তাহলে প্রেশার পয়েন্টে ঘা হয়ে যায় । বেডসোর বলি আমরা সেই ঘা কে । এই বেড সোর প্রিভেন্ট করার জন্য পাশ ফিরিয়ে দিতে হয় । আর ঘণ্টায় ঘণ্টায় পার্শ্ব পরিবর্তন করতে হয় । দীর্ঘদিন মরার মত ঘুমিয়ে থাকলে ও একই কাহিনী । ৩০৯ বছর ঘুমিয়ে থাকলে তাদের ও বেডসোর হওয়ার সম্ভাবনা । কিন্তু তাদের হলনা । তাদেরকেও সাইড চেইঞ্জ করানো হত ।
কুরআনে এই সায়েন্টিফিক ব্যাপারটি যেদিন আমি প্রথম দেখেছি আমি চমকে গেছি ।
"অতঃপর তাদেরকে কয়েক বছর পর্যন্ত ঘুমন্ত অবস্থায় রাখলাম ।" (কাহফ ১১) "তারা তাদের গুহায় ৩০৯ বছর পর্যন্ত অবস্থান করছিল' (কাহফ ২৫)
" আর তাদের কে আমি পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম " (কাহাফ ১৮)
সাইড চেইঞ্জের বিষয়টির উল্লেখ দেখে আমি চমকে গেছি । যতবার দেখি ততবারই চমকে যাই । উহ , এত সুস্পষ্ট বিজ্ঞান ময় কুরআন । তারপরেতো আর অবিশ্বাস করা যায়না । বিষয়টি উল্লেখ করার কারণ ই হয়ত যেন চিকিতসক সমাজকে চিন্তার সুযোগ করে দেওয়া ।
জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কে যত টুকু বলা আছে সেটা আমি বুঝতে পারিনি ।"আর উদয় কালে সূর্যকে তাদের গুহা থেকে ডান দিকে হেলতে দেখবে আর যখন অস্ত যায় তখন তা বাম দিক দিয়ে অতিক্রম করে , অথচ তারা সে গুহার প্রশস্ত স্থানে থাকে । এটি আল্লাহর নিদর্শন । " (কাহাফ ১৭ )
এটা এন্টেনার উপর দিয়ে গেছে । তবে এন্টেনার উপর দিয়ে গেলেই যারা মনে করে সবই মিথ্যা আর সেটা তারা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে । ভালই লাগে তদের কে দেখলে জগতে আমার থেকে অবুঝ কেউ আছে এটা দেখে শান্তি পাই ।( শয়তানী হাসি )
আমি মনে করি বাতাস না দেখলেও বাতাস আছে । তেমনি যা বুঝতে পারছিনা কেউ না কেউ তা বুঝে ।
আর যে আয়াত দেখে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি তা দেখে অন্যরা গ্রহণ করবে এটা আমি মনে করিনা ।একই জিনিস দেখে কেউ হয়ত ঠিক পথে যায় আর কেউ হয়ত আরো বিপথে চলে যায় ।" তিনি এর দ্বারা অনেককেই বিপথগামী করেন এবং অনেককেই সৎ পথে পরিচালিত করেন । "(বাক্বারা/২৭) " আল্লাহ যাকে হেদায়েত দান করেন সে-ই হেদায়েত প্রাপ্ত হয় , যাকে তিনি বিপথগামী করেন , সে তার পথপ্রদর্শক অভিভাবক পাবেনা । " ( কাহাফ ১৮)
৩০থেকে ৪০ বছর বয়সটাই হয়ত এমন মন খোঁজ করে আধ্যাত্মিকতার। অনেককে হয়ত ভাল ভাবে আসতে বললে আসেনা , তাদের জন্য নানা রকম বিপদ আপদ দিতে হয় ।তারা হল ত্যাড়া গ্রুপ । আমিও ত্যাড়া গ্রুপের সদস্য । চরম বিপদ আপদে পড়ে আমিও প্রশান্তির খোঁজ করতে গেছিলাম ।
কিন্তু সবই সত্য জেনে ও আমার প্রতিদিনের অ ধঃপতন দেখে নিজেরই খারাপ লাগে । ডিজিটাল আমল নামা থাকলে বুঝে নিতাম কত টুকু পাপ পূণ্য অর্জন করেছি । হায়রে দীর্ঘশ্বাস শুধু। এ জীবন শুধু পরীক্ষা ক্ষেত্র । আর কিছু না । তাই চেষ্টা করে যাই ভাল থাকার ভাল রাখার ।
শুধু বলি " হে আমার রব ভুলগুলোর জন্য পাকড়াও করবেন না । হে রব ! আমাদের উপর বোঝা দিবেন না পূর্ববর্তীদের ন্যায় ; হে আমাদের রব ! ক্ষমতার বাইরে কোন গুরুভার আমাদের উপর দিবেন না । আমাদের পাপ মোচন করুন ,ক্ষমা করুন , দয়া করুন , আপনি ই আমাদের একমাত্র অভিভাবক । (বাক্বারা ২৮৭)
আমার সব পোস্টের টার্গেট পিপল থাকে শুধু একজন । ঘটা করে এই পোস্ট লিখা নিজেকে জাহির করা নয় , বরং জানানো যে একটা আয়াত আছে যা মেডিক্যাল সায়েন্স দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় । যারা সার্চ করে তাদেরকে হেল্প করা । একজন কেউ যদি পোস্ট বুঝতে পারে তাহলেই আমি ধন্য ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:১৮