মন বলছে, সোহাগী জাহান তনুকে নিয়ে লিখতে হবে। যদি না জেনে থাকেন এই সোহাগী জাহান তনু কে, তবে বলি- এই মেয়েটি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল। ছিল কেন? এখন নেই? না। মেয়েটিকে কুমিল্লা সেনানিবাস এলাকায় নির্মন নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। মেয়েটিকে পেছন থেকে আক্রমন করা হয়েছিল। টান দিয়ে মাথার চুল ছিড়ে ফেলা হয়েছিল, নাক বরাবর সজোরে ঘুষি মারা হয়েছিল ইত্যাদি ইত্যাদি আরও অনেক নির্যাতন করা হয়েছিল...।
আমার পরিচিত বান্ধবী বা ছোটবোন বা অন্য কোন নারী- যাকেই সামনে পাই, তাকেই গুরুজনের মত উপদেশ দেই সব কাজকর্ম যেন তারা সন্ধ্যের আগেই সেড়ে বাসায় চলে যায়। পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা দিনদিন কমে আসছে। মানুষের বদলে মানুষের পেট থেকে জন্ম নিচ্ছে জানোয়ার! নারী স্বাধীনতার সব বার্তা এখানে আটকে যায়। কেন ধর্ষকদের ভয়ে মেয়েদেরকে আমরা ঘরে লুকিয়ে রাখব? দেশে কি আইন-আদালত কিছুই নাই? এই সব ঘটনা দিনের পর দিন কেন বাড়ছে? বিচার না থাকলে কোন অপরাধীটা ভয় পায়?
খবর পেয়ে বাবা মেয়ের লাশ খুঁজতে গিয়ে প্রথমেই খুঁজে পান মেয়ের ছেড়া চুল, তারপর জুতা, আরেকটু দূরে মোবাইল… তারপর তনুর লাশ, বাবা চিৎকার করে ওঠেন- ‘মা, মা, মা, মা আমার…’।
বর্ণনাটা ভয়ানক। আরও ভয়ানক ব্যাপার হল, এমনটা আমাদের খুব কাছের মানুষের সাথেও হতে পারে। রাষ্ট্রযন্ত্র একেবারে বিকল হবার আগেই কিছু তেল মাখিয়ে সচল রাখা আমাদের দায়িত্ব। রাস্তায় মানববন্ধন করে বা সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ করে আমরা সেই তেলের যোগান দেই। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্রের চালক যদি নিশ্চুপ থাকে, তবে কতদিন আর তেল মেখে য্ন্ত্র ভালো রাখা যায়?
সেনানিবাসে কি করে এত বড় একটি অপরাধ ঘটল সে নিয়ে তো প্রশ্ন থেকেই যায়। তনুর বিভৎস মৃতদেহের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না। তাহলে ততোধিক বিভৎস ধর্ষক ও হত্যাকারীদের কি করে ধারণ করে এই সমাজ।
আপডেট (২৪/০৩/২০১৬)
মানুষের দাম কত? দাসপ্রথার যুগ আমরা বহু আগে পেছনে ফেলে এসেছি। তখন টাকা-কড়ি দিয়ে মানুষ কেনা-বেচা হত। এই খবর চোখে পড়ার পর মনে হল, সত্যিই কি দাসপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে? (খবরটি এইখানে)
খুনের পর অনেকগুলো ঘন্টা,মিনিট,সেকন্ড চলে গেছে। অপরাধী ধরা পড়েনি। এদেশে অপরাধ করে খুনীরা পালিয়ে যাবে, কখনও ধরা পড়বে না, কিছুদিন পর সবাই সবকিছু ভুলে যাবে- এই স্বাভাবিক।
তবে মাঝে মাঝে অস্বাভাবিক ঘটনাও ঘটে। ইয়াসমিন নামের এক দরিদ্র ঘরের মেয়েকে ১৯৯৫ সালে ধর্ষণের পর হত্যা করে কিছু পুলিশ। দিনাজপুরের মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। পুলিশের উদ্দাম গুলিতে সাধারণ মানুষ প্রাণ হারায়। তবুও দমে না তারা। পরাজিত হয় কথিত ক্ষমতাবান দুর্বৃত্তরূপী পুলিশেরা। তিনজনের ফাঁসি হয়।
এমন আরও একটি ঘটনা ঘটে গাইবান্ধায়। ২০০২ সালের কথা। তৃষা নামের এক কিশোরী বখাটেদের ভয়ে পালাতে গিয়ে জলে ডুবে মারা যায়। গাইবান্ধার মানুষ এক হয়ে ফেটে পড়ে প্রতিবাদে, ঠিক যেমন দেখিয়েছিল দিনাজপুরের জনগণ। মাত্র ৭৫ দিনের মাথায় তিন বখাটের মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। পরে অবশ্য সাজা কমিয়ে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছিল।
অর্থাৎ, দৃষ্টান্ত আছে। আমরা এক অভাগা সমাজব্যবস্থায় বাস করি, যেখানে অপরাধীদের বিচারের জন্য প্রবল আন্দোলনের প্রয়োজন হয়, পুলিশের গুলি খাওয়ার প্রয়োজন হয়। অপরাধী ধরার দায়িত্ব যেন প্রশাসনের না, সব দায়িত্ব যেন জনগণের।
২০ হাজার টাকা, একখন্ড খাস জমি- এগুলো দিয়ে কি এই নিরাপত্তাটুকু আসবে যে দুদিন পরে আবারও ধর্ষণ হবে না? ধর্ষণর প্রতিরোধের অস্ত্র কি অপরাধীদের মৃত্যুদন্ড নয়? বারবার করে কেন মুখ লূকায় প্রশাসন, কেন বারবার ২০ হাজার টাকায় ভোলাতে চায় আমাদের?
সুখের কথা, মানুষ রাস্তায় আছে, প্রতিবাদের ভাষাটুকু মানুষের আজও বেঁচে আছে। প্রশাসন যদি আবারও পালাতে চায়, তবে হোক না আরেকবার ১৯৯৫ বা ২০০২ এর পুনরাবৃত্তি, ক্ষতি আছে কি?
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:২১