ছোটবেলায় আমার পাড়ায় একবার চোর ধরা পড়েছিল। মহিলা চোর। তাও আবার দিনের বেলা
সেই মহিলাকে বাঁধা হল। বকাবকি করা হল।
হঠাৎ করে পেছন থেকে একজন এসে সেই চোর মহিলায় পায়ে শক্ত খড়ি দিয়ে সজোরে আঘাত করল।
মহিলাটির পা ফেটে গেল। গলগল করে রক্ত বেরিয়ে এল।
মহিলার বিভৎস চিৎকার আমি সহ্য করতে পারলাম না। দৌড়ে বাসায় গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। সে রাতে আমার ভালোমত ঘুম হয়নি।
একবার স্টেশনে একটি কিশোর চোর ধরা পড়ল। রাজনের মতই বয়স। আমার ঠিক এই বয়সের একটি ভাই আছে। তাই এই বয়সের কোন ছেলেকে দেখলে আমার নিজের ভাইয়ের কথা মনে পড়ে।
যাই হোক, স্টেশনে সেই কিশোর চোরটিকে সবাই মিলে ধরল। যে যার ইচ্ছেমত পেটালো। ছেলেটির ঠোঁট ফেটে রক্ত পড়ছিল। আমি বললাম, ছেড়ে দ্যান ভাই, মরে যাবে তো। উত্তরে আমাকে জানালো, এরা প্রতিদিন চুরি করে ধরা খায়। প্রতিদিনই মার খায়। মার খেলে এদের কিছুই হয় না।
আমি বললাম, মার খেলে যখন কিছুই হয় না তখন মারছেন কেন? আপনারা ওকে পুলিশে দেন।
আমার কথা কেউ শুনল না। ছেলেটাকে আরও কিছুক্ষণ ধরে বুড়ো বুড়ো সব মানুষগুলো মনের খুশিতে পেটালো। এত মার আমিই সহ্য করতে পারব না। ওইটুকু ছেলে কি করে সহ্য করল কে জানে।
গত বুধবার সিলেটের কুমারগঞ্জ বাসস্টান্ডে রাজন নামের একটি ১৩ বছরের ছেলেকে চুরির দায়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। লাশ গুম করার চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হত্যাকারীরা তা পারেনি।
বাংলাদেশে হরহামেশাই চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়া কিশোররা এমন মার খেয়ে থাকে। কিন্তু মারতে মারতে মেরে ফেলার ঘটনা আগে ঘটেছে কি না জানা নেই। তবে ভিডিওচিত্র ধারন করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়া, হত্যাকারীদের নির্মম বিদ্রুপ, জল চাইলে ঘাম খেতে বলা- এমনটা তো আগে কখনও হয়নি। মানুষ কবে থেকে এত জানোয়ার হতে শুরু করল?
আইনের ব্যাপারে আমার জ্ঞান কম। তবে এটুকু জানি যে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হতে পারে, আবার হত্যা ও গুমের অভিযোগও আনা যেতে পারে হত্যাকারীদের উপর। কিন্তু রাজনের বাবা-মা দু’জনেই দারিদ্র্যসীমার অনেক নিচে বেঁচে থাকা মানুষ। প্রভাবশালীদের ভয়ের কাছে তাদের প্রতিবাদ কতদিন থাকবে, এটা অনেক বড় প্রশ্ন।
ছবিগুলো পত্রিকা এবং ফেইসবুকের একটি ইভেন্ট থেকে নেয়া।
ভিডিও লিংকটি দেয়া ঠিক হচ্ছে কি না জানি না। তারপরও দিলাম।
বাংলাদেশের শিশুরা কোন বাস্তবতায় চোর হয়ে ওঠে, অপরাধী হয়ে ওঠে- সেটা আমরা সবাই জানি। শিশুদের অপরাধ প্রবণতা কমানেোর বিষয়গুলো এখানে আলোচনা করার কোন উপায় নেই। পাশবিকতার বিপরীতে আলোচনা চলে না, চলে প্রতিবাদ, চলে উপযুক্ত শাস্তি।
প্রতিবারের মত এবারও অপরাধীরা চিহ্নিত। আমরা দেখতে চাই, অপরাধীরা ধরা পড়েছে। তাদের শাস্তি হয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় চাওয়াটা হয়ত বেশি, কিন্তু হাতে আর বিকল্প কোন পথও নেই। ১৩ বছরের একটি কিশোরকে দিনের আলোতে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা কোন ভাবেই মানা যায় না।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:২৯