আগের কিস্তিটা পরে যোগ করে দেব।
এবারের ২য় কিস্তিতে প্রাচীন জাপানের ইয়াইওই সময়কাল নিয়ে বলব।
ইয়াইওই সময়কালঃ
জমনের পরই এর শুরু। এটা জাপানের ইতিহাসের লৌহ যুগ। ঐতিহাসিকভাবে এই সময়কালকে ধরা হয়
300 BC থেকে AD 300। তবে 400 BC – AD 250 এই সময়কালটাকেই প্রমিত বলে জানা যায়। এই সময়টা সম্পর্কে প্রত্নতত্ববিদেরা ধারণা পান টোকিওর আশপাশে কিছু হস্তনির্মিত বস্তু বা তাদের বৈশিষ্ট্য দেখতে পেয়ে। এই সময়ের জিনিসগুলো যেমন মৃৎশিল্পের শৈলী আলাদা আবার চাল উৎপাদনও এই সময় ব্যাপকভাবে শুরু হয়। এছাড়া লোহা, ব্রোঞ্জ ইত্যাদির ব্যবহার বাড়ে এই সময়ে। আবার ব্যক্তি প্রধানকেন্দ্রিক সামাজিক কাঠামোর চল শুরু হয়। ইয়াইওই সংস্কৃতি দক্ষিণ কিউশু থেকে উত্তর হনশু পর্যন্ত ছড়ানো ছিল।
দেতাকু
ইয়াইওই জার।
১৮৮৪ সালে টোকিওর ইয়াইওই এলাকাতে এই সময়কালের ব্যাপারে প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই টোকিওর ঐ এলাকার নামানুসারে এও নামকরণ করা হয়। তবে মজার বিষয় এটা ছিল প্রত্নতত্ববিদদের একটা ভুল। ওরা যেসব প্রমাণ পেয়েছিল মানে উপাদানগুলো ওগুলো ছিল 900 - 800 B.C. এই সময়ের। যা ইয়াইওই থেকে আরও ৫০০ বছর বেশি পুরোনো।
জানা যায় ইয়াইওইরা ব্যাপক খরার জন্য ঐ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয় এবং চায়না এবং কোরিয়াতে চলে যায়। তাই এটা ঠিকভাবে কখনই জানা যায় নি যে জমনদের সাথে ইয়াইওইরা কিভাবে যোগযোগ করেছিল। তবে এ নিয়ে নানারকম তত্ব আছে। এর মধ্যে জাপানে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত তত্বটা হল যে ইয়াইওইরা সংখ্যায় কম ছিল আর তখনকার জমন সমাজের সাথে মিশে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে অবশ্যই কিছু শারীরিক পার্থক্য ছিল বলেই জানতে পেরেছি ঘেটেঘুটে। তবে তা নিয়েও বিস্তর তর্কাতর্কি আছে। কেউ বলে জীনগত। কেউ বলে পুষ্টিজনিত ।
তবে একথা ঠিক যে জাপানিদের বর্তমান যে সংস্কৃতি দেখা যায় তার বয়স যতই হোক এই ইয়াইওই থেকে পুরাতন নয়। তখনই ওরা চীনাদের থেকে যে সামাজিক কাঠামো ও সংকৃতির শিক্ষা পেয়েছিল তা দিয়েই চলছে।
অবশ্য এই সংস্কৃতি আর ঐ সময়কালের উদ্ভবের মাঝে একটা জায়গায় একটু ফাঁক আছে। মানে ঠিক কিভাবে চীনারা এর মাঝে ঢুকে গেল অথবা কিভাবেই বা ইয়াইওইরা চীনে গেল।
এটা আসলে আরেকটা তত্ব থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু তত্বটা জাপানিরা তেমন একটা আমলে নেয় না।
আগেই বলেছি এই সময়কালেই কৃষি ব্যাপকতা, ধাতুবিদ্যা, এবং শিন্তোইজম (জাপানের নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস) এর শুরু হয়। লোহা কিছুটা ব্যবহারের ব্যপারে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ পেয়েছেন। তারা বেশ কুঠার,ছুরি, তলোয়ার, তীড়ের তীক্ষ্ণ ফলা ইত্যাদির খোঁজ পেয়েছেন। ব্রোঞ্জের আয়নাও পাওয়া গেছে।
জাদুঘরে সংরক্ষিত ব্রোঞ্জের আয়না।
তাছাড়া চালের বেশ কিছু চিহ্নও তারা উদ্ধার করতে পেরেছিলেন কিউশুতে। গবেষকদের মতে এই সময়ে ধানের উৎপাদন পদ্ধতির বেশ উন্নয়ন ঘটে।
জমনদের মতো ইয়াইওইরাও মৃৎশিল্পের সাথে সমৃক্ত ছিল। কিন্তু তারা জমনদের হাত ব্যবহার করত না বলেই গবেষণায় এসেছে। তাদের এসবের জন্য এধরণের চাকা ছিল। কিছু কিছু জমনদের একটা প্রভাব থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অমিল। যেমন জমনেরা যে কারুকাজগুলো করত মাটির জিনিসে ওপর তা ইয়াইওইদের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।
একেবারে সাদামাটা একটা মর্টার বা হামানদিস্তা। এটা অবশ্য কাঠের। কারুকার্যহীনতার একটা উদাহরণ দিলাম শুধু।
মাটির কিছুর ছবি পেলাম না।
ইয়াইওইরা অনেকগুলো দলে বিভক্ত ছিল; যাদের বলা হত উজি। এসব দলের একজন প্রধান থাকতো যে যুদ্ধ এবং ধর্মীয় বিশ্বাস উভয়ই দেখাশুনা করত।
তাদের প্রত্যেকের আলাদা কিছু দেবতা ছিল। যেমন বাতাস, ঝড় মানে নানা রকম শক্তির দেবতা। মাঝে মাঝে দলগুলোর ভেতর যুদ্ধ হত আর যে দল জিতে যেত সে দল অন্য দলের দেবতাকে নিজের ধর্মের মাঝে নিয়ে আসত। এভাবে করে করে ইয়াইওইরা একসময় একজন প্রধান দেবতাকে পেয়ে গিয়েছিল। যে প্রত্যেক যুদ্ধে বিজয়ী দলের দেবতা হয়েছে।
ইয়াইওইরা দলবদ্ধভাবে বাস করত। বাড়িঘরগুলো পাথর, কাঠ দিয়ে বানানো হত আর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেয়া হত যাতে বন্যপ্রাণী হামলা চালাতে না পারে।
অনেকটা এমন।
বিয়ে তাদের সমাজে একাধিকই স্বাভাবিক ছিল।
আর কিছু চীনা নথি থেকে জানা যায় নারীরাই ছিল দলপ্রধান।
মৃতের সৎকারের জন্য ওরা পাথরের কফিন ব্যবহার করত। সাথে নানা রকম দ্রব্যাদি যেমন তলোয়ার, আয়না ইত্যাদি দিত। কিন্তু একটা বিষয় মজার যে পাথরের কফিন কোরিয়াতেও ব্যবহার হত। কিন্তু জাপানিরা সহজে মানতে চায় না যে ইয়াইওইরা একসময় কোরিয়াতেও স্থানান্তর হয়েছিল। ঐ আগের তত্বের মতো।
এশিয়ায়র মুলভূমির সাথে এর যোগাযোগ নিয়ে কথা বলতে গেলে মুলত চীনা নথির ওপর নির্ভর করতে হয়। হানদের এক নথিতে পাওয়া যায় উও নামের রাষ্ট্র যা ১০০ টারও বেশি প্রদেশে বিভক্ত ছিল। সেখানকারই এক প্রদেশ নাম 'না' হান দরবারে এক গুপ্তচর পাঠিয়েছিল যাকে চীনা সম্রাট স্বর্ণের সীল দিয়েছিল। ছবিগুলো দিলাম
এই সেই স্বর্ণ সীল যা ফুকুকো জাদুঘরে সাজানো আছে।
এর দু'টো আলাদা view.
সীলের গাঁয়ের লেখা গুলো।
প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এমন অনেক প্রমাণ পেয়েছিলেন যে সেসময় এই ১০০টা প্রদেশে নিজেদের মাঝে প্রচুর যুদ্ধ হত যদিও সেখানে বেশ সমৃদ্ধ একটা সভ্যতা গড়ে উঠেছিল। এ বিষয়ে চীনা নথিগুলো থেকে জানা যায় গৃহযুদ্ধ শেষ হলে হিমিকো নামের এক রানী ইয়ামাতাই এই 'উও'কে শাসন করেছিল। আর এই ইয়ামাতাই এর বর্তমান অবস্থান জানা দুষ্কর হলেও দু'টো সম্ভাব্য জায়গা চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। একটা কিউশুর (বর্তমান) সাগা প্রশাসনিক এলাকা এবং আরেকটা হল মধ্য হনশুর (বর্তমান) নারা প্রশাসনিক এলাকা।
খুব একটা ছবি পাওয়া মুশকিল এসবের । তাও যা পেয়েছি দিয়ে দিয়েছি।
আগের লেখাটার লিংক যোগ করে দিলাম সাথে। চাইলে আগেরটাও পরে দেখতে পারেন।
কোনো ভুল থাকলে জানাবেন। আর আশা করব পাঠকেরা পড়ে বিরক্ত হবেন না।
প্রাচীন জাপান --- ১
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৪ রাত ৩:১৯