গতকাল আমি একটি কলাম লিখেছিলাম কোটা আন্দোলন বিষয়ে। এরপর আমি আমার টুনটুনি ও ছোটাচ্চু বিষয়ক পরবর্তী বই “যাহ টুনটুনি, খাহ ছোটাচ্চু” লিখতে ব্যস্ত হয়ে যাই। আমি সোশাল মিডিয়া অনুসরণ করি না, টিভি দেখি না, স্মার্টফোনও নেই। কোথায় কী হচ্ছে এগুলি জানার জন্যে আমাকে পরের দিনের খবরের কাগজের ওপর নির্ভর করতে হয়। এর মধ্যে না কি অবিশ্বাস্য সব ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম আমার লেখাটির জের ধরে অস্বাভাবিক সব প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছে। বিভিন্ন বুকশপ থেকে আমার বই নামিয়ে নেয়া হয়েছে, আমাকে বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। এমন কী গণিত অলিম্পিয়াডের কমিটি থেকেও আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে। (এসব কোনোটাই আমি দেখি নি, শুনেছি। আগামীকালের খবরের কাগজ পড়লে নিশ্চিত হতে পারব)। আমার মধ্যে এক ধরণের বিস্ময়বোধ কাজ করতে শুরু করল। কোনো সন্দেহ নেই যে প্রতিক্রিয়াশীল একটি গোষ্ঠীর মদদেই এসব কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। যারা এসব ফাঁদে পা দিচ্ছেন তাদেরকে কি কেউ বলে দেয়ার নেই যে তারা এর মাধ্যমে স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতকেই সবল করছেন?
আমার শুধু একটিই চাওয়া ছিল, তা হলো স্বাধীনতাবিরোধীদের ফাঁসির রায় দেখা। আমার সে চাওয়া পূরণ হয়েছে। আর কোনো চাওয়া নেই। আমি বাজারে যাই না, দ্রব্যমূল্য সম্পর্কে আমার ধারণা নেই (তবে শুনেছি যে সেটা খানিক বেড়েছে)। অর্থনীতি বুঝি না বলে রিজার্ভ সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারছি না (তবে শুনেছি সেটা খানিক কমেছে)। আমি শুধু চেয়েছিলাম একটি স্বাধীন দেশে বসে বাচ্চাদের জন্যে গল্প লিখতে। ওরা আমার সেই অধিকারটাও কেড়ে নিতে চাচ্ছে, এর চেয়ে বেদনাদায়ক আর কী হতে পারে?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল
১৭.৭.২০২৪
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪