somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অচিন পাখির ডাক

১৮ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(১)
আজকে আমাকে নতুন সেলে নিয়ে আসা হয়েছে। বড় বিষণ্ণ এই আগমন। এখান থেকেই শুরু হবে মৃত্যুর কাউন্টডাউন। আর হয়তো কয়েকটা দিন মাত্র আমার আয়ু রয়েছে। তা ঠিক কখন ওরা নির্দিষ্ট করে কখনই বলবে না। এই কয়েকদিন আমার সাথে খুব ভালো ব্যবহার করবে, ভালো খেতে দেবে। কনডেম সেলের পাথর পাষাণ দেয়ালে আমার শেষ দিনগুলোর নিঃশ্বাস গচ্ছিত থাকবে। আজ দুপুরে ওরা আমাকে খেতে দিয়েছে ঝালঝাল, ঝোলঝোল করে রান্না করা পাবদা মাছ আর ভাত। অমোঘ মৃত্যু যখন দুয়ারে কড়া নাড়ে জৈবিক চাহিদাগুলো তখনও কী ভীষণ রকম প্রকট হয়ে ধরা দেয়! আমি বেশ আয়েশ করে চেটেপুটে সবগুলো ভাত খেয়ে বিছানায় গড়িয়ে নিলাম কিছুক্ষণ। সিগারেটের তৃষ্ণা অনুভব করছি । ঘুম পাচ্ছে খুব। তবে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি জেগে থাকবো। ঘুম তো এক ধরণের মৃত্যুই! অনিবার্য মৃত্যুর সম্মুখীন হবার আগে তার শাখা-উপশাখায় অসহায় আত্মসমর্পণ করার কোনো মানে হয় না। এই যে দেখছি পাথরদেয়াল, এই যে দেখছি সিলিং ফ্যানের ঘূর্ণন, এঁটো থালার ওপর উড়ছে মাছি, দেখার মতো কত কী আছে বাকি! এসব দেখতে দেখতে আমি আমার অতীতের স্খলন এবং তার প্রেক্ষিতে উদ্ভুত বর্তমান মৃত্যুমুখরতার কথা ভাবি। আমি একজন ধর্ষক এবং খুনী। অবশ্য খুন করার কোন উদ্দেশ্য আমার ছিলো না। মেয়েটা বড় চিৎকার করছিলো আর লাথি ছুড়ছিলো। ওকে থামাতে গিয়ে বেশ কয়েকটা চড়-থাপ্পর দেয়ার পর আমার মধ্যে জাগ্রত হয় কামজ অনুভূতির চেয়েও ভয়ানক নেশাতুর সহিংসতা। টানা কতক্ষণ তাকে মেরেছি মনে নেই। আমি তার মাথায়, বুকে, সংবেদনশীল যাবতীয় অঙ্গে প্রচণ্ড প্রহার করতে গিয়ে তার মধ্যে উপগত হবার কথা ভুলেই যাই। হঠাৎ খেয়াল করি তার দেহটা নিশ্চল, নিথর হয়ে আসছে। যাহ বাবা! এইটুকু প্রহার সইতে পারলো না মেয়েটা? অবশ্য মাত্র দশ বছরের একটি মেয়ে কতটুকুই বা সইতে পারে! আমার ভীষণ রাগ হচ্ছিলো। ধর্ষণ শেষ হবার আগেই মেয়েটি মারা গেলো! আমি তার মৃতদেহতে আরো দু ঘা বসিয়ে দিয়ে তারপর সঙ্গম শুরু করি। আমার মধ্যে যে নেক্রোম্যানিয়া আছে তা আগে কখনই বুঝতে পারি নি। সত্যি বলতে কী, এই নতুন অভিজ্ঞতা আমাকে অভূতপূর্ব এক আনন্দ দিলো। ধর্ষণ শেষে ফুরফুরে মনে বন্ধুদের সাথে আড্ডায় রেখে ঢেকে সেদিনের সেই অভিজ্ঞতার কথা বয়ান করেছিলাম। তারা সবাই আমার পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলো। কী সুন্দর ছিলো দিনগুলো! আমার কৃত অপরাধের জন্যে বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত ছিলাম না। কোনো দুশ্চিন্তাও ছিলো না সাজা পাবার ব্যাপারে। ক্ষমতাসীন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতা ছিলেন আমার বাবা। সুতরাং, আমাকে ধরে শাস্তি দেয় কার সাধ্যি! কিন্তু হঠাৎ করেই ক্ষমতার পালাবদল ঘটলো। মামলা হামলায় বিপর্যস্ত হলো আমাদের পরিবার। আমাকে গ্রেফতার করা হলো। তখনও ভাবি নি লো ক্লাস একটা বস্তির মেয়েকে খুনের দায়ে আমাকে এই শাস্তি দেয়া হবে। হাই সোসাইটির কত রুপসী আর শিক্ষিত তরুণী আমার পায়ের কাছে লুটোপুটি খেত, কখনও ভয়ে, কখনও বাধ্য হয়ে, কখনও ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়ে! এদের মধ্যে ছিলো, বালিকা, গণিকা, প্রেমিকা, সমাজসেবী, নেত্রী, ড্রাগস ডিলার! তারা কেউ আমার কিছুই করতে পারলো না, শেষতক ধরা খেয়ে গেলাম সেই দুই পয়সার বস্তির বালিকার কাছে! এ দেশের মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে জুতাপেটা করা দরকার। ভাবতে ভাবতে আমি উত্তেজিত হয়ে উঠি। অবাক হয়ে খেয়াল করি, ঐ মেয়েটার কথা মনে পড়ার ফলে আমার শিশ্ন উত্থিত হচ্ছে। অন্যসময় হলে আমি অবশ্যই হস্তমৈথুন করতাম। নিশ্চিত মৃত্যুর সম্মুখীন হবার পরেও কী ভীষণরকম জ্যান্ত আমি এবং আমার অনুভূতিরা! আমার মুখে এক চিলতে মৃদু হাসি খেলা করে। আমাকে ওরা ফাঁসি দিতে পারে, তবে আমি রেখে যাবো বিপুল পরাক্রমে বিজয়ী এক মহাজীবন। যার ছিঁটেফোঁটাও কখনও এই ছাপোষা জেলার, ম্যাজিস্ট্রেট, উকিল আর জল্লাদরা দেখে নি। ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি টেরই পাই নি।

(২)

ঘুমটা ভালো হলো না। অজস্র দুঃস্বপ্ন আর অস্বস্তিকর শারীরিক অনুভূতি জাগিয়ে তুললো আমাকে। ঘুম থেকে ওঠার আগে মনে হচ্ছিলো কে যেনো আমার বুকের ওপর উঠে গলা চেপে ধরছে। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। গোঁ গোঁ শব্দে আমার ভীতি প্রকাশিত হচ্ছিলো। একেই কি বোবায় ধরা বলে? স্বপ্নে দেখলাম সেই মেয়েটি ভয়ংকর দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর হাসছে। আমি প্রাণপনে দৌড়ুতে থাকি, আমার জীবনীশক্তি ফুরিয়ে আসতে থাকে, আমাকে ঘিরে ধরে পুলিস, জেলার আর জল্লাদরা, আমি তাদের তৈরি মৃত্যুবৃত্যের ভেতর ঘুরপাক খেতে থাকি, বের হবার কোনো উপায় নেই। মৃত্যু অনুভূতি যে এত ভয়ানক হতে পারে তা আমার জানা ছিলো না। ঘুম থেকে ওঠার পরে আমার প্রচণ্ড পানি পিপাসা পায়। ঢকঢক করে দুই গেলাস পানি খাবার পরেও আমার তৃষ্ণা মেটে না। প্রচণ্ডরকম আতঙ্কিত হয়ে পড়ি আমি। চারপাশে তাকিয়ে কোন একটা আশ্রয় খুঁজতে থাকি যা আমাকে এই অসহনীয় আতঙ্ক থেকে মুক্তি দিবে। মাকে খুঁজি।কিন্তু এই কনডেম সেলের মধ্যে মাকে পাবো কোথায়? দুচোখ বেয়ে অশ্রূধারা নির্গত হয়। আমি এদিক ওদিক তাকাতে গিয়ে দেখি একটা টিকটিকি নধর সাইজের একটা মাকড়শাকে ধরে আয়েশ করে খাচ্ছে। দুপুরবেলায় খাবার পরে মৃত্যুবিষয়ক যে দার্শনিক অবজ্ঞার অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছিলো, তা যেন ন্যাংটো হয়ে ধাওয়া খেয়ে ছুটছে ছুটছে ছুটছে! আমার নিজেকে খুব বিপন্ন মনে হয়। টিকটিকিটা ততক্ষণে তার উদরপূর্তি সম্পন্ন করে ফেলেছে। আমার অবস্থা যাচাই করেই হয়তো বা, সে দেয়ালে ঝুলে থেকে কুঁতকুঁতে দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে বলে ঠিক ঠিক ঠিক!

(৩)
টিকটিকিটাও আমার বর্তমান অবস্থা কীটপতঙ্গের মতো গলাধকরণ করে উপহাস করছে যেনো। আমি ধাতস্থ হবার চেষ্টা করি। হয়তো বা আজ রাতেই আমার ফাঁসি হয়ে যেতে পারে। জার্মানি থেকে নিয়ে আসা ফাঁসির দড়িতে নিয়মিত সবরি কলা আর মাখন মেখে সেগুলোকে চকচকে আর শক্ত করা হচ্ছে নিশ্চয়ই। আজ রাতেই যদি আমার ফাঁসি হয় তাহলে সন্ধ্যার দিকে আমার আত্মীয়স্বজনের সাথে দেখা করতে দেয়ার কথা। আমি মনেপ্রাণে প্রার্থনা করা শুরু করি তারা যেন না আসে। কনডেম সেলের প্রায়ন্ধকার ঘরে দিন-রাত-দুপুর-সন্ধ্যা ঠিক ঠাহর করা যায় না। আমি এই অনির্দিষ্টতাকে অনুমান দিয়ে বুঝবার চেষ্টা করি। সম্ভবত এখন বিকেলের শেষভাগ। আমি মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকি, মা যেন না আসে, বাবা যেন না আসে, ভাইবোনেরা কেউ যেন না আসে। আমি বাঁচতে চাই অন্তত আরো একটা দিন বেশি। বেঁচে থাকার মত আশ্চর্য সুন্দর আর কী হতে পারে? প্রকৃতিপ্রদত্ত এই আশ্চর্য সুন্দর উপহার আমি আর বেশিদিন বা বেশিক্ষণ উপভোগ করতে পারবো না ভাবতেই আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। যেকোন কিছুর বিনিময়ে হোক আমি আরো একটা দিন বেশি বাঁচতে চাই। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে গিয়ে হঠাৎ আমার খেয়াল হয়, আমি একজন নাস্তিক। আমি নাস্তিক বলেই কি ঈশ্বর ক্ষেপে উঠে আমার জন্যে এই পরিণতি নির্দিষ্ট করে রেখেছেন? আমার মনে পড়ে যায় প্রাচীন বিশ্বাস আর ধূলো জমা ধর্মগ্রন্থের কথা। একটা সময় তো আমি বিশ্বাসী ছিলাম, সেই সময়ের বরাতে আমাকে কি আরো কটা দিন বেশি আয়ু দেয়া যায় না হে মহাপ্রভু? তোমার নগন্য এই সৃষ্টিকে দয়া করো! আমি তোমার কাছে ফাঁসি মওকুফ করার অবাস্তব প্রার্থনা করছি না। শুধু আমাকে আর কটা দিন বেশি বাঁচতে দাও!

(৪)
যাক, আজকে বাসা থেকে কেউ আসে নি। শেষ মুহূর্তে আমি কিছু খেতে চাই কী না তাও জিজ্ঞেস করে নি সেন্ট্রিরা। আমি তাহলে আরো একটা দিন অন্তত বেশি বাঁচতে পারছি! এই মাত্র একটা দিনের বেশি আয়ূ পাওয়াটা আমাকে কিছুটা স্থির এবং স্বচ্ছন্দ করে তোলে। এরকম আর এক এক করে কয়টা দিন বেশি বাঁচা সম্ভব সর্বোচ্চ? এক সপ্তাহ? দশ দিন? পনের দিন? যদিও এই কনডেম সেলের ভেতর টিকটিকি, মাকড়শা আর নোনা ধরা দেয়াল আর আদ্যিকালের একটা সিলিং ফ্যান ছাড়া আর কিছু নেই, তবুও এই জায়গাটিতে আরো কিছুদিন গ্যাঁট হয়ে বসে থাকতে আমি উন্মুখ হয়ে আছি। এই দুদিনে সেলের ভেতর থাকতে গিয়ে এর সবখানের সবকিছু একদম মুখস্ত হয়ে গেছে। টিকটিকিটার সাথী জুটেছে একটা। তারা বেশ রোমান্স করছে মনের সুখে। ওদের দিকে তাকিয়ে আমার মনে হলো আমি যদি একটা টিকটিকি হতে পারতাম! তাহলে আর এই মৃত্যুফাঁদে আটকা পড়ে ভীতিকর ক্ষণ গণনা করতে হতো না। দেয়ালের একপাশে কিছুটা ফাটল আছে। ওটা ভেদ করে যদি চলে যাওয়া যেতো সুড়ঙ্গ খুঁড়ে! এসব অবাস্তব চিন্তাই এখন আমাকে বেঁচে থাকার রসদ যোগায়। আজকেও আন্দাজ করছি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এই সময়টা সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের। কখন না কখন চলে আসে আমার স্বজনেরা কে জানে! ওরা তো আমার প্রাণ বাঁচাতে পারবে না, খামোখা এখানে এসে একটা সিনক্রিয়েট করা। আচ্ছা, হঠাৎ যদি একটা কারাবিদ্রোহ শুরু হয় তাহলে কেমন হবে? এটা কি খুব অসম্ভব কিছু? আগের সেলে থাকার সময় দেখেছি কত দুঁদে আর বিপদজনক অপরাধীরা আছে এখানে! তাদের অপরাধ বিষয়ক সৃজনশক্তি অসীম! টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার দেবার নাম করে যদি তাদের দলের লোকেরা অথবা আত্মীয়রা বোমা তৈরির সরঞ্জাম সরবরাহ করে? তাহলে কী আমার পক্ষে পলায়ন সম্ভব? আশা ছাড়ি নি এখনও।
(৫)
মাঝখানে আমার নার্ভাস ব্রেকডাউনের মতো হয়েছিলো ঘুমের মধ্যে আজেবাজে স্বপ্ন দেখে। ওগুলো এখন কাটিয়ে উঠেছি। মৃত্যুর জন্যে নিজেকে প্রস্তুত করছি ধীরে ধীরে। পরিবার পরিজনেরা শেষ দেখা করতে আসবে কবে? আফসোস জাগে, কেন যে তাদেরকে আরো বেশি সময় দিলাম না! নিহত মেয়েটার কথা মনে পড়ে। জীবনে এই প্রথমবারের মতো তার জন্যে আমার দুঃখ হয়। তবে কি আমি পিশাচ থেকে মানবে উত্তীর্ণ হচ্ছি? এই যে আমার অপরাধবোধ এবং অনুশোচনা, পিশাচ থেকে মানবে পরিণত হবার যাত্রায় উত্তরণের সেতু করে আমাকে কেন মৃত্যুর দিকেই যেতে হবে? প্রবাহটা বিপরীতমুখী করে দাও না হে ঈশ্বর! মানবিকতার বোধে ঋদ্ধ হয় আমি জীবনের কাছেই ফিরে যেতে চাই। দয়া করো হে ঈশ্বর! আমি গভীরভাবে শ্বাস নিয়ে ধ্যানে মগ্ন হই। একটি প্রশান্ত অনুভূতি আমার ভেতর গভীরভাবে প্রোথিত হয়। আমি ভাবতেই পারি নি ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমর্পণ করার মধ্যে এত প্রশান্তি আছে। এখন আমি মৃত্যুর জন্যে নিজেকে পুরোপুরি প্রস্তুত বলে মনে করি।

ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বেশ ভালো এবং গভীর ঘুম। কোন দুঃস্বপ্ন নেই, শারীরিক অস্বস্তি নেই। ঘুম ভাঙলো সেন্ট্রির ডাকে। আমার স্বজনেরা এসেছেন। তাদের সাথে দেখা করতে হবে। অর্থাৎ আজকেই সেই দিন! আজ রাতেই আমাকে ফাঁসিতে ঝোলাবে ওরা? হঠাৎ করেই আমার মাথাটা ভীষণ চক্কর দিতে শুরু করে। শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে। পেটের ভিতর সবকিছু যেন দলামচড়া পাঁকিয়ে যেতে থাকে। আমার ধ্যানার্জিত মৃত্যুবিষয়ক উদাসীনতার গালে কারা যেন ঠাসঠাস করে চড় লাগিয়ে দেয়। তলপেট থেকে জলের ধারা প্রবাহিত হতে থাকে আরো নীচে। কোথায় গেলো আমার শান্তভাবে মৃত্যুকে বরণ করে নেবার প্রস্তুতি, কোথায় গেলো আমার জীবনকে বিদায় জানানোর সাহস? পেচ্ছাপের ধারায় সব ভেসে গেলো।

(৬)
"আম্মা, বিশ্বাস করেন আমি কিছু করি নাই। আর কিছু করলেও সেটার শাস্তি আল্লায় দিসে আমারে। আপনেরা আমার জন্যে কিছু করেন না! আমারে মরার হাত থিকা বাঁচান। আব্বায় এহনও জেলে? আব্বা মুক্তি পাইলে আমারে ঠিকই ছাড়ায় নিতে পারবো। তার জন্যে কিছুদিন অপেক্ষা করতে কন না ওগোরে। আপনে কাইন্দেন না আম্মা। দেইহেন শেষতক আমার ফাঁসি হইবো না। কোন একটা মিরাকল ঘটবোই। পৃথিবীতে কতরকম অদ্ভুত ঘটনা ঘটে আপনে তার দিশা পাইতেন না। এবারও সেইরকম কিছু ঘটবো। আপনেরা খালি একটু দোয়া করেন আমার জন্যে। ফাঁসি হইবো না আমার। আমি মরতে চাই না আম্মা। আমারে বাঁচান..."

(৭)
রাত আনুমানিক দশটার দিকে জেলখানার মসজিদ থেকে ইমাম আনিয়ে আমাকে তওবা পড়ানো হয়। শেষ ইচ্ছা হিসেবে ইলিশ মাছের তরকারি এবং ভাত খেতে দেয়া হয়। যতই ফাঁসির সময়টা কাছিয়ে আসছে আমার ভেতর নানারকম উদ্ভট চিন্তা খেলা করতে শুরু করছে। নিজেকে কখনও মনে হয় জীবন্মৃত জোম্বি, মৃত্যুভয় যাকে কখনই কাবু করতে পারে না। এর মুহূর্ত পরেই প্রচণ্ড ভয় আমার ওপর জেঁকে বসে। আমি শেষ মুহূর্তেও কোন একটা অলৌকিক ঘটনার অপেক্ষা করতে থাকি। যদিও জানি এসব সম্ভব হবার নয়। সেই বালিকার ছায়া আমার পিছু পিছু আসতে থাকে। হাহা করে হাসতে থাকে সে, হাসতে থাকে পুরো কারাগার। হাসতে থাকে ভিকটিমের স্বজনেরা, জেলার, ইমাম, জল্লাদ সবাই। এত বিরূদ্ধস্রোতের বিরুদ্ধেও কিছু একটা ঘটবেই, অলৌকিক কিছু। কারা বিদ্রোহ, শেষ মুহূর্তে রাষ্ট্রপতির ক্ষমা, জেলারের হাত থেকে সাদা রুমাল মাটিতে পড়বে না, অথবা ফাঁসি দেয়ার যন্ত্রের মেকানিজমে কোনো গোলমাল ঘটবে। সমর্থনের আশায় ডুবন্ত মানুষের খড়কুটো আঁকড়ে ধরার মতো আমার সেলের একমাত্র বন্ধু টিকটিকিটার দিকে তাকাই।

সে তখন তার সঙ্গীর সাথে রোমান্সে ব্যস্ত। ঠিক ঠিক ঠিক বলার সময় নেই তার।
৫১টি মন্তব্য ৫১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×