somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জবাইঘর

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


জানেন, আমাদের বাসায় একটা জবাইঘর আছে। খুব চমকে গেলেন শুনে? চমকানোর মতো ব্যাপারই বটে। মানুষের বাসায় থাকে হাওয়াঘর, জলসাঘর, আরো কতো আদুরে বিলাসী কক্ষ, আমাদের ক্ষেত্রে ওসবের বালাই নেই। ওসব সুসজ্জিত, সুরভীময় ঘরগুলি আপনাদের নান্দনিক রুচির প্রকাশ করে, আর আমাদের জবাইঘরের নাম শুনলেই কেমন একটা আতঙ্কের শিহরণ বয়ে যায় শিরদাড়া দিয়ে তাই না? তবে আপনাদের আশ্বস্ত করছি, ব্যাপারটা যত ভয়ানক ভাবছেন, ততটা না মোটেও। প্রতি মাসে একবার একজন অভিজ্ঞ কসাই এসে আমাদের পরিবারের একজনকে লটারির মাধ্যমে বেছে নিয়ে তার গলায় চালিয়ে দেয় চাপাতি। কিছুক্ষণ খুব ধস্তাধস্তি আর চিৎকার চলে। তারপর... না যা ভাবছেন তা নয়। জবাইকৃত ব্যক্তির গলায় আবার সেলাই করে দেয়া হয়। এবং সে দিব্যি হেসে খেলে বেড়াতে থাকে। ভাবছেন এটা কী করে সম্ভব? কেন সম্ভব হবে না? আমাদের পারিবারিক কসাই জবাই করা ছাড়াও সেলাইয়েও বেশ পটু। আজকে ফেব্রুয়ারির দুই তারিখ। তার আসার সময় হয়ে এসেছে। আমি যাই এখন, কেমন? প্রার্থনা করবেন যেন এবার আমার নাম লটারিতে ওঠে। আমার গলা থেকে গলগল করে রক্ত বেরুবে, আর আমি পরিশূদ্ধ হবো রক্তস্নাত হয়ে। কত পাপ জমে আছে!

*
-সব ঠিকঠাক?
-হ্যাঁ।
-সব টিপটপ?
-একদম। বিছানা, বালিস, তোষক, মশারি, সিলিং, মেঝে সব ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে ফেলেছি।
-গুড। মহামান্য কসাই নিশ্চয়ই সন্তুষ্ট হবেন।
-আশা করা যায়।
-আজকে যে কার পালা পড়ে! বেশ উত্তেজিত বোধ করছি।
-আমিও।

মহামান্য কসাই এলেন বিকেল পাঁচটার সময়। বাসার সবাই তটস্থ। একটুখানি ভুলের জন্যে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। তিনি যদি আসা বন্ধ করে দেন, তাহলে কীভাবে আমরা আমাদের পূর্বপাপের প্রায়শ্চিত্য করবো? পাপ! পাপের তো কোনো অভাব নেই আমাদের। বনেদী জমিদার বাড়ি ছিলো এটা একসময়। খাজনার টাকা গুনে আর বাজনা শুনে দিনগুলো বেশ যাচ্ছিলো আমাদের। কত মানুষকে ভিটেছাড়া করেছি তার হিসেব নেই। আর সুন্দরী মেয়ে দেখলেই হলো, তার শরীরে প্রবেশ করে নিজেদের পৌরুষত্ব জাহির করতে বিন্দুমাত্র সময়ক্ষেপন করতো না আমাদের বীরপুঙ্গবরা। এভাবে কেটে গেছে বছরের পর বছর। পাপের পাহাড় বড় হয়েছে কেবল। সেই পাহাড়ে মানবিক অনুভূতিগুলো মৃত আগ্নেয়গিরির বুকে চুপটি করে ঘুমিয়ে থাকে। কবে যে জ্বালামুখ খুলে যায়! পাপের আগ্নেয়গিরি থেকে বের হতে থাকবে উত্তপ্ত লাভা। আমাদের সবাইকে মানবিক বোধের সাথে পরিচিত করিয়ে দিয়ে পাপস্খলনের সুযোগ করে দেবে, আমরা সেই অপেক্ষাতেই আছি, অঙ্গার হতে। প্রজ্জ্বলনের প্রতিশ্রূতিতে পরিশ্রান্ত আমরা পাপের বোঝা আর বইতে পারছি না। নাকি আরো বড় কোন পাপের পুনরাবৃত্তির জন্যে অপেক্ষা করে আছি?

এখন, এই সময়ে আমাদের জমিদারীও নেই, সোল্লাসে পাপ করার সুযোগও নেই। মহামান্য কসাইকে মাসে একবার বাসায় আনতেই অনেক খরচ পড়ে যায়। তিনি আবার বেশ খুঁতখুঁতে ধরণের। কোথাও অপরিষ্কার কিছু দেখলে, বা কেউ বেয়াদবি করে বসলে ভীষণ চটে যান। তিনি বংশানুক্রমে আমাদের পারিবারিক কসাইয়ের কাজটা পেয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের পরিবারের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার ফলে তিনি বুঝে নিয়েছেন, আমরা যতই তাকে সমাদর করি না কেনো, যদি আমাদের পারিবারিক জঘন্যতম পাপের ইতিহাস জানতে চান, তাহলে উল্টো আমরাই তাকে মেরে ফেলবো। তিনি আমাদের রক্তস্নাত জমিদারীর ইতিহাস জেনেই তুষ্ট। আমরা কয়শো ঘর পুড়িয়েছি, কতজনকে হত্যা করেছি সেসবের বিবরণ শুনে আমাদের এই পড়ন্তবেলার বনেদী পাপমোচনের উদ্দেশ্যে পরিবারের সদস্যদের গলা কেটেই তিনি খুশি। আজ তার মনটা বেশ ফুরফুরে। নাস্তা দেয়া হয়েছে বেশ ভালো। তিনি ছিলেন ক্ষুধার্ত। ভালোমতো খানাপিনা করার পর তিনি মূল কাজের দিকে নজর দেন। দশটি কাগজের পোঁটলায় পরিবারের দশজনের নাম লেখা আছে। যেকোন একটি তুলে নিয়ে তিনি যার নাম উঠবে তাকে জবেহ করবেন। আজ উঠেছে পরিবারের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য রিকির নাম। বাচারার নামই বেশিরভাগ সময়ে ওঠে। রিকির বয়স এখন চৌদ্দ। বড্ড দূরন্ত ছেলে। প্রতিবার জবাই করার সময় কয়েকজন মিলে তাকে ধরে রাখতে হয়। আজকে তার নাম ওঠার পর সে চিৎকার করে ছুটে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে।
-তোমাদের এসব ভয়ানক খেলায় আমাকে আর নিও না। জবাই করলে বড় কষ্ট লাগে, বড় কষ্ট। এর চেয়ে মৃত্যু অনেক ভালো। আমি মরি না কেন ছাই! ছেড়ে দাও আমাকে! আমার পাপ কী?
বেচারা রিকি! আমাদের পাপের বোঝা তাকে বইতে দিয়ে, প্রায়শ্চিত্য করতে দিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে বারেবার! তা করবে না! আমাদের গায়ে যে এখনো প্রবাহমান নীল রক্ত। কয়েকজন মিলে রিকিকে ধরে মেঝেতে শুইয়ে ফেলে। তার গলায় মহামান্য কসাই চাপাতিটা ধরে শুরু করেন পোঁচ দেয়া। রিকির বুনো চিৎকার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘরঘরে শব্দে পরিণত হয়। এ বড্ড আমোদের কাজ। সবাই হাততালি দিয়ে ওঠে। প্রায়শ্চিত্য, প্রায়শ্চিত্য হচ্ছে! অত্যন্ত আনন্দদায়ক খবর।

*
আপনাদের একটা গোপন কথা বলে রাখি, কাউকে বলবেন না যেন! আমাদের জবাইঘরে লটারি করে জবেহ করার কথা থাকলেও আদতে তা একটা প্রহসন মাত্র। আমাদের বাসায় মোট দশজন থাকে। আমি, ওহ আমার নামটাইতো বলা হলো না, আমি নিহিলা, আমার বাবা, মা, চাচা- চাচী কাজের লোক, সব মিলিয়ে দশজনের পরিবার। জবেহ দিনের লটারিতে শুধুমাত্র কাজের লোকদের নাম দেয়া হয়। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর এভাবেই চলছে। জমিদারী ছাড়তে হয়েছে বটে, কিন্তু এখনও রয়ে গেছে সেই নীল রক্ত আমাদের শরীরের ভেতরে। তাই পাপমোচনের নামে আমাদের অধীনস্থ কর্মচারীদের জবাই করিয়ে নিজেরা নিজেদের গলা বাঁচিয়ে চলি। রিকি বেচারার গলাটার দিকে তাকালে কষ্টই হয়।

মনে আছে,আমি প্রথমে বলেছিলাম, লটারিতে যেন আমার নাম ওঠে এজন্যে প্রার্থনা করতে? করেন নি তো আবার? আসলে ওটা এক মুহূর্তের আবেগী চপলতার প্রকাশ। আমি এ বাড়ির বড় মেয়ে। কার এত সাহস আমার গলায় ছুরি বসাবে? হাহাহা! বনেদিয়ানা চলে গেলেও তেজটা ঠিকই আছে আমার ভিতরে। তবে একটা ব্যাপার কি জানেন? ওসব জমিদারী আমলের প্রজাদের ওপর সংঘটিত অপরাধের চেয়েও বড় অপরাধ আমাদের পরিবারের ভেতর ঘটেছিলো। বলেছিলাম বোধ হয় আগে, তাই না? কী ঘটেছিলো? আমি নিজেও জানি না। তবে খুব গোপন আর পাপময় ছিলো ব্যাপারটা। যারা জানে, তাদের কেউ এই ব্যাপারে মুখ খোলে না। গোয়েন্দাগিরি করে জানারও কোন উপায় নেই। এ বড় শক্ত গেঁড়ো। আমার ধারণা ব্যাপারটা অযাচার বা ইনসেস্ট জাতীয় কিছু হবে। এই ব্যাপারে কেউ মুখ খুলছে না, খুলবেনা। চুপ চুপ চুপ! এর চেয়ে বরং আপনাদেরকে জবাইঘরের ইতিহাসটা জানাই।

জমিদারী করতে গেলে কিছু লাশ ফেলতেই হয়। জমিদারদের শত্রু এবং প্রতিপক্ষের অভাব থাকে না। একবার বেশ ধুন্ধুমার লেগে গেলো। এক সপ্তাহের মধ্যে পাল্টাপাল্টি লাশ পড়লো দশটা। আমরা এখন যে ঘরটা জবাইঘর হিসেবে ব্যবহার করি, তা আগে টর্চার রুম হিসেবে পরিচালিত হতো। সেইবার এতগুলো লাশ পড়ার ফলে আমাদের খুব ক্ষতি হয়ে গেলো। আমরা পিছু হটা শুরু করলাম। এই রণডম্বুরি সময়ে আমাদের পরিবারে সেই গভীর গোপন ব্যাপারটি ঘটলো। ঘটনায় জড়িতদের জবাইঘরে নিয়ে গিয়ে প্রচণ্ড টর্চার করা হলো। আমাদের পরিবারের তৎকালীন জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিটি ততদিনে এই মারমার কাটকাট দুনিয়ার প্রতি মোহ হারিয়ে ফেলেছেন। পরাজয়ের হতাশায়, আর পরিবারের গোপনতম পাপের প্রকাশ্যকরণের প্রভাবে তার ভেতর কিছুটা দুর্বলতা এবং অনুশোচনা সৃষ্টি হয়েছিলো হয়তোবা। তিনি নির্দেশ দিলেন, প্রতিমাসে একজন ভালো জল্লাদ বা কসাই নিয়ে এসে পরিবারের সদস্যদের গলা কেটে প্রায়শ্চিত্য করতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাপারটা কারো মনঃপুত হলো না। তারপরেও মেনে নিতে হলো। কারণ তারা একদম কোনঠাসা হয়ে গিয়েছিলো। প্রতিপদে পদে মার খেতে খেতে তাদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে পৌঁছে গিয়েছিলো। কোনঠাসা অবস্থায় তারা ফুঁসছিলো। তাদের দেহের নীল রক্ত ফুটছিলো টগবগ করে। রক্তের তৃষ্ণার বিকল্প কোথায়? তাই তারা খুঁজে খুঁজে দেশের সেরা কসাইকে নিয়ে এসে চুক্তি করলো। সেই থেকে জমিদারবাড়ি হয়ে গেলো কসাইবাড়ি। এখানে প্রতিমাসের প্রথম বুধবারে আমাদের বাসার চাকরশ্রেণীর মানুষদের লটারি নামক প্রহসনের মধ্য দিয়ে গিয়ে জবাই হতে হয়।

জবাই করার সময় যে রক্তের ছটা ছিলকে আসে সেটা আমাদের সবার প্রিয়। মানুষের রক্তের রঙের চেয়ে সুন্দর আর কিছু নেই। পূর্বপাপের জের টানতে গিয়ে এই জবাই উৎসব মূলত আমাদের সহিংসতার প্রতি আসক্তিটাকেই জিইয়ে রাখে। আমরা একসময় ছিলাম প্রবল প্রতাপশালী। মানুষ খুন করাটা আমাদের জন্যে ছেলেখেলা ছিলো। আমাদের সম্পদ কমে আসার সাথে সাথে ক্ষমতাও কমে আসতে থাকে। তাই মানুষের তাজা রক্ত সেভাবে আর দেখা যাচ্ছিলো না। এটা নিঃসন্দেহে একটা দুর্ভোগের বিষয় আমাদের জন্যে। এজন্যেই হয়তো বা প্রায়শ্চিত্যের নামে রক্তধারা অব্যাহত রাখার জন্যে আমার দাদার দাদা এই নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি যে একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

*
আজকে একটা কান্ড হয়েছে। রিকির ভাই ভিকির নাম উঠেছিলো লটারিতে। বেশি চাপ পড়বার ফলে তার মাথাটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় পুরোপুরি। তারপর সে কী আমোদ! আমরা সবাই তার মাথাটাকে নিয়ে ফুটবল খেলতে থাকি। জোরে জোরে লাথি মারি, গোল করি, আর ওদিকে মুন্ডুহীন ভিকি বারেবারে এসে তার মাথাটা ফেরত চাইতে থাকলো। মাথা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হবার ফলে ফিনকি দিয়ে ঝর্নার মতো রক্ত বের হতে থাকলো ওখান থেকে। রক্তক্ষরণ শেষে সে যখন নেতিয়ে পড়ে যাচ্ছিলো, তখন আমরা মহামান্য কসাইকে মাথাটা ফেরত দেই, এবং তিনি আমাদের উল্লসিত করে ঠিকঠাক মাথাটা জোড়া লাগিয়ে দেন। যাক বাবা! বাঁচা গেলো! ভিকি যদি মরে যেতো তাহলে রিকির ওপর চাপটা বড় বেশি পড়তো। ভিকি বেঁচে উঠলে ওকে আমরা এক কাপ আদা চা দেই। আর আজকের দিনের বিশেষ আমোদের জন্যে মহামান্য কসাইকে বাড়তি কিছু টাকা গছিয়ে দিই।

*
ব্যাপারটা কিছু বুঝতে পারছি না। লটারিতে আজ আমার নাম উঠেছে। এটা কী করে হলো! এমন তো হবার কথা না কোনভাবেই। বিশ্বাসঘাতকতাটা কে করলো? মহামান্য কসাই দেখলাম বেশ খুশি হয়েছেন আমার মিইয়ে যাওয়া মুখ দেখে। আমাদের পরিবারের অন্য সদস্যদের মধ্যেও কেমন একটা হতচকিত ভাব। ওদিকে রিকি আর ভিকি হাসছে। আমাকে ধরে নিয়ে গেলো ওরা দুইজন। আমি বাধা দেয়ার কোনো চেষ্টাই করলাম না। কী হবে বাধা দিয়ে! আর তাছাড়া একটা নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে এটাই বা মন্দ কী! আমাকে শুইয়ে দিলো ওরা। চাপাতি হাতে মহামান্য কসাই প্রস্তুত আমার গলা কাটতে। গলায় একটা ঠান্ডা ধাতব স্পর্শ পেলাম। ধীরে ধীরে গলার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে ব্লেড। আমার কণ্ঠনালী ছিড়ে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করছি। আমি কি মারা যাচ্ছি? নাহ। এই খেলায় মরে যাবার নিয়ম নেই। প্রায়শ্চিত্য হবে না, প্রায়শ্চিত্য? পূর্বপাপ আর গভীর গোপনের হামলা আমাকে রক্তে রঞ্জিত করছে। জবেহকার্য শেষ। এখন সেলাই চলছে আমার গলায়। এটাও খুব কষ্টদায়ক। আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা গম্ভীর মুখে দাঁড়িয়ে আছে। রিকি আর ভিকির ঠোঁটে হাসি। মৃত্যুমুখী হয়ে রক্তপ্লাবিত আমি ক্ষীণস্বরে পানি চাইতে থাকি। ষড়যন্ত্রটা করলো কে? কেন দিনের পর দিন চলে আসা নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলো?
প্রকৃতপক্ষে এটাই হয়তোবা ভবিতব্য ছিলো। আমাদের ক্ষমতা আর প্রতাপ দিনদিন কমে যাচ্ছে। এখন তো রিকি আর ভিকি এই সুযোগটা নিবেই! ওদের দল ভারী হচ্ছে। বাসার গৃহপরিচারিকা মেয়েটি সম্প্রতি অন্তস্বত্তা হয়েছে। রিকি বা ভিকি কারো কাজ হবে এটা। নাকি অন্য কেউ? আমার বাবা? ভাই? চাচা? আবারো কি ফিরে আসছে সেসব পাপজর্জরিত উদ্দাম সময়? নীল রক্তের সাথে লাল রক্ত মিশে নতুন এক প্রজাতি সৃষ্টি হচ্ছে? এর প্রায়শ্চিত্য কি আমাকে করতে হবে? ব্যাপারটা সম্ভবত তেমনই।

একবার যেহেতু পাপের বীজ বপন করা হয়েছে, এর জের টানতে টানতে আরো কতদূর যেতে হবে কে জানে! আমি প্রস্তুত ছিলাম। তাই একদিন রাতে যখন চাচা আমার বিছানায় এলো, তখন আমি একটুও বাধা দেই নি। পরের মাসে মহান কসাই তো আসবেনই। তিনি এসে ন্যায়বিচার করবেন। আমার মাথায় শুধু একটাই প্রশ্ন এখন। যে গহীন পাপের বোঝা এতদিন ধরে টেনেছি আমরা সবাই, তা কি আরো ভয়ানক ছিলো? আরো কাছের সম্পর্কের? আমি আর ভাবতে চাইছি না। কিন্তু বংশলতিকায় স্পষ্ট করে লেখা আছে সেই পাপের বিবরণ। আমি পড়তে না চাইলেও পড়া হয়ে যায়। চাচা আমাকে বীর্য আর রক্তে মাখিয়ে বিদ্ধস্ত অবস্থায় রেখে চলে গেলো। এসেছে! ফিরে এসেছে পুরোনো পাপ আবার! এইবার আর মহামান্য কসাইয়ের সাথে লটারি খেলায় রিকি,ভিকি আর অন্তস্বত্তা কাজের মেয়ে পারুলের নাম বারেবার উঠবে না। আমি কি এর সুবিচার পাবো? মহামান্য কসাই কবে আসবেন? আগামী মাসের প্রথম বুধবার আসতে এখনও অনেক দেরী। তার চাপাতিাটা আমার খুব দরকার এখন। ওদিকে রিকি আর ভিকিও এখন আমার দিকে কামজর্জর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ওদের দল ভারী হচ্ছে। নবজাতক আসছে। যেন পুরোনো দিনের মতো প্রজারা জেগে উঠছে। আমাদের বিগতযৌবনা বনেদিয়ানা খতম করে ফেলবে তারা।

আর আমরা, ক্ষয়িষ্ণু ধনাঢ্য পরিবারের সদস্যরা নিজেদের পাপকর্মের জের টানতে গিয়ে নতুন পাপে বাঁধা পড়ি। মহামান্য কসাইয়ের পসার বাড়তে থাকে। আমি ভাবছি তার কাছ থেকে জবাই করার শিল্পটা শিখে ফেলবো। কখন কোন কাজটা করার দরকার হয়ে পড়ে বলা তো যায় না! শিখে রাখা ভালো। চাচার পরে কে আসবে আবার আমার বিছানায়। ভাবতে গিয়ে একটা ভয়ানক ধাক্কা খেলাম আমি। আমাদের সেই পুরোনো পাপ কীভাবে এবং কাদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিলো বুঝতে পারি আমি। দরোজায় ঠকঠক শব্দ হচ্ছে। কেউ একজন আসতে চাচ্ছে ভেতরে। আমি পাশে রাখা ফল কাটার ছুরিটা আমার গলায় চালিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করি। বৃথাই চেষ্টা। জানি এমন করে হবে না। মহামান্য কসাই আসবেন। তিনি ছাড়া আর কেউ জবাই করে আমাদের পাপরক্ত বের করে দিতে পারবেন না। আমি মনে মনে প্রার্থনা করে গুটিশুটি মেরে বসে থাকি। হঠাৎ দরজাটা খুলে যায়। কে আসলো?

আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে আমি দেখি...
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১৬
৮৩টি মন্তব্য ৮৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×