somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক পাতা সিভিট

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


দুপুরের শেষভাগে খররোদের তাপ মিইয়ে এলে ভাতঘুম দেয়া মানুষেরা কেউ কেউ আলসি ভাঙে, কেউ কেউ নিদ্রালু চোখটা কোনরকমে খুলে আবার ওপাশ ফিরে শোয়। এই সময়টায় হারুনের ফার্মেসির বেচাকেনা কম থাকে। পাড়ার অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। তবে হারুন তার ব্যবসার ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। সে তার দোকান বন্ধ রাখে না। বিএ পাশের সনদ অবলম্বন করে এমন কিছু হাতিঘোড়া চাকুরি সে পাবে না এটা জানাই ছিলো। তারপরেও সে চেষ্টার কমতি করেনি। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং থেকে সেলস এক্সিকিউটিভ নানারকম চাকুরির চেষ্টা করার পর যখন দেখলো দুই বছর সময় কেটে গেছে, তখন সে চাকুরির সন্ধান বাদ দিয়ে ব্যবসা করতে মনস্থির করলো। এলাকার এক বড়ভাইয়ের পরামর্শে সে একটা ফার্মেসি দিয়ে বসে। ফার্মেসির ব্যবসাটা নাকি খুব চালু। লোকসানের সম্ভাবনা খুবই কম। প্রথমদিকে হারুন অবশ্য বেশ সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলো গাদাগাদা ঔষুধের নাম মুখস্থ করতে গিয়ে। তবে মাস ছয়েকের মধ্যে তার অর্জিত অভিজ্ঞতায় সে বেশ পটু ব্যবসাদার হয়ে যায়। ফার্মেসি থেকে দুইশ গজ দূরেই একটা হাসপাতাল থাকায় তার বেশ সুবিধা হয়েছে। সব মিলিয়ে বলা যায় হারুন বেশ ভালোভাবেই ব্যবসাটা সামলাচ্ছে। শুধু শেষ দুপুরের মরা রোদের সময়টায় ব্যবসাপাতি একটু কম থাকে আর কী! ক্রেতাশূন্য দোকানে বিরসবদনে বসে থাকতে থাকতে হারুন ভাবছিলো কখন সন্ধ্যা নেমে আসবে, লোকজনের সমাগম বাড়বে দোকানে!
বিকেলের দিকে তার কিছু বন্ধুবান্ধব আসে মাঝেমধ্যে। চা সিগারেট আর আড্ডার মধ্যে দোকানে রাখা কনডমের প্যাকেট নিয়ে কিছু খুনসুটি চলবেই, এবং তার পরিণতিতে হারুনের বিয়ের কথা উত্থাপন করবেই কেউ না কেউ।
-কী রে হারুন, ডটেড প্যাকেটগুলা খালি দোকানে সাজায়া রাইখা ব্যাডাগোরে বিক্রী করলে চলবো? নিজে একটা বিয়া কৈরা ফালা না!
-কী যে কস! আরেকটু খাড়ায়া নেই। ব্যবসাটা...
-আরে রাখ তোর খাড়াখাড়ি! তুই যতদিনে খাড়াবি ততদিনে দেখবি যে তোর ঐটা খাড়াইবো না আর।

তারা আড্ডা শেষে চলে গেলে হারুন অবধারিতভাবে কিছুক্ষণ একজন কল্পিত নারীর কথা ভাববেই। বয়সের পার্থক্য খুব বেশি না হওয়াই ভালো, মেয়েকে লম্বা হতে হবে, সবুজবরণ মেয়েটি, যার হাসিতে ফুটবে ফুল, এমন একজন সপ্রতিভ তরুণীর আশা করাটা কি খুব বেশি কিছু? সুখকল্পনায় মজে থেকে সে ভাবে এসব।

-ভাই, ডেক্সপোটেন আছে?
কলেজে পড়া কয়েকজন ছেলে এসে জিজ্ঞাসা করে। এদেরকে দুই চোখে দেখতে পারেনা হারুন। গোঁফ উঠেছে কি ওঠেনি, তাতেই বড় লায়েক হয়ে গেছে তারা! কাশির কথা বলে ডেক্সপোটেনের বোতলের সবটুকু গলায় ঢেলে দিয়ে ঝিম মেরে থাকবে। কোন মানে হয়! মাঝেমধ্য সে ভাবে ধমক দিয়ে বিদায় করে দেবে ছেলেগুলোকে। কিন্তু তার মনের ব্যবসাদার অংশটা তাকে নিষেধ করে। ডেক্সপোটেন খুব ভালো চলে বাজারে।

সন্ধ্যের দিকে একজন ক্লান্ত চেহারার তরুণী তার ফার্মেসিতে আসে মাথাব্যথার ঔষধ কিনতে। মেয়ে কাস্টমার এলে হারুনের মধ্যে বেশ চিত্তচাঞ্চল্য দেখা যায়। চোরাচোখের দৃষ্টি দিয়ে চিরে ফেলতে চায় সে মেয়েদেরকে। তবে এই মেয়েটিকে দেখে কেন যেন তার তেমন কোন অনুভূতি হলো না। বেচারার জীর্ণ শরীর আর ভাঙা চোয়াল দেখে মায়াই হলো। ব্যাগ থেকে পানি বের করে খায় মেয়েটা। আহারে! কত দূর হেঁটে এসেছে মেয়েটা কে জানে! কন্ঠতেও কেমন অবসাদের ছোঁয়া। হারুন খুব করে চাইছে মেয়েটা আরো কিছুক্ষণ এখানে থাকুক। সাহস করে শেষতক বলেই ফেললো,
-আপনাকে খুব টায়ার্ড লাগতেছে দেইখা। বসেন, রেস্ট নিয়ে যান।
-না, ভাই। রেস্ট নেবার সময় নেই। অনেক কাজ। উঠি, কেমন?
এমনভাবে সে বললো যেন সে হারুনের অনুুমতির অপেক্ষা করছে। যেতে দিলে যাবে, না দিলে যাবে না।
মেয়েটার এই কথা বলার ভঙ্গিটাও বেশ পছন্দ হলো হারুনের। পছন্দটা একটু বেশিই হয়ে গেলো। এভাবেই আচমকা এক বর্ণিল সন্ধ্যায় হারুন প্রেমে পড়ে গেলো সেই ক্লান্ত তরুণীর।

রাতের বেলায় হারুন শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলো মেয়েটার কথা। বয়স কত হবে? ২২-২৩? হারুনের চেয়ে ৪-৫ বছরের ছোটো। মেয়েটা একটু বেশিই রোগা। সে যা হোক, বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে। বিয়ে! হারুন নিজের বোকামির কথা ভেবে হাসে। কথাই হলো একদিন, মেয়েটা আর আসবে কি আসবে না তার নেই ঠিক ওদিকে কল্পনার তরীতে ভাসতে ভাসতে সে প্রেম-বিয়ে পর্যন্ত চলে গেছে! পাশ ফিরে শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে হারুন। কিন্তু সে রাতে তার আর ঘুম এলো না।

ইদানিং ফার্মেসিতে বন্ধুদের আড্ডায় সে তেমন একটা মন দিতে পারে না। বন্ধুরা সব নারীদেহ নিয়ে নানারকম রসালো আলোচনায় মত্ত থাকে। আর হারুনের মন পড়ে থাকে সেই ক্লান্ত তরুণীর মুখাবয়বে। সে কি আসবে না আর? তার কেন ঘনঘন মাথাব্যথা হয় না? অথবা একটু জ্বর, কাশি? এসব ভাবছে সে, আর অন্যদিকে চলছে বন্ধুদের খিস্তিখেউর। হারুনের ইচ্ছে হয় অপদার্থগুলোকে ঘাড় ধরে বের করে দিতে। কাজ-কাম নাই, সব বখে যাওয়া বেকার! একদিন তো জলিলকে অপমানই করে বসলো সে। তার বন্ধুরা এই ঔদাসীন্য আর আক্রমনাত্মক মনোভাবকে প্রেমে পড়ার লক্ষণ হিসেবে আখ্যা দিয়ে খুব একচোট নিয়ে নিলো তার ওপর। তবে হারুন একদম চুপ। তার পেট থেকে একটা কথাও বের করতে না পেরে বিমর্ষমনে আড্ডা ছেড়ে চলে গেলো তার বন্ধুরা।

অতঃপর একদিন! প্রায় এক সপ্তাহ পরে এক সন্ধ্যায় মেয়েটি এলো হারুনের ফার্মেসিতে। আজ সে বেশ সেজেগুজে এসেছে। ক্লান্তির ভাবটা একেবারেই নেই।
-কেমন আছেন? মাথা ব্যথা সারছে?
হারুনের সহাস্য প্রশ্ন। আনন্দটা কোনভাবেই সে চাপিয়ে রাখতে পারছে না।
-হ্যাঁ ভালো। জেলড্রিন আছে?
-হ্যাঁ আছে। জেলড্রিন কেন? দাওয়াত ছিলো নাকি কোথাও? বেশি খেয়ে এসিডিটি হইছে?

যে প্রশ্নের জবাব একটিমাত্র শব্দ দিয়ে বলা যেতো, তার বদলে এতগুলো কথা বলে ফেলায় হারুন অপ্রতিভ হয়। মেয়েটা কী না কী মনে করলো!
-না, দাওয়াত ছিলো না। দুপুরে খাইনি তো, তাই এসিডিটির প্রোবলেম ফিল করছি।
বেচারী মেয়েটা! দুপুরে খায় নি। না জানি কতো কাজ ছিলো। কত কষ্ট করতে হয়েছে তাকে।
! হারুনের মনটা আর্দ্র হয়ে আসে।
এইতো হচ্ছে, এভাবেই হবে, এভাবেই হয়! এভাবে টুকরো টাকরা কথা, চোখে চোখ, হাসি বিনিময়...একদিন না একদিন হয়েই যাবে। মেয়েটারও নিশ্চয়ই তার প্রতি দুর্বলতা আছে। নাহলে বাড়তি কথার জবাবে সে কেন সপ্রতিভ উত্তর দিবে? ভাবতে ভাবতে উত্তেজিত হয়ে পড়ে হারুন। মেয়েটি যাবার সময় আবারো অনুমতি প্রার্থনার ভঙ্গিতে বিদায় নিয়ে হারুনকে মাাসাধিককালের সুখকল্পনার উপাদান উপহার দিয়ে গেলো।

রাতের বেলা ঘুমুতে গেলে সে এক বিপদ! মেয়েটির সাথে দুইবার দেখা হবার পরিপ্রেক্ষিতে যা যা ঘটেছে তার চুলচেঁড়া বিশ্লেষণ করে তাদের মধ্যে একটা সম্পর্কের সেতু নির্মাণে হারুন প্রাণান্ত চেষ্টা করতে থাকে। হারুন ভাবে, মেয়েটি শুধু তার ফার্মেসিতেই আসবে কেনো? আশেপাশে তো আরো দু-চারটা দোকান আছে। হারুনের প্রগলভ আচরণে বিরক্ত না হয়ে উচ্ছসিত ভঙ্গিতে জবাব দিলো কেনো? এসব কি তার প্রতি মেয়েটার দুর্বলতার প্রকাশ নয়? তবে এখানে একটা প্রশ্ন থেকে যায়। হারুন দেখতে আহামরি এমন কিছু না যে ললনার দল তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। বরাবরই সে খুব সাধারণ। তার সবকিছুই গড়পড়তা। গড়পড়তা উচ্চতা, শ্যামলা রঙ, বিশেষত্বহীন। তাহলে কি মেয়েটি তার আচার ব্যবহারে আকৃষ্ট হয়েছে? নাকি তার ভরাট কন্ঠস্বরের প্রেমে পড়েছে? কতকিছুই তো হতে পারে! কতভাবেই না মানুষ প্রেমে পড়ে। সেই রাতেও হারুনের ঘুম হয়না।

পরবর্তী দর্শনের জন্যে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হলো না। মাত্র দুই দিনের মাথায় মেয়েটি তার ফার্মেসিতে এসে উপস্থিত। এবার আর ঔষুধ কিনতে না। প্রেসার মাপতে এসেছে। তার মুখটা কেমন যেন মলিন, উশকোখুশকো চুল, রাতে ঘুম হয় নি নিশ্চিত। বেচারা! মেয়েটির ওপর মায়াও হলো, আবার প্রেসার মাপতে গিয়ে তারা শরীরের সান্নিধ্যে আসা যাবে এই ভাবনা তাকে বেশ পুলকিত করলো।
-প্রেসার একটু হাই। ১৩০/৯০
-আচ্ছা।
-রাতে ঘুমান নাই ঠিকমতো?
-হু, ঘুমের একটু অসুবিধে হয়েছিলো। একটা ঘুমের ঔষধ দেন।
-খুব স্ট্রেস চলতেছে নাকি? শোনেন, খামোখা ঘুমের ঔষধ খায়েন না। বাসায় যায়া একটা ফ্রেশ গোসল করে শুয়ে থাকেন। ঘুম চলে আসবে। এমনি এমনি ঘুমের ওষুধ খাইলে শরীরের ক্ষতি হয়।
-আচ্ছা।
-আবার আইসেন।
-আচ্ছা।

হারুনের মনে হলো সম্পর্কটা ধীরে ধীরে জমে উঠছে। মেয়েটাকে সে বেশ যত্ন-আত্তি করেছে, তাকে আবার আসতে বলাতে সম্মতি জানিয়েছে। হবে হবে, এভাবেই হবে একদিন।

সম্পর্কের ক্রমান্নতির লেখচিত্র যখন ঊর্ধগামী, তখন হঠাৎ একটা বিশাল ধাক্কা খেলো হারুন।

সেদিন, সেই মেঘলা দিনে মেয়েটি তার ফার্মেসিতে এলো প্রেগনেন্সি চেক করার কিট কিনতে। হারুনের মনে হলো কয়েকজন ষণ্ডাগুণ্ডা জোয়ান যেন তাকে মাটিতে পেড়ে ফেলে দেদার লাথি ঘুষি মারছে। তার মুখে ঘুষি মারছে ভয়ঙ্কর শক্তিশালী কোন মুষ্টিযোদ্ধা। হারুনের একবার মনে হলো বলে দেয় যে নেই। তার খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো তার বিদীর্ণ বুকটা চিড়ে মেয়েটাকে দেখায়। এই ছোটখাটো গড়নের হালকা তুলোবালিকা বিবাহিত! সেদিন তাদের মধ্যে আর কথা হয় না।
পরের এক সপ্তাহ হারুন বিচ্ছিরি আচরণ করতে থাকে সবার সাথে। তার খিটখিটে মেজাজের দৌরাত্মে বাসার সবাই অতিষ্ট হয়ে পড়ে। বন্ধুবান্ধবরাও এড়িয়ে চলে তাকে। নিজের মনে বকবক করতে থাকে সে, কেন সে এমন একটা চোয়ালভাঙা মেয়ের প্রেমে পড়লো, আর মেয়েটিই বা তার সাথে ছিনালি করতে গেলো কেনো? বিবাহিতা মেয়ে, কোন লজ্জা শরম নাই, সবার সাথে টাংকি মেরে বেড়ায়। এইসব মেয়েকে যে কী শাস্তি দেয়া উচিৎ সে ভেবে পায় না। আসুক, এর পরের বার। সে খুব রূঢ় ব্যবহার করবে তার সাথে।

এর পরের বার মেয়েটি এলো স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে। অর্থাৎ প্রেগনেন্ট নয় সে। নাকি গর্ভপাত করেছে কে জানে! তার খুব ইচ্ছে হয় জানতে। কিন্তু এটা জিজ্ঞাসা করা কি শোভা পায় তার? হারুন মনে-প্রাণে চায় মেয়েটাকে ঘৃণা করতে। কিন্তু কিছুতেই পারে না। সেই ক্লান্ত-অবসন্ন মুখের মায়ায় সে যে বন্দী হয়ে আছে! এই মায়া কেন যে কাটছে না! হারুন নিজেকে বোঝায় বারেবার, মেয়েটা বিবাহিত, তার বাচ্চা-কাচ্চা হবে দুইদিন পরে, তার রয়েছে গোছানো একটা সংসার। কোন সাহসে হারুন তার প্রতি ভালোবাসা অব্যাহত রাখে! তবে বলা তো যায় না... মেয়েটার যদি ডিভোর্স হয়ে যায়! এমন কষ্টকল্পিত সম্ভাবনার কথা ভেবেছে বলে সে নিজের বোকামিতে ক্লিষ্ট হাসি হাসে। বড় বিষাদের সে হাসি।

তবে কে জানতো হারুনের এই একপাক্ষিক প্রেমের উপাখ্যানে আরো ক্লাইমেক্স যুক্ত হবে! মেয়েটি প্রতিমাসেই কয়েকবার করে আসে প্রেগনেন্সি কিট কিনতে। এবং প্রতিবারই ফলাফল নেগেটিভ, নাকি এ্যাবোরশোন জানা যায় না, মেয়েটি স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে আসে। সে গর্ভবতী হয় না আর।

হারুন আর না পেরে বন্ধুদের কাছে বলেই বসে তার এই একপাক্ষিক প্রেমের কথা। মেয়েটির বর্ণনা শুনে তারা গম্ভীর হয়ে যায়।
-আরে দোস্ত, ঐটাতো মাগী একটা। গতর বেইচা খায়। নষ্টা মাইয়া। তুই এর প্রেমে পড়লি? ভেরি স্যাড।
কথাগুলো বিশ্বাস করতে তার কষ্ট হয়, কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণ সহকারে পেশ করার ফলে আর কোনো সন্দেহ থাকে না যে মেয়েটি একজন দেহজীবি। যার ফলশ্রূতিতে সে দুঃখ ভোলার জন্যে বন্ধুদের সাথে মদ খেয়ে অশ্রাব্য ভাষায় মেয়েটাকে গালাগালি করতে থাকে।

-ক, আর ঐ মাইয়ার কথা ভাববি?
-জীবনেও না।
-ওর জন্যে কষ্ট পাবি?
-খানকি মাগীর জন্যে আবার কিসের কষ্ট?
-এইতো লাইনে আইছোস।

মদ্যপান শেষে তারা গান গাইতে গাইতে শহর পরিভ্রমণ করে।

পরদিন সকালে গতরাতের মদ্যপানজনিত হ্যাংওভারের ফলে প্রচণ্ড মাথাব্যথা নিয়ে ফার্মেসিতে বসে হারুন ভাবে, আর ঐ মেয়েকে কোনরকম পাত্তা দেয়া যাবে না। স্বাভাবিক কথাবার্তা তো দূরের কথা, নষ্ট মেয়েকে সে দোকানেই ঢুকতে দিবে না।

সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়, দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়, বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা আসে, ব্যস্ত সময়, কারো পেট ব্যথা, কারো ডায়রিয়া, কারো এসিডিটি, কতরকম লোক আসে, কতরকম ঔষুধ বিক্রী হয়, কিন্তু সেই মেয়েটা আর আসে না।

বন্ধু মারফৎ সে খবর পায়, মেয়েটি প্রেগন্যান্ট হয়েছে, এবং এবার সে আর এ্যাবোরশন করবে না। ফোলা পেট নিয়ে একদিন মেয়েটা এসে উপস্থিত হয় হারুনের ফার্মেসিতে মাথা ব্যথার ঔষধ কিনতে। হারুন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলো যে মেয়েটি এলে তাকে চূড়ান্তরকম অপমান করে বিদেয় করে দেবে। কিন্তু আবারও সেই ক্লান্ত অবসন্ন মুখ! আবারও কাজলকালো দুটি চোখ, ভুলিয়ে দেয় তাকে সমাজের যত সংস্কার, ভুলিয়ে দেয় রাগ-অভিমান-অপমানের মিশ্রবোধের জবাবে প্রতিশোধ নেয়ার কথা। সে মেয়েটিকে মাথাব্যথার ঔষধ দেয়ার পাশাপাশি এক প্যাকেট সিভিট দেয় বিনামূল্যে। বলে,
-এইসময় বমি বমি ভাব লাগতে পারে, সিভিট খায়েন, ভালো লাগবো।
মেয়েটি আবারও সেই অনুমতি প্রার্থনার ভঙ্গিতে তাকে বলে,
-আসি?

এহ ছিনালি দেখো! এই মাগীকে আর কখনও ফার্মেসিতে ঢুকতে দিবেনা সে।

মেয়েটি ফার্মেসি থেকে বের হয়ে চলে যায়, হারুন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। হারুন সিদ্ধান্ত নেয় মেয়েটার জন্যে গর্ভাবস্থায় মায়েদের জন্যে বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত দুধ কিনে রাখবে। এই সময়টায় খুব সাবধান, নিয়ম মেনে না চললে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। নষ্টা মেয়েটার জন্যে হারুনের মন কেন যে বারেবার আর্দ্র হয়ে আসে!

#অপর্ণা মম্ময়ের গল্পভাবনা থেকে অনুপ্রানিত হয়ে লেখা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫
৯২টি মন্তব্য ৯০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পার্বত্য চট্টগ্রাম- মিয়ানমার-মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্য মিলে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের চক্রান্ত চলছে?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০১


মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা সেপ্টেম্বর মাসে আমেরিকা ভ্রমণ করেছেন । সেখানে তিনি ইন্ডিয়ানা তে বক্তব্য প্রদান কালে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী chin-kuki-zo দের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার সাহায্য চেয়েছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×