কারণক্রেতা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
এভাবে আমার দিকে তাকাবেন না! হ্যাঁ, কিছুটা মোটা হয়ে গেছি স্বীকার করছি। তারপরেও বডি মাস ইনডেক্স অনুযায়ী আমি স্লাইটলি ওভারওয়েটেড মাত্র। অবেসিটির পর্যায় আসতে অনেক দেরী আছে। এটা ঠিক, ইদানিং আমি খুব বেশি বেশি খাচ্ছি। চর্ব-চোষ্য-লেহ্য-পেয় যা পাচ্ছি সামনে বাদ দিচ্ছি না কিছুই। ব্যাপারটা আমার আদর্শের সাথে সংঘাতপূর্ণ। কারণ আমি বরাবরই সংযমের নীতিতে বিশ্বাসী। এতদিন অধিক ভোজনের দায়ে অভিযুক্ত করেছি কাছেরজনদের সবসময়। সেই আমিই কী না শরীরে চর্বি জমিয়ে শম্বুক গতির হয়ে গেছি! তবে এজন্যে শুধুমাত্র আমাকে দোষারোপ করলে ভুল করবেন। এর পেছনে রয়েছে ষড়যন্ত্রকারী ভাগ্যের কূটচালের নাতিদীর্ঘ ইতিহাস। শুনুন তবে,
আমার উত্তরবঙ্গ নিবাসী চাচার রয়েছে বিশাল পেয়ারা বাগান। মাঝেমধ্যে তাকে ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় আসতে হয়। ঢাকায় এলে আমাদের বাসায়ই থাকেন। আর সাথে নিয়ে আসেন প্রচুর পেয়ারা। সবুজ, কচকচে পেয়ারা। কখনও এক ঝুড়ি, কখনও দুই ঝুড়ি। এমন টাটকা তাজা ফলের লোভ কেই বা সামলাতে পারে? তবে আগেই তো বলেছি, আমি ছিলাম সংযমে বিশ্বাসী। যে কোন কিছুই অতিরিক্ত করাকে নিজের দুর্বলতা মনে করতাম। তাই এক ঝুড়ি থেকে কখনও ৫-৬ টির বেশি পেয়ারা খাই নি। কিন্তু চাচা এবার আমাকে প্রলুদ্ধ করলেন বেশি পেয়ারা খেতে। সাধারণত তার সাথে আমার তেমন একটা কথা হয় না। কাজের লোক তিনি। ঢাকায় এলে সারাদিন এখানে-ওখানে তাঁর বিভিন্ন কাজ থাকেই। বাসায় আসার পর খেয়েদেয়ে দ্রুতই ঘুমিয়ে পড়েন। তাই তার সাথে আমার সেভাবে কথা বলা হয়ে ওঠে না। শেষবার যখন তিনি এলেন মাসখানেক আগে তখন তার কাজের চাপ কম ছিলো। একদিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে দেখি তিনি আরাম করে সোফায় আধশোয়া হয়ে চায়ের কাপ হাতে চুমুক দিতে দিতে টিভি দেখছেন। আমাকে দেখে আন্তরিকতার সাথে আহবান জানালেন বসতে। আমরা বসে দেশ-দশ-পরিবার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু করলাম। কথা প্রসঙ্গে অবধারিতভাবে শারীরিক অবস্থার জিজ্ঞাসা চলে এলো। আমিই পাড়লাম প্রসঙ্গটা। তিনি বয়স্ক মানুষ। তাঁর শরীরের খোঁজ নেয়াটা আমার কর্তব্য এবং সৌজন্যতার মধ্যেই পড়ে। তিনি জবাবে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে মফস্বলের তাজা সবজি এবং ফলমূলের প্রশংসা করে জানালেন যে তারা তাঁকে যথেষ্ট ভালো রেখেছে। শুনে বেশ হতাশা এবং ঈর্ষা বোধ করলাম। আমার শরীরটা বেশি ভালো যাচ্ছিলো না। ঠিকমত পেট পরিষ্কার না হবার ফলে মেজাজ খিঁচড়ে থাকতো। হতাশা বোধ করতাম। মনে হতো যে যাদের কোষ্টকাঠিন্য নেই, তারাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। চাচাকে বললামও সে কথা। শুনে তার মুখে প্রশান্তির হাসি খেলে গেলো। এটাকে নেহায়েৎ স্বার্থপর এবং নিষ্ঠুর আচরণ মনে হলো আমার। তবে আমার ধারণা ভুল ছিলো। তিনি আমার অসুবিধার ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে তা নিরসনের জন্যে একটি উপায়ও বাতলে দিলেন।
-বেশি বেশি কইরে পিয়ারা খাবে বুঝিসো ভাতিজা? পিয়ারা খালি পরে দেখপা যে পেট একদম কিলিয়ার হয়ি গেছে।
-বেশি বেশি কোন কিছুই খাওয়া ঠিক না চাচা। সবকিছুরই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে।
গম্ভীর কন্ঠে দ্বিমত প্রকাশ করি আমি।
হাত দিয়ে মাছি তাড়ানোর ভঙ্গি করে আমার কথা উড়িয়ে দেন তিনি।
-আরে দূরো! ওসব কিচ্ছু হবিনানে। তুমি খায়েই দেখো না।
সেই রাতে খাবার পর দুটো ডাঁসা ডাঁসা পেয়ারা খেয়ে আশু ফলপ্রাপ্তির প্রত্যাশা নিয়ে ঘুমোলাম। চাচার টোঁটকা কিছুটা হলেও কাজে লাগলো। তখন আমার মাথায় বেশি বেশি পেয়ারা খাবার চিন্তা এলো। তবে তার আগে সতর্কতা হিসেবে ইন্টারনেটে "Side effects of guava" লিখে ফলাফল দেখে নিশ্চিত হয়ে নিলাম। পেয়ারা এ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে খুবই ভালো, শরীরের জন্য উপকারী, এসব ভালো ভালো কথা পড়ার পর সাইড এফেক্ট সেকশনে গিয়ে দেখলাম খাদ্য হিসেবে পেয়ারা খাওয়া নিরাপদ, ওষুধ হিসেবে খেলে কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কী না এ সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য তাদের কাছে নেই। গর্ভবতী অবস্থায়... ধুর ছাই এটা পড়ে কী হবে! মোদ্দাকথা, পেয়ারাকে একটা নিরাপদ ভেষজ হিসেবে মেনে নিয়ে এটা বেশি পরিমাণে খেতে যে সংকোচটা ছিলো তা কেটে গেলো আমার। সেদিন সারাদিন মোট চারটে পেয়ারা খেলাম। এভাবে দুইদিন খাবার পরে সত্যিই ভালো ফল পেলাম বেশ। পেট ক্লিয়ার হবার ফলে আমার মনটাও বেশ প্রসন্ন হয়ে গেলো, আর ঠিক তখন আমি আবিষ্কার করলাম বেশি বেশি পেয়ারা খাবার ভয়াবহ সাইড ইফেক্ট। স্থূলতার সাথে পেয়ারার একটা সূক্ষ্ন সংযোগ আছে। পেয়ারা রূচিবর্ধক। যেকোন ধরণের ভিটামিন সি জাতীয় ফল বা সবজিই অবশ্য তাই। তবে ভিটামিন সি জাতীয় দ্রব্যের মধ্যে পেয়ারা আমার সবচেয়ে প্রিয় হওয়াতে এটাই বেশি খাই এবং সুরূচির কোপানলে পড়ি। প্রচুর ক্ষুধা পায় আমার, খেতে থাকি হা-ভাতের মত। খাবার পরেও একটা না খেলে ভালো লাগে না। খাবার আগে খেলে ক্ষুধা এবং রূচি বাড়ে, পরে খেলে হজমসহায়ক হয়। ভিটামিন সি'র প্রভাবে আমি খাদ্যের দুষ্টচক্রে পড়ে যাই, আমার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তিত হয়, আমি ওজন অর্জন করতে থাকি। আর একবার বেশি খেয়ে পাকস্থলীর আকার বেড়ে গেলে সেটা আরো খাবার চায়।
ক্রমশ স্থূলকায় হয়ে ওঠার পেছনে এটাই আমার নেপথ্য ইতিহাস।
ব্যাপারটা এখন বিপদজনক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। বিএমআই অনুযায়ী আমি এখন কেবল "স্লাইটলি ওভারওয়েট" না, "জাস্ট ওভারওয়েট"। চেষ্টা করেও কমাতে পারছি না। একজন সচেতন ব্যক্তি হিসেবে আমার এ করুণ অবস্থার নেপথ্য কাহিনী প্রকাশ করে সবাইকে সতর্ক থাকার জন্যে বার্তা দেবার প্রস্তুতি নেই আমি। প্রথম দফায় প্রেসক্লাবে "ভিটামিন সি জনিত স্থূলতা"র ব্যাপারে সচেতনতা তৈরি করতে অনশন করা যেতে পারে। এতে জনসমর্থন বেশি পেলে একটা ছোটখাট হলে সাংবাদিকদের ডেকে প্রেস কনফারেন্স করবো। এরপর দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন, পত্রপত্রিকায় লেখালেখি, ফেসবুক ইভেন্ট খোলা...অনেক কাজ রয়েছে বাকি। টিভি চ্যানেলগুলোকেও জানাতে হবে।
প্রেসক্লাবের সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতীক অনশন করেছি আজ। প্রথম প্রচেষ্টায় তেমন জনসমাগম হবে না ভেবেছিলাম, কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে বেশ কিছু লোকজন জুটে গেলো আমার সাথে। তারা আমাকে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলো এ ব্যাপারে। এটাইতো আমি চাইছিলাম! কোত্থেকে অপরিচিত একটি পত্রিকার একজন সাংবাদিকও জুটে গেলো। স্বস্তির শ্বাস ফেললাম আমি। অপরিচিত পত্রিকা হোক, সাংবাদিক তো! প্রথম দফায় এর থেকে বেশি আর কী বা চাইতে পারি আমি! তবে ছোকড়ার প্রশ্ন করার ধরণ ভালো লাগলো না আমার কাছে। মর্মান্তিক বিষয়টার বেদনা সে উপলদ্ধি করতে পারছে বলে মনে হলো না। অবশ্য সাংবাদিকেরা এমনই হয়! সে আমাকে অস্বস্তিকর কিছু অনুসন্ধানী প্রশ্ন করতে লাগলো, যার কোন মানেই হয় না!
-আপনার পেটের সমস্যা কী এখনো আছে?
-না।
-আপনার চাচা কি তাঁর ঝুড়িভর্তি পেয়ারা নিয়ে এখনও আছেন বাসায়?
-না, নেই।
-তাহলে আপনার বর্তমানের পেয়ারা প্রাপ্তির উৎস কী? এখন তো সিজনও নেই।
-আমি তো এখন আর পেয়ারা খাই না!
-অন্যান্য কোন ভিটামন সি জাতীয় ফল/সবজির প্রতি এ্যাডিকশন?
-তাও নেই।
-তারপরেও আপনি যেহেতু বেশি খাচ্ছেন, সেক্ষেত্রে আপনার স্থূলতার জন্যে ভিটামিন সি কে দায়ী না করে নিজের রসনাকামনাকেই দায়ী করা উচিত নয় কি?
অত্যন্ত আক্রমণাত্মক প্রশ্ন। আমি বিস্মিত হয়ে যাই তার এহেন নির্দয় প্রশ্নবানে। মানুষের মধ্যে থেকে মানবিকতা উঠেই গেলো নাকি? চোখ ছলছল করে ওঠে আমার।
-দেখুন...
কিছু একটা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলি আমি। বাক্য অসম্পূর্ণই রয়ে যায়। তবে তা মাটিতে পড়তে দেয় না উপস্থিত আবেগপ্রবণ এবং সমব্যথী জনতা।
-একটা লোক ভিটামিন সি এর এ্যাডভার্স এফেক্টে বিপর্যস্ত আর আপনি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জেরবার করছেন। উনাকে কি রিমান্ডে নিয়েছেন নাকি?
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক প্রতিবাদী তরুণের মার্জিত প্রতিবাদে শামিল হয় অন্যেরাও। সাংবাদিকদের নামে নানারকম কটূক্তি এবং দুয়োধ্বনির মাধ্যমে তারা তাকে অকুস্থল থেকে চলে যাবার আহবান জানায়। সাংবাদিকটি গতিক ভালো না বুঝে কেটে পড়ে। জনতার মধ্য থেকে স্থূলতম ব্যক্তিটি আমার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে আবেগে।
-ভাই! আপনি যে কী ভালো একটি কাজ করছেন তা নিজেও জানেন না। সবাই আমাকে মোটা বলে ক্ষ্যাপায়। আমি নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম হরমোনাল প্রবলেম বলে। কিন্তু প্রতিবেলা কাচ্চির সাথে যে দুটো করে লেবু খাই এ কথা তো আমার মনেই আসে নি। আপনি আমাদের পথের দিশারী।
এটুকু বলার পর তার কন্ঠ থেকে আবেগের মেদ ঝরে পড়ায় তা ঝরঝরে শরীরের জোশ লাগা তেজালো স্বরে পরিণত হয়। সে উল্টোদিকে ঘুরে জনতার উদ্দেশ্যে শ্লোগান দেয়,
"ষড়যন্ত্রকারী ভিটামিন সি, নিপাত যাক নিপাত যাক!"
ততক্ষণে অনেকেই চলে গেছে তেমন মজা না পেয়ে। তাই পাল্টা শ্লোগান আসে খুব ক্ষীণস্বরে। আমি প্রথম দিনের সাফল্যে সন্তুষ্ট হয়ে স্থানত্যাগ করি। সামনে আরো অনেক কাজ পড়ে রয়েছে। সেসব নিয়ে ভাবতে হবে গভীরভাবে।
আজকের ঘটনার ছবি এবং আবেগপ্রবণ কিছু কথাবার্তা দিয়ে একটা ফেসবুক ইভেন্ট ক্রিয়েট করি আমি। ভিটামিন সি এর কারণে আমার ফুলে ফেঁপে ওঠা, সৌন্দর্যহানি এবং তৎসংশ্লিষ্ট বিপত্তিসমূহ, যেমন বান্ধবী হারানো, বন্ধুদের টিটকারি, ইত্যাদি বর্ণনা করি সবিস্তারে। সেইসাথে সাবধান করে দেই যে কেউ এর শিকার হতে পারে যখন তখন। এ এক নীরব এবং ভয়াল ঘাতক। ইভেন্টটি আশাতীত সাড়া পায়। শেয়ারে শেয়ারে ভরে যায় ওয়াল। একজন নব্য সেলিব্রেটি কবি এটা নিয়ে নিম্নে উল্লেখিত কবিতাটি লিখে ফেললে সবার উৎসাহ তুঙ্গে ওঠে,
তুমি ভেবেছো বেশি খাও বলে স্থূল
ভুলেও করোনা এমন ভুলও
হয়তোবা ডাঁসা পেয়ারার বেশে
গলার ভেতর সেঁধিয়ে গেছে ক্ষুধাতুর ভিটামিন সি
নিশ্চুপ আজ মানবতা, নিশ্চুপ রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে থানার ওসি
জেগে ওঠো বন্ধুরা, বন্ধুর পথ দিতে হবে পাড়ি
শুলূকসন্ধানে হয়োনা তুমি আনাড়ী
(এক হাজার শেয়ার চাই)
কবিতার শেষ লাইনটি, "এক হাজার শেয়ার চাই" ছিলো খুবই স্ট্রাইকিং। মানুষের মধ্যে আলোড়ন তুলে তা ছড়িয়ে যেতে থাকে। কিছুদিন পর আমি ইভেন্টের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যাওয়া কয়েকটা ছেলেকে ডেকে পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে বলি। এবার আমাদের সময় হয়েছে বড় পরিসরে প্রেস কনফারেন্স করার।
প্রেস কনফারেন্সের দিন শহরে প্রচন্ড যানজট ছিলো। কোথায় যেন আগুন লেগেছে, সেজন্যে। আমরা বিরক্ত হতে থাকি। সময়মতো শুরু করতে না পারলে মিডিয়ার লোকজন ভালোভাবে ট্রিটমেন্ট দেবে না। আমাদের মধ্যে থেকে একজন খুব বোকার মত বলে ওঠে এইযে অগ্নিকান্ড, যানজট, বিল্ডিংধ্বস এসব নিয়েও আমাদের ভাবা উচিত। এসবের কারণ বের করে প্রতিবাদের সমাধানের জন্যে কিছু করা যায় কী না ভেবে দেখার অনুরোধ করলো সে। আমরা তাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিলাম। তুচ্ছ এবং গা সওয়া বিষয় নিয়ে কাজ করে কোন লাভ আছে? মিডিয়া দু পয়সা দাম দেবে না। আমাদের বর্তমান ভাবনার বিষয়টিতে স্থির থাকার জন্যে উপদেশ দেই আমরা তাকে। ততক্ষণে জ্যাম ছেড়ে গেছে। অগ্নিস্থলের পাশ দিয়েই আমাদের গাড়ি চলে যায় হুশ করে। আমরা মুগ্ধ হয়ে আগুনের লেলিহান শিখা দেখি। হঠাৎ করে কাছাকাছি এসে যাওয়ায় আগুনের ভাঁপ গায়ে লাগলে আমরা ড্রাইভারকে দ্রুত গাড়ি চালানোর তাড়া দেই।
কনফারেন্সে আমাদের তরুণ সৈনিকরা চমৎকার সব ভাষণ দিতে থাকে। শুধুমাত্র ভিটামিন সি নিয়ে না, আমরা বৃহৎ পরিসরে আলোচনা করি। নিজেদের নানারকম অভিজ্ঞতার বয়ান এবং বিশ্লেষণ আর সাংবাদিকদের সাথে প্রাণবন্ত প্রশ্নোত্তরে অনুষ্ঠানটি দারুণ জমে ওঠে। সমাপনী ভাষণটা দিতে গিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠি।
-আমাদের এই এ্যান্টি ভিটামিন-সি ক্যাম্পেইন অনেকের চোখ খুলে দিয়েছে। আপনারা আজকে অনেকের কথা শুনলেন। অনেক কিছু জানলেন। অনেক অজানা অন্ধকারের দুয়ার খুলে গেলো। এই যেমন যে ছেলেটি পর্ণোহলিক, নিজেকে সে পারভার্ট ভেবে অনুশোচনায় ভুগতো। কিন্তু আমাদের ইভেন্টের সাথে সম্পৃক্ত থেকে সে বুঝতে পেরেছে নিজেকে দোষ না দিয়ে কারণ অনুসন্ধান করে কিছু একটার ওপর চাপিয়ে দিলে কত ভালো থাকা যায়! সে এখন দৃপ্তকন্ঠে বলতে পারে, ছোটবেলায় তাকে বেশি মধু খাওয়ানোর ফলে তার যৌন উদ্দীপনা বেড়ে গেছে। তাই সে এত পর্ণ দেখে। এতে তার কোন দোষ নেই। এখন সে মধু খাওয়ানোকে দুষে তৃপ্তি করে পর্নো দেখতে পারে। কিংবা ধরুন সেই ছেলেটার কথা, মিথ্যা কথা বলে টাকা নেয়া যার অভ্যাস, সে বলতে পারে এটা তার রাজনীতিবিদ বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকারসুত্রে পেয়েছে। সেখানে তার কী করার আছে? সেভাবেই আমরা যারা স্থূল, তার পেছনে বেশি খাওয়াই কি কেবল কারণ? বেশি কেন খাই? ভিটামিন সি এর রূচিবর্ধকতার প্রভাবে। কেউ লেবু, কেউ পেয়ারা, কেউ বরই, কেউ আমলকি দ্বারা আক্রান্ত। তাই বেশি খাওয়ার জন্যে নিশ্চয়ই আমরা দায়ী হতে পারি না!
প্রবল করতালির মধ্যে হৃষ্টচিত্তে আমার বক্তব্য শেষ করি।
শীতকাল এসে গেছে। আমার জন্যে সুসময়। টাটকা শাক-সবজি আর ফলমূলে বাজার ভরপুর। টমেটো আর ফুলকপি দিয়ে রুইমাছ রান্না করা হবে আজ। আসন্ন ভোজের সুখকল্পনা করতে করতে শীতের সকালের পুষ্টিকর রোদ শরীরে নিচ্ছি। এই রোদে ভিটামিন ডি থাকে। ভিটামিন ডি এর ওভারডোজে অবশ্য কিডনীর সমস্যা দেখা দিতে পারে, আর্টারি হার্ডেনিং হতে পারে। তার জন্যে এই রোদ তোলা থাক। ইদানিং অধিকমাত্রায় মদ্যপান আর ধূমপানের কারণে অনেকেই আমার এসমস্ত অঙ্গ নিয়ে ভয় দেখানো কথাবার্তা বলছে। কখনও তেমন পরিস্থিতি এলে বলে দেবো যে এগুলো ভিটামিন ডি এর প্রভাব। শীতের সকালে রোদ তাপানোর জন্যে নিশ্চয়ই আমাকে দোষ দেয়া যায় না? আর তারপর আমার সাহায্যার্থে একটা ফেসবুক ইভেন্ট খুলবো। "ভিটামিন ডি এর ভয়ানক ছোবলে মুমূর্ষু একজনকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন"। আমি ইদানিং সেলিব্রেটি হয়ে গিয়েছি। আমার জন্যে সাহায্যের অভাব হবে না। শীতের রোদে শরীর এলিয়ে দিয়ে টমেটো আর ফুলকপি দিয়ে তৈরি তরকারির সুখকল্পনার সাথে সন্ধ্যায় কারো কাছ থেকে একটা ভদকার বোতল ম্যানেজ করার ইচ্ছেসুখ যোগ হয়।
৭২টি মন্তব্য ৭২টি উত্তর
পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন
আলোচিত ব্লগ
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন
জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন
=বেলা যে যায় চলে=
রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।
সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন