somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কিছু শকিং মুভি।

১৬ ই জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শকিং মুভি। এগুলো মূলত বিকৃত যৌনতা,ভায়োলেন্স আর পারভার্শনের মিশেলে গড়া। তবে এসব থাকলেই যে একটা ছবির শক ভ্যালু থাকবে, তা নয়। পরিচালকের মুনশীয়ানা না থাকলে সবটাই বৃথা। আমি নিজে ছবি দেখে শকড হতে পছন্দ করি।সেলুলয়েডে অন্ধকারের মনস্তত্বের চিত্রায়ণ আমাকে কেন যেন খুব টানে। আর কথা না বাড়িয়ে তালিকায় যাই।

#La pianiste: অস্ট্রিয়ান পরিচালক Michael Haneke এর অসামান্য একটা চলচ্চিত্র। একজন নিঃসঙ্গ নির্লিপ্ত পিয়ানো টিচারের কাহিনী এটি। ত্রিশোর্ধ এরিকা। মায়ের সাথে বসবাস করেন। কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। ছেলেদের প্রতি তীব্র অনীহা। কোন এক অজানা কারণে,ছবিতে যা বলা হয়নি এরিকার মা হিজাবি মহিলাদের মত এরিকাকে ছেলে সংস্পর্শ থেকে বাঁচিয়ে রাখতে চান সবসময়। আপাতদৃষ্টিতে অতি সাধারণ এই এরিকা কিন্তু ভয়ংকর রকম মনোবিকারগ্রস্ত। তার সবচেয়ে ছোট্ট উদাহরণ, পিয়ানো ক্লাশ শেষে তিনি মাঝেমধ্যে পর্নো মুভি দেখার বুথে গিয়ে একলা নিজের অবদমিত বাসনা মেটান। আরেকটা ছোট্ট উদাহরণ দেই, পার্কিং করে রাখা গাড়ীতে সঙ্গমরত তরুণ-তরুণীদের লীলা দেখতে জানালার কাঁচের সাথে সন্নিবিষ্ট হয়ে এরিকা সতৃষ্ণ চোখে তাকিয়ে থাকে।
আরো অদ্ভুত এবং ভয়ানক মনোবিকারের কাহিনী না হয় ছবিতেই দেখে নিয়েন। ছবির শেষ দৃশ্যটা একটা মাস্টারপিস। ওটা অবশ্য যাকে বলে প্রতীকি, অথবা সুররিয়্যালিজমের খেলাও বলা যেতে পারে। এরিকার চরিত্রে ইসাবেলা হুপার্টের অভিনয় আমার প্রিয় তালিকার উপরের দিকেই থাকবে।
#Seul contre tous: কথা হচ্ছে যে, মানুষের মনের বিভৎসতম,অন্ধকারময় রূপ নিয়ে ছবি তৈরি করার আদৌ কি কোন প্রয়োজনীয়তা আছে? পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই বাঁচার তাগিদে লড়ছে, কেউ বা বিলাসিতার চাদরে নিজেকে ঢেকে খুব করে ওম পোহাচ্ছে। তাহলে খামোখা কেন এইসব বিকৃতি, মনের অন্ধকার গলি ঘূঁপচি নিয়ে শিল্পের প্রয়াস? সে থাকগে!
এই ফরাসি ছবিটায় পরিচালক Gasper Noe একজন কসাইয়ের মনের ভেতরে ঢুকেছেন। যে কখনও হাসেনা। যার ভেতর কোন আবেগ জাতীয় অনুভূতি নেই। মা হারা একমাত্র মেয়েটাই তার যাবতীয় সম্বল। কিন্তু মূক ও বধির এই মেয়েটাকে সে রেখে আসে কোন এক পরিচর্যা কেন্দ্রে।
ভাগ্যের অণ্বেষনে পাড়ি জমায় প্যারিসে, নতুন একজন সঙ্গীনী নিয়ে। কিন্তু নিরাসক্ত কসাই( তার নাম বলা হয়নি ছবিতে) ক্রমশঃ বিরক্ত হয়ে উঠতে থাকে তার অন্তস্বত্বা স্ত্রী আর বুড়ো শ্বাশুড়ীর ওপর।
একদিন সঙ্গীনির পেটে ক্রমাগত লাথি মেরে রক্তাক্ত করে বেড়িয়ে পরে তার পুরোনো শহরের উদ্দেশ্যে। ছবিতে মনোলগ স্টাইলে তার চিন্তা ভাবনা, আক্রোশ, ঘৃণা আর ক্ষোভ দেখানো হয়েছে।
নেতিবাচক মানসিকতায় ভরা কসাই ধীরে ধীরে দারিদ্রের আঘাতে জর্জরিত হতে হতেও একসময় সুখ খুঁজে পেতে চায়। পাপ! পাপ!পাপ! ভয়ংকর পাপ। আমরা ঘৃনা করি এই নিকৃষ্টতম পাপকে, এবং পাপীকে। কিন্তু ছবিটাকে নয়। পরিচালককে স্যালুট। এরকম ধাক্কা দেয়ার ক্ষমতা সবার থাকেনা।
#Mysterious Skin: এ ছবিটা আমার কাছে ভালো লাগেনি মোটেও। খুবই প্রেডিক্টেবল লেগেছে। ঐ আর কি, শৈশবে এ্যাবিউজড হয়ে মানসিকভাবে কিছুটা ভারসাম্যহীন একজন,আরেকজন হয়ে যায় জিগোলো! আর কিছুক্ষণ পর পর শকিং ভ্যালু বাড়াতেই হয়তোবা হোমোসেক্সুয়ালিটির অবতারনা। তবে শেষের ফিনিশিংয়ে শকিং ব্যাপার স্যাপার আছে, বেশ ভালোভাবেই। ছবিটা পছন্দ না হওয়ার পরেও তালিকায় দিলাম, কারণ এটার আইএমডিবি রেটিং ৭.৯।ভালো লাগতে পারে হয়তো অনেকেরই।
#Requiem for a Dream: নাহ, এটায় কোন পারভার্শন, মনোবিকার এসব কিছু নেই। কিছু হতভাগ্য মাদকাসক্তদের নিয়ে তৈরি একটা ড্রামা। কিন্তু শেষ পনের মিনিট দেখা খুব কঠিন, যদি আপনি ছবিটা প্রথম থেকে মনোযোগ দিয়ে দেখে থাকেন। চরিত্রগুলোর এমন করুণ পরিণতি, এবং চারজনের অবস্থার দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তর এমন নিপুনভাবে করা হয়েছে,....হ্যাটস অফ! ঐ দৃশ্যটার কথা কখনই ভুলতে পারবোনা। জেনিফার কনোলি। ড্রাগের নেশায় উন্মাতাল। কোন উপায় নেই তার। ভালোবাসা, নৈতিকতা সব অর্থহীন। সেই পাপের ঘরে....একদল পারভার্ট তাকে ঘিরে সোল্লাসে বলছে ""Ass to ass...ass to ass" আমি প্রায় চিৎকার করে উঠেছিলাম! নার্ভের ওপর দিয়ে খুব চাপ গেছে সেইরাতে।

#Irréversible: আবারও Gasper Noe! এই ছবিটা একই সাথে শকিং, ডিসগাস্টিং, ডিস্টার্বিং যা খুশী বলতে পারেন। দশ মিনিটের ধর্ষণ দৃশ্য, শিমেল আর সমকামীদের উল্লম্ফন। সেইসাথে তীব্র প্রতিশোধ স্পৃহা, ভয়ংকর ভায়োলেন্স, আর ট্রাজেডি। যথার্থ শকিং। কারো কারো কাছে এটা একটা পারভার্ট মুভি। আসলেই কি তাই? নাকি, মুভি এ্যাবাউট পারভার্টস? আসলে এই ছবির মূল চরিত্র হচ্ছে সময়। এই কারণেই রিভার্স ক্রোনোলজি। শুরুটাই শেষ, অথবা শেষটাই শুরু। অনেকেই হয়তো দেখেছেন ছবিটা। যারা দেখেননি, তাদের জন্যে আগাম সাবধানবানী, নরম চিত্তের হলে ছবিটা না দেখাই ভালো। আর যারা নরম চিত্তের নন, তারা দয়া করে একটু অনুধাবনের মন নিয়ে পুরোটা দেখবেন

#Cutting Moments: একটা শর্টফিল্ম। আধাঘন্টার। কতটাই বা শকিং হতে পারে? ঠিক যতখানি হওয়া সম্ভব। প্রচুর কাটাকুটি। প্রচুর রক্ত। কিন্তু সেটাই সব নয়। এর মাঝে আছে শক্তিশালী এক বক্তব্য। নীরস, ফ্যাকাশে হয়ে আসা দাম্পত্য জীবনকে এ যেন রক্তের লাল রঙে রাঙানো। যে রক্ত হৃদয় থেকে উৎসারিত নয়, নয় প্রথম মিলনের সুখকর ব্যথাতুর রক্তক্ষরণের মত।
এটা দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে একটা গল্প লিখেছিলাম, পড়তে পারেন।
Click This Link


ইচ্ছে ছিলো দশটা মুভির তালিকা করা। আপাতত এই ছয়টাই থাক!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই আগস্ট, ২০০৯ রাত ১০:৫৮
১৬৪টি মন্তব্য ১৬৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×