সহজলভ্যতা ও তুলনামূলক সস্তা হবার কারনে আজকাল আমাদের সবার হাতেই শোভা পায় ডিজিটাল ক্যামেরা। তা সেটা মুঠোফোন এর ক্যামেরাই হোক অথবা পয়েন্ট অ্যান্ড শুট। তবে আমাদের মাঝে অনেকেই আবার একটু বেশী খুঁতখুঁতে, যাদের জন্য পয়েন্ট অ্যান্ড শুটের সীমিত ফিচারগুলো যথেষ্ট নয়। আমরা চাই ছবি তোলার সময় সব কিছু যেন থাকে আমাদের নিজের হাতে, ক্যামেরা যেন নাক না গলায়। আর তাদের জন্য সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত বস্তু হল পয়েন্ট অ্যান্ড শুট এর বড় ভাই ডিএসএলআর।
ডিএসএলআর কি?
এটা হচ্ছে এমন এক ধরনের ক্যামেরা যেটায় আয়নার মাধ্যমে আপনি ঠিক লেন্স এ যা দেখা জাচ্ছে ভিউফাইন্ডার এও তাই দেখতে পাবেন। আরও একটি আবশ্যিকতা আছে যেটা হল এই ক্যামেরার লেন্স চেঞ্জ করা যাবে। এই হল এর সংক্ষেপে মোটামুটি কেতাবি সংজ্ঞা।
কেন কিনবেন ডিএসএলআর?
ধরুন আপনি মনের সুখে ছবি তুলছেন। কিন্তু বেওকুফ পয়েন্ট অ্যান্ড শুট সাবজেক্ট রেখে ফোকাস করল আশেপাশের অন্য কোন অফ টপিকের উপর। ভুক্তভুগি মাত্রই জানেন জিনিসটা কতটা বিরক্তিকর। আবার ধরুন রাতের বেলা চাঁদ মামার ছবি তুলতে চাচ্ছেন, কিন্তু ক্যামেরায় তো ফিক্সড লেন্স যেটায় ৩গুনের বেশী জুম হয়না। চাঁদ একটি ছোট্ট ডট হয়ে ধরা দেবে কামেরায়। আর রাতের বেলা কম আলোতে ছবি তোলার চেষ্টা করলেই বেরসিক ক্যামেরা তার কর্কশ ফ্ল্যাশ জ্বেলে দেয়। ফল হয় ভয়াবহ। মানুষের চেহারাই পালটে যায় তখন, স্কিন টোন হয় ধবল রুগীর মত এবং চোখ হয় রক্ত লাল (red eye প্রব্লেম জাকে বলে)। আর আপনি যদি ফ্ল্যাশ ছাড়া ছবি তুলতে যান তখন দেখবেন সবই আবছা ও অন্ধকার। কিছু যদি দেখাও যায় তাহলে সেখানে এত নয়েজ থাকবে যে বাবহারের অযোগ্য হয়ে পরবে।
ডিএসএলআর আপনাকে দিতে পারে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি। এটা দিয়ে আপনি পাচ্ছেন ছবির বিভিন্ন বিষয় আপনার নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার সুবিধা। ডিএসএলআর এ থাকে পয়েন্ট অ্যান্ড শুট এর চেয়ে অনেক বড় সেন্সর যেকারনে কম আলোতেও নয়েজ এর মাত্রা থাকে সামান্য এবং ছবির কোয়ালিটি থাকে অটুট। রাতের বেলা কাজ করতে লাগিয়ে নিতে পারেন একখানা ওয়াইড অ্যাপারচার এর প্রাইম লেন্স। এছারাও বিভিন্ন কাজের জন্য আলাদা আলাদা লেন্স লাগানর সুবিধাতো আছেই।
তবে আপনি কি ডিএসএলআর কেনার জন্য সত্যি প্রস্তুত?
যদি আপনি সত্যিকার অর্থেই ছবি তুলতে এবং ছবি তোলা শিখতে আগ্রহী হন শুধু তবেই সামনে আগান। আমরা সকলেই কিন্তু ছবি তুলতে আগ্রহী; বিয়ে, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অথবা কোথাও ঘুরতে গেলে আমাদের ক্যামেরা কিন্ত সবসময় ব্যাস্তই থাকে। তবে শুধু ছবি তুলতে আগ্রহী হলেই হবে না, ছবি তোলা শেখার প্রতি আগ্রহী হতে হবে। কারন ডিএসএলআর অপারেট করতে হলে বেশ কিছু টেকনিক্যাল জিনিস জানতে হবে এবং মাথায় রাখতে হবে। তা নাহলে ডিএসএলআর এর অটো মোড এই আটকে থাকবেন, তখন একটি ১০ হাজার টাকার পয়েন্ট অ্যান্ড শুট আর আপনার লাখ টাকার ক্যামেরা আর লেন্স এর মধ্যে তফাৎ টা কি থাকল?
তাই সবাই ডিএসএলআর কিনছে দেখে আমারো কিনতে হবে ব্যাপারটা যদি এমন হয় তাহলে নিজেকে সামলে নিন। নিজেকে প্রশ্ন করুন আপনি কি আসলেই ছবি তোলা শিখতে সময় ও শ্রম দিতে প্রস্তুত? যদি উত্তর না হয় তাহলে টাকা অপচয় না করে একটা ভালো পয়েন্ট অ্যান্ড শুট কিনে ফেলুন, কারন ওতে অটো মোডে বেটার ছবি সহজে তুলতে পারবেন।
আর যদি অপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর হয় হ্যাঁ, তবে আপনি ডিএসএলআর কেনার জন্য প্রস্তুত!
কোন ব্র্যান্ড কিনবেন?
নিকন না ক্যানন? নাকি সনি, প্যানাসনিক অথবা পেন্ট্যাক্স? আসলে যেহেতু নিকন আর ক্যানন বহু বছর ধরে ক্যামেরা জগতের মার্কেট লিডার তাই ওদের ক্যামেরা কেনাই সেফার। এই দুই কোম্পানির ক্যামেরা বানানর ক্ষেত্রে যে অভিজ্ঞতা আছে তা তাদের ক্যামেরায় পরিস্ফুটিত হয়। তবে তার মানে এই না যে অন্য কোম্পানি ক্যামেরা ভালো বানায় না। তবে আমি বলব নিকন অথবা ক্যানন এর মাঝেই থাকুন, তাহলে লেন্স কেনার সময় ও পাবেন অনেক বেশী অপশন।
কেনার সময় ক্যামেরার কি কি দেখবেন?
দেখবেন ক্যামেরার কি কি ফিচার আছে এবং আপনার কি কি ফিচার দরকার। আরগনমিক্স খুবই ইম্পরট্যান্ট এখানে। মানে ক্যামেরার গ্রীপ কেমন, হাতে বেশি ভারি লাগছে না তো? আবার দেখবেন মেমরি কার্ড স্লট কয়টা আছে, এইচডিএমআই আউটপুট আছে নাকি, এক্সটারনাল মাইক লাগান যায় নাকি। আপনি যদি একটু অ্যাডভান্সড ইউজার হন তাহলে দেখে নিন পর্যাপ্ত এক্সটারনাল কন্ট্রোল বাটনস আছে, নাকি সব সেটিংস মেন্যু দিয়ে চেঞ্জ করতে হয়? এছাড়াও http://www.dpreview.com/reviews থেকে কাঙ্ক্ষিত ক্যামেরার রিভিউ দেখে নিন।
একটি প্রচলিত মীথ হল ক্যামেরার মেগাপিক্সেল যত বেশী ক্যামেরা তত ভালো। এটা সত্যি না। ক্যামেরার সেন্সর কতটুকু টার উপর নির্ভর করে পিকচার কোয়ালিটি। তাই মেগালিক্সেল এর হিসাবটি মাথা থেকে বাদ দিন, কারন ১০ মেগাপিক্সেল হলেই আমি বলব মোর দ্যান এনাফ; এবং আজকাল এর নিচে ডিএসএলআর ক্যামেরা পাওয়া দুষ্কর।
কোন মডেল কিনবেন?
নির্ভর করে আপনার বাজেট ও চাহিদার ওপর। আমি নিজে ক্যামেরা কেনার সময় বেশ কিছু মাস ধরে বিস্তর গবেষণা চালাই কি কিনব তার উপর। তাই এখানে সুনির্দিষ্ট ভাবে কিছু মডেল এর নাম দিলাম যাতে একটা আইডিয়া পেতে পারেন।
নিকন এর মডেলসমূহ
নিকন ডি৩১০০ + ১৮-৫৫মিমি লেন্সঃ ৪৬,০০০ টাকা
বাজেট সীমিত হলে বাজারের সেরা এন্ট্রি লেভেল ক্যামেরা নিকন এর ডি৩১০০ কিনে ফেলুন। এই দামে এরচে ভালো কিছু আর পাবেন না। যারা প্রথম ডিএসএলআর কিনছেন তাদের জন্য ভালো ক্যামেরা। আকারে ছোট, হাল্কা হওয়ায় এটা সহজে বহনযোগ্য। হাতে নিলে মনেই হয়না ডিএসএলআর। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এটার লাইটওয়েট ই এটার প্লাস পয়েন্ট। আছারাও নতুনদের জন্য আছে একটি গাইড মোড, যা আপনার ক্যামেরার ভেতরেই আপনাকে শিখিয়ে দেবে ক্যামেরার যাবতীয় কন্ট্রলস। তাই যারা প্রথম ডিএসএলআর কিনবেন তাদের জন্য এটা হতে পারে আদর্শ ক্যামেরা। আর যদি বাজেট এর চেয়েও কম হয় তাহলে ইউজড ক্যামেরা কিনতে পারেন, নিচে কিছু পরামর্শ আছে এই ব্যাপারে।
তবে ডি৩১০০ এর বাজে দিক টা হল এর স্ক্রীন রেজোলিউশান অনেক কম। ছবি তোলার পর অনেক সময় ই ছোট্ট স্ক্রীন এ ফোকাস ঠিক দেখালেও কম্পিউটার এর বড় হাই রেজোলিউশান স্ক্রীন এ দেখা যায় ফোকাস ঠিক নেই। এছারাও বড় হাত হলে ধরতে আরাম নাও পেতে পারেন, এটির ছোট আকারের কারনে দুটি আঙ্গুল রাখার জায়গা নাও পেতে পারেন।
নিকন ডি৩২০০ + ১৮-৫৫মিমি লেন্সঃ ৫৭,০০০ টাকা (আনুমানিক)
এটা আসলে ডি৩১০০ এর পরের ভার্সন। এটা আগের টার চেয়েও ভালো পারফর্মেন্স দিবে এবং এটা আরও হাল্কা! এর স্ক্রীন রেজোলিউশান ও ভালো এবং তাই ডি৩১০০ এর প্রব্লেম এতে আর থাকছেনা। তবে এটা নতুন মডেল বলে এর দাম কিছুটা বেশী ডি৩১০০ এর থেকে এবং বাংলাদেশের বাজারে বর্তমানে পাওয়া যায় কিনা বলতে পারছিনা।
ডি৫১০০ + ১৮-৫৫মিমি লেন্সঃ ৫৬,০০০ টাকা
ডি৩১০০ এর চেয়ে সব দিক থেকে বেটার স্পেসিফিকেশন ওয়ালা ক্যামেরা। ওভারঅল একটি ভালো ক্যামেরা। বোনাস হিসেবে থাকছে ফ্লিপ আউট রোটেট্যাবল স্ক্রীন। প্রথম ডিএসএলআর ইউজারদের জন্য বেশ ভালো হবে। তবে কিছুদিন পর আপগ্রেড করার চিন্তা মাথায় আসতে পারে। কারন এতে ডি৯০ এর মতো অতো এক্সটারনাল কন্ট্রলস নেই; নেই উপরের সেভেন সেগমেন্ট ডিসপ্লেও। তবে কম কন্ট্রোল থাকা যে সবার জন্য খারাপ তা নয়, নতুনদের জন্য এটা বরং ভালই কারন এতে ক্যামেরা ব্যাবহার করা হয় সহজতর।
ডি৯০ + ১৮-১০৫মিমি লেন্সঃ ৮৮,০০০ টাকা
আরেকটু বাজেট বেশী থাকলে কিনুন নিকন ডি৯০। তিন বছর পুরনো ক্যামেরা কেন কিনবেন? কিনবেন কারন এটাতে আছে বিল্ট ইন ফোকাস মোটর যার কারনে আপনি কম দামি লেন্স কিনেও অটোফোকাস করতে পারবেন। এই ফিচার একই দামের নতুন ক্যামেরা ডি৫১০০ এও নেই। আরও আছে এক্সটারনাল কন্ট্রলস। অর্থাৎ ক্যামেরার বডি তেই আছে বিভিন্ন সুইচ যা দিয়ে আপারচার, সাটার স্পীড তো বটেই, ফ্ল্যাশ, হোয়াইট ব্যালেন্স, ফোকাস মোড, আই এস ও, পিকচার কোয়ালিটি/সাইজ, বারস্ট মোড, এমনকি এইচ ডি আর এর জন্য একসাথে কতগুল ছবি তুলবেন তাও ঠিক করতে পারবেন। এসবই ক্যামেরার মেন্যু তে ঢুকে সময় নষ্ট না করে, জাস্ট এক্সটারনাল বাটন চেপে। এতে আপনার সামনের সঠিক মুহূর্তটা ক্যামেরা বন্দী করার সুযোগ বহুগুণে বেরে যাবে। এটাই আমি বলব এই ক্যামেরার বেস্ট ফিচার যা শুধু হাইয়ার এন্ড ক্যামেরা গুলোয় পাওয়া যায়। একটি খারাপ দিক হল এর ভিডিও মোড তেমন সুবিধার না, তবে চলনসই। ক্যামেরা যদি শুধু ছবি তোলার জন্য কেনেন তবে ডি৯০ এর প্রাইস টু পারফর্মেন্স রেশিও বিট করা টাফ।
এছাড়াও এয় ক্যামেরার উপরে আছে এরকম একটি সেভেন সেগমেন্ট ডিসপ্লে যাতে আপনি সহজেই সব সেটিংস এক পলকে দেখে নিতে পারবেন যা খুবই কাজে দেয়, এবং সব প্রো লেভেল ক্যামেরায় থাকে এটি। এতে আরও একটি সুবিধা হল এর কারণে মেইন এলসিডি ডিসপ্লে বন্ধ রাখতে পারবেন এবং ব্যাটারি সাশ্রয় হবে। ডি৯০ তে মিনিমাম ৮৫০ টি ছবি তোলা যায় ফুল ব্যাটারি তে।
এছাড়াও ডি৯০ তে আছে দুটি নব, একটি সামনে একটি পিছনে যা দিয়ে সাটার স্পীড ও অ্যাপারচার কন্ট্রোল করা যায়। এটিও একটি প্রো ফিচার যা ডি৫১০০ এ নেই।
তবে এসব কন্ট্রল বাটন আর এক্সট্রা হাবিজাবি সবার দরকার নাও পরতে পারে। তাই চিন্তা করে নিন আপনার কোনটা জরুরী? তাৎক্ষনিক কন্ট্রল নাকি যে ক্যামেরা ব্যাবহার করা যায়।
ডি৭০০০ + ১৮-১০৫মিমি লেন্সঃ ১,২৮,০০০ টাকা
বাজেট আরও বেসি হলে কিনুন নিকন ডি৭০০০। এটা উপরে বর্ণিত ডি৯০ এর পরের মডেল বলতে পারেন। তাই ডি৭০০০ এ ডি৯০ এর সব সুবিধা তো আছেই, বরং অনেক কিছুই আগের চেয়েও ভালো করা হয়েছে। এটার ফিচার বলে শেষ করতে পারব না! যেমন ধরুন নরমাল ডিএসএলআর এ যেখানে ১২/১৩ টা ফোকাস পয়েন্ট থাকে সেখানে এটাতে আছে ৩৯টা আলাদা আলাদা ফোকাস পয়েন্ট! এটা আবার ওয়েদার সীল্ড (weather sealed) অর্থাৎ হাল্কা বৃষ্টি তেও আপনি ছবি তুলতে পারবেন কোন ভয় ছাড়াই (তবে তাই বলে আবার পানির নিচে নয়!)। তাই বাজেট থাকলে চোখ বুজে কিনে ফেলুন এটি।
তবে এগুলো সবই সেমিপ্রো অথবা এন্থুসিয়াস্ট (enthusiast) ক্যামেরা। প্রো ক্যামেরা কিনতে চাইলে নিকন এর ডি৩০০এস, ডি৭০০, ডি৮০০ অথবা ডি৩ আছে। এগুলোর দাম আকাশছোঁয়া আর এগুলো যদি আপনি কিনতে চান তাহলে ধরে নিতে হবে আপনি একজন প্রফেশনাল এবং এই গাইড এর আপনার প্রয়োজন নেই, তাই এগুলোর ব্যাপারে আর নাই বললাম।
ক্যানন এর মডেলসমূহ
ক্যানন ১১০০ডি + ১৮-৫৫মিমি লেন্সঃ ৪৬,০০০ টাকা
ভুলেও এটি কিনবেন না। ক্যানন এর এন্ট্রি লেভেল ক্যামেরা নিকন এর এন্ট্রি লেভেল ক্যামেরা ডি৩১০০ এর থেকে সব দিক থেকে খারাপ। আমার কথা বিশ্বাস না হলে অনলাইন রিভিউ গুলো পড়ে নিজে যাচাই করে নিন।
ক্যানন ৫৫০ডি + ১৮-৫৫মিমি লেন্সঃ ৫৭,০০০ টাকা
এই কামেরাটি আমার বেশ ভালো লেগেছে। কম দামের ভিতরে বেশ ভালো একটি ক্যামেরা। নিকন ডি৫১০০ এর মোটামুটি সমকক্ষ। অন্য সব দিক দিয়ে নিকন ডি৫১০০ এর চেয়ে ভালো হলেও ক্যানন ৫৫০ডি তে আছে সেই বিল্ট ইন ফোকাস মোটর যা শুধু নিকন এর কম দামি ক্যামেরার মধ্যে ডি৯০ ও ডি৭০০০ এই আছে। তাই এতে কম দামি লেন্স লাগাতে পারবেন এবং অটো ফোকাস ও হবে। তবে এটাতেও এক্সটারনাল কন্ট্রোল অতো বেশী নেই। তাই এক্সপারটদের জন্য এটা ভালো না হলেও বিগীনারদের জন্য এটা বেটার হবে। এর কন্ট্রোল বেশ সোজা এবং তাই নতুনরা এটা চালাতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।
ক্যানন ৬০০ডি + ১৮-৫৫মিমি লেন্সঃ ৬৬,০০০ টাকা
এটিও ৫৫০ডি এর মতই কিন্তু নতুন মডেল। ৫৫০ডি এর থেকে এর যে আলাদা ফিচার টা হল এতে ডি৫১০০ এর মতো ফ্লিপাউট স্ক্রীন আছে। এছাড়া সবদিক দিয়ে এটি ৫৫০ডি এর সমমানের।
ক্যানন ৫০ডি ও ৬০ডি – ৫০ডি এর শুধু বডী এর দাম ৯৩,০০০ টাকা, এবং ৬০ডি + ১৮-১৩৫মিমি লেন্স সহ দাম ৯৯,০০০ টাকা (দুটোই আনুমানিক দাম)
এদুটি প্রো লেভেল ক্যামেরা। ৫০ডি প্রো ক্যামেরা হলেও অনেক পুরনো হওয়ায় দাম কম। তবে ৬০ডি বেটার। এটির ফিচারস সম্পর্কে ধারনা পেতে চাইলে বলব এটাকে ডি৯০ এর সমকক্ষ বলা চলে। |
ক্যানন ৭ডি (শুধু ক্যামেরা বডী): ১,১০,০০০ টাকা
এটা নিকন ডি৭০০০ এর সমকক্ষ। তবে এটায় হাই স্পীড ফটোগ্রাফি করতে পারবেন কারন এটি সেকেন্ড এ ৮টি ছবি তুলতে সক্ষম, যেখানে ডি৭০০০ মাত্র ৬টি ফ্রেম ক্যাপচার করতে পারে। তবে এটিতে আবার ভিডিও মোড এ অটো ফোকাস পাবেন না, যেটা আছে ডি৭০০০ এ। আর বাদবাকি ক্ষেত্রে এই দুটি কামেরা সমান এ সমান। তাই ৭ডি অথবা ডি৭০০০ যেটাই কিনুন না কেন, হতাশ যে হতে হবে না তা বলা যায় নিঃসন্দেহে!
আরও দামি কিছু চাইলে বলতে হবে প্রো কামেরা গুলোর কথা, যেমন ৫ডি মার্ক টু। আমি আর কিছু বলব না এটার ব্যাপারে, দুই একটা রিভিউ দেখলেই বুঝবেন এটা কি জিনিস! আর অন্যান্য প্রো ক্যানন ক্যামেরার মাঝে আছে নতুন ৫ডি মার্ক থ্রি, ১ডি মার্ক ফোর ইত্যাদি। আর এগুলোর ব্যাপারে কিছু বলছিনা কারন যারা এগুলো কিনবেন তারা নিশ্চয়ই প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার এবং তাদের কোন গাইড এর দরকার থাকার কথা না।
আপনি কি সিরিয়াস ভিডিওগ্রাফার?
তাহলেও ক্যানন কিনতে হবে। নিকন এর ক্যামেরা গুলোয় ভিডিও যে খারাপ তা না, তবে ক্যানন এক্ষেত্রে বেস্ট। ক্যানন ৫ডি দিয়ে তো অহরহ বিজ্ঞাপনচিত্র, মিউজিক ভিডিও শুট করা হচ্ছে। তাই বুঝতেই পারছেন এর কোয়ালিটি প্রোফেসনাল লেভেল এর। তবে আপনার ভিডিও করা যদি শুধু অকেসনাল পারিবারিক অনুষ্ঠান এ সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে নিকন এও চলবে।
সেকেন্ড হ্যান্ড ক্যামেরা বডি কেনা কি উচিৎ?
বাজেট কম থাকলে কিনতে পারেন অবশ্যই। তবে পরখ ও যাচাই করে।
কি কি দেখবেন সেকেন্ড হ্যান্ড বডি কেনার আগে?
ফুল রেজোলিউশান এ কিছু ছবি তুলে দেখবেন ছবি পরিষ্কার আছে কিনা। সেন্সর এ দাগ থাকলে ছবি তে তা ফুটে উঠবে। এছারাও এই সাইট এ http://shuttercounter.com লাস্ট তোলা ছবি টি আপলোড দিয়ে যাচাই করে নিবেন ক্যামেরার সাটার কাউন্ট কত। সাটার কাউন্ট হল ক্যামেরা দিয়ে মোট কয়টি ছবি তোলা হয়েছে তার হিসাব। একটি ক্যামেরা সাধারণত ১,০০,০০০ বার ছবি তুলতে পারার কথা কোন সমস্যা ছাড়াই। তাই দেখে নিন অলরেডি কত হাজার ছবি তোলা হয়েছে আপনার কিনতে চাওয়া ক্যামেরাটি দিয়ে, এতে আপনি ওটা কতটুকু ইউজ হয়েছে তার সম্পর্কে ধারনা পাবেন। এছারাও ওটা দিয়ে আর কত ছবি তোলা যাবে তার সম্পর্কেও একটি মোটামুটি ধারনা পাবেন। আরও যা দেখবেন তা হল ক্যামেরা ঠিক থাক অটোফোকাস করছে কিনা, বাটন গুলো কাজ করছে কিনা।
এছাড়াও হয়ত মালিক তার কামেরাটাকে যতটা নতুন বলে দাবি করছে, ক্যামেরাটা ততটা নতুন নয়। কিছু টিপস আছে যা দিয়ে আপনি ক্যামেরার বয়স সম্পর্কে একটি ধারনা করতে পারেন। প্রথমেই লক্ষ্য করুন কামেরাতে যে স্ট্র্যাপ টি লাগান আছে তা কি অনেক পুরন ও মলিন লাগছে? ক্যামেরার স্ক্রীনও ক্যামেরার বয়স এর আরেকটি ভালো নির্দেশক। স্ক্রীন এ স্ক্র্যাচ আছে কিনা তা ভালো করে লক্ষ্য করুন। যদি অনেক ছোট ছোট স্ক্র্যাচ দেখা যায় তাহলে বুঝতে হবে ক্যামেরাটির বয়শ হয়েছে। এছাড়াও ক্যামেরার যেখানে এক্সটারনাল ফ্ল্যাশ লাগানো হয় (‘হট-সু’ বলে এটাকে) সেখানের অবস্থাও যদি মলিন ও রুক্ষ হয় তাহলে বুঝবেন বেশ অনেকবার এই ‘হট-সু’ ইউজ হয়েছে।
উপসংহার
ক্যামেরা একটি শখের জিনিস এবং দামী জিনিস। তাই এটা কেনার আগে জেনে শুনে কেনা উচিৎ যাতে কেনার পড়ে আফসস না হয়। তাই আসলে একটি পরিপূর্ণ গাইড হিসেবে লেখাটি লিখতে চেয়েছিলাম যাতে আমরা সবাই আরও বেশী সচেতন ক্রেতা হতে পারি। এবং এতেই লেখা এতো লম্বা হয়ে গেল!
যদি কোন কিছু ভুল ইনফো থাকে কমেন্ট করবেন, শুধরে নেব। পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
আমার অন্যান্য ফটোগ্রাফি রিলেটেড পোস্টঃ
কোন লেন্স কিনবেন ডিএসএলআর এর জন্য?
'বোকেহ'নামা - শিখে নিন ফটোগ্রাফির একটি বহুল প্রচলিত টেকনিক
ডার্করুম থেকে চলে আসুন লাইটরুম এ
লাইট পেইন্টিং : ছবির ফ্রেম যখন আপনার ক্যানভাস!
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১২ রাত ৯:৫২