এক আরব ধনকুবেরের ছেলে অক্সফোর্ডে চান্স পাইসে। খুশিতে আটখানা বাবা তার ছেলেকে যথারীতি একটা হীরকখচিত রোলস রয়েস গাড়ি পাঠায়া দিল। রোলস রয়েস পেয়ে ছেলে বাবাকে ফোন দিয়া আমতা আমতা করে বলল, "আব্বুজি, এইখানে তো আমার বন্ধুরা সবাই ট্রেনে চরে ভার্সিটিতে যায়...।"
ব্যস্ত বাবা ব্যাপারটা তার মত করে বুঝে নিলেন, আর জবাবে বললেন, "বেটা, কুচ পরোয়া নেহি। ট্রেনের দরদাম সম্পর্কে আমারতো তেমন আইডিয়া নাই, তুমি বরং তোমার কোন পছন্দ থাকলে তোমার ম্যানেজার কাকুরে জানায়া দিও, ট্রেইন কালকেই তোমার ঐখানে পৌছায়া যাবে। এইটা নিয়া তুমি বিলকুল চিন্তা করবা না...।
ব্যাক্তি মালিকানায় রেল অথবা রেললাইন অন্য কোন দেশে আছে কিনা জানিনা, তবে বাংলাদেশে সম্ভবত এখনও নাই। থাকলে সম্ভবত এতোদিনে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া রেললাইন বসে যেত। ব্যাপারটা মন্দ হত না। অনলাইনে আপনি ঘরে বসেই টিকেট বুক করলেন, যথাসময়ে ট্রেনে উঠে দিলেন লাক্সারিয়াস এক ঘুম। সকালে আপনার বাচ্চাদের হৈচৈ শুনে ঘুম ভেঙ্গে চওড়া স্বচ্ছ জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখলেন সাগরের তীর ঘেষে ট্রেন কক্সবাজারের দিকে ছুটে চলেছে! আক্ষেপ, কিছু স্বপ্নকে সাকার করার সামর্থ্য আমাদের থাকার পরেও আমরা পারছিনা। ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে দুঃখজনক।
বিদ্যমান রেলওয়ের খোলনলচে পাল্টে ফেলা সম্ভব কিনা সেই বিতর্কে অনেকেই আজ আর আগ্রহ পাননা। কিন্তু রেল ব্যবস্থায় যে আশু সংস্কার জরুরী তা বোঝার জন্য একবার রেলে যাতায়ত করাই যথেষ্ট।
বৃটিশ আমলের রেলব্যবস্থা যে ২০১৫ তে অচল এইটা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্টিস্ট না হলেও চলে। রাতারাতি কয়েকশো মাইল রেললাইন স্থাপন করা যায় না, করার দরকারও হয় না। তাই উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন নেতৃত্বের চেয়ে এইমুহুর্তে এখানে ম্যানেজার আর একজিকিউটিভদের প্রয়োজন বেশি।
রেললাইন আর বগি সংস্কার আর ব্যবস্থাপনা খুব বেশি জটিল কাজ হবার কথা না। এই দুটা জিনিস ঠিক থাকা মানে লজিস্টিকালি থিংস আর হ্যান্ডি।
এইবার দরকার পয়েন্ট এ থেকে পয়েন্ট বি তে টাইমলি যাতায়ত। যাত্রী উঠানামার সময় বাদে পথে ট্রেন লেট হবার কারন গুলো 'অসংখ্য' না। সুতরাং রেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টও বেশ ম্যানেজেবলই দেখাচ্ছে।
টিকেট ব্যবস্থাপনায় মৌসুমী কালোবাজারী ছাড়াতো আর কোন সমস্যা দেখিনা। রেলওয়ে পুলিশ চাইলেই এটা কমাতে আর থামাতে পারার কথা।
স্টেশন ব্যবস্থাপনাটাই আসল গেঁড়ো। এখানে নিয়ন্ত্রনের জন্য দরকার শক্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব। এদের দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে চাই ইয়াং এনার্জেটিক কর্মকর্তাদের নিয়োগ। তাই রেল প্রশাসনকে ফিক্স করতেও চাই লালু-মোদি টাইপ একজন নেতা।
পুনশ্চঃ
আমাদের হয়ত একেকটা সেক্টরকে একেক বছর প্রয়োরিটিতে এনে কাজ করতে হবে। যেমন ২০১৫ হোক রেল বর্ষ। বাজেট, প্রশাসন সহ সব ক্ষেত্রে ২০১৫ সালে রেল সংক্রান্ত বিষয় কে নাম্বার ১ প্রায়োরিটি দেয়া হোক। রেল সংক্রান্ত যেকোন ফাইল সবার আগে ক্লীয়ার হবে। সেরা নিয়োগ এবছর রেলে হবে। মিডিয়া আঠালি পোকার মত লেগে থাকবে। পরের বছর হবে পুলিশ বর্ষ, এরপর ডাক, সড়ক, পর্যটন। আশা করতে ক্ষতি কী??
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:০৯