প্রশ্নঃ আল্লাহ কোথায় আছেন? তিনি কি সর্বত্র বিরাজমান?
উত্তরঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। কোরআন ও সহীহ হাদিস অনুযায়ী মহান আল্লাহ আছেন আরশের উপর। কোরআন ও সহীহ হাদিসে আল্লাহর সিফাত বা গুনাবলীর যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে তাতে ঈমান আনা ওয়াজিব। যেমন, আমরা জানি, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা সবকিছু শোনেন ও দেখেন, তার মানে এই না যে, তার শোনার যন্ত্র অর্থ্যাৎ কান ও দেখার যন্ত্র অর্থ্যাৎ চোখ আমাদেরই মতো। আল্লাহর সিফাত বা গুনাবলীর কান, চোখ, হাত যেভাবে কোরআন ও সহীহ হাদিসে আছে সেভাবেই স্বীকার ও বিশ্বাস করতে হবে। “আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান” আক্বিদা দুইটি জাতির মধ্যে বিদ্যমান, জাহমিয়া (ইসলামের একটি ভ্রান্ত দল) স¤প্রদায় ও হিন্দু স¤প্রদায়। দুনিয়াতে আল্লাহ নাই। তবে আল্লাহর ক্ষমতা, দয়া, জ্ঞান সর্বত্র বিরাজমান। গাছের একটি পাতায় ঝরে পড়ে না যা তার জ্ঞানে নাই। তিনি সবকিছু দেখেন, শুনেন এবং জানেন। তবে সেটা আরশ থেকে যা সপ্ত আসমানের উপর অবস্থিত।
আল্লাহ তায়ালা আছেন আরশের উপর।
কোরআনের অসংখ্য আয়াত উপরোক্ত কথাকেই সমর্থন করে।
১ম দলিলঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
الرَّحْمَنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوَى ﴿طه৫﴾
পরম করুণাময় আল্লাহ রয়েছেন আরশের উপর। (সূরা তাহা-২০:৫)
২য় দলিলঃ
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
أَأَمِنْتُمْ مَنْ فِي السَّمَاءِ أَنْ يَخْسِفَ بِكُمُ الْأَرْض(الملك ১৬)
তোমরা তার থেকে নির্ভয় হয়ে গেলে যিনি আসমানের উপরে আছেন, আর তিনি তোমাদের সহকারে জমিনকে ধ্বসিয়ে দিবেন না? (সূরা মূলক ৬৭:১৬)
ইবনে আব্বাস রাঃ এই আয়াতের তাফসীরে বলেন: যিনি আসমানে আছেন, তিনি হলে আল্লাহ। (তাফসীরে ইবনুল জাওযি)।
৩য় দলিলঃ
আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন,
يَخَافُونَ رَبَّهُمْ مِنْ فَوْقِهِمْ(النحل৫০)
তারা তাদের উপরস্থ রবকে ভয় করে। (সূরা নাহল-১৬:৫০)
৪র্থ দলিলঃ
আল্লাহ তায়ালা ঈসা আঃ সম্বন্ধে বলেন:
بَلْ رَفَعَهُ اللَّهُ إِلَيْهِ(النساء ১৫৮)
বরং আল্লাহ ঈসা আঃ কে তার নিকটে (অর্থ্যাৎ আসমানের দিকে) তুলে নিয়েছেন। (সূরা নিসা-৪:১৫৮)
৫ম দলিলঃ
তিনি আরও বলেন,
وَهُوَ اللَّهُ فِي السَّمَاوَاتِ(الأنعام৩)
আর তিনিই আল্লাহ যিনি আসমানের উপরে আছেন। (সূরা আনআম-৬:৩)
এ সমস্ত আয়াতের তাফসীরে ইবনে কাসীর রহঃ বলেন: তাফসীরকারকগণ এ ব্যাপারে একমত পোষন করেন যে, তারা আল্লাহ সম্বন্ধে ঐভাবে বর্ণনা করবেন না যেভাবে জাহমিয়ারা (একটি ভ্রষ্ট দল) বলে যে, আল্লাহ সর্বত্র আছেন। আল্লাহ তাদের এ জাতীয় কথা হতে পবিত্র ও অনেক উর্ধ্বে। (তাফসীর ইবনে কাসীর ৮ম খন্ড পৃষ্ঠা-১২)
৬ষ্ঠ দলিলঃ
আল্লাহ বলেন,
নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশের উপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। (সূরা আরাফ-৭:৫৪)
৭ম দলিলঃ
সূরা বাকারা-২: ১৪৪> নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছšদ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর।
এখানে নবীজি সাঃ মূলত বায়তুল্লাহ বা কাবাকেই কেবলা হিসেবে পাওয়ার আকাংখা করেছিলেন এবং সেই জন্যই তিনি বার বার আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলেন যেন কাবাকে আল্লাহ কেবলা হিসেবে নির্ধারণ করে ওহী নাজিল করেন। আল্লাহ যদি সর্বত্র বিরাজমান হতেনই তবে নবীজি সাঃ কেন আসমানের দিকে তাকালেন? তিনি তো ডানে বায়েও তাকাতে পারতেন।
৮ম দলিলঃ
ফেরেশতাগণ এবং রুহ আল্লাহ তায়ালার দিকে ঊর্ধ্বগামী হয়। (সূরা মায়ারিজ-৪)
৯ম দলিলঃ
আল্লাহর দিকেই আরোহন করে উত্তম কথা এবং সৎকর্ম তাকে তুলে নেয়। (সূরা ফাতির-১০)
১০ দলিলঃ
আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমন্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত- তোমরা এটা দেখেছ। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হলেন (অর্থ্যাৎ সপ্ত আসমানের উপরে আরশে সমাসীন হয়েছেন)। (সূরা রা’দ-১৩:২)
১১তম দলিলঃ
স্মরণ কর, যখন আল্লাহ বললেন, হে ঈসা! আমি তোমার কাল পূর্ণ করছি এবং আমার নিকট তোমাকে তুলে নিচ্ছি। (আল ইমরান-৩:৫৫)
১২তম দলিলঃ
ফেরাউন নিজেকে আল্লাহ দাবী করেছিল। কাফের হওয়া সত্ত্বে সে মূসা আঃ এর কথা বিশ্বাস করে হামানকে বলেছিল,
ফেরাউন বলল, হে হামান! তুমি আমার জন্য এক সুউচ্চ প্রাসাদ তৈরী কর, যাতে আমি অবলম্বন পাই আসমানে আরোহনের এবং আমি দেখতে পাই মূসা (আঃ) এর রব আল্লাহকে। (সূরা মুমিন-৪০:৩৭-৩৮)
এতেই বুঝা যায় মুসা আঃ আল্লাহর ঠিকানা দিয়েছেন আরশের। আল্লাহ যদি সর্বত্র হতেন তবে ফেরআউন কোন কারণে হামান কে সুউচ্চ প্রাসাদ বানানোর নির্দেশ দিবে?
>>>>>>>>>>>>>হাদিস থেকে প্রমাণঃ
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৫:৪৭