চলচিত্র জগতে একজনের মৃত্যুর পর তার স্থানটা শূন্যই থেকে যায়, তারপরও অনেকে সে স্থান পূরন করতে চায়। অামি খুব বেশী দূরে যাবো না, আমাদের কিংবদন্তি নায়ক সালমান শাহ্'র মৃত্যুর পর তার শূন্যস্থান কেউই পূরন করতে পারেনি। সালমান শাহ্'র হাত ধরে বাংলা চলচিত্রে যে পরিবর্তনটা আসা শুরু করেছিলো তা তার মৃত্যুর পরই থেমে গিয়েছিলো। রিয়াজ, সালমান শাহ্'র শুন্য স্থানটা পূরন করার চেষ্টা করেছিলো মাত্র। ১৯৯৮ এর পর যখন বাংলা চলচিত্র শিল্পের অবস্থা সংকটাপন্ন তখন আমাদের জলজল ভাই এবং মান্নাকে ঘিরে পরিচালকেরা সস্তা ছবি বানাতে শুরু করলো।
সেই সময়টাতে প্রযোজক-পরিচালকেরা সস্তা ছবি বানাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তখন বাঙালীরা ঘরে বসে বসে ভালো ভালো ছবি দেখতে শিখেগিয়েছিলো। দোষটা বাঙালীর/আমাদের ছিলোনা, দোষটা ছিলো যারা এদেশে ডিশ কালটারটা নিয়ে এসেছিলো, তাদের।
মান্নার মৃত্যুর পর আমি মনে হয় খুশিই হয়েছিলাম। আমার মনে হয়েছিলো এবার যদি চলচিত্রে শিল্পে একটা পরিবর্তন আসে। কিন্তু আমি ভাবিনি যে কার হাত ধরে পরিবর্তনটা আসবে! সত্যিকার অর্থে কোনো পরিবর্তন আসলো না!! মান্না যে কাজটা করছিলো, সাকিব খান সেই কাজটাই শুরু করলো। দু'জন দুইধরনের ছবি দিয়ে টিকে থাকলেও, কেউই আসলে কোনো পরিবর্তনেরই চেষ্টা করেনি!!
আজ সাকিব খানের মৃত্যু হলে কেমন হয় ? অথবা আজ থেকে চার-পাচ বছর আগে সাকিব খানের মৃতু্য হলে কেমন হতো ?
খুবই ভালো হতো, হলগুলোতে আর একই ধাচের ছবি আসতো না, এই ধরনের ছবি মুক্তির খবর থেকে মানুষ মুক্তি পেতো-
সস্তা পোষ্টারগুলো আর দেখতে হতো না, রিক্সাওয়ালা, শ্রমিক অথবা দিনমজুররা আর সিনেমার হলে যেতো না-- ফেইসবুক আর ব্লগে বাংলা ছবি নিয়ে তরুন-তরুনীরা নাক ছেটকানোর সুযোগ পেতো না। সত্যিকথা বলতে আমাদের কোনো চলচিত্রই যে থাকতো না? হলগুলো বন্ধ হয়ে যেতো বছরখানেকের মধ্যে, চলচিত্রকে ঘিরে যাদের কর্মসংস্থান ছিলো তারাও বেকার হয়ে পড়তো। ভালোই হতো, হতো না ?
সাকিব খানের তেমন একটা ছবি আমি দেখিনি, সে খারাপ অভিনেতা নাকি ভালো অভিনেতা এ পোষ্টের বিষয়বস্তুও তা না। তবে আমি মনে করি বাংলা চলচিত্রশিল্পকে সে একাই টিকিয়ে রেখেছে কয়েকবছর। সে যদি রিয়াজের মতো চলচিত্রশিল্প থেকে কেটে পড়তো তবে আমাদের চলচিত্র শিল্প ধ্বংস হলেও হতে পারতো--
এবার আসি এম এ জলিল অনন্তের কথায়। আমি লোকটাকে ভালো ভাবে চিনিনা, এটুকু শুনেছি সে ব্যবসায়ী ছিলো- আমি অনেকদিন ধরে টিএসসির মোড়ে একটা বিলবোর্ডে খোজ দ্যা সার্চ এর পোষ্টার দেখেছি। পোষ্টারটা ভালোই ছিলো, ভেবেছিলাম হলে গিয়ে ছবিটা দেখবো-- কিন্তু দেখা হয়নি, পরে ছবিটা নিয়ে বেশ কয়েকটা রিভিউ পড়েছিলাম-- রিভিউগুলো বেশ মজার ছিলো, ছবিটাও নাকি মজার-- একেকজনের অভিনয় নাকি বেশ হাস্যকর, বিশেষ করে এম এ জলিল অনন্তের-- সে নাকি রোবটের মতো কথা বলে--
কিন্তু আমি এই লোকটাকে সমর্থন করি এজন্য যে সে বাংলা চলচিত্রে একটা পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছে এবং এখনও করছে। অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করবেন, ভাই কি এমন পরিবর্তন আনলো সে চলচিত্রে ? তাদের প্রতি আমার প্রশ্ন, কোনো পরিবর্তনই কি চোখে পড়েনি ?
আমি বিশ্বাস করি, পরিবর্তনকে স্বাগত জানানোর মতো মানুষ এদেশে কম নেই। যে কোনো ধরনের পরিবর্তন সবসময়ের জন্যই একটা বড় চ্যালেন্জ-- এবং এই চ্যালেন্জ যারা গ্রহন করে তারা একসময় সফলও হয়। সে যদি সরাসরি সফল নাও হয় তবে পরিবর্তনের পেছনে তার কিছু না কিছু অবদান থেকে যায়--
সাকিব খান এবং এম এ জলিল অনন্ত, দু'জনের প্রতিই রইলো আমার লাল সালাম। তারা বাংলা চলচিত্রের সাথেই আছেন, যদিও অনেক বিতর্ক থাকতে পারে। আমি মাঝে মাঝে স্বস্তি পাই এই ভেবে যে, আমাদের চলচিত্র এখনও পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় নি এবং আমি বিশ্বাস করি, এভাবে যদি কয়েকজন শুধু চলচিত্র শিল্পটাকে বাচিয়ে রাখে তবে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে তরুনরাই চলচিত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে--
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ২:৫৩