স্কুল কলেজের শিক্ষকেরা প্রকাশ্য ব্যাবসা করছে, কারও কাছেই এটা এখন অজানা নয়। সবকিছু জানা স্বত্ত্বেও স্কুল/কলেজ, শিক্ষামন্ত্রনালয় অথবা সরকার থেকে কোনোপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। আজ থেকে আট-দশ বছর আগেও যেমন শিক্ষকেরা এস.এস.সি/এইচ.এস.সি পরিক্ষার আগে মডেল টেস্ট নিয়ে ব্যবসা করতো, এখনো তারা ব্যবসা করছে। তাহলে পরিবর্তনটা হয়েছে কোথায়?
শিক্ষকদের ব্যবসাটা একটু ছোটো করে বলিঃ
১. শুধুমাত্র নবম-দশম অথবা ইন্টারমিডিয়েটই নয়, ক্লাস ওয়ানের শিশুটাও এই শিক্ষা ব্যবসার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। যেহেতু খাতায় নম্বর দেয়ার কোনো স্টান্ডার্ড নিয়ম নেই, অথবা এভাবে বললে ভালো হয় যে খাতায় নম্বর দেয়ার বিষয়টা থাকে শিক্ষকের হাতে, সেহেতু শিক্ষক চাইলেই নম্বর বাড়িয়ে দিতে পারেন, কমিয়েও দিতে পারেন। তাই বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় যেসব শিক্ষকদের শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করার উদ্দেশ্য থাকে তারা ক্লাসের কয়েকজন দুর্বল ছাত্র/ছাত্রীকে টার্গেট করেন। তারা এমনিতেই দুর্বল, তারপরও সে তাদেরকে ইচ্ছাকৃতভাবে কম নম্বর দেন এবং পরবর্তীতে অভিভাবক কে ডাকান এবং সে ঘুরিয়ে পেচিয়ে তার বাসায় অভিভাবককে নিমন্ত্রন জানান। অভিভাবকও দেখেন যে কয়েকজন ছাত্র/ছাত্রী তার বাসায় পড়ে ভালো ফলাফল করছে, সুতরাং সেও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে তার সন্তানকেও সেই শিক্ষক দিয়ে পড়াবেন।
প্রভাবঃ এর ফলে ঐ শিশুটি মূলত প্রকৃত শিক্ষা থেকে বন্চিত হবে। সেই শিক্ষকের কাছে পড়ায় সে হয়তো নম্বর বেশী পাবে, কিন্তু বেশী বেশী নম্বর পাওয়াটা তার জন্যই খারাপ হবে, কেনোনা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় সে খারাপ লিখেও ভালো নম্বর পাচ্ছে।
২. গণিতের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো শিক্ষক বলেন "আমার নিয়মে অঙ্ক না করলে আমি নম্বর দিবো না!!" যেহেতু গণিতটা আজকে শুধু গণিত বিষয়েই সীমাবদ্ধ নয়, পদার্থ, রসায়ন, হিসাব বিজ্ঞান অথবা কম্পিউটার বিজ্ঞানেও গণিত রয়েছে, সেহেতু এই অস্ত্রটাকেই আজকাল অনেক শিক্ষক ব্যবহার করে থাকেন। এর ফলে দেখা যায় এক্ষেত্রেও যেসব ছাত্র/ছাত্রী তার কাছে পড়েন তারা নম্বর বেশী পায়। সুতরাং প্রথম নিয়মে দুর্বল ছাত্র/ছাত্রীসহ মেধাবী ছাত্র/ছাত্রীদেরকেও বাধ্য করা হয় তার কাছে পড়ার জন্য।
৩. অষ্টম-দ্বাদশ শ্রেনীতে কিছু কিছু বিষয়ে ল্যব আছে। যেখাবে ১০০ নম্বরের মধ্যে ২৫-৩৫ নম্বর থাকে ল্যাবে। এই ২৫-৩৫ নম্বর সম্পূর্নই থাকে শিক্ষকের হাতে। এর ফলে দেখা যায়, মূল পরীক্ষার আগে (জে এস সি, এস এস সি অথবা এইচ এস সি) শিক্ষকেরা আয়োজন করেন মডেল টেস্টের। এই মডেল টেস্ট ব্যবসাটা আজ থেকে আট দশ বছর আগে শুরু করেছিলো কোচিং সেন্টারগুলো। এখন স্বয়ং শিক্ষকেরাই তাদের বাসায় এই ব্যবসা করছেন। খোঁজ নিলে দেখা যাবে অনেক শিক্ষকের বাসায়ই আজকাল পড়ানোর জন্য আলাদা একটা বিশাল রুম থাকে। টেস্ট অথবা প্রি-টেস্ট পরীক্ষায় ছাত্র/ছাত্রীদেরকে কম নম্বর দিয়ে অথবা ফেল করিয়ে দিয়ে অভিভাবকদেরকে ডাকা হয় এবং ঘুরিয়ে পেচিয়ে তাদেরকে বোঝানো হয় যে মডেল টেস্ট দিলেই আপনার ছেলে/অথবা মেয়ে ভালো ফলাফল করবে।
আমার প্রশ্ব হলো, তাহলে তারা সারাবছর কি পড়ালেন? যদিও একাদশ/দ্বাদল শ্রেনীর ব্যপারটা আলাদা।
স্কুল কলেজগুলো আজকাল নিজেরাই টাকার বিনিময়ে মডেল টেস্টের আয়োজন করে থাকে। এভাবে প্রকাশ্যে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা আর কতোদিন চলবে? কবে পাবো সেইসব শিক্ষকদের যাদের মূল লক্ষ্যই হবে জাতিকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলা? আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগের শিক্ষকেরাতো এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ছিলেন না!! তাদের নিয়েতো আমরা কোনো কথা কখনো বলিনি, উল্টো তাদের নিয়ে আমরা গর্ব করতাম। কোথায় হারিয়ে গেলো আমাদের সেই সুবর্ন অতীত?
মা-বাবার পরই যেখানে মানুষ গড়ার দ্বিতীয় কারিগর শিক্ষক, সেখানে আপনারা জাতিকে কি শিক্ষা দিচ্ছেন? জাতি হিসেবে আমরা নিচুতে নেমে গেসিতো অনেক আগেই। দয়া করে আমাদেরকে আর নিচুতে নামাবেন না! দয়া করে শিক্ষকতা পেশাটাকে আর পচাবেন না!! আপনাদের পায়ে ধলি, "দয়া করে শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করুন.........." আমি আসলেই খুব লজ্জিত!!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:৪২