somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

—— পথে চলতে চলতে —— ১২

০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কয়েকদিন আগে, দুপুর ১১টার দিকে একটু আমাদের রাজধানি স্টকহোমে সিটিতে যাব । অফিস আওয়ারে স্টকহোম ডাউন টাউনে পার্কিংয়ের সমস্যা থাকে । তাই আগেই সিন্ধান্ত নিয়েছি গাড়ি ড্রাইভ করে নয় মেট্রোতে যাবো। সকালের অফিসের সময় পার হবার পর এই সময়ে মেট্টোতে লোকজন কম থাকে। আর মাঝের কম্পার্টমেন্টে লোকজন এমনিতেও কম থাকে । আর আমার লোকজনের কোলাহল খুব পছন্দ না । তাই নেমে একটু বেশী বা কম হাঁটতে হবে এটা না ভেবে যখন মেট্রোতে যাই আমি মাঝের কম্পার্টমেন্টেই বসি।

সেদিনও মাঝের কম্পার্টমেন্টেই উঠে দেখি প্রায় পুরোটাই খালি কারন বড়দিন ও নিউইয়ার এর ছুটি চলছে স্কুল কলেজগুলোতে। এরপরও আমি দেখে শুনে চার জনের বসার একটা সিটে বসেছি ( এই মেট্রো ট্রেনগুলোতে বসার সিঙ্গেল সিট্ থাকে না)। পরের ষ্টেশনে মেট্রো থামতেই হুর মুর করে দুটো বাচ্চা এসে আমার পাশের চার সিটে বসলো। বসেই দুজন ওরে— দুষ্টুমি শুরু করলো ! এ ওকে খোঁচা দেয়, সে আবার সময় নষ্ট না করেই সেটা ফিরিয়ে দেয়। হুড়াহুড়ির সাথে সাথে হাসাহাসি চলছে । একজন আরেক জনের গায়ের উপর গড়িয়ে পরছে। আমার ধারনা হল তারা দুই ভাই বোন হবে হয়তো । বোনের বয়স দশ,এগারো আর ভাই বয়স ছয় সাত হবে । ছেলেটাই বেশী দুষ্টুমি করছে । আমার বেশ বিরক্ত লাগছে কিন্ত করার কিছু নেই । কিছুক্ষন পর পিছনের দিক থেকে এক বয়স্ক মহিলা এসে আমার পাশের সিটে বসলো মানে আমার মুখোমুখি এবার তো আমার বিরক্তি চরমে । মনে মনে বলি কত সিট খালি পরে আছে তোমার কি আমার সামনে এসেই বসতে হবে !

মহিলা আমার পাশে বসলেও মুগ্ধচোখে বাচ্চাদের দিকে তাকিয়ে আছে তার চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে সে খুব আনন্দ পাচ্ছে বাচ্চাদের দুষ্টামিতে । মহিলা মাঝে মাঝে আমার দিকেও তাকাচ্ছে আমার মনে হচ্ছে সে চাচ্ছে আমিও তার মত বাচ্চাদের দুষ্টুমি ইনজয় করি। এই তাকিয়ে থাকা দেখে বোন তার ভাইকে বলে,ব্রো চুপ কর, দেখছ না মহিলা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।বোনের কথা শুনে ভাইটা একটু চুপসে যায় ।

যদিও মেয়েটা খুব আস্তে ফিস ফিস করে কথাগুলো বলেছিল তবু আমি ও মহিলা দুজনেই শুনতে পারি । মহিলা মেয়েটার কথাশুনে এবার খিলখিল হাসি দিয়ে বলে, ‘না না তোমাদের লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই , আমি তো তোমাদের দুষ্টামি উপভোগ করছি, আমি দুর থেকে তোমাদের দুষ্টুমি দেখেই তো এখানে এসে বসলাম তোমাদের দুষ্টামি উপভোগ করার জন্য’।

মহিলার কথা শুনে অবাক না হয়ে আর পারলাম না, বাচ্চাদের বিরক্তিকর দুষ্টুমি কেউ আবার উপভোগ করতে পারে ভেবে! আমার অবাক হওয়ার বিষয়টা বুঝতে পেরে মহিলা আমার দিকে তাকিয়ে বলে. আমারও দুটি সন্তান আছে ওদের বয়স যখন এদের মত ছিল ওরাও খুব চঞ্চল ছিল । ওদের নিয়ে যখন আমি বাহিরে বের হতাম মেট্রোতে বসে ওরাও এরকম দুষ্টুমি করতো । আমি যখন ওদের নিয়ে হাটতে বের হতাম আমি দুই হাতে দুইজনকে ধরতাম। রাতে দুইপাশে রেখে আমি মাঝে থাকতাম,কিন্ত যতক্ষন জেগে থাকতো দুই পাশ থেকে দুইজনে দুষ্টুমি করত । মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হতাম, রেগেও যেতাম । আমি জব করে সংসারের কাজ করে ওদের সাথে খুব সময় দিতে পারতাম না । এখন খুব মনে হয় যদি সেই সময়টা ফিরে পেতাম আমার ছেলে মেয়ে দুটো যদি ছোট হয়ে ফিরে আসতো আমার কাছে আমি সারাক্ষন ওদের নিয়েই থাকতাম আর ওদের মিষ্টি দুষ্টুমি গুলো উপভোগ করতাম মহিলার ভিতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো । উনার চোখদুটোও জলে ছল ছল করছিল ।পিচ্চিগুলোও মনোযোগের সাথেই উনার কথাগুলো শুনছিল।

হঠাৎ করে পিচ্চি ছেলেটা দুই হাত দিয়ে মহিলার গালদুটো ধরে তোমার বাচ্চারা কি হিমমেল (আকাশ) এ চলে গিয়েছে? মহিলা বলেন, না ওরা পৃথিবীতেই আছে । কিন্ত ওরা এখন অনেক বড় তাই ভদ্র হয়েছে । ওরা এখন আর আমার কাছে থাকে না । ওদের এখন নিজস্ব জীবন হয়েছে, ওরা ভালো আছে। পরের স্টেশনে ট্রেন থামতেই মহিলা উঠে দাড়িয়ে বলে, এবার আমাকে যেতে হবে । বাচ্চাদুটোকে মাথায় হাত বুলিয়ে মহিলা বলে,’তোমরা এরকমই চঞ্চল থেকো আর দুষ্টুমি করো, সময়চলে গেলে আর এসময় ফিরে আসবে না তখন আর দুষ্টমনি করতে পারবে না’ বলেই একটা দীর্ঘশ্বাসের হাসি দিয়ে মহিলা নেমে গেলেন ।

মহিলা নেমে গেলে আমি ডুবে গেলাম ভাবনায়। ব্লগে অনেক ব্লগারের কিশোর বেলার মজার মজার অনেক লিখা পড়েছি। তারা ফিরে পেতে চান সেই কিশোর বেলা টাকে । বাস্তবেও অনেককে বলতে শুনেছি আর এই মহিলা অবশ্য তার কিশোর বেলা ফিরে পেতে চাননি, তিনি চান তার সন্তানদের কিশোরবেলা । আমরও অনেক সময় ছোট বেলার অনেক মজার কথা,হাসি, আনন্দ, দু:খ কষ্টের অনেক কথা মনে হয় । কিন্ত কখনো সেই সময়ে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে না। পিছনের সময়গুলো তো আমি পার করে এসেছি সেই সময়ের সুখ- দুঃখ সবই আমি উপভোগ করে এসেছি। আমার ভালো লাগে সামনের দিন গুলো নিয়ে ভাবতে । আগামী জীবন নিয়ে পরিকল্পনা করতে । আর মাঝে মাঝে খুব জানতে,দেখতে ইচ্ছা করে সামনে আমার জীবনে কি কি হবে। জানিনা অন্যদেরও আমার মত এ'রকম ইচ্ছা হয় কিনা তবে কাউকে কখনো বলতে শুনিনি । হয়ত বলেছেনও কেউ আমি জানি না — তবে দুটো চাওয়ার রেজাল্ট একই, যারা পিছনে ফিরতে চায় তারা যেমন পিছনে যেতে পারে না আমিও সামনে আমার জীবন কেমন হবে সেটা দেখতে পারি না। এসব ভাবতে ভাবতে মেট্রো যখন থামলো এক স্টেশনে তাকিয়ে দেখি আমি আমার গন্তব্য রেখে আরো তিন স্টপেজ পেরিয়ে এসেছি !
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জানুয়ারি, ২০২২ সকাল ১১:২৭
১৭টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আঁচলে বাঁধা সংসার

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১১ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২০



আমি তখন কলেজে পড়ি। সবেমাত্র যৌথ পরিবার ভেঙে মায়ের সঙ্গে আমাদের ছোট্ট একটা সংসার হয়েছে। নতুন সংসার গুছিয়ে নিতে, মা দিনের প্রায় সবটা সময় ঘরকন্নার কাজে পার করে দিতেন। ঘরের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রেমিকাকে বা বউকে প্রেম নিবেদনের জন্য সেরা গান

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ১১ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৯

নীচের দেয়া গানটাতে হিন্দি, বাংলা, গুজরাটি, পাঞ্জাবী এবং ইংরেজি ভাষায় প্রেম নিবেদন করা হয়েছে। নীচে গানের লিরিক্স এবং বাংলা অর্থ দিলাম। আশা করি গানটা সবার ভালো লাগবে। এই হিন্দি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ডায়েরী- ১৫৩

লিখেছেন রাজীব নুর, ১১ ই মে, ২০২৫ দুপুর ১:৪৫



কেন জানি মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।
কিছুই ভালো লাগছে না। ইচ্ছা করছে ঘোড়ায় চড়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি। হাতে থাকবে চাবুক। যেখানে অন্যায় দেখবো লাগাবো দুই ঘা চাবুক। সমস্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

লিখেছেন নতুন নকিব, ১১ ই মে, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৫

একটি ঐতিহাসিক দিন: বাল সাম্রাজ্যের পতন

ছবি অন্তর্জাল থেকে সংগৃহিত।

প্রিয় পাঠক, গতকাল ১০ মে ২০২৫। এই দিনটি কোনো সাধারণ দিন ছিল না। এটি ছিল ঐতিহাসিক এমন একটি দিন, যা বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতের পুশইন : বাংলাদেশ কে Human dumping station বানানোর অপকৌশল !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৫৩


ভারতের দিল্লি যখন ইসলামাবাদের দিকে ক্ষোভের তীর ছুঁড়ছে, তখন সেই ধূলিঝড়ে ঢাকা তেমন দৃশ্যমান নয়—তবে নিঃশব্দে এক অস্থির আগুন ছড়িয়ে পড়ছে সীমান্তের ঘাসে। সাম্প্রতিক ভারত-পাক উত্তেজনার ছায়ায়, বাংলাদেশ সীমান্তে শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

×