সারা পৃথিবী লক-ডাউন হয়ে আছে কভিড- ১৯ করোনা আতংকে। মানুষের প্রতিটা মূহুর্ত কাটছে ভয় আর উৎকন্ঠায়। এই মূহুর্তে সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র ব্যাতিক্রম দেশ,সেই দেশের বাসিন্দা আমি, নাম তার সুইডেন।
প্রতিদিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। তবু সুইডেন অনেকটাই স্বাভাবিক আছে। কলেজ, ইউনির্ভাসিটি বন্ধ থাকলেও স্কুল, ডে-কেয়ার খোলা আছে, যেসব মায়েরা ঘরে আছেন উনারা বাচ্চাদের ডে-কেয়ার বা স্কুলে পাঠাচ্ছে না, যদিও স্কুল থেকে প্রতিদিন ফোন করে ডাকছে। অফিস- আদালত খোলা আছে, কেউ ফিজিক্যালি যাচ্ছেন তবে যাদের কাজ বাসায় বসে করার সুযোগ আছে তারা বাসায় বসেই কাজ করছেন। ছোট ছোট রেস্টুরেন্ট গুলো বন্ধ থাকলেও বড় রেস্টুরেন্ট ও বারগুলো এখনো ওপেন । যেখানে অন্য দেশ এক এক জন মানুষ থেকে আরেক মানুষের মধ্যে তিনফুট দুরত্ব রেখে চলতে বলছে, সুইডেন সেখানে পাঁচশত থেকে নামিয়ে পঞ্চাশ জনের গ্যাদারিং অনুমোদন করেছে। আমাকে বাধ্য হয়েই প্রায় প্রতিদিনই বের হতেই হচ্ছে। বাইরে বের হলে মানুষ জন দেখে মনেই হয়না সারা বিশ্ব একটা কঠিনসময় পার করছে। রাস্তায় আজ পর্যন্ত একজন মানুষকেউ মাস্ক পরিহিত দেখিনি ।
যেহেতু করোনার এখনো কোন ভ্যাকসিন বের হয়নি তাই সুইডেন সরকার চাচ্ছে ৬০% মানুষের করোনা হয়ে যাক যাতে প্রাকৃতিকভাবে মানুষের শরীরে ইমিউনিটি তৈরি হয়। সরকার জনগনের মাঝে জরিপ করে জেনেছে জনগনের বিরাট অংশ লক-ডাউন চাচ্ছে না কারন বছরের বেশীর ভাগ সময় এরা ঘরে আটকা থাকে আবার এবার তো অন্য কোন দেশে ঘুরতে যেতেও পারছে না, নিজ মাঠে, ঘাটে সূর্যস্নান , সমুদ্র স্নান , চা পান, না করতে পারে তাহলে কি হয়!
সুইডেনের এই উদাসীনতায় অনেক দেশই সমালোচনা করলেও সরকার ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করে লকডাউন করছে না,
এতে জনগন খুশী সরকারের উপর আর সরকার বলছে, তাদের জনগনের উপর আস্থা আছে।সবাই নিজ থেকেই সর্তক থাকবে । জনগন আর সরকারের কি অপূর্ব সমঝোতা, এই কারনেই হয়ত সুইডেন পৃথিবীর অন্যতম সুখী আর সুন্দর একটা দেশ ।
আমি তো মাইগ্রেট সুইডিশ আমার ভয় একটু লাগেই, (আল্লাহ না করুন) সুইডেনের অবস্থা না আবার ইটালী, ইংল্যান্ডের মত হয়। কারন তারাও প্রথমে এই মনোভাবই প্রকাশ করেছিল।
দুইদিন আগে বিকালে হাঁটতে বের হয়েছি রাস্তায় এক বৃদ্ধা মহিলাকে দেখে , তাকে আমি বলেছিলাম , তুমি কি টিভিতে খবর দেখ না , তুমি বাহিরে বের হয়েছ কেন ? তোমার কি ভয় নেই ?
তখন সে বলেছিল, না আমি ভয় পাই না , আমি গড বিশ্বাস করি, সেই জন্ম মৃত্যু নিধারন করে রেখেছেন, আমার আর ভয় কিসের আমার বয়স আশির উপরে জীবন তো শেষ আমার চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই।
নবেল করোনা ভাইরাস যতটা না প্রানঘাতি ততটাই বেশী ছোঁয়াছে আর এটাই ভয়ংস্কর। ছোট একটা ঘটনা বলি, এখানে প্রথম নবেল করোনা আসে ইটালী থেকে । এক সোমালিয়ান এখানে সে প্রতিবন্ধী কেয়ারহোমের ট্যাক্সিচালক I সে ছুটিতে ইটালী গিয়েছিল, ফিরে এসে সে জবে জয়েন করে I সে যে করোনা ভাইরাস ক্যারি করে নিয়ে এসেছে সে নিজেও জানত না , তার কাছ থেকে ১৬জন প্রতিবন্ধী মানুষ এই ভাইরাস পেয়েছে। তার ফ্যামেলী ছাড়াও আশে পাশের আরো অনেকেই পেয়েছে I ,এইলোক ও উনার পরিবারের আরো পাঁচজন মারা গিয়েছে আর খুলে দিয়ে গেছে সুইডেনের জন্য ভয়ঙ্কর এক মৃত্যু দ্বার । এর পর অন্য দেশ থেকেও বীজ এসেছে সুইডেনে আর এখন সেই বিষাক্ত বীজ- ফুল কুড়ির স্তর পেড়িয়ে বিশাল মহীরুহ হয়ে উঠতে চাইছে I আজ এ পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬৯৬৭ জন ও মৃতের সংখ্যা ৪২২।
“হে আল্লাহ তোমার করুণা দিয়ে পৃথিবীবাসীদের রক্ষা করো নবেল করোনা থেকে, তুমি সবাইকে হেফাজত করো”।
ছবি নেট থেকে নেয়া ।