অনেক অনেক দিন আগের কথা। এই ব্লগটিতে আমার পদার্পনের সূচনা লগ্নে আমি জেনেছিলাম এখানকার ব্লগাদের লেখালিখি নিয়ে বইমেলায় একটি বই বের হতে যাচ্ছে। বইটির নাম অপর বাস্তব! সত্যি বলতে তখন ব্লগ পর্দার অন্তরালের মানুষগুলো সাথে চেনাশোনা বা জানাটা এই কয়েক অক্ষরে লেখা নিকগুলির মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিলো। নিক দেখে এবং তাদের লেখা পোস্ট পড়ে আর কমেন্ট দেখেই কল্পনা করে নিতাম এক এক জন মানুষকে। তখনও ফেসবুক বা ফেসবুকীও সম্পর্কে ব্লগারদের মাঝে যোগাযোগের প্রচলন এখনকার মত হয়নি আর আমি তো ছিলাম আরই দূরের মানুষ।
সে যাইহোক আমি বইমেলাতে কিনে আনলাম আমার এই প্রিয় ব্লগ জগতের মানুষগুলির লেখা নিয়েই লেখনী সংকলন অপর বাস্তব। বইটি হাতে নিয়ে আমার এক অসম্ভব ভালো লাগার অনুভুতি হয়েছিলো। যেন প্রিয় অনেকগুলো মানুষের মমতা জড়িয়ে ছিলো সেই বইটিতে। পরবর্তীতে কালের পরিক্রমায় অপরবাস্তব ধীরে ধীরে হারিয়ে গেলো। এখনকার অনেকেই হয়ত জানেই না অপরবাস্তব নামে এই ব্লগের ব্লগারদের লেখনী নিয়ে কোনো এক কালে সে ছিলো এক পরম মমতার অর্ঘ্য।
যদিও অপর বাস্তব হারিয়ে গেলো তবুও মন থেকে হারালো না তেমনি কিছু পাবার আশা। ব্লগ, ব্লগার, পরিচিত নিক বা মানুষগুলির লেখা একই মলাটে একই সুতোয় গাঁথা মালা! আহা যদি এমন করে প্রতি বছরই আসতো ঘুরে ঘুরে! বেশ কয়েক বছর ব্লগারদের লেখা নিয়ে এমন একটি সংকলন না পেলেও গত বই মেলা- ২০১৭ এর আগ দিয়ে আমাদের বৃতিমনি হঠাৎ আমাকে একদিন বললো, তেমনি একটি ব্লগার সংকলন প্রকাশ করতে চায় সে। আমি যেন একটি লেখা দেই। এমনিতেই ব্লগারস সংকলন তায় আমার প্রিয় বৃতিমনির আবদার! সে কি ফেলা যায়! কিন্তু আমি ভেবেই পাচ্ছিলাম না এই অতি মূল্যবান গ্রন্থ যা আমার অন্তরের ভালোবাসায় গেঁথে থাকবে সেটির জন্য আমার ঠিক কোন লেখাটা দেওয়া যায়!
আমি তো আবার সবজান্তা শমসেরিকা। তো বৃতিমনিকে বললাম কবিতা দেবো? নাকি গল্প? নাকি আর্টিকেল নাকি আমার প্রিয় সাজুগুজু বা রান্না বান্না লেখালিখি? বৃতিমনি বললো কবিতা গল্প ঢের জমা পড়েছে তুমি বরং আর্টিকেলই দাও তো আমি তাতেই রাজী হলাম! আর আর্টিকেলের বিষয়বস্তু হিসাবে বেছে নিলাম আমার প্রিয় কিংবদন্তী খনাকেই। ব্যাস পাঠিয়ে দিলাম খনা এবং খনার বচন নিয়ে লেখনীটি! এরপর অপেক্ষার পালা--- কিছুদিনের মাঝেই বইটির প্রচ্ছদ দেখতে পেলাম! সত্যি বলতে কি প্রচ্ছদ দেখে আমি মহা মুগ্ধ! মুগ্ধ এবং মুগ্ধ ! হা হা কেনো মুগ্ধ? জানি-
মুগ্ধতার কারণটা বলি তাহলে, উজ্জ্বল সবুজ, কমলা, হলুদ মিশেলে দৃষ্টিনন্দন প্রচ্ছদটি যেন আমাদের চির সবুজ ব্লগারদের চির রঙ্গীন সজীব মনেরই পরিচায়ক! সে যাইহোক, প্রচ্ছদ দেখা হলো এবারে ছিলো আরও একটু অপেক্ষার পালা। তো নানা ঝামেলা ও দূরত্বের কারণে বইমেলা যাওয়াটাই দূরহ হয়ে উঠেছিলো এবারে তবে পহেলা ফাল্গুন আমি ফুলে ফুলে মিশে গেলাম এক রাশ বইপ্রেমী হলুদ কমলা লাল বইপ্রেমীদের ভীড়ে। হাতে পেলাম ঠিক ফাল্গুনের রঙ্গে রঙ্গীন ব্লগারস সংকলন ঋদ্ধ। মিশে ছিলো তাতে ফাল্গুনেরই পুস্প সুবাস!
জানিনা কত জন ব্লগার জেনেছিলো এই ব্লগারদের লেখা নিয়ে সংকলন ঋদ্ধ সম্পর্কে। বইটির প্রচারনাও ততটা পায়নি তবে এক বইমেলা একটি বই এর জন্ম হলেও মৃত্যু হয়না তো আর সে বছরেই তাই পরবর্তীতেও যে কেউই চাইলে পেতে পারে প্রিয় ব্লগারদের লেখা নিয়ে ব্লগারস সংকলন ঋদ্ধ।
বইটিতে গল্প আছে ১২ টি-
১। মাহফুজুর রহমান সজীব ভাইয়ার লেখা - বিশ্রাম
২। আবদুর রাজ্জাক শিপন ভাইয়ার -অ আ ক খ
৩। ইশরাত জাহান তিথি বা আমাদের সমুদ্রকন্যার লেখা- কোন মায়াজালে বেঁধেছো
৪। আফ্রি আয়েশা আপুর-দেয়াল অথবা অসুস্থতা
৫। ইসতিয়াক অয়ন ভাইয়ার বাসর এবং ফ্রানৎজ কাফকার পোকার গল্প
৬। অপু তানভীর আমার প্রিয় ভাইয়ার লেখা- আরিনা
৭। এরিসের লেখা গল্প- ফাঁকি
৮। মাক্স ভাইয়ার- রুনুর সুইসাইড নোট –
৯। বাপ্পী ভাইয়ার লেখা- গ্রহান্তর
১০। শুচি ( এই আপুটাকে চিনতে পারছিনা) তার লেখা গল্প-পতিতা অথবা মানুষ
১১।কামরুল হুদা ভাইয়ার লেখা- ব্যাঙ
১২। মামুন রশিদ ভাইয়ার লেখা- কালবোশেখ
কবিতাও ১২টি-
১। রাইসুল সোহানভাইয়ার লেখা কবিতা- বিবর্ণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া
২। প্রিয় সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই ভাইয়ার লেখা কবিতা- আমার স্ত্রীকে হতে হবে -
৩।মনিরা সুলতানা আপুনির লেখা- পূর্ণতা
৪। কৃষ্ণ জলেশ্বর - দণ্ডিত মৃত্যুর দিকে -
৫। পেন আর্নার ভাইয়ার- সাক্ষী
৬। শহিদুল ইসলাম এর লেখা- আয়নার ওপাশে থাকে আমার দ্বিতীয়জন
৭। নাহার লুনা এর লেখা- নস্টালজিক
৮। আমাদের সবার প্রিয় গল্পকার হাসান মাহবুব ওরফে হামাভাইয়ার কবিতা- জোনাকচারী
৯। প্রিয় কবি স্বপ্নবাজ অভির কবিতা- স্মৃতিশুন্য হয়ে ঘুমিয়ে থাকি
১০। নয়ন আহমেদ ভাইয়ার- ছিন্ন ভিন্ন ব্য কা চ্চি পি
১১। একজন আরমান ভাইয়ার লেখা- বেশ্যাবৃত্তিক রাজনীতি!
১২। শরৎ চৌধুরী- ভাইয়ার লেখা- সুগাতা পাতা উল্টায় না কেন?
মাতৃভূমি
১। প্রবাসী পাঠক ভাইয়ার লেখা- মৃত্যুঞ্জয়ী জুয়েল
২। শারমিন রেজোওয়ানা ওরফে আমাদের হারিয়ে যাওয়া রত্ন রেজুমনির লেখা- "বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধ শিশু" এবং এক অসহায় অনুচ্চারিত ইতিহাস সময় হবে কি দেখার?
৩। শায়মা হক ওরফে আমার লেখা- চির রহস্যময় কিংবদন্তী ভবিষ্যবক্তা খনা
৪। অগ্নি সারথি- ভাইয়ার লেখা- ক্রমবর্ধমান নগরায়নঃ কোন পথে বাংলাদেশ?
৫। তউসিফ সাদাত আহমেদ ভাইয়ার লেখা- ঢাকা গ্লাস টাওয়ার -
ভ্রমণ
১। নাঈমা আপু- (এই আপুটাকেও চিনলাম না) ট্র্যাভেল লগঃ কানকুন এবং অন্যান্য
২। তুষার কাব্য( আমার টারজান ভাইয়াটার লেখা)- সিপ্পির পথে পথে
স্মৃতিকথা
১। আমিনুর রহমান - ভাইয়ার লেখা- আমি, ব্লগ এবং ব্লগার
২। আমার অতি অতি প্রিয় মায়াবতী আপুনি- সুরঞ্জনা মায়া আপুর লেখা- স্মৃতির দরজায় টোকাঃ সাদা-কালো জীবন
এই বইটির সম্পদক মন্ডলী-
কুশলভাইয়া, বৃতিমনি ও আমিনুরভাইয়া
দারুন বর্নীল প্রচ্ছদ- জাদীদ আমাদের কাল্পনিক ভালোবাসা ওরফে কাভাভাইয়া!
বইটির প্রকাশক -শীর্ষ প্রকাশনী
যাইহোক সেই গত ফেব্রুয়ারী থেকেই বইটি নিয়ে আমার নিজের মনের কথন লিখবো ভাবছিলাম! কিন্তু নানা ঝামেলা এবং ব্যাস্ততায় লিখবো লিখবো করে অনেকখানি দেরীই হয়ে গেলো! বই নিয়ে বললাম এর লেখক বা লেখনী নিয়ে কিছু বললাম না আর। যারা লিখেছেন সকলেই আমাদেরই পরিচিতজন, কম বেশি সকলেই আমরা পরিচিত তাদের লেখনীর সাথে। বইটির সকল লেখক, সম্পাদক মন্ডলী, প্রচ্ছদকার ও প্রকাশক এবং সর্বোপরী উদোক্তা বৃতিমনিকে জানাই অন্তরের অন্তস্থল হতে শুভকামনা আর এক রাশ ভালোবাসা! বেঁচে থাকো বৃতিমনি এমনই সব শুভ্র সুন্দর সদিচ্ছা আর আমাদের ভালোবাসা নিয়ে! উপহার দাও আমাদেরকে এমনই সব ভালোবাসার ফুল।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:২১