ঘুরে এলাম উত্তরবঙ্গ।এমনিতে ছোট বেলা হতেই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়েছিলাম, স্কুল ছুটি হলেই বেরিয়ে পড়তাম আমরা। সে অভ্যাসটাই ঝালাই করে নিতে ভুলিনা এখনও। তাই তো চলে গেলাম অনেক অনেক বার দেখা সত্বেও আবারও
কোন পুরাতন প্রাণের টানে......
বগুড়া শহরে পৌছেই পর্যটন মোটেলে খানাপিনা সেরেই একটু রেস্ট নিয়েই দৌড়ালাম মহাস্থান গড়ের উদ্দেশ্যে। এই মোটেলটার নবনির্মিত সাগর নীল বারান্দাটাও আমার মন কম জুড়ালোনা!!!
মহাস্থান গড়ের আগে গিয়েছিলাম ভাসুবিহার।ভাসুবিহারের পূরাকীর্তি আর মনোরম বাতাসে মন ভরালাম, প্রান জুড়ালাম।
মহাস্থানগড়ের যাদুঘরের সামনের বাগানের শিবলিঙ্গ।
এরপর গেলাম গোকুলমেধ, বেহুলার বাসরঘর। আগেও এসেছিলাম এবারও আসলাম তবে প্রাচীন এই পুরাকীর্তির সাথে সাথে নিয়ে আসলাম একটি বাক প্রতিবন্ধী শিশু ইউনুসের স্মৃতি। ছেলেটার বাবা মারা গেছে। এখন সে সৎ বাবার সংসারে থাকে। একটা বেহুলা লক্ষীন্দররে বই বিক্রি করতে পারলে দুই টাকা, ৪ টা করলে ১২ টাকা। আমি যখন ওকে একটা স্নিকার আর ২০০ টাকা দিয়ে বললাম, তোমার যা খেতে ইচ্ছে করে তাই কিছু কিনে খেও তখন তার অনাবিল হাসিটা ঐ পূরাকীর্তি দর্শনের ভালোলাগার অনুভুতির চাইতে কোনো অংশেই কম ছিলোনা।
ইউনুস ও পিছে বেহুলার বাসর ঘর।
মহাস্থান গড়ের বিখ্যাত কটকটি
সুলতান শাহ মাহমুদ মাজার
মাজারের সিড়ি
রাতে ফিরে বগুড়ার বিখ্যাত রাজ হাসের মাংস ও ভাত তারপর এক ঘুমে রাত পেরিয়ে পরদিন আবার ছোটা। গিয়েছিলাম আদমদিঘী, একবন্ধুর বাড়ী সেখানে। তার বিশাল বাড়ী, হাসমুরগী, গরু ছাগল, পুকুর ভরা মাছ দেখে ছিপ দিয়ে ও তিনকোনা জাল দিয়ে মাছ ধরে, পুকুরে ডুবসাতারে ভালোই কাটলো দিনটা। আমাদের ধরা বড় বড় পুটিমাছ ভাজা দিয়ে ভাতও খেলাম সেদিন।

এরপর গিয়েছিলাম পুঠিয়ার রাজবাড়ী যা এখন লস্কর ডিগ্রীকলেজে রুপান্তরিত হয়েছে। এই ভাঙাচুরা বাড়িটায় নাকি ছেলেমেয়েরা ক্লাস করে।
এর সামনে দেখলাম রথের গাড়ী।
এর পরে ওখানেই ভুবনেশ্বর শুভ মন্দির দর্শন। বিশ্বনাথ গাইড তার ঋজু ভঙ্গিমা কথা বলার স্টাইলে আমি যথারিতী মুগ্ধ!এত সুন্দর করে সবকিছু বিশ্লেষন করে যাচ্ছিলো সে।ওর কাছেই প্রথম জানলাম, পন্চরত্ন মন্দির মানে পাঁচগম্বুজ মন্দির।এ মন্দিরের নাম ভুবনেশ্বর শুভ মন্দির।পাশেই জগন্নাথ দেবের মন্দির।আরো জেনেছিলাম দোল পুর্নিমায় দোল মন্চে দোলনায় দুলানো হয় শ্রীকৃষ্ণ ও রাঁধা দেবীকে।
এরপর নাটোরের রাণীভবানীর রাণীমহল দর্শন
রাজবাড়িরই মনোমোহিনী শীতলজল পুকুর
তারেকেশ্বর মন্দির। তিন দেবতার তিন শক্তি মানেই তারেকেশ্বর, এটাই সেই মন্দির সাধুবাবার ভাস্য হতে সেদিনই জেনেছিলাম।
সাধুবাবার দেওয়া চরণামৃত খেতে রাজী হইনি কিন্তু সাধুবাবা তাতে একটুও রাগ না করে আমাকে একটা আপেল দিয়েছিলেন। মাথায় ছিটিয়ে দিলেন পবিত্র জল।
এসব ছাড়াও বগুড়ার মোঃ আলী নবাব বাড়ী ও কারুপল্লী স্টুডিও ও আমার খুব ভালো লেগেছিলো
নবাব বাড়ির গেট
জলদেব ও জলকুমারী ভাস্কর্য্য
কারুপল্লীর তিন সুশিক্ষিত বাঁদরের এক বাঁদরের ছবি
খারাপ কিছু দেখবেনা, খারাপ কিছু বলবেনা আর খারাপ কিছু শুনবে না যে শপথ করেছে
খুব খুব ভালো লেগেছে ওদেরকে আমার। আমরাও যদি ওদের মত হতে পারতাম!
সব ভালো লাগার স্মৃতিগুলো নিয়ে ফিরে এলাম ঢাকা। মনে পড়ছিলো সৌম্য আর টিংকু ট্রাভেলারকে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৪:২৩