মম শূন্য গগণ বিহারী,
আমি আপনমনের মাধুরী মিশায়ে, তোমারে করেছি রচনা।
তুমি আমারি তুমি আমারি মম অসীম গগণ বিহারী।
মম হৃদয় রক্তরাগে তব চরণ দিয়েছি রাঙিয়া
অয়ী সন্ধ্যাস্বপণ বিহারী
তব অধর একেছি সুধাবিষে মিশে মম সূখ দুখ ভাঙিয়া।
তুমি আমারি তুমি আমারি মম বিজনজীবন বিহারী।
মম মোহের স্বপন অন্জন
তব নয়নে দিয়েছি পরায়ে
অয়ী মুগ্ধ নয়ন বিহারী।
মম সঙ্গীত তব অঙ্গে অঙ্গে দিয়েছি জড়ায়ে জড়ায়ে
তুমি আমারি তুমি আমারি মম জীবন মরণ বিহারী।
Click This Link
অনেক দিন পর, আজ আবার গানটা শুনলাম। তখন সন্ধ্যা নামছে। গানটা প্লেয়ারে খুব ধীরে ধীরে বাঁজছিলো। হঠাৎ বুকের মধ্যে কিসের যেন একটা সূচিভেদ্য ব্যাথা। মনে পড়ে গেলো। অনেক অনেকদিন আগে রবীন্দ্রভারতী ইউনিভার্সিটির এক সন্ধ্যা।
আমরা সবাই সামনের খোলা চত্বরটায় গোল হয়ে বসে ছিলাম সেদিন বিকেলে। যেহেতু আমরা নাচ , গান, অভিনয়, শিল্প-সাহিত্যের ছাত্র ছাত্রী ছিলাম। তাই যে কোনো আড্ডা বা ছোট্ট একটু অবসরে গান, নাচ আবৃত্তিচর্চা সেসব ছিলো ডালভাত।
যে কেউ যখন তখন গেয়ে ফেলতো দু এক কলি গান বা আবৃত্তি করে ফেলতো লাইন বাই লাইন দীর্ঘ কোনো কবিতা। কিন্তু সেদিনের সন্ধ্যায় তোমার গাওয়া এ গানটি কি করে যেন আমার বুকের মধ্যে দাগ কেঁটে বসে গেলো। এতগুলো বছর পরেও আজ এগান ঠিক আমাকে টেনে নিয়ে গেলো সে সন্ধ্যা বেলায়।আমার সোনালী অতীত!! যে সব সন্ধ্যায় আমি ফেলে এসেছি আমার অনেক অনেকগুলি সোনালী দিন।
কত শত দিন, এ গানে বলা প্রতিটি পংক্তিমালা আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে নাম না জানা ভালো লাগার স্বর্গরাজ্যে।
"মম হৃদয় রক্তরাগে তব চরণ দিয়েছি রাঙিয়া" এজীবনে যতবার আলতায় রন্জিত করেছি এ দু'পা। ঠিক ততবার, ততবারই মনে পড়েছে এই পংক্তিটি। আলতার লাল রেখাগুলি ঠিক যেন তোমার হৃদয় রক্তরাগের লিখন হয়ে রাঙিয়ে দিয়েছিলো আমার দুপা। ঠিক এভাবেই তো তুমি বলেছিলে!
এরপর অনেক অনেক দিন, নাচের সাজের শেষে পায়ে আলতা পরতে গিয়ে কতবার যে আমি কেঁদেছিলাম। বারবার মনে পড়েছিলো শুধু একটি কথা, একটি সূর। কোন দূর অজানা হতে ভেসে এসে বৃষ্টি ঝরিয়েছিলো আমার দুচোখে। সেসব দিনে কি অসহায় অবস্থাতেই না পড়েছি আমি। চোখের জলে, কাজল লেপ্টে একাকার অবস্থা। আমি ছিলাম নিরুপায়। এমন অদ্ভুত অপ্রস্তূত পরিস্থিতি একেবারেই ছিলো আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
"মম মোহের স্বপন অন্জন তব নয়নে দিয়েছি পরায়ে
অয়ী মুগ্ধ নয়ন বিহারী।" এই প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অনুভুতি আমার মনে হয় আমার মত করে কেউ কখনও কোনোদিন এই জগতে অনুভব করতে পারেনি। কতদিন আয়নায় দাড়িয়ে নিজের চোখে খুঁজেছিলাম সেই মোহ জড়ানো কাজলের লেখা।যে মোহোন্জন অনেকদিন আগে মুছে গিয়েছে। তবুও খুঁজেছিলাম।
"মম সঙ্গীত তব অঙ্গে অঙ্গে দিয়েছি জড়ায়ে জড়ায়ে
তুমি আমারি তুমি আমারি মম জীবন মরণ বিহারী।"
কি সঙ্গীত তুমি জড়িয়ে দিয়ে গিয়েছো যা আজো আমার অঙ্গে অঙ্গে প্রতি তন্ত্রীতে তন্ত্রীতে জেগে রয়ে গেলো। এতগুলি দিন পরেও সে সূরের মূর্ছনা আবেশে জড়ায়।
ছড়িয়ে পড়ে সবখানে...........
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ৯:৩৭