সেই সুদুর শৈশব থেকেই জেনে গেলাম বুকের গহীনে এক শুন্যতা এক হাহাকারের নদী।ঠিক কবে থেকে এ শুন্যতার সৃষ্টি হয়েছিলো সঠিক মনে পড়ে না আমার।মনে পড়ে শুধু বুদ্ধি হবার পর থেকেই জেনে গেছিলাম কোথাও একটা গন্ডগোল আছে আমার পৃথিবীতে।সবার আমার প্রতি চালচলন, ভিন্ন দৃষ্টি ও চাহনীতে দেখতাম এক ভিন্নতা যা অন্যদের সাথে সামন্জস্যময়তায় ঠিক খাপ খায়না।
ধীরে ধীরে উপলদ্ধি করলাম ,আর সবার সাথে কোথায় আমার ভিন্নতা।
সবার যে পরম নিভর্রতার সথান টুকু আছে সেখানেই এক বিরাট শুন্যতা রয়েছে আমার।সবার মত আমারও খুব ইচ্ছে হত ,পরম মমতময় বটবৃক্ষের মত সেই আশ্রয়স্থলে নিশ্চিত নির্ভাবনায় আশ্রয় পেতে।খুব লোভ হত মমতা স্নেহ ও ভালোবাসায় গড়া সেই আশ্রয়স্থলটির জন্য।
আমার পরম নিভর্রতার স্থান টুকু তারাই আবার কেড়ে নিয়েছিলো যারা আমাকে একদিন এনেছিলো তাদের ভালাবাসা দিয়ে এই ধরীত্রীতে।। নিজেদের ভালোবাসা ফুরিয়েছিলো, তাই তাদের দায়বদ্ধতাও সেদিন মুল্যহীন হয়ে পড়েছিলো। কেউ ভাবেনি একটা বারের জন্য ও নিজেদের ভুল,নিজেদের স্বার্থের কাছে তাদেরই সৃষ্ট কোনো এক অসহায় সৃষ্টির কথা।
যখন থেকে এ আত্নপলদ্ধি তখন থেকেই এই পৃথিবী ও পৃথিবীর সবার উপরে জন্ম নিল এক গোপন বিধংসী ক্রোধ।মাঝে মাঝে ইচ্ছে হত ধবংস করে ফেলি আশেপাশের সবকিছু।ঠিক তখন থেকেই খুব সূক্ষভাবে খেয়াল করতে শিখলাম আমি নিজেকেই আসলে ঘেন্না করি। ঘেন্না করি নিজের জন্মকে, নিজের অস্তিত্তকে।ঘেন্না করি এই পৃথিবীর জানা অজানা সকলকেই।
চক্র-২
হঠাৎ একপৃথিবী ভালবাসা নিয়ে নেমে এলো এক দেবদুত কোনো এক স্বর্গ হতে।আমার সুপ্তগ্লানিময় পুরো পৃথিবীটা পালটে গেলো সে দেবদুতের জাদুকাঠি স্পর্শে।
আমার সে সব দিন রাত্রী,প্রতি মুহুর্ত, পল, ক্ষণ সে জাদুমায়াবী স্পর্শে পালটে যেতে লাগলো।মনে হল এজীবনে যত দুঃখ ক্লেশ লান্ছনা ছিলো সেসব অতি তুচ্ছ হয়ে গেল এ জাদুকরী ভালোবাসার কাছে।আমি যেন রুপান্তরীত হলাম সত্যিকারের এক স্বর্গের অপ্সরীতে।কিন্তু জন্ম যার আজন্ম পাপ তার কি সাধ্যি স্বর্গের সে দেবদুতের কাছাকাছি আজীবন থেকে যাবার?
তাই স্বর্গের সে দেবদুতকে একদিন চিরবিদায় জানাতে হল মত্যের এ অপ্সরীকে।তার পৃথিবী ও আমার পৃথিবীর যে বাব্যধান তা যে কখনও ঘুচবার নয়।
চক্র-৩
এবার শুরু হল একাকী পথচলা। সিদ্ধান্ত নিলাম জীবনের বাকি দিনগুলোতে চাইনা আর কাউকে। চাইনা কোনো ভালোবাসার বন্ধুত্বের হাত।নিজেকে গড়ে নিতে চাইলাম নিজের মত করে। একাকী ভাবনায় একাকী পথচলায় এই সংগিহীন সাথীহীন ভালোই ছিলাম আমি।
"চলিতে চলিতে পথে তোমায় দেখে কেনো যে থমকে আমি দাড়িয়ে গেলাম?মনে মনে হল যেনো কত যুগ যুগ ধরে তোমায় দেখবো বলে এখানে ছিলাম।
তুমি হঠাৎ হাওয়ায় ভেসে আসা ধন, তাই হঠাৎ পাওয়ায় চমকে ওঠে মন"কত শত রবীনদ্রনাথ আবারও এসে ভীড় জমালো মনের কোনে, তোমাকে এক ঝলক দেখেই মনে হল তুমি ঠিক সেই জন যাকে আমি জন্ম জন্মান্তর ধরে চিনি। কিন্তু সাথে সাথে এও বুঝে ফেললাম খুব অসময়ে দেখা হল তোমার সাথে।আবারও সেই তোমার পৃথিবী ও আমার পৃথিবীর বাব্যধান অনেকখানি। সে বাব্যধান ঘুচবার নয়।
চক্র ও পুণারাবৃত্তি
আমি মাঝে মাঝে ভাবি বিধাতা কি এক সুক্ষ চক্র জালে আমার জীবনটা গড়েছিলেন। মানুষ কি নিজেই নিজের ভাগ্যনিয়ন্তা নাকি নিয়তির চক্রজালে বন্দি?
শৈশবে মাতৃক্রোড়ের ভুল সন্তানটি আমি।কিছুতেই যেনো পারিনি মাকে ভুল মানুষটি বলতে। বরং ভেবেছি আমি নিজেই একজন ভুল মানুষ ছিলাম আছি ও থাকবো আজীবন তার কাছে।কিন্তু আমার কাছে অবশ্যই বাবা একজন ভুল মানুষ। যে ভুল মানুষটিকে তার নিজের ভুলের মাশুল দিতে ছেড়ে যেতে হয়েছিলো আমাকে একদিন।তারপর সেই ভুল দেবদুত যার ধর্ম গোত্র বাসস্থান কোথাও আমকে মিলানো যায়না।তারপর ভুল এই তুমি।ভুল এই তুমি ও তোমাদের মাঝে আমি এক ভুল মধ্যবর্তিণী।
এই করেছ ভালো নিঠুর হে
এই ভুল মানুষ গুলো বন্দি ছিলো তাদের ভাগ্যের কাছে , ছিলো নিরুপায়।আর আমাকে নিয়ে বিধাতা খেলেছিলেন একল নিঠুর খেলা। ভুল মানুসগুলোর ভাগ্যের খেলা। খুব হাসি পায়,খুব জানতে ইচ্ছে করে বিধাতার কাছে, আমাকে গিনিপিগ না করে রক্তমাংসের মানুষ করে পাঠালে কেনো এই ধরিত্রীতে?কেন একটা মন দিলে?ভালোবাসায় ভরা একটি মন, যা শুধু বার বার ভুল মানুষদেরকেই ভালো বেসেছিলো!
কেন বার বার আমাকে তাদের ভাগ্যের পরীক্ষায় গিনিপিগ হতে হল?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৮ রাত ১২:৩৬