ছেলেটা: কেমন কাটালে এ কটা দিন? কি করলে? কোথায় কোথায় ঘুরলে?
মেয়েটা: অনেক অনেক ভালো কাটিয়েছি। সত্যি মন ভাল করে দেবার মত একটা জায়গা বান্দরবান। নাম টা শুনে কখনই ধারনা করা যাবেনা বিধাতার এই অপুর্ব সৃস্টিকে। যেন বিধাতা ছবি এঁকেছেন বসে বসে।এত সুন্দর একটা জায়গা বোধ হয় বাংলাদেশের কোথাও নেই! এই ঝড় জল উপেক্ষা করে বান্দরবান যাওয়াটা সফল হল আমার সে নৈসর্গিক সৌন্দর্য দেখে। পৌছুতে রাত ১২ টা বেজেছিলো , ভোর হতে যখন জানালার পর্দাটা সরালাম। জানালার পর্দা সরাতেই যেন চোখের সামনে ফুটে উঠলো যেন ক্যানভাসে আঁকা কোনো এক ছবি! ত্রিভুজাকৃতি পাহাড়ের পর পাহাড়, মাঝখানে ছোট জলাশয়, একধারে আঁকাবাঁকা রাস্তা চলে গেছে। সেসব দৃশ্য দেখেমাত্র আমি কি করেছি জানো? সেই সাত সকালেই ছবি আঁকতে বসে গেলাম রেস্ট হাউজের বারান্দায়। শুধুই পেনসিল স্কেচ। যেন ভুলে না যাই কোনোদিন।
ছেলেটা: পেনসিল স্কেচটা আমাকে দিয়ে দিও। আমি বাঁধিয়ে রাখবো আমার ঘরের দেয়ালে।
মেয়েটা: আচছা । তাই হবে। তোমাকে ছাড়া আর কাকে দেবো আমি?
ছেলেটা : ঠিক তো ? ভুলে যেওনা যেন? আর কাউকে দিয়ে দিয়োনা আবার?
মেয়েটা: হুম ! নানা তাই হবে।
এ্যাই শুনোনা। আমরা ওখান থেকে কি করলাম জানো? চিম্বুক পাহাড় ছাড়িয়ে নিলগিরিতে গিয়েছিলাম। নিলগিরির উচ্চতাটা চিম্বুকের চাইতেও বেশি জানো তো?
ছেলেটা: হাহাহাহা ! জানি বাবা । মায়ের কাছে মাসির বাড়ির গল্প! ভুলে যাও কেনো আমি ঐ পাহাড়ের ই ছেলে? ছোট থেকে পাহাড়ের কোলেই বড় হয়েছি।
মেয়েটা: আচছা বাবা হয়েছে। তুমি আমার গল্প শুনো, তোমার গল্প শুনতে চাইনি।
ছেলেটা: ওকে তুমি বলো।
মেয়েটা: জানো? এত্ত মেঘ ছিলো আর এত ঠান্ডা ঐ নিলগিরীর চুড়ায়। কিন্তু পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথে যখন গাড়ি ছুটছিলো। আঁকাবাঁকা ঐ বিপদসংকুল রাস্তা দেখে অনেকেই ভয় পাচ্ছিলো। নানা রকম বিপদের কথাও বলছিলো। আমার কিন্তু একটা কথাই মনে হচ্ছিলো শুধু , লুকি্য়ে থাকার জন্য বান্দারবান খুবই ভালো একটা জায়গা।আমার ভাবনায় শুধু ছিলে তুমি।ভাবছিলাম সবাইকে ছেড়ে যদি চলে আসা যেত এই গহীন বনে। কোথাও কেউ নেই ! কেউ নেই চেনা পরিচিত একজনও। বাঁধা দেবারও কেউ নেই। শুধুই তুমি আর আমি।কারু কখনও কোনো সাধ্যি ছিলোনা আমাদেরকে খুঁজে পাবার। হাহাহাহা কি পাগলামি চি্ন্তা!!! চিন্তা করে দেখো!!!
ছেলেটা: হুম!! আসলেই লুকিয়ে থাকার মত জায়গা বটে। জানো চিম্বুক পাহাড়ের উপরের রেস্ট হাউজটা আমাকে ডিজাইন করতে দেওয়া হয়েছিলো।আমি অনেক দিন সময় নিয়েও কিছুই ঠিক করতে পারলাম না। মনে হচ্ছিলো, যাই করবো জায়গাটাকেই স্পয়েল করা হবে! সাইট ও দেখতে গিয়েছিলাম তারপরে আর করা হলনা।
মেয়েটা: জানো এত বড় একটা টিমের সাথে থাকার পরেও, সবার মাঝে থেকেও আমি মনে মনে উড়ে চলেছিলাম অজানা কোনো এক দেশে।মাঝে মাঝে আমি কবি হয়ে যাই, তাই তো মন মোর মেঘেরও সংগি হয়ে উড়ে চলেছিলো দিক দিগন্তের পানে।
মাঝে মাঝে যখন একা থাকি, মনে পড়ে যায়, একদিন অনেক দুরে চলে যেতে হবে আমাকে। ইচ্ছে করেনা একদম জানো?
ছেলেটা: আবার ও শুরু করলে? একটা দিন দুরেই তো ছিলে। কত দূরে যেতে পেরেছো? আদৌ কি আমার থেকে দূরে ছিলে? সারাটা সময় কি বুকের ভিতরে ছিলাম না আমি ?
মেয়েটা: এ্যাই.........
ছেলেটা: কি? কখখনো এসব ভাববে না তুমি। কখনো এমন করে বলবেও না। তোমাকে আমি হারাতে পারবোনা।
থাক সেসব কথা।
তুমি এলে , অনেক দিনের পরে যেন বৃস্টি এলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২২