সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার ভাষা আরবী, কুরআন শরীফ-এর ভাষা আরবী, জান্নাতের ভাষা আরবী। আমাদের মাতৃভাষাও যদি আরবী হতো, তাহলে কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস বুঝতে সহজ হতো। যদি হতো আমাদের মাতৃভাষা ফার্সী, তাহলেও হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদেরসহ অনেক বড় বড় আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনাদের কিতাবাদি পড়ে ইলমে জাহির ও বাতিন হাছিলের রসদ পাওয়া যেতো সহজেই। যদি আমাদের মাতৃভাষা হতো ঊহমষরংয. তাও ভালো ছিলো, মন্দের ভালো। ইংরেজরা মুসলমানদের ঝপরবহপব ধহফ ঞবপযহড়ষড়মুসহ সব আবিষ্কৃত জিনিস চুরি করে নিজেদের নামে প্রচার করছে, তারও বিশেষ প্রতিবাদ করা যেতো। আজ অনেক মুসলমান জানেনই না যে জাবির ইবনে হাইয়ান, আলকেমি, ইবনে নাফিস, আল ফারাবী ও ইবনে সিনার মতো মহা বিজ্ঞানীদের বহু আবিষ্কার ইংরেজরা জালিয়াত করে নিজেদের নামে চালিয়ে দিচ্ছে। আমাদের মাতৃভাষা ইংরেজি হলে এই কথাগুলো সহজেই তুলে ধরা যেতো বিশ্ববাসীর কাছে।
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা, এতে আমরা অখুশি অসুখী নই মোটেও। যারা মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির জন্য অকাতরে প্রাণ দিলেন। আমরা অবশ্যই তাদের জন্য প্রাণভরে দোয়া করি, তাদের স্মরণ করি পরম শ্রদ্ধায়। কিন্তু বিপত্তি অন্য জায়গায়। কিছু অখ্যাত হিন্দু ও মুসলমান নামধারী মুনাফিক বাংলা সাহিত্যের তথাকথিত কবি হয়ে উঠেছে, যাদের মাতৃভাষা বাংলার প্রতি কোনো দরদ ছিলো না, বাংলা ভাষা রক্ষার আন্দোলনেও যারা ঝাঁপিয়ে পড়েনি, তারাই আজ মাতৃভাষা বাংলা সাহিত্যে আসন গেড়ে বসেছে। তাদের কিছু অপর্কীতি বাংলাভাষাভাষীদের কাছে তুলে ধরছি-
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমিক পর্যায়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে অনেক কবিতা ও গল্প রয়েছে। সপ্তম শ্রেণীর ‘আনন্দ পাঠ’ বইয়ে দশটি গল্পের মধ্যে প্রথম পাঁচটির লেখকই কাট্টা কাফির, মালউন ও ইসলামবিদ্বেষী রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, শ্রীরাম, অজিতকুমার ও বনফুল বাবুর (নাঊযুবিল্লাহ)।
এদেশের ৯৭ ভাগ মুসলমান ব্যক্তিদের সন্তানারা (হয়তো) ধারণা করবে যে, বাংলা সাহিত্যে হয়তো মুসলমানদের অবদান নেই এবং এসব কাফিরদের লেখা থেকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিখছে কুফরী, গুমরাহী, বেপর্দা, বেশরা ও তথাকথিত প্রেমপীরিত। এভাবে অন্যান্য বইগুলোতেও পাতায় পাতায় রয়েছে ঈশ্বরচন্দ্র, মধুসুদন, দিজেন্দ্রলাল, কামিনী রায়, সত্যেন্দ্রনাথ, নির্মলেন্দু, জীবনান্দ, সুকান্ত, রনেশদাস, নারায়ণ, কালিদাস, সুকুমার, সুবাস চন্দ্র, স্বর্ণকুমারী, মহাদেব, বিভুতিভূষণ, বিপ্রদাস, বুদ্ধদেব, দীনবন্ধু, বঙ্কিমচন্দ্র, জগদীশচন্দ্র, অন্নদাশঙ্কর ও অন্যান্য কাফির মুশরিকদের নাম। নাঊযুবিল্লাহ! ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, কাজী নজরুল ইসলাম, ফররুখ আহমদ, গোলাম মোস্তফা, আব্দুল হাকিম, শাহ মুহম্মদ সগীর, আলাওল, ইসমাইল হোসেন সিরাজীসহ অন্যান্য মুসলিম লেখকদের বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদান থাকলেও ধীরে ধীরে এদের লেখালেখি উচ্ছেদ করে কাফির-মুশরিকদের লেখার অনুপ্রবেশ ঘটানো হচ্ছে সূক্ষ্মষড়যন্ত্রমূলকভাবে!
এদিকে মুসলিম নামধারী কিন্তু বিভ্রান্ত গুমরাহ ও মুনাফিক ব্যক্তির লেখা বাংলা সাহিত্যকে আরো কলঙ্কিত করেছে। যেমন ৬ষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ে ইব্রাহীম খাঁ, রচিত ‘রসূলের দেশে’ নামক একটি গল্প রয়েছে। সেখানে সে ৪৫ পৃষ্ঠায় ওহাবী মতবাদের সাফাই গেয়েছে। এই কুখ্যাত লেখক ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের ৬৩ পৃষ্ঠায় ‘ইসলামের মর্মকথা’ গল্পে লিখেছে, ‘সর্বজাতির, সর্বগোষ্ঠীর, সর্বদেশের, সর্বশ্রেণী লোকের আল্লাহর মন্দিরে উপাসনার জন্য প্রবেশের সমান অধিকার’। সে তার লেখায় মহান আল্লাহ পাক উনার ঘর মসজিদকে ‘মন্দির’ হিসেবে গণ্য করেছে। নাঊযুবিল্লাহ! ৮ম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের ৬৫ পৃষ্ঠায় বাংলা ভাষার ‘জন্মকথা’ নামক প্রবন্ধে ইসলামবিদ্বেষী মুরতাদ লেখক হুমায়ন আজাদ স্বর্গ-নরক তথা জান্নাত-জাহান্নামকে অবিশ্বাস করে ও কটাক্ষ করে লিখেছে, ‘বাংলা ভাষা কোনো কল্পিত স্বর্গ থেকে আসেনি। একই বইয়ের ৭০ পৃষ্ঠায় চরম গুমরাহ লালনের একটা লেখা প্রকাশিত হয় ‘মানব ধর্ম’ নামে। সেখানে লেখা রয়েছে ‘মানুষ জাত ও ধর্মভেদে যে ভিন্নতার কথা বলে লালন তা বিশ্বাস করে না।’ নাঊযুবিল্লাহ!
শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী মীর মোশাররফ হোসেনের বিতর্কিত বই ‘বিষাদ সিন্ধু’ থেকে ‘অপূর্ব ক্ষমা’ নামক প্রবন্ধের কারবালার ইতিহাসকে বিকৃত করে ছাপানো হয়েছে। এই প্রবন্ধের সর্বক্ষেত্রে মহান আল্লাহ পাক উনাকে ‘ঈশ্বর’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। নাঊযুবিল্লাহ! ৯ম ও ১০ম শ্রেণীর পাঠ্য কবিতা ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতায় কুখ্যাত ও বিতর্কিত কবি শামসুর রহমান লিখেছে, ‘স্বাধীনতা তুমি রবী ঠাকুরের অঝর কবিতা, অবিনাশী গান,’ এই ভ- কবি আমাদের মহান স্বাধীনতাকে লম্পট কবি রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানের সাথে তুলনা করেছে। নাঊযুবিল্লাহ!
অথচ বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ, কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, পর্যটক ও ওলীআল্লাহ হযরত শেখ সাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত জালালুদ্দীন রুমী রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আল্লামা জামি রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আল্লামা হাফিজ রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আমীর খসরু রহমতুল্লাহি আলাইহি ও হযরত ফেরদৌস রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাদের কবিতা ও সাহিত্যের অনুবাদ করেও যদি বাংলা ভাষায় ঢুকানো যেতো, তাহলে আমাদের ভাষাও সমৃদ্ধ হতো, মুসলমানদের আমল-আক্বীদারও হিফাজত হতো। এই ব্যাপারে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি বাংলা একাডেমী, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ও অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান যদি এখনই এগিয়ে না আসে, তাহলে এই মুসলিম বাঙালি জাতি অচিরেই নিক্ষিপ্ত হবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে। মুসলমানদের বাংলা সাহিত্যে ঢুকে পড়া কুফরী ও গুমরাহী থেকে দেশবাসীকে হিফাজতের জন্য এখনই সর্বস্তরের মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১২ রাত ২:১৭