আমার মা বিগত ১০ বছর আমার পেছনে আদা জল খেয়ে লেগেছিল বিয়ের জন্য।কিন্তু আমি মাকে ছাফ জানিয়ে দেই আগে মার্স্টাস শেষ করব,তারপর ভালো একটা চাকুরী করব তারপর বিয়ে।আমার অসহায় মা করুন ভাবে তাকিয়ে বলে তখন তো তোর জন্য ছেলে পাওয়া যাবে না,তুই তো বুড়ি হয়ে যাবি !মাঝে মধ্যোই ফোন করে আজব আজব প্রশ্ন করতো।প্রশ্নের ধরনটা হলো এমন....আচ্ছা ঢাকাতে তো বেশ দিন হলোই আছিস এর মধ্যে কাউকে ভালো লাগেনি তোর,,আচ্ছা যারা তোকে আগে পছন্দ করতো তাদের কি বিয়ে হয়ে গেছে?তারা কি এখন তোকে বিয়ে করবে না?তোর সংসার কি আমরা দেখে যেতে পারবো?আদৌ কি তোর বিয়ে হবে ...ইত্যাদি ইত্যাদি।আবার পাড়ায় কারো বিয়ের খবর শুনলে হাতে যত কাজই থাক আগে আমায় ফোন করে সেই বিয়ের খবর জানাতো।বর ইয়া বড় চাকুরী করে ,বরের এই আছে সেই আছে,বিয়েতে ১০ ভড়ি গহনা দিছে,খাওয়া দাওয়ার এলাহী আয়োজন ।শুধু তাই না রাস্তায় কোন সুন্দর ছেলে দেখলেও বাসায় ফিরে আফসোসের সাথে বলোতো...শোন আজ না একটা ভাড়ি সুন্দর ছেলে দেখলাম ।ইস্!ছেলেটা যদি আমাদের বাড়ির জামাই হতো!
এসব শুনতে প্রথম দিকে খারপ লাগলেও পরে অভ্যেস হয়ে গিয়েছিল।তবে মা যখন কেঁদে কেঁদে বলতো তখন খুব খারপ লাগতো।মনে হতো আমি বোধ হয় একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছি। তখন মাকে সান্তনা দিতাম বলতাম.....দেখ তোমার মেয়ে জামাইটা হবে পাড়ার মধ্যে সবচেয়ে সেরা,ফাস্ট ক্লাস জব থাকবে,দেখতে অনক গুল্লি গুল্লি হবে তবে এসবের জন্য শুধু ৫টা বছর সময় লাগবে। মা রাগে গনগন করতে করতে ফোন কেটে দিতো।
না; মা কে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়নি।১ বছর ২৮ দিন হলো আমি সংসার পেতেছি।মা এখন অনেক খুশি শুধু একটা বিষয়ে তার আফসোস যে তার মেয়ে জামাই চাকুরী করে না ব্যবসা করে সঙ্গে রাজনীতি।পাড়ার মহিলারা বিশেষ করে আমার চাচি যখন বলে তার মেয়ে জামাই ৫০ হাজার টাকা বেতনের চাকুরী করে তখন নাকি মায়ের খুব মন খারাপ হয়।মা ঠিক আগের মতো করে আবার আমায় ফোন দিয়ে প্রশ্ন করতে থাকে ...হ্যারে রাজনীতি করা ছেলেরা নাকি ভালো হয় না? জামাই কি পারে না আবার চাকুরী করতে?আচ্ছা তোদের মাসে ইনকাম কত?আমি হাসতে থাকি আর আবারও আগের মত করেই বোঝাতে থাকি। মা তোমার মেয়ে জামাই প্রথম শ্রেনীর ঠিকাদার তার ইনকাম খারাপ না!সে কেন্দ্রীয় নেতা তার সন্মান ও কম না।তাছাড়া সে এক সময় TCB এর এসিস্টেন্ট ডিরেক্টর ছিল।গাড়ি ছিল,ফ্লাট ছিল।চাইলেই মাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতে পারতো কিন্তু সে তা করে নি।এতে তোমার গর্ব হওয়া উচিৎ।
আমার মায়ের মুখে আবারও হাসি ফোঁটে।সেদিনের মতো ক্ষ্যান্ত হয়ে ফোন রেখে দিলেও তার প্রশ্ন করা কিন্তু বন্ধ হয় না।
কিন্তু এখন আমি নিজেই অপেক্ষায় থাকি যে কখন মায়ের মাথায় নতুন নতুন প্রশ্নের উদ্ভব হবে আর আমি উত্তর দিবো।কেননা এখন আমি বুঝি যে মা কেন প্রশ্ন করে.....কি জানতে চায়....কেন আমি খেলে তার খাওয়া হয়....কেন আমি জিতলে সে জিতে যায়।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১:৫৫