somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেকড়ের টান

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বাবা মা চাচােতা-জ্যাঠাতো ভাই বোন। দাদা অনেক পছন্দ করে মাকে বাড়ির বড় বউ করে এনেছিলেন।শুনেছি আমার ছোট চাচির সাথে বাবার বিয়ের কথা ছিল,এমনকি নিরিক্ষনও হয়ে গিয়েছিল।কিন্তুু দাদা সেই বিয়ে ভেঙ্গে আমার মায়ের সাথে বাবার বিয়ে দেয়।পরবর্তীতে ছোট চাচার বউ হিসেবে আমার চাচিকে বিয়ে দিয়ে বাড়িতে আনে।এই ঘটনার সূত্রধরে সম্ভবত আমার মা আর চাচির মধ্যে তেমন সূসম্পর্ক ছিলনা।তাছাড়া পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দতো ছিলই ।এই সব দ্বন্দের বলির পাঠা ছিলাম আমারা ভাই বোনেরা।মা চাচি কেউই চাইতো না আমারা কারো সাথে যোগাযোগ রাখি।আমার চাচাতো বোন রুমি ও আমার সমবয়সী হওয়ায় আমরা খেলা-ধূলা সহ সকল প্রকার কুকান্ড এক সাথেই করতাম।
আমাদের ৪টা পুকুর।তার পরেও অন্যের পুকুড়ে চুরি করে মাছ মারার মজাই আলাদা।আমি যেদিন একা মাছ মারতে যেতাম সেদিন চুরি সফল হলেও আমার বোন যেদিন যেত সেদিন ধাওয়া না খেয়ে বাড়িতে ফিরতে পারতাম না।এ নিয়ে মাঝে মধ্যে গ্রাম্য সালিশ বিচার ও হতো।একবার তো ৫০টাকা জরিমানাও দিতে হয়েছিল।তারপরেও সে না আমার পিছু ছাড়তো না আমি ছাড়াতে পারতাম।
আমাদের দুই বাড়ি পরে আমার ছোট দাদীর বাড়ি।সম্পত্তি ভাগাভাগি না হওয়ার কারনে ভিটের কিছু অংশ জুড়ে গাছ গাছালি আবাদ করে খান তিনি।আমাদের নজর ছিল তার বাড়ির পশ্চিমে যে আতা গাছটা তার দিকে।গাছ ভর্তি আতা যখন ঝুমঝুম করতো তখন আমরা শুধু অপেক্ষায় থাকতাম কখন বাড়িতে কেউ থাকবেনা আর আমরা আমাদের কার্জ হাছিল করবো!তবে আমাদের চুরির মালামাল বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল না।কেননা মার কাছে দিনে কম করে হলেও একবার কেউনা কেউ নালিশ করতে যেত।এই অবস্থায় আতা নিয়ে বাড়ি ফিরলে মা আমাকে আস্ত কিমা বানিয়ে খেয়ে ফেলতো।তাই আমাদের পুকুরের যে কচুড়িপানা গুলো পাড়ে জমিয়ে রাখা হতো আমি আতাগুলো ওই খানেই লুকাতাম।৩-৪ দিন পরে পেকে গেলে ওখান থেকে বের করে এনে শান্তি করে খেতাম আহ্! সেই স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে।কিন্তু সে সুখ বেশিদিন সইলো না।একদিন আমার বোন ধরা পরার পরে চুরি সব তথ্য ফাঁস করে দিলে তারা আমাদের চুরির মাল গুলো সব উদ্ধার করল ।দাদার মৃত্যর পরে জমি ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায় ওই আতা গাছটা এখন আমাদের ভাগে।এখনও বাড়ি গেলে গাছটার দিকে চোখ কেমন আটকে যায়।আটকে যায় আমার বোকা বোনটার ডালে ডালে ঘুরে বেড়ানোর দিকে।

আমাদের বাড়ির সাথে একটা পতিত জমিতে মা আর চাচিরা ভাগাভাগি করে হলুদ চাষ করতো।যখন হলুদ তোলার সময় আসতো মা আমাকেই কাজে লাগাতো।আমি আমাদের অংশের টুকু তুলতাম আর আমার বোন তাদের অংশের টুকু।একদিন হলুদের ক্ষেতে আমি এক ধরনের কচু আবিস্কার করলাম।যার আকার অনেকটা কেসূরের মতো।জি্ভে জল এসে গেল।কিন্তু যদি সেটা সত্যি সত্যি কেসুর না হয় তবে?তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমার বোকা বোনটাকে দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালাবো।তাই করলাম।আমার বোন ও লাফিয়ে লাফিয়ে রাজি হলো।১ মিনিটের মধ্যে ছাগলের মতো চিবিয়ে চিবিয়ে সবটুকু সাবার করলো।কিন্তু কয়েক সেকেন্ড যেতে না যেতেই এ মা বলে জড়ে চিৎকার দিল।ব্যাস!আমার কলিজা শুকিয়ে কাঠ।নিশ্চিত আজ মার সাথে চাচির ঝগড়া লাগবে আর আমি বেদম পেটন খাবো।সত্যিই তাই হলো। চাচি চিল্লিয়ে গোটা বাড়ি মাথায় তুলল,মা সহ্য করতে না পেরে আমাকে তুলো ধুনো করল।অবশ্য পরে ডাক্তারের খরচ মা দিয়ে চাচির রাগ ভাঙ্গিয়েছে।
আমাদের পুকুড়ের পাশে খড়ের গাদা রাখা হতো।গাদার চার পাশ খোজ করলে মাঝে মধ্যে দু একটা করে হাসের ডিম চোখে মিলতো।আমরা ডিম পাবার আশায় দিনে একবার হলেও সেখানে যেতাম।যখনই কোন হাঁসকে গাদার পাশে ঘোরা ফেরা করতে দেখতাম তখনই আমার বোন কে নির্দেশ দিতাম হাঁসটাকে ধরে আনার।আমার বোনও তাই করতো।আমরা গাদার নিচে থেকে কিছু অংশ খড় সরিয়ে হাঁসের ডিম পারার জায়গা করে দিতাম। তারপর সেখানে হাঁসকে রেখে আবার খড় দিয়ে ঢেকে রাখতাম।বিকেলে আসতাম হাঁস কটা ডিম পারল সেটা দেখতে।আস্তে আস্তে পাড়ার মানুষ জেনে গেল আমাদের এই প্রজেেক্টের কথা।আমার চাচি কাপড় বাধতে বাধতে মার কাছে এসে সাফ জানিয়ে দিল আমি যেন আর তার মেয়ের সাথে না মিশি। কেননা তার বোকা মেয়েটি আমার সাথে মিশে খারাপ হয়ে যাচ্ছে।মা আমার উপর ১৪৪ ধারা জারি করলো।নিরুপায় আমি কি আর করবো।
আমার বোনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ সেই যে বন্ধ হল আর কখনও হয়নি। সময়ের ব্যবধানে এভাবেই মানুষ সব সম্পর্ক গুলো থেকে ছিটকে পড়ে।তারপর হয়ে যায় দূরের কেউ।কিন্তু শেকড়ের টান সেটা কি আদৌ খোলা যায়?ভালোবাসার মায়া জাল সেটা কি কখনও ছেড়া যায়?আমি কি ছিড়তে পেরেছি নাকি সে পেরেছে?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৫:৪১
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×