আমার বাবা মা চাচােতা-জ্যাঠাতো ভাই বোন। দাদা অনেক পছন্দ করে মাকে বাড়ির বড় বউ করে এনেছিলেন।শুনেছি আমার ছোট চাচির সাথে বাবার বিয়ের কথা ছিল,এমনকি নিরিক্ষনও হয়ে গিয়েছিল।কিন্তুু দাদা সেই বিয়ে ভেঙ্গে আমার মায়ের সাথে বাবার বিয়ে দেয়।পরবর্তীতে ছোট চাচার বউ হিসেবে আমার চাচিকে বিয়ে দিয়ে বাড়িতে আনে।এই ঘটনার সূত্রধরে সম্ভবত আমার মা আর চাচির মধ্যে তেমন সূসম্পর্ক ছিলনা।তাছাড়া পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দতো ছিলই ।এই সব দ্বন্দের বলির পাঠা ছিলাম আমারা ভাই বোনেরা।মা চাচি কেউই চাইতো না আমারা কারো সাথে যোগাযোগ রাখি।আমার চাচাতো বোন রুমি ও আমার সমবয়সী হওয়ায় আমরা খেলা-ধূলা সহ সকল প্রকার কুকান্ড এক সাথেই করতাম।
আমাদের ৪টা পুকুর।তার পরেও অন্যের পুকুড়ে চুরি করে মাছ মারার মজাই আলাদা।আমি যেদিন একা মাছ মারতে যেতাম সেদিন চুরি সফল হলেও আমার বোন যেদিন যেত সেদিন ধাওয়া না খেয়ে বাড়িতে ফিরতে পারতাম না।এ নিয়ে মাঝে মধ্যে গ্রাম্য সালিশ বিচার ও হতো।একবার তো ৫০টাকা জরিমানাও দিতে হয়েছিল।তারপরেও সে না আমার পিছু ছাড়তো না আমি ছাড়াতে পারতাম।
আমাদের দুই বাড়ি পরে আমার ছোট দাদীর বাড়ি।সম্পত্তি ভাগাভাগি না হওয়ার কারনে ভিটের কিছু অংশ জুড়ে গাছ গাছালি আবাদ করে খান তিনি।আমাদের নজর ছিল তার বাড়ির পশ্চিমে যে আতা গাছটা তার দিকে।গাছ ভর্তি আতা যখন ঝুমঝুম করতো তখন আমরা শুধু অপেক্ষায় থাকতাম কখন বাড়িতে কেউ থাকবেনা আর আমরা আমাদের কার্জ হাছিল করবো!তবে আমাদের চুরির মালামাল বাড়ি নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা ছিল না।কেননা মার কাছে দিনে কম করে হলেও একবার কেউনা কেউ নালিশ করতে যেত।এই অবস্থায় আতা নিয়ে বাড়ি ফিরলে মা আমাকে আস্ত কিমা বানিয়ে খেয়ে ফেলতো।তাই আমাদের পুকুরের যে কচুড়িপানা গুলো পাড়ে জমিয়ে রাখা হতো আমি আতাগুলো ওই খানেই লুকাতাম।৩-৪ দিন পরে পেকে গেলে ওখান থেকে বের করে এনে শান্তি করে খেতাম আহ্! সেই স্বাদ আজও মুখে লেগে আছে।কিন্তু সে সুখ বেশিদিন সইলো না।একদিন আমার বোন ধরা পরার পরে চুরি সব তথ্য ফাঁস করে দিলে তারা আমাদের চুরির মাল গুলো সব উদ্ধার করল ।দাদার মৃত্যর পরে জমি ভাগাভাগি হয়ে যাওয়ায় ওই আতা গাছটা এখন আমাদের ভাগে।এখনও বাড়ি গেলে গাছটার দিকে চোখ কেমন আটকে যায়।আটকে যায় আমার বোকা বোনটার ডালে ডালে ঘুরে বেড়ানোর দিকে।
আমাদের বাড়ির সাথে একটা পতিত জমিতে মা আর চাচিরা ভাগাভাগি করে হলুদ চাষ করতো।যখন হলুদ তোলার সময় আসতো মা আমাকেই কাজে লাগাতো।আমি আমাদের অংশের টুকু তুলতাম আর আমার বোন তাদের অংশের টুকু।একদিন হলুদের ক্ষেতে আমি এক ধরনের কচু আবিস্কার করলাম।যার আকার অনেকটা কেসূরের মতো।জি্ভে জল এসে গেল।কিন্তু যদি সেটা সত্যি সত্যি কেসুর না হয় তবে?তাই সিদ্ধান্ত নিলাম আমার বোকা বোনটাকে দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালাবো।তাই করলাম।আমার বোন ও লাফিয়ে লাফিয়ে রাজি হলো।১ মিনিটের মধ্যে ছাগলের মতো চিবিয়ে চিবিয়ে সবটুকু সাবার করলো।কিন্তু কয়েক সেকেন্ড যেতে না যেতেই এ মা বলে জড়ে চিৎকার দিল।ব্যাস!আমার কলিজা শুকিয়ে কাঠ।নিশ্চিত আজ মার সাথে চাচির ঝগড়া লাগবে আর আমি বেদম পেটন খাবো।সত্যিই তাই হলো। চাচি চিল্লিয়ে গোটা বাড়ি মাথায় তুলল,মা সহ্য করতে না পেরে আমাকে তুলো ধুনো করল।অবশ্য পরে ডাক্তারের খরচ মা দিয়ে চাচির রাগ ভাঙ্গিয়েছে।
আমাদের পুকুড়ের পাশে খড়ের গাদা রাখা হতো।গাদার চার পাশ খোজ করলে মাঝে মধ্যে দু একটা করে হাসের ডিম চোখে মিলতো।আমরা ডিম পাবার আশায় দিনে একবার হলেও সেখানে যেতাম।যখনই কোন হাঁসকে গাদার পাশে ঘোরা ফেরা করতে দেখতাম তখনই আমার বোন কে নির্দেশ দিতাম হাঁসটাকে ধরে আনার।আমার বোনও তাই করতো।আমরা গাদার নিচে থেকে কিছু অংশ খড় সরিয়ে হাঁসের ডিম পারার জায়গা করে দিতাম। তারপর সেখানে হাঁসকে রেখে আবার খড় দিয়ে ঢেকে রাখতাম।বিকেলে আসতাম হাঁস কটা ডিম পারল সেটা দেখতে।আস্তে আস্তে পাড়ার মানুষ জেনে গেল আমাদের এই প্রজেেক্টের কথা।আমার চাচি কাপড় বাধতে বাধতে মার কাছে এসে সাফ জানিয়ে দিল আমি যেন আর তার মেয়ের সাথে না মিশি। কেননা তার বোকা মেয়েটি আমার সাথে মিশে খারাপ হয়ে যাচ্ছে।মা আমার উপর ১৪৪ ধারা জারি করলো।নিরুপায় আমি কি আর করবো।
আমার বোনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ সেই যে বন্ধ হল আর কখনও হয়নি। সময়ের ব্যবধানে এভাবেই মানুষ সব সম্পর্ক গুলো থেকে ছিটকে পড়ে।তারপর হয়ে যায় দূরের কেউ।কিন্তু শেকড়ের টান সেটা কি আদৌ খোলা যায়?ভালোবাসার মায়া জাল সেটা কি কখনও ছেড়া যায়?আমি কি ছিড়তে পেরেছি নাকি সে পেরেছে?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ ভোর ৫:৪১