বেশিদিন আগের কথা না, এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় তাঁর একমাত্র ছেলেটা অসুস্থ, পাঁচ মাসের ছেলেটা টাইফয়েডের সঙ্গে মূত্রাশয়ের সংক্রমণে সেসময় অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি ছিল। জানা গিয়েছিল বাচ্চাটাকে ২১টা ইনজেকশন দিতে হবে। বোর্ড বসিয়েছেন চিকিৎসকেরা, ইনজেকশনের সঙ্গে অন্যান্য চিকিৎসাও চলছে। সন্তানের এ সংবাদ শুনে, বাবার ভেঙ্গে পড়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু তিনি ভাংলেন না। ভেঙে পড়লে চলবে? বাংলাদেশ দলের বিশাল দায়িত্ব তাঁর কাঁধে, তাই ভেঙে পড়েননি তিনি। সবার আগে যে দেশ! সেই দেশের প্রেরণায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন প্রথম ম্যাচের আগুন-পরীক্ষায়। আর তাতে দারুণভাবেই জ্বলে উঠলেন! অথচ এই মানুষটা নিজেও কম ঝক্কি ঝামেলা নিয়ে মাঠে নামেননি। চোটের সঙ্গে লড়তে লড়তে ক্লান্ত হননি! ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে চোটের কারণে ১১ বার দলের বাইরে যেতে হয়েছে, অপারেশন টেবিলে যেতে হয়েছে ১০ বার। অন্য কোন ক্রিকেটার হলে এরকম ২/৩ টা অপারেশনের পরেই হয়ত ক্রিকেট ছেড়ে দিত কিন্তু ক্রিকেট ইতিহাসের নির্ভীক এই মানুষটা দেশকে ভালোবেসে খেলেই যাচ্ছেন। ২০১১ সালে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ তাঁর কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছিল ইনজুরি। দেশের মানুষ এখনো ভুলেনি তাঁর সেই অঝোরে কান্না। এ কান্না ইনজুরির কান্না কিংবা এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মাত্র ২ রানে হেরে গিয়ে মাঠে বসে সুবোধ বালকের চুপচাপ কান্না নয়। এ কান্না ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে খেলতে না পারার। ভক্তদের কথা দিয়েছিলেন তিনি ফিরবেন এবং তিনি তাঁর কথা রেখেছেন। ফিরেছেন সদাপটেই। ফলাফল আমরা দেখেছি এ বছর বিশ্বকাপে এবং এ বছরের অন্যান্য জয়গুলোতে। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সফল বছর বলা যায় এই ২০১৫ সালকে। আর এ কৃতিত্বের অনেকটাই প্রাপ্য তাঁর।
বাংলাদেশ দল যখন একজন পেসারের অভাব বোধ করছিল তখন অনূর্ধ-১৯ দলের অস্থায়ী কোচ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সাবেক ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবার্টসের নজর কেড়েছিলেন একজন আক্রমণাত্মক, গতিময় বোলিং দিয়ে। রবার্টসের পরামর্শে ছেলেটিকে বাংলাদেশ এ-দলে নেয়া হয়। বাংলাদেশ এ-দলের হয়ে একটিমাত্র ম্যাচ খেলেই ছেলেটি জাতীয় দলে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। ৮ নভেম্বর, ২০০১ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে তার অভিষেক ঘটে যদিও বৃষ্টির বাগড়ায় ম্যাচটি অমীমাংসিত থেকে যায়। ছেলেটি অবশ্য অভিষেকেই তার জাত চিনিয়ে দেন ১০৬ রানে ৪টি উইকেট নিয়ে। গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার ছিলেন তার প্রথম শিকার। এরপর ২০০১ এর ২৩শে নভেম্বর ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হয় তাঁর। অভিষেক ম্যাচে বোলিং ওপেন করে তিনি ৮ ওভার ২ বলে ২৬ রান দিয়ে ২টি উইকেট বাগিয়ে নেন। ব্যক্তিগত তৃতীয় টেস্ট খেলার সময় এই মানুষটা হাঁটুতে আঘাত পান। ফলে প্রায় দু'বছর ক্রিকেটের বাইরে থাকতে বাধ্য হন। ইংল্যন্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলায় তিনি সফলতা পান। ৬০ রানে ৪ উইকেট নেয়ার পর আবার তিনি হাঁটুতে আঘাত পান। এযাত্রায় তিনি প্রায় বছরখানেক মাঠের বাইরে থাকতে বাধ্য হন। এরকম নানা সময়ে নানা ইনজুরির কারণে তিনি অনেক সময় মাঠের বাইরে ছিলেন যে সময়টায় মাঠে থাকলে তাঁর ক্যারিয়ার পৌঁছে যেত সফলতার অন্য মাত্রায়। অবশ্য এই এত বাঁধা বিপত্তির পরেও কিন্তু তিনি একজন সফলতম ক্রিকেটার, সফলতম মানুষ। বাংলাদেশ দলের অনেক সফলতাই এসছে এই মানুষটার হাত ধরে।এতক্ষণে সবাই হয়তো বুঝেই গেছেন আমি বলছি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্রিকেট টিমের জার্সি নম্বর ২ পরা প্লেয়ার, আমাদের যোগ্য ক্যাপ্টেন, প্রিন্স অফ হার্ট, পেসারের সংজ্ঞা চিনিয়ে দেওয়া 'নড়াইল এক্সপ্রেস' - মাশরাফি বিন মর্তুজা (কৌশিক) এর কথা। আজ তাঁর ৩২তম জন্মদিন। ডানহাতি এই ক্রিকেটার ১৯৮৩ সালে আজকের দিনে নড়াইলে জন্মেছিলেন। মজার ব্যাপার হল গত বছর এ দিনে তিনি ২য় বারের মত বাবা হয়েছেন, ঘর আলো করে এসেছে তাঁর ছেলে সাহেল। আজ বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম স্তম্ভ মাশরাফি এবং তাঁর ছেলে সাহেলকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আল্লাহ তাদের ভাল রাখুক সবসময়। গভীর সম্মান, শ্রদ্ধা এবং অসীম ভালোবাসার সাথে দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:০২