১৯৯৮ সালে বিশ্বখ্যাত লন্ডনের সানডে টেলিগ্রাফের ১৭ মে সংখ্যায় ‘ম্যান উইথ দ্য গোল্ডেন গানস’ শিরোনামে হাইলাইটস হয়েছিলেন বাংলাদেশের এক ধনকুবের। টেলিগ্রাফের ওই সংখ্যাটিতে বাংলাদেশি ধনকুবেরকে নিয়ে লেখা হয়েছিল ব্যতিক্রমী এক প্রচ্ছদ কাহিনী। রিপোর্টে বিশ্বব্যাপী বিশেষ করে পশ্চিমা জগতে দারুণ আলোড়ন তোলেন। প্রচ্ছদ কাহিনীতে টেলিগ্রাফের বিশেষ প্রতিনিধি নাইজেল ফার্নডেল লিখেন, বিশ্বের প্রথম সারির এই অস্ত্র ব্যবসায়ী পৃথিবীর সর্বত্র বিশেষ করে পাশ্চাত্য সমাজে ‘প্রিন্স অব বাংলাদেশ’ বলে খ্যাত। তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি। তাঁর ও তাঁর বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য তিনি একাই পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগ করতে চান! তাঁকে বাংলাদেশের 'জনশক্তি রপ্তানির জনক' বলা হয়। রূপকথার মতোই তাঁর বর্ণিল জীবন ও বিস্ময়কর সব কর্মধারা।
কলম : তিনি যে কলম দিয়ে স্বাক্ষর করেন সেটি এক কোটি ডলার দামের মন্ট বাঙ্ক কলম। ফ্রান্সে তৈরি ওই কলম মাত্র একটিই তৈরি করেছে নির্মাতা কোম্পানি। ২৪ ক্যারেট সোনা দিয়ে তৈরি এ কলমটিতে রয়েছে ৭৫০০টি হীরকখণ্ড। সারা বছরই কড়া প্রহরায় এ কলমটি রক্ষিত থাকে সুইস ব্যাঙ্কের ভল্টে। প্রয়োজন হলে সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় ওই কলম নিয়ে যাওয়া হয় নির্দ্দিষ্ট স্থানে। আবার সেভাবে ফেরত নিয়ে আসা হয়।
ঘড়ি : তিনি যে ঘড়ি ব্যবহার করের সেটি রোলেক্স এর ৫০ লাখ ডলার দামের বিশেষ ঘড়ি। ওই বিশেষ ঘড়ি মাত্র একটিই তৈরি করেছে নির্মাতা কোম্পানি। এই মূল্যবান ঘড়িটি তৈরি করা হয়েছিল ২৭ মাসেরও বেশি সময় ধরে।
আংটি : তিনি কয়েকটি আংটি ব্যবহার করেন। তার মধ্যে ১৬ ক্যারেটের একটি রুবি। যার দাম ১০ লাখ ডলার। ৫০ হাজার ডলার দামের একটি চুনি। এছাড়া ৫০ হাজার ডলার দামের একটি হীরা ও এক লাখ ডলার দামের একটি পালা (এমেরাল্ড)।
স্যুট : তাঁর পরনের স্যুটগুলো স্বর্ণসুতাখচিত। তাঁকে কখনো এক স্যুট পরিহিত অবস্থায় দুই বার দেখা যায় না। প্রতিটি স্যুটের দাম ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার পাউন্ড। যা শুধু তাঁর জন্য তৈরি করা।
পোশাক : পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিজাইনার বলে খ্যাত প্রিওনি বেলভেস্ট এবং ইটালির আবলা এবং ফ্যান্সিসকো স্মলটো ও খ্রিস্টিয়ান ডিয়রের বিশেষ ব্র্যান্ডের অতি মূল্যবান পোশাক-আশাক দিয়েই তাঁর সারি সারি ওয়্যারড্রব ভর্তি। এসবের জন্য তাকে বলা হয় The Best Dressed Man of the World.
জুতা : তিনি হীরকখচিত যে জুতা পরেন তার প্রতি জোড়ার মূল্য লক্ষ্য ডলার। তাঁর সংগ্রহে এমনি রত্নখচিত হাজারো জুতো রয়েছে।
গোসল : তিনি প্রতিদিন নির্জলা গোলাপ পানি দিয়ে গোসল করেন।
পানি : তিনি সবসময় ফ্রান্সের ইভিয়ান ব্র্যান্ডের পানি পান করেন।
বাসা : তাঁর বাসার স্টাইল-আয়োজন কর্মকাণ্ড সবকিছুই ফাইভ স্টার মানের। গুলশানে অবস্থিত তাঁর প্রাসাদের সাজসজ্জা চোখ ধাঁধানো। লিভিং রুমসহ ভবনের ছাদ অবধি শোভা পায় দ্যুতিময় অসংখ্য ঝালর। মেঝে মূল্যবান ক্রিস্টাল পাথরে ছাওয়া। ফ্লোরে ঝকঝকে কার্পেট। এ বাসাতে প্রায় প্রতিদিনই পার্টি থাকে। সেখানে সবসময় তার দেশি বেদেশি হাইপ্রোফাইল মেহমানরা উপস্থিত থাকেন। পার্টিতে খাবার পরিবেশনের জন্য রয়েছে প্রশিক্ষিত কয়েক ডজন সেফ। এরা সবাই রান্না-বান্না ও পরিবেশনার উপর উচ্চ ডিগ্রিধারী।
দেহরক্ষী : চারজন নারী দেহরক্ষীসহ মোট ৪০ জন।
জন্মদিন : ১৯৯৯ সালের দিকেই সম্ভবত, তিনি পুরো এটিএন বাংলা কয়েক ঘণ্টার জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন শেরাটনে তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবার জন্য।
অন্যান্য : তার ব্যাক্তিগত জেট প্লেনটি ধার দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বব ডোলের যাতায়াতের জন্য। কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট তাকে নিয়মিত ফোন করে পরামর্শ নেয়। ক্ষমতায় থাকার সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলতসিন তো নিয়মিত খোজ নিত তার।
তার নিজের একান্ত চেষ্টায় প্রথম বাংলাদেশী জনশক্তির জন্য ইউরোপীয় স্বর্ণ-দ্বার খুলে যায়। এমনকি বাংলাদেশের ডিপ্লোমা নার্সিং কাউন্সিলের সনদ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে তারই লবিং এর ফলে। ফলে এদেশের নার্সরা ইচ্ছে করলে সহজেই বিদেশে গিয়ে চাকুরী করতে পারে এখন।
*** তিনি 'ড. মুসা বিন শমসের'। তাঁকে 'প্রিন্স মুসা' নামে ডাকা হয়। ১৯৪৫ সালের ১৫ অক্টোবর ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি ড্যাটকো গ্রুপের চেয়ারম্যান। আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসা, তেল বাণিজ্য ও কেনাবেচার মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিপুল সম্পদের অধিকারী হয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০