বাংলাদেশ সরকারের অনবদ্য অবদান, সরকারের প্রতিকৃতি যাই বলি না কেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের দিকে তাকালেই পরিস্কার হয়ে উঠে। ঠিক যেন ধিক ধিক করে সকাল ৮ টার ট্রেন পরদিন রাত ৮ টায় এসে পৌছে।
প্রথম ট্রেন ভ্রমনের সুযোগ আসে বছর সাতেক আগে। সেবার কুষ্টিয়া থেকে গোয়ালন্দ যাওয়ার সুযোগ হয়। সেই অভিজ্ঞতা আমাকে আর দ্বিতীয় বার ট্রেনে চড়তে সাঁয় দেয়নি। সেবার সকাল ১১.৫০ মিনিটের ট্রেন ধরে রাজবাড়ি পৌছেছিলাম সন্ধ্যা ৬ টার দিকে। তার পর বাসে করে গোয়ালন্দ। যদি আমি কুষ্টিয়া থেকে বাসে যেতাম তাহলে ৪ বার আপ ডাউন করতে পারতাম। সেবার অপেক্ষায় থেকে থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের গুষ্টি উদ্ধার করে ষষ্টি পুঁজো করে ছেড়েছিলাম্।
আমি নরসিংদীতে আছি প্রায় বছর দুই হলো। মাসে প্রায় বিভিন্ন কাজে ঢাকা যেতে হয়। আমি সাধারণত ঢাকা নরসিংদীর বাস সার্ভিসকেই বেশি নির্ভরযোগ্য মনে করি। আমার সহকর্মীরা সাধারণত ট্রেনে বেশি যাতায়াত করে এক টাকা দুই সময় বাচানোর তাগিদে। আমি এখানে এসে এদের কথায় প্রথম ট্রেনে চাপার চেষ্টা করি, ৯ই মার্চ। সেটা আমার জন্য একটা দুর্ভাগ্য ট্রেন স্টেশনে এসে দাড়িয়ে থাকে আমিও দাড়িযে থাকি। দুঘন্টা অতিবাহিত হয়ে যায়, অবশেষে শুনতে পেলাম ট্রেন ছাড়বে সবে মাত্র যে ট্রেনটা ব্রাহ্মণ বাড়িয়া থেকে ছেড়েছে সেটা ক্রসকরার পর এটা ছাড়বে। ততক্ষণে এটা স্টেশনে বসে মন্ত্রি মশাইয়ের ডিমে তা দেবে।
অগত্য বাধ্য হয়ে বাসে করে রওনা দিলাম। সর্বশেষ ঘটনা ২৩ মার্চ। আমি জানি না আমরা কেমন করে নির্বোধের মত সিদ্ধান্ত নিলাম। পকেটে টাকার অভাব ছিলনা। পেনড্রাইভ, বই কেনার জন্য তখনো পকেটে হাজার দুয়েক টাকা রয়েছে। লোকাল ট্রেনে উঠতে পারিনি ভিড়ের কারণে। অবশেষে আমার সহকর্মীর সিদ্ধান্তে ট্রেনের ইঞ্জিনে উঠার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিতে তার উপর একটু নির্ভরশীল ছিলাম কারণ তার ট্রেন সম্পর্কে একটু বেশি ধারনা ছিল। ইঞ্জিন বগিতে কোন রকমে ধরে পরবর্তী স্টেশনে গেলাম। এতটুকু বুঝতে পারছি কষ্ট হলেও যাওয়া যাবে। ট্রেনের চালক স্টেশনে এসে নেমে ধমক দিতে শুরু করলেন। ট্রেনের হয়রানি নিয়ে বেশ । বড় বড় গল্প জানা আছে। তাই আর কথা বাড়ালাম না।
ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে অনেক চেষ্টা করেও কোন বগিতে উঠতে পারলাম না্। এবার সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলাম। আমার সহযাত্রী বন্ধুটি আমাকে উৎসাহ দিলেন, আমরা যেতে পারবো্ । ভাবনা চিন্তার কোন সুযোগ না পেয়ে পা বাধালাম রিজার্ভ কামরার বন্ধ দরজার হাতল ধরে। বাদুর ঝুলে থাকার মত ঝুলতে থাকলাম। স্মরণ করলাম বিধাতাকে। একসময় আমার হাতে ব্যথা ধরে এলো। আমি আর দাড়িয়ে থাকতে পারছিলাম না। আমি বুঝতে পারছিনা ট্রেনটি গত গতিতে চলছে, বা আমি যদি ছিটকে পড়ি তাহলে ক্ষতি হতে কতটা? তাই শেষ চেষ্টা পর্যন্ত ঝুলে থাকলাম। আমার ছোট্ট জীবন টাকে হাতে নিয়ে। অবশেষে পৌছালাম আমাদের গন্তব্যস্থলে ।
আমরা পৌছেছি হয়ত নতুন করে কেউ পৌছাতে নাও পারে। তাই সবার কাছে অনুরোধ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা কেউ যেন যানবাহনে না উঠি।
সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ: জীবনের ঝুকি নিয়ে কেউ ট্রেনের দরজায় ঝুলবেন না। হয়ত আপনার এক মুহূর্তের অসাবধানতা ডেকে আনবে আপনার পরিবারের কান্না।