প্রিয়তমা,
কেমন আছো? আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়গুলোতে তুমি আমার পাশে ছিলে, সেজন্য তোমাকে প্রথমেই ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তোমাকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি সত্যিকারের নারী হয়ে ওঠার জন্য। এই মুহূর্তে আমার শুভেচ্ছা তোমার হৃদয়ের ব্যলকনিতে সদ্য ফোটা লাল গোলাপের সৌরভ ছড়াবে কি না জানি না, তবে কোন এক ক্লান্ত বিকেলের প্রচ্ছন্ন অবসরে একরাশ প্রশান্তির ঝড়ো হাওয়া যদি তোমার মানস পটের উন্মুক্ত ক্যনভাসে সামান্য আচঁরও কেঁটে যায়, তবে নিজেকে সৌভাগ্যবান ভেবে তোমাকে কৃতজ্ঞতা জানাব।
তোমাকে আবারও শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এইজন্য যে, আমার মরচে পড়া অতীতের যেখানেই যতটুকু আনন্দের ছিটেফোটা লেগে আছে তার মিইয়ে যাওয়া সৌন্দর্যের প্রসন্ন কপালে এখনও তুমি লাল টিপ হয়েই বসে আছো।
আমার সৌভাগ্য না দূর্ভাগ্য জানি না, একাকীত্বের বিষন্ন প্রহরগুলোতে আমার ভালোমানুষি ধরনের প্রচন্ড একরোখা ইন্দ্রীয়গুলো এখনও কেবল তোমারই স্মৃতি রোমন্থন করে। অবশ্য এক্ষেত্রে আমার ইন্দ্রীয়গুলোকে আমি দোষ দেইনা, কারন, তাতে তোমার মেয়েলি ধরনের ছলনাকে হয়ত আরো বেশি করে প্রকাশ করা হয়ে যায়। কিন্তু কখনো কখনো নিজেকে ঘৃণা করতে বড় স্বাধ জাগে। আমার জায়গায় তুমি হলে কি করতে জানিনা, তবে এটুকু বিশ্বাস করি, আমার মত রাধার অপারধে বোষ্টমী সেজে বনে বনে স্মৃতির ঝুনঝুনি বাঁজিয়ে দুঃখের কেত্ত্বন গাইতে না। অবশ্য গাইতে না তা ই বা বলি কি করে, "নারী, সে ত সহস্র রূপে ধরনীতে পদার্পন করিয়াছে, তাহার প্রকৃত রূপ উদ্ঘাটন করে তাহা কাহার সাধ্যি?"
আমার ঝর্নার মত ছুটে চলা জীবনের গতি কে থমকে দিয়েছ ভেবে কখনো কখনো তোমার উপর ভিষন রাগ হত। আবার ছলনা করেছ ভেবে মাঝে মাঝে প্রতিশোধের নেশাও চেপে যেত ভিতরে। কিন্তু আমি ত জানি, হাজারো শ্রমিকের ঘাম ঝরে তবেই গড়ে ওঠে বিশাল অট্টালিকা। তোমাকে বড় করতে আমার মত অনেকের জীবনে কিছু স্মৃতির পাহাড় জমবে সে ত খুবই স্বাভাবিক। তুমি ত ক্লিওপেট্রা, হেলেন অব ট্রয়ে'র জাতি।
কিন্তু প্রিয়তমা, কি সুখ মিলল এই রূপের অহমিকায়? তোমার জন্য হৃদয়ের বালুকাময় বেলাভুমিতে ভলোবাসার যে বিপনী সাজিয়ে বসে ছিলাম, তাতে কি এমন কোন মনোহরী ছিল না যা তোমার বিলিয়ন- ট্রিলিয়ন মুল্যের ভালোবাসাকে সোনালী তারের ফ্রেমে ক্ষণিকের জন্য হলেও বন্দী করতে পারে?
তোমার জন্য আমার কষ্ট হয় প্রিয়তমা। 'ভালোবাসা' শব্দের মানে তুমি আজও জানলে না! ক্ষনস্থায়ী পৃথিবীর ছলনাময়ী মিথ্যে মায়ায় প্রকৃত প্রেমের আলোকরশ্মি থেকে নিজেকে বঞ্চিত করলে নির্দয়ের মত!!
........................এখানে এখন প্রকৃতি বড় বেশি রূদ্রমনোভাবাপন্ন। অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝরেই চলেছে। জানালার ফাঁক দিয়ে যে প্রকৃতিকে দেখছি তাতে ক্ষনে ক্ষনেই তোমার লাস্যময়ী মুখখানি ভেসে উঠছে। বারেবারে মনে হচ্ছে কোথাও কি তুমি এমনি করেই জানালার গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছো আর মনে মনে ভাবছো, আমারই কথা!!!
ভিজে যায়, ঝরে যায়
সোনার এ যৌবন!!
আজ ভোরের ডাকে নীল অম্বরে হারিয়ে যাওয়া সুতা কাঁটা ঘুড়ির ডানায় ভর করে তোমার জন্য ভালোবাসার যে ডালা পাঠিয়েছিলাম তা তোমার হৃদয়ের আঙিনায় পৌছেছে কি না জানি না, তবে আমার কল্পনার স্বপ্নীল প্রেক্ষাপটে উড়িয়ে দিয়েছে রং বেরংয়ের হাওয়াই জাহাজ!!!
আর একবার চেষ্টা করতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে আর একবার সোজা হয়ে দাড়াতে। মনে হচ্ছে যেন কৃষ্ণ আধারের অতল গহ্বর থেকে ঝলমলে সূর্য একরাশ ভালোবাসার আলোকচ্ছটা নিয়ে উঁকি-ঝুকি মারছে।
"যদি আজ বিকেলের ডাকে কোন চিঠি পাই
কিংবা যদি সে নিজেই এসে থাকে
যদি তার এতকাল পরে মনেহয়
দেরি হোক যায়নি সময়"
প্রিয়তমা, অমাবষ্যার পরেই ত জেগে ওঠে একফালি চাঁদ। হোক সে দ্বীপ্তিহীন। কাল কিংবা পরশু কিংবা আরও দু'একদিন পরে সে ত তার উজ্জলতা প্রকাশ করবেই। সুপ্ত হলেও আগুন ছাইয়ের নিচে চাপা থাকে কতক্ষন?
আমার অতীত অন্ধকার হতে পারে, অন্ধকার হতে পারে আমার বর্তমানও। কিন্তু আমার ভবিষ্যত তুমিই ত করতে পারো দ্বীপ্তিময়। ঐ দূরে ঢং ঢং শব্দে যে মায়াবী ঘন্টা বাঁজছে আমি যদি তাতে তোমার আগমন ধ্বনী শুনতে পাই তবে কি তা খুব বেশি দোষের হবে???
আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রিয়তমা।
আমি তোমাকেই চাই।
যেন তোমাকেই পাই।
এইবার এসো!!!
উৎসর্গ: যার জন্য এগারো বছর ধরে চোখ চেয়ে জেগে আছি......
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:১৯