বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থানের চিত্র আমাদের টাকার মাঝে ফুটে উঠেছে। এই সকল প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান গুলো বাংলার সুপ্রাচীন বাংলার সামাজিক রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ইতিহাসকে যেমন ব্যখ্যা করে ঠিক তেমনই এই প্রত্নস্থান গুলো বাংলার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে ব্যাখ্যা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। আমাদের টাকায় এই সকল প্রত্নস্থানগুলো এসেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ইতিহাসের অংশ হিসেবে।
পাঁচ টাকার নোটঃ
এই টাকাটি 08-10-2006 তারিখি ইস্যু করা হয়। পাঁচ টাকার এই নোটে কুসুম্বা মসজিদের প্রবেশ তোরণের ছবি দেয়া হয়েছে। অনিন্দ সুন্দর লতাপাতা খোচিত এই প্রবেশ তোরণ।
কুসুম্বা মসজিদ
নওগাঁ জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে মান্দা উপজেলার কুসুম্বা গ্রামে অবস্থিত দেশের উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন কুসুম্বা মসজিদ। এর আরেক নাম কালা পাহাড়। মসজিদের প্রধান প্রবেশ পথের উপরে স্থাপিত আরবি শিলালিপি অনুসারে মসজিদটি ৯৬৬ হিজরি তথা ১৫৫৮-৫৯ সালে নির্মিত। শেরশাহ শুরির শাসনামলের শেষ দিকে সুলতান গিয়াসউদ্দীন বাহাদুর শাহর রাজত্বকালে জনৈক সুলাইমান মসজিদটি নির্মাণ করেন। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে মসজিদটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইটের তৈরি এ মসজিদের ভেতর ও বাইরের দেয়াল পাথরের আস্তরণ দিয়ে আবৃত। মসজিদের পূর্ব দিকে তিনটি ও উত্তর ও দক্ষিণে একটি করে প্রবেশপথ আছে। পশ্চিম দেয়ালে আছে দুটি মিহরাব। উত্তর-পশ্চিম কোণে আছে একটি উঁচু প্লাটফর্ম। ধারণা করা হয় সমাজের উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা এখানে নামাজ আদায় করতেন। মসজিদের মিহরাবগুলো খোদাই করা পাথরের নকশায় পরিপূর্ণ। নওগাঁ থেকে বাসে আসা যায় কুসুম্বা মসজিদে।
কুসুম্বা মসজিদের পূর্ণ চিত্র সহকারে পাঁচ টাকার এই নোটটি 09-08-2011 তারিখে ইস্যু করা হয়।
এই দুইটি পাঁচ টাকার নোটেই কুসুম্বা মসজিদের ছবি রয়েছে।
কুসুম্বা মসজিদের বর্তমান অবস্থা
পাঁচ টাকার এই নোটে তারা মসজিদের ছবি রয়েছে। এই টাকাটি 11-10-1976 তারিখে ইস্যু করা হয়।
তারা মসজিদ
বাংলাদশের পুরানো ঢাকার আরমানিটোলা-র আবুল খয়রাত সড়কে অবস্থিত একটি মসজিদ। খ্রিষ্টীয় আঠারো শতকে ঢাকার জমিদার মির্জা গোলাম পীর (মির্জা আহমদ জান) এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সতের শতকে দিল্লি, আগ্রা ও লাহোরে নির্মিত মোঘল স্থাপত্য শৈলী অনুসরণে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। মসজিদের কোথায়ও এর তৈরির সময় উল্লেখ নেই। মসজিদটি তৈরির পর ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে মির্জা গোলাম পীর মৃত্যুবরণ করেন।
প্রথম থেকেই মসজিটি আয়তাকার ছিল। মির্জা গোলাম পীর তৈরির আদি মসজিদটির পরিমাপ ছিল দৈর্ঘ্য ৩৩ ফুট (১০.০৬ মিটার) এবং প্রস্থে ১২ ফুট (৪.০৪ মিটার), গম্বুজ ছিল তিনটি। এর ভিতরে মাঝের গম্বুজটি অনেক বড় ছিল। সাদা মার্বেল পাথরের গম্বুজের উপর নীলরঙা তারার নকশা যুক্ত ছিল। সেই থেকে এই মসজিদটি তারা মসজিদ নামে পরিচিত হয়ে উঠে। এর পূর্ব দিকে মসজিদে প্রবেশর জন্য তিনটি এবং উত্তর দিকে ১টি এবং দক্ষিণ দিকে ১টি দরজা ছিল।
১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকার তৎকালীন স্থানীয় ব্যবসায়ী, আলী জান বেপারী মসজিদটির সংস্কার করেন। এই সময় মসজিদটির আকার বৃদ্ধি করা হয়। এই সময় এর পূর্বদিকে একটি বারান্দা যুক্ত করা হয়। এই সময় মসজিদের মেঝে মোজাইক করা হয়। চিনিটিকরি (Chinitikri) কৌশলের এই মোজাইকে ব্যবহার করা হয় জাপানী রঙিন চীনা মাটির টুকরা এবং রঙিন কাঁচের টুকরা। ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে এই মসজিদটির পুনরায় সংস্কার করা হয়। এই সময় পুরনো একটি মেহরাব ভেঙে দুটো গম্বুজ আর তিনটি নতুন মেহরাব বানানো হয়। সব মিলিয়ে বর্তমানে এর গম্বুজ সংখ্যা পাঁচটিতে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে মসজিদের জায়গা সম্প্রসারিত হয়।
মসজিদের বতর্মান দৈর্ঘ্য ৭০ ফুট (২১.৩৪ মিটার), প্রস্থ ২৬ ফুট (৭.৯৮ মিটার)। এছাড়া মসজিদের দেয়াল ফুল, চাঁদ, তারা, আরবি ক্যালিওগ্রাফিক লিপি ইত্যাদি দিয়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
তারা মসিজদ
দশ টাকার নোট
টাঙ্গাইলের আতিয়া জামে মসজিদের ছাবি সম্বলিত এই নোট টি 03-09-1982 তারিখে ইস্যু করা হয়।
টাঙ্গাইলের আতিয়া জামে মসজিদের ছাবি সম্বলিত এই নোট টি 03-08-1978 তারিখে ইস্যু করা হয়।
আতিয়া মসজিদ
মুসলিম স্থাপত্যের ঐতিহ্য আর কালের সাক্ষী হয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যে মসজিদগুলো রয়েছে তারই মধ্যে অন্যতম একটি হলো ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত আতিয়া মসজিদ। টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় অবস্থিত এই মসজিদটি ঠিক কোন সময়ে নির্মাণ করা হয়েছে সে বিষয়ে সুনিশ্চিত তথ্য না পাওয়া গেলেও বেশ কয়েকটি শিলালিপির তথ্য থেকে ধারণা করা হয় যে খুব সম্ভবত ১৬০৮ খেকে ১৬১১ শতকের মাঝামাঝি কোনো এক সময়ে এটি নির্মিত হয়ে থাকতে পারে। আরবি 'আতা' থেকে 'আতিয়া' শব্দটির উত্পত্তি, যার ব্যুত্পত্তিগত অর্থ হলো 'দান কৃত'। আলী শাহান শাহর বাবা আদম কাশ্মিরী (র.)-কে সুলতান আলাউদ্দিন হুসায়েন শাহ টাঙ্গাইল জেলার জায়গিরদার নিয়োগ দান করলে তিনি এই অঞ্চলে এসে বসবাস শুরু করেন। সে সময় তিনি ইসলাম ধর্ম প্রচারের এবং আনুষাঙ্গিক ব্যয় নির্বাহের জন্য আফগান নিবাসী শাসক সোলাইমান কররানীর কাছ থেকে সংলগ্ন এলাকা দান বা ওয়াকফ্ হিসাবে লাভ করেন। সেই থেকেই এ অঞ্চলটির নাম আতিয়া হয়ে থাকতে বলে মনে করেন ঐতিহাসিকেরা। পরবর্তীতে বাবা আদম কাশ্মিরীর পরামর্শক্রমে সাঈদ খান পন্নী নামক সূফিজীর এক ভক্তকে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর উক্ত আতিয়া পরগণার শাসন কর্তা হিসেবে নিয়োগ দান করেন। এই সাঈদ খান পন্নীই ১৬০৮ সালে বাবা আদম কাশ্মিরীর কবরের সন্নিকটে আতিয়া মসজিদ নির্মাণ করেন। মুহাম্মদ খাঁ নামক তত্কালিন এক প্রখ্যাত স্থপতি এই মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। এ ছাড়া রওশন খাতুন চৌধুরাণী ১৮৩৭ সালে এবং আবুল আহমেদ খান গজনবী ১৯০৯ সালে মসজিদটির সংস্কার করেন। লাল ইট দ্বারা নির্মিত এই মসজিদটি আকারে বেশ ছোট এবং এতে সুলতানি ও মুঘল - এই দুই আমলেরই স্থাপত্যরীতির সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে। এটি দৈর্ঘ্যে মাত্র ১৮.২৯ মিটার (৫৯ ফুট), প্রস্থে ১২.১৯ মিটার (৪০ ফুট) এবং দেয়ালের পুরুত্ব ২.২৩ মিটার বা সাড়ে ৭ ফুট)। মসজিদের চারকোণে ৪টি আটকোনা মিনার রয়েছে, যার উপরের অংশটি ছোট গম্বুজের আকৃতি ধারণ করেছে।
আতিয়া মসজিদ
লাল বাগ কেল্লা জামে মসজিদ এর ছবি সহ এই টাকার নোটটি 11-12-1997 তারিখে ইস্যু করা হয়।
লাল বাগ কেল্লা মসজিদের বর্তমান অবস্থা
তারা মসজিদের ছবি সহ দশ টাকার এই নোটটি 11-10-1976 তারিখে ইস্যু করা হয়।
বিশ টাকার নোট
ষাট গম্বুজ মসজিদ এর ছবি সহ এই টাকার নোট টি 07-03-2012 তারিখে ইস্যু করা হয়।
ষাট গম্বুজ মসজিদ
ষাট গম্বুজ মসজিদ বাগেরহাট জেলায় অবস্হিত একটি প্রাচীন ও ঐতিহাসিক মসজিদ। বাংলাদেশের প্রাচীন ও বৃহত্তর মসজিদের মধ্যে এটি অন্যতম। বিশিষ্ট আউলিয়া আজম খানজাহান আলী (রাঃ) ১৫শ শতাব্দীতে মসজিদটি নির্মান করেন। এ মসজিদটি বহু বছর ধরে ও বহু অর্থ খরচ করে নির্মাণ করা হয়েছিলো। পাথরগুলো আনা হয়েছিলো রাজমহল থেকে।
এটি বাংলাদেশের তিনটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের একটির মধ্যে অবস্থিত; বাগেরহাট শহরটিকেই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো এই সম্মান প্রদান করে।
মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে বাইরের দিকে প্রায় ১৬০ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ১৪৩ ফুট লম্বা এবং পূর্ব-পশ্চিমে বাইরের দিকে প্রায় ১০৪ ফুট ও ভিতরের দিকে প্রায় ৮৮ ফুট চওড়া। দেয়ালগুলো প্রায় ৮•৫ ফুট পুরু।
ষাটগম্বুজে গম্বুজ সংখ্যা ৭৭টি। ৭৭টি গম্বুজের মধ্যে ৭০ টির উপরিভাগ গোলাকার এবং মধ্যের একটি সারিতে চারকোণবিশিষ্ট ৭ টি গম্বুজ আছে। মিনারে গম্বুজের সংখ্যা ৪ টি-এ হিসেবে গম্বুজের সংখ্যা দাঁড়ায় মোট ৮১ তে। তবুও এর নাম হয়েছে ষাটগম্বুজ। ঐতিহাসিকরা মনে করেন, সাতটি সারিবদ্ধ গম্বুজ সারি আছে বলে এ মসজিদের সাত গম্বুজ এবং তা থেকে ষাটগম্বুজ নাম হয়েছে। আবার অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন, গম্বুজগুলো ৬০ টি প্রস্তরনির্মিত স্তম্ভের ওপর অবস্থিত বলেই নাম ষাটগম্বুজ হয়েছে।
ষাট গম্বুজ মসজিদ
বিশ টাকার এই নোটে ছোট সোন মসজিদের ছবি রয়েছে। এটি 20-08-1979 তারিখে ইস্যু করা হয়।
ছোট সোন মসজিদ
জশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থিত ছোট সোনা মসজিদ বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। মসজিদে প্রাপ্ত একটি শিলালিপি থেকে জানা যায়, সুলতান আলা-উদ-দীন শাহের শাসনামলে ওয়ালী মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি প্রাচীন গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে অবস্থিত ফিরোজপুর গ্রামে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। সে কারণে অনেকের কাছেই এটির অন্য পরিচয় ছিল 'গৌরের রত্ন' হিসেবে। যদিও মসজিদটির বাইরের সোনালি রঙের আস্তরণটিই একে সোনা মসজিদ নামে পরিচিত করে তোলে। এদিকে প্রাচীন গৌড়ে সুলতান নুসরত শাহের তৈরি অপর আরেকটি মসজিদও সোনা মসজিদ নামে পরিচিতি লাভ করায় স্থানীয়রা একে ছোট সোনা মসজিদ নামে অভিহিত করতে শুরু করেন। মসজিদটি উত্তর-দক্ষিণে ৮২ ফুট লম্বা ও পূর্ব-পশ্চিমে ৫২.৫ ফুট চওড়া। আর উচ্চতায় প্রায় ২০ ফুট। মসজিদের দেয়ালগুলো প্রায় ছয় ফুট পুরু এবং এগুলো তৈরিতে মাঝে ইট ও ভেতরে-বাইরে পাথরের ব্যবহার করা হয়েছে। অন্যদিকে মসজিদের খিলান ও গম্বুজগুলো তৈরিতে শুধুই ইটের ব্যবহার করা হয়েছে। মসজিদের চারকোণে চারটি বুরুজ আছে। এগুলোর ভূমি নকশা অষ্টকোণাকার এবং বুরুজগুলোতে ধাপে ধাপে বলয়ের কাজ আছে। মসজিদের পূর্ব দিকের দেয়ালে পাঁচটি খিলানযুক্ত দরজা আছে। খিলানগুলো বহুভাগে বিভক্ত এবং নানা অলংকরণে সমৃদ্ধ। এ ছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালেও তিনটি করে দরজা আছে। এ ছাড়া উত্তর দেয়ালের সর্ব-পশ্চিমের দরজাটির জায়গা থেকে একটি সিঁড়ি মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর-পশ্চিম দিকে দোতলায় অবস্থিত একটি বিশেষ কামরায় উঠে গেছে। পাথরের স্তম্ভের উপর অবস্থিত এই কামরাটি জেনানা-মহল কিংবা সুলতান বা শাসনকর্তাদের নিরাপদে নামাজ আদায়ের জন্য ব্যবহূত হতো বলে ধারণা করা হয়। মসজিদটির অভ্যন্তরভাগ কালো ব্যাসাল্টের ৮টি স্তম্ভ দ্বারা উত্তর দক্ষিণে তিনটি আইল ও পূর্ব-পশ্চিমে পাঁচটি সারিতে বিভক্ত। আবার পূর্ব দিকের দেয়ালের পাঁচটি দরজা বরাবর মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে পাঁচটি অর্ধ-বৃত্তাকার নকশার মিহরাব। এদের মধ্যে মাঝেরটি আকারে বড় এবং প্রতিটির মিহরাবেই পাথরের ওপর অলংকরণ রয়েছে। মসজিদের অভ্যন্তরের ৮টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেয়ালের উপর তৈরি হয়েছে মসজিদের ১৫টি গম্বুজ। মাঝের মিহরাব ও পূর্ব দেয়ালের মাঝের দরজার মধ্যবর্তী অংশে ছাদের ওপর যে গম্বুজগুলো রয়েছে সেগুলো মূলত চৌচালা গম্বুজ এবং এদের দুপাশে দুসারিতে তিনটি করে মোট ১২টি গম্বুজ রয়েছে এরা অর্ধ-বৃত্তাকার গম্বুজ। এ মসজিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, বাইরের যে কোনো পাশ থেকে তাকালে কেবল পাঁচটি গম্বুজ দেখা যায়, পেছনের গম্বুজগুলো চোখে পড়ে না। সম্পূর্ণ মসজিদটির অলংকরণে প্রধানত পাথর এবং এরপর ইট, টেরাকোটা বা টাইল ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া কারো কারো বর্ণনা অনুযায়ী একসময় এই মসজিদটির গোটা বহির্ভাগে অথবা গম্বুজগুলোর ওপরে সোনালি রঙের আস্তরণ ছিল বলেও জানা যায়।
ছোট সোন মসজিদ
পঞ্চাশ টাকার নোট
বাঘা মসজিদ
পঞ্চার টাকার এই নোটে রাজশাহীর বাঘা মসজিদের ছবি রয়েছে । এই নোটটি ইস্যু করা হয় 22-08-1999 তারিখে।
বাঘা মসজিদ
রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় অবস্থিত টেরাকোটা শিল্পমন্ডিত বাঘা মসজিদ দেশের এক ব্যতিক্রমী প্রত্নসম্পদ। শত শত বছর আগের এই শিল্পনিদর্শন ও নির্মাণশৈলী দর্শক মনে বিস্ময় জাগায়। এটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সংরক্ষিত একটি নিদর্শন। প্রত্নতত্ত্ববিদ আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়ার মতে, হযরত মাওলানা মোয়াজ্জেম-উদ-দৌলা বা মোহাম্মদ দৌলা ওরফে শাহ দৌলা নামে পরিচিত দরবেশের সুদূর প্রসারী খ্যাতির কারণে বহু শিষ্য-সাগরেদের আগমন ঘটে। (বাঘের অভয়ারণ্যের কারণেই বোধ হয় এই স্থানের নাম ‘বাঘা' হয়ে থাকবে।) এই স্থান আবাদের পর বাঘা নামে পরিচিত ঘটে। শাহ দৌলার ওফাতের পর জ্যেষ্ঠ পুত্র মাওলানা আব্দুল হামিদ দানিশমন্দ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। এ সময় বাংলার সুলতান নাসির উদ্দীন নসরত শাহ ৯৩০হিজরী (১৫২৩ খ্রী.) এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। মসজিদের সম্মুখে একটি শিলালিপি স্থাপন করেন। বর্তমানে তা করাচী যাদুঘরে আছে বলে জানা গেছে। মসজিদ নির্মাণের সময় ৪০০*২০০ গজ আয়তনের একটি জলাশয় খনন করা হয়। জলাশয়ের তীরে ১৬০ফুট বাহু বিশিষ্ট বর্গাকারের এক খন্ড উঁচু জমিভূমি। প্রাচীর ঘেরা এই উঁচু জমিভূমির পশ্চিমাংশে এ মসজিদ অবস্থিত। উত্তর ও দক্ষিণ বেষ্টনী প্রাচীরে একটি করে প্রবেশপথ আছে। উত্তর প্রাচীরের প্রবেশপথ নতুন করে নির্মিত হয়েছে। দক্ষিণ দেওয়ালের প্রবেশ পথে অষ্টকোণাকৃতির স্তম্ভ, খিলান ও উপরে একটি গম্বুজ আছে। তোরণের দু'ধারে ইটের দেয়ালের উপর লতাপাতা, ফুল ইত্যাদির প্রতিকৃতি সূক্ষ্ম কাজ করা পোড়ামাটির চিত্র ফলক আছে। উত্তর ও দক্ষিণে লম্বা এ মসজিদের আয়তন ৭৫র্-৮*৪২-২র্ র্ এবং দেয়ালগুলো ৭র্-৪র্ প্রশস্ত। পূর্ব দেয়ালে আছে খিলান বিশিষ্ট ৫টি প্রবেশ পথ। উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে আছে দুটি করে প্রবেশ পথ। মসজিদের চারকোণে ৪টি বিরাট আকারের অষ্টকোণাকৃতির মিনার আছে। মিনারগুলো কারুকাজ খচিত। শীর্ষদেশে গম্বুজাকৃতির এবং সেগুলো এখনও টিকে আছে। উত্তর দেয়ালের দরজা দুটি গ্র্যাটিংস দ্বারা বন্ধ করা। পশ্চিম দেয়ালে কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথের বরাবর মসজিদের কেন্দ্রীয় মেহরাব। কেন্দ্রীয় মেহরাবের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে দেয়ালের দক্ষিণ দিকের দরজা দু'টির বরাবর মেহরাব। উত্তর দিকে চতুর্থ মেহরাবের স্থানে একটি কারুকাজ খচিত প্যানেল এবং পঞ্চম মেহরাবের উপরে দ্বিতলে একটি ছোট মেহরাব। শেষোক্ত মেহরাবের অস্তিত্ব দেখে ধারণা করা হয় যে, ছোট সোনা মসজিদের মতো সেখানে দ্বিতলে একটি ছোট জেনানা (মহিলাদের জন্য) মহল ছিল। মেহরাবগুলোতে অতি সুন্দর কারুকাজ আছে। মেহরাবের দু'পাশে ও উপরে একটি ফ্রেম। ফ্রেমের উপর নানা রকম লতাপাতা ও ফুলের প্রতিকৃতি অতি সুন্দরভাবে করা। এই অলঙ্কৃত ফ্রেমের ভিতর দিকে দু'পাশে দু'টি অলঙ্কৃত স্তম্ভ। মসজিদের অভ্যন্তরীণ অংশ উত্তর-দক্ষিণে দু'সারিতে ও পূর্ব-পশ্চিমে ৫ভাগে বিভক্ত। প্রত্যেক সারিতে ৫টি করে মোট ১০টি গম্বুজ ছিল। চারপাশের দেয়াল ও মসজিদের অভ্যন্তরে অবস্থিত ৪টি প্রস্তর স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত গম্বুজগুলো ১৮৯৭ খ্রী: প্রবল ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। ১৯৮০ সালে গম্বুজগুলো বসানো হয়েছে। টেরাকোটা শিল্পের অতুলনীয় নিদর্শন মসজিদের দেয়ালের বাইরের দিকেও আছে। মিনারগুলোতেও অনুরূপ কাজের নিদর্শন আছে। এককথায় পোড়ামাটির চিত্রফলক শিল্পের অপূর্ব ও অতুলনীয় নিদর্শন মসজিদের বাইরে ও ভিতরে ছিল এবং এখনও কিছু কিছু আছে। প্রাচীর ঘেরা মসজিদ অঙ্গনের উত্তর পূর্ব কোণে শাহ্দৌলা, তাঁর ৫সঙ্গী ও নাম না জানা আরও অনেকের সমাধি আছে। শাহ্ আবদুল হামিদ দানিশমন্দ ও মাওলানা শের আলীর সমাধিও এখানে আছে। শাহ্দৌলা এখানে একটি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং সেই মাদ্রাসা বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত টিকে ছিল বলে জানা যায়। এ মাদরাসার প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন মাওলানা শের আলী। এখানে অবস্থিত অনেকগুলো কবরের মধ্যে তাঁর কবরটিই বিশেষভাবে চিহ্নিত। বাঘার সৌন্দর্য বাঘায় মসজিদ, মাজার সমূহ, মাদরাসার ধ্বংসাবশেষ, দীঘি ইত্যাদি ছাড়াও মুসলমান আমলে আরও অনেক ইমারতের ধ্বংসাবশেষ আছে। শাহ্দৌলার বংশধরদের জন্য সুলতানী আমলে ও পরবর্তীকালে নির্মিত আবাসবাটি ও অন্যান্য ইমারতাদি বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে চলেছে। বাঘা মসজিদের সামনে এক বিশাল দীঘি রয়েছে। এতে শীতকালে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটে। তবে কালপ্রবাহে খাবারের অভাবে এবং শিকারীর উৎপাতে এই পাখির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। তবুও তা দর্শক মনকে আকৃষ্ট করে। এছাড়াও বাঘার প্রাকৃতিক দৃশ্যও মনোরম। জমি উর্বর হবার কারণে প্রায় সব ধরনের ফসল ফলে। বিশেষ করে আম, কাঁঠাল, লিচু, নারিকেল প্রভৃতি ফল প্রচুর পরিমাণে উৎপাদিত হয়। এসব ফলের বাগান এক ছায়াঘন ও শ্যামল পরিবেশ তৈরী করে রেখেছে। এখানকার মীরগঞ্জে আছে একটি রেশম খামার। এখানে নীল চাষও হতো নীলকরদের আমলে। যার কিছু স্মৃতিচিহ্ন এখনো রয়েছে।
বাঘা মসজিদ
ষাট গম্বুজ মসজিদের ছবি সহ পঞ্চাশ টাকার নোট। এটি 01-09-1972 তারিখে ইস্যু করা হয়।
তারা মসজিদের ছবি সহ পঞ্চাশ টাকার নোট । এটি 01-03-1976 তারিখে ইস্যু করা হয়।
একশত টাকার নোট
তারা মসজিদের ছবি সহ একশত টাকার নোট এটি ইস্যু করা হয় 09-08-2011 তারিখে।
তারা মসজিদের ছবি সহ একশত টাকার নোট এটি ইস্যু করা হয় 15-12-1977 তারিখে।
তারা মসজিদের ছবি সহ একশত টাকার নোট এটি ইস্যু করা হয় 01-03-1976তারিখে।
ষাট গম্বুজ মসজিদের ছবি সহ এক শত টাকার নোট। এটি ইস্যু করা হয় 28-07-2005 তারিখে।
ষাট গম্বুজ মসজিদের ছবি সহ এক শত টাকার নোট। এটি ইস্যু করা হয় 5-03-2001 তারিখে।
পাঁচ শত টাকার নোট
সাত গম্বুজ মসজিদ মসজিদের ছবি সহ পাঁচ শত টাকার নোট।
সাত মসজিদ
সাত গম্বুজ মসজিদ ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত মুঘল আমলে নির্মিত একটি মসজিদ। এই মসজিদটি চারটি মিনারসহ সাতটি গম্বুজের কারনে মসজিদের নাম হয়েছে 'সাতগম্বুজ মসজিদ'। এটি মোঘল আমলের অন্যতম নিদর্শন। ১৬৮০ সালে মোগল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর আমলে তার পুত্র উমিদ খাঁ মসজিদটি নির্মান করান। মসজিদটি লালবাগ দূর্গ মসজিদ এবং খাজা আম্বর মসজিদ এর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
তারা মসজিদের ছবি সহ পাঁচ শত টাকার নোট। এটি ইস্যু করা হয় 15-12-1976 তারিখে।
এক হাজার টাকার নোট
কার্জন হলের ছবি সহ এক হাজার টাকার নোট । এটি ইস্যু করা হয় 27-10-2008 তারিখে।
কার্জন হল
কার্জন হল
ফেব্রুয়ারি ১৯, ১৯০৪ সালে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় ও গভর্ণর জেনারেল - জর্জ কার্জন এর ভিত্তি-প্রস্তর স্থাপন করেন।বঙ্গভঙ্গ ঘোষিত হওয়ার পর প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে ঢাকাকে গড়ে তোলার জন্য রমনা এলাকার যেসব ইমারতের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় কার্জন হল তার মধ্যে অন্যতম। দানী লিখেছেন, 'কার্জন হল নির্মিত হয়েছিল টাউন হল হিসেবে'। কিন্তু শরীফউদ্দীন আহমদ এক প্রবন্ধে দেখিয়েছেন এ ধারণাটি ভুল। এটি নির্মিত হয় ঢাকা কলেজের পাঠাগার হিসেবে। এবং নির্মাণের জন্য অর্থ প্রদান করেন ভাওয়ালের রাজকুমার। ১৯০৪ সালের ঢাকা প্রকাশ লিখেছিল_ "ঢাকা কলেজ নিমতলীতে স্থানান্তরিত হইবে। এই কলেজের সংশ্রবে একটি পাঠাগার নির্মাণের জন্য সুযোগ্য প্রিন্সিপাল ডাক্তার রায় মহাশয় যত্নবান ছিলেন। বড়লাট বাহাদুরের আগমন উপলক্ষে ভাওয়ালের রাজকুমারগণ এ অঞ্চলে লর্ড কার্জন বাহাদুরের নাম চিরস্মরণীয় করিবার নিমিত্তে 'কার্জন হল' নামে একটি সাধারণ পাঠাগার নির্মাণের জন্য দেড় লক্ষ টাকা দান করিয়াছেন।" ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলে, ঢাকা কলেজের ক্লাস নেয়া হতে থাকে কার্জন হলে। পরবর্তী সময়ে১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে কার্জন হল অন্তর্ভুক্ত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের জন্য, যা আজও ব্যবহৃত হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২২