আমার দেখা এযাবৎ কাল পর্যন্ত সবচেয়ে হৃদয় স্পর্শী এ্যনিমেশন মুভি হলো Grave of Fireflies. যদি আমি আমার পছন্দের মুভি গুলোর তালিকা করি তবে সেখানেও এই মুভিটি তালিকার উপরের দিকে অবস্থান নিবে। শুধু আমার তালিকা নয়, বিশ্বের অনেক দর্শকের বেস্ট মুভি লিস্টে যে এই মুভিটি রয়েছে তা বুঝা যায় IMDB এর রেটিং দেখলে। এই মুভিটির IMDB এর রেটিং ৮.৫
Grave of Fireflies মুভিটি ১৯৮৮ সালের। বর্তমানের মতো তখনকার সময়ের এ্যনিমেশন টেকনলজি এতোটা উন্নত ছিল না, তাই এই মুভিটি কার্টুন এ্যনিমেশনে করা। মুভিটির পরিচালক Isao Takahata. এই মুভিটি নির্মিত হয়েছে জাপানের উপন্যাসিক Akiyuki Nasaka এর Grave of Fireflies উপন্যাস অবলম্বনে। Grave of Fireflies কে লেখকের আংশিক আত্মজিবনী মূলক গ্রন্থ বলা হয়। Grave of Fireflies উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় লেখক ছিলেন তরুন এবং তার ছোটবোন এই যুদ্ধে ক্ষুধার্ত অবস্থায় মারা যায়। মুলত এই কাহিনীকেই লেখক তার সুন্দর লিখুনির মাধ্যমে তুলে ধরেছেন Grave of Fireflies উপন্যাসে।
Grave of Fireflies মুভিটিকে মূলত যুদ্ধ বিরোধী মুভি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মুভির প্রধান দুইটি চরিত্র হলো - ১৪ বছরের বালক সেইটা (Seita) ও তার ৫ বছর বয়সের ছোট বোন সেটসুকো (Setsuko)।
মুভি শুরুর প্রধম ডায়ালগ হলো- September 21, 1945, That was the night I die. মুভির প্রথম ডায়ালগ দেখেই বোঝা যাচ্ছে মুভির ঘটনা কাল দ্বিতীয় বিশ্ব যোদ্ধ সময়কার। হ্যাঁ… মুভিতে দ্বিতীয় বিশ্বযোদ্ধ চলাকালীন সময় ও যোদ্ধ পরবর্তী সময়ের জাপানের সাধারণ মানুষের দুঃখ, দূদর্শা ও ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। স্বল্প পরিসরে দুইটি চরিত্রকে উপজীব্য করে লেখক যে কাহীনিকে তুলে ধরেছেন সত্যিই তা অসাধারণ।
মুভির শুরুটা Sannoniya রেল স্টেশন থেকে । ১৪ বছরের বালক সেইটা ক্ষুধার জ্বালায় কতর, কোন মতে ধুকে ধুকে তার শ্বাস-প্রশ্বাস চললে। মনে হচ্ছে যমদূত তার সমনে দাড়িয়ে আছে, যেকোন মূহুর্তেই তার জীবন অবসান ঘটবে। মধ্যরাতে, রেলস্টেশনের ঝাড়ুদার তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। ঝাড়ুদার তার মৃত দেহের পাশে একটি Fruit drop ক্যন্ডির এর খালি কন্টিনার পায়। ভিতরে কিছু নেই দেখে ঝাড়ুদার সেই কন্টিনারটিকে পাশের ঝোপ-ঝাড়ের দিকে নিক্ষেপ করে- ঠিক তখনই দেখা যায় সেইটা ও তার ছোট বোন সেটসুকো পাশাপাশি দাড়িয়ে এবং তাদের চারপাশে অসংখ্য জোনাকি পোকা আলোর বান ছড়াচ্ছে।
মুভিটা মূলত স্মৃতিচারণ মূলক- এর পর থেকে দেখা যায়, সেইটা যুদ্ধচলাকালীন সময়ের তার জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোকে বর্ণনা করছে।
সেইটার মা, একজন গৃহীনি তিনি অসুস্থ বাবা জাপানের নৌবাহিনীর একজন কর্মকর্তা। যুদ্ধের সময় সেইটার বাবা যুদ্ধ জাহাজে ছিলেন এবং সেইটার মা আমেরিকার বি-২৯ বিমান থেকে ফেলা ক্লাস্টার বোমায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে তিনি মারা যান। এর পর থেকে সেইটা ও সেটসুকো এই শহরে একা হয়ে যান। নিজেদের জীবন বাচাতে তার দূর গ্রামে এক খালার বাসায় চলে যান। সেইটা সেখানে আশ্রয় নেন। সেইটা তার সকল টাকাপয়সা এবং কাপড়-চোপড় সব কিছুই তার খালার হতে তুলে দেন আশ্রয় ও খাদ্যের জন্য। কিন্তু খালা তাদের খুব একটা ভাল চোখে দেখতেন না। খাবার সংকটের দোহায় দিয়ে সেইটা ও সেটসুকোকে কম খাবর দিতে। মূলত এখান থেকেই এই দুই ভাই-বোনের প্রতি বৈশ্যমের শুরু। এর তারা নানা ভাবে খালার কাছে নিগৃহীত হতে শুরু করে। যখন এই বৈশম্য চরম পর্যায়ে পৌছায় তখন সেইটা এই বাড়ি ত্যগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা বাড়ি ছেড়ে - একটি টিলার পাদদেশে যুদ্ধের সেল্টার হিসেবে বিবেচিত একটি কুঠুরিতে আশ্রয় নেয়। দিনের বেলায়ই এই কুঠুরীতে খুব একটা আলো প্রবেশ করত না। রাতে দেখাগেল এই কুঠুরীটি ঘুটঘুটে অন্ধকার, কিন্তু বাইরে অসংখ্য জোনাকপোকা মিট মিটি করে আলো ছড়াচ্ছে। সেইটা ও সেটসুকো সিদ্ধান্ত নেয় এই জোনাকপোকা গুলো ধরে অন্ধকার কুঠুরীর আলোর ব্যবস্থা করবে। তারা দুই জন মিলে অনেক গুলো জোনাক পোক ধরে আনে, এই জোনাকপোকা গুলো অন্ধকার কুঠুরীর অন্ধকার দুর করে এক উজ্বল আলোর জগতের সৃষ্টি করেছে। কিন্তু পরবর্তী দিন সেটসুকো অদ্ভুদ ভাবে খেয়াল করল যে সব জোনাকপোকা গুলো মারা গেছে…. সেই এই জোনাকপোকা গুলোকে বাইরে নিয়ে একটি স্থানে কবর দেয়। এই সময় সে তার ভাই সেইটা কে জিজ্ঞাসা করে… এত সুন্দর পোকা গুলোর জীবন এতো ছোট কেন?? তারা কেন মারা গেল??? মা কেন মারা গেল??? এই ভাবে তারা প্রতি রাতেই জোনাক পোক ধরত, এবং সকালে সেগুলোর এক একটা নতুন কবর রচিত হতো…
না , আর বলব না। এখন আপনারই দেখে নিন কি ভাবে সেইটা ও সেটসুকো তাদের জীবন এই কুঠুরীর মধ্যে কাটাল এবং তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল।