সিএ পড়াকালীন আমাদের ফার্মের ম্যানেজার একটা কথা বলতেন, “সততা জিনিসটা কিছুই না, এটা হলো সুযোগের অভাব!” তখন এটা শুনে মজা লাগতো, পরে যত অভিজ্ঞতা বাড়তে থাকলো, এ কথার সত্যতা সামনে পরিষ্কার হতে থাকলো
সম্প্রতি “ই-ভ্যালি” মালিক পক্ষের সাথে এটাই ঘটেছে। সুযোগ পেয়েছে সে, তাই জনগণের অর্থ “আত্মসাৎ” করতে পেরেছে। কারো ১০ লাখ, কারো ৩০ লাখ, কারো ১৫ হাজার। বড় একটা দান মেরে ভেগে যাবার প্ল্যান ছিলো তার, পুরোটা সফল না ব্যর্থ, সময় বলে দেবে।
কিন্তু তালি একহাতে বাজে না। তাকে সুযোগটা করে দিলো কে? আমাদের সামনে কিন্তু এক পাশের চিত্র, যেখানে দেখা যাচ্ছে, রাসেল ব্যাটা সবার অর্থ মেরে দিয়েছে, অনেককে পথে বসিয়েছে।
কিন্তু আরেক পাশের চিত্র দেখা যাচ্ছে না, কারণ সেটা অদৃশ্য। সেটা হলো মানুষের লোভ-লালসা। ২৫ হাজারের জিনিস ১৫ হাজারে, বা ৩ লাখের জিনিস ১.৫ লাখে পাবার লোভ। এই লোভের কবলে পড়ে ছাত্র টাকা ধার করেছে মা-বাবার থেকে, বন্ধু টাকা ধার করেছে বন্ধুর থেকে, অনেকে বিক্রি করে দিয়েছে শেষ সম্বল। ইভ্যালি বদনা বেচতো না, নইলে আশপাশের অনেকের বাসা'র এসি থেকে বদনা পর্যন্ত সব এর পেছনে "রাসেল বাটপার" এর সরাসরি অবদান থাকতো।
এই ক্রেতাদের বড় একটা অংশ আবার টাকা “বিনিয়োগ” করেছে। ৩ লাখের জিনিস ১.৫ লাখে কিনে ২ লাখে বিক্রির জন্য। কোন কষ্ট ছাড়া ৫০ হাজার লাভের চকচকে লোভ এড়ানো কঠিন। এই কমে বিক্রির ঘটনা সাধারণ বাজারে ব্যবসায়িদের মধ্যে তৈরি করেছে হতাশার, কারণ সাধারণ ব্যবসায়ীদের স্বাভাবিক দামে বিক্রি বাধাগ্রস্থ হয়েছে; তাদের পণ্য অবিক্রীত হয়ে স্টকে পড়ে আছে অনির্দিষ্ট কালের জন্য।
এই যে তরুণ দের লোভের কারণে চরিত্রের স্খলন, দেনার কারণে নির্ঘুম রাত, বিনা কষ্টে অর্থের মালিক হবার লিপ্সা, পড়াশোনা’র বারোটা বাজা, বা সংসারে অশান্তি- এগুলোর চিকিৎসা বা তদন্ত করবে কোন বাহিনী? কোন আদালত?
রাসেল’রে গালি দেয়ার পাশাপাশি বাসা'র আয়না তেও একটু তাকানো দরকার।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:০৪