আসেন একটু পরচর্চা করা যাক। আর কী বলবো? ঢাকা শহরের জীবন তো জীবন না, যাবজ্জীবন নির্যাতন। কী গরমটা পড়েছে, তার ওপর জ্যাম। ৯টায় অফিস, বের হতে হয় ৭টায়। বের হয়ে টাইম মতো সিএনজি পাওয়া আর ডায়মন্ড রিং পাওয়া সেম কথা। তাও সিএনজিওলার রিকোয়েস্ট “মামা পুলিশ ধরলে কইয়েন মিটারে যাইতেসি”। মাঝে মাঝে যদি মানিব্যাগ কাহিল থাকে, তাইলে তো কথাই নাই, বাসে জীবন শ্যাষ। নিজের ঘাম তো ভালোই লাগে, পাশের জনের ঘামের ফোঁটা যখন গায়ে পড়ে, ইচ্ছা করে হালারে পিডাই। “টুট টুট সরকার আমাদের টাকা খায়, কিন্তু ট্রাফিক জ্যাম কমাইতে পারে না। যোগাযোগ মন্ত্রী ঘাস কাটে সারাদিন।“ গালি পাড়তে পাড়তে অফিস লেট।
শুধু কী অফিস যাওয়া, বাসায় আসা তো আরো প্যাড়া, থাক আর গালাগালি না করি। বাসায় একে যে শান্তিমতো বসবো, তাও না। ভাত খাইতে গিয়া দেখি কাচামরিচ নাই। বাসার কাছে কোন বাজার নাই। তারাহুড়ায় আনতে মনে নাই, কি আর করা বাজার থেকে বাসার রিক্সা ভাড়া ২০+২০=৪০ টাকা। থাক না খাইলাম মরিচ। আগের মতো আর হাটতেও পারি না, বয়স হয়ে যাচ্ছে, ভুড়ি হয়ে গেছে। সকাল বেলা যে বউরে নিয়া একটু হাটতে বের হবো, ব্যায়াম-ট্যায়াম করে বডি ফিট রাখবো, শালার সরকার সেই ব্যবস্থাও রাখে নাই। একটা পার্কও নাই। রাস্তায় ও হাটাহাটির যায়গা নাই। ধুর, এর চে জি-বাংলার সিরিয়াল দেখাই ভালো। মামায় কানাডা থাকে, যাওয়ার জন্য বলতেসে, কানাডাই যামু গা, ঢাকায় শিক্ষিত ভদ্রলোকের থাকার পরিবেশ নাই।
আহ, গালাগালি করে শান্তি লাগেতেসে? তাইলে রিলাক্স করে বসেন, আসেন চিন্তা করে দেখি কিছু করা যায় কি না। মাতৃভূমিরে তো আর মিস ইউনিভার্স বানাতে পারবেন না, দেখি সমস্যা গুলি সমাধান করা যায় কিনা। টুটাফাটা-ঝকঝকা যা পান, একটা সাইকেল জোগাড় করেন, অফিস-বাসা-ভার্সিটির মানুষের ত্যাড়া কথাবার্তার খ্যাতা কিলান। ৩০ মিনিটে অফিসে যান, ৩০ মিনিটে আসেন, খরচ বাচবে, এক্সারসাইজ হবে, ভুড়ি কমবে, শরীরে জোর পাবেন, মনে ফুর্তি পাবেন। আরো চান? ওকে, আরো আছে, মানিক মিয়া এভিনিঊ থেকে প্রতি শুক্রবার ভোরে কিছু আজাইরা (!) পোলাপাইন সাইকেল নিয়ে ঢাকার বাইরে মাস্তি করতে যায়। আপনিও যেতে পারেন, বউরে ঘুষ দিতে ফ্রেশ সবজি কিনে আনতে পারেন ঢাকার বাইরে থেকে। কারণ সব্জিতে ফর্মালিন মিশানো ছাড়াও ঢাকার বাইরের মানুষের বহুত ইম্পর্ট্যান্ট কাম আছে। ১১টার মধ্যে বাসায় ফিরতে পারবেন, তারপর দেখেন মন কত ফ্রেশ লাগে।
ঢাকা শহরের নাম ঢাকাই থাকবে, কিন্তু পরিবেশটা আমস্টারডাম হতেই পারে। ঢাকায় সাইক্লিস্ট গত ৩ বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমান বেড়েছে। বাড়ছে। বাড়বে। ঢাকার প্রধান সমস্যা যানজটের সমাধান আমরা করেছি, নিজের জন্য। আপনি আপনার সমাধান করবেন কিনা তা আপনার হাতে। চিত্র বদলাবে। কারো আলসেমির জন্য বসে থাকবে না।
আরেক দেশের সুন্দর শহর দেখে নিজের ঢাকাকে গালি পাড়বেন, নাকি
নিজের শহরকে জাদুর শহর বানাবেন, সিদ্ধান্ত আপনার।
ব্লেম গেম খেলবেন, নাকি গেম চেঞ্জার হবেন, সিদ্ধান্ত আপনার।