আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগে বাংলাদেশের জনপ্রিয় পগ্রেসিভ মেটাল ব্যান্ড আর্টসেল কাজী নজরুল ইসলামের “ কারা ঐ লৌহকপাট ” গানটি কভার করে । এর আগেও কাণ্ডারি হুশিয়ার তারা করেছিল । তারও আগে নজরুলের দ্রোহের গান সর্বপ্রথম মেটাল জনরায় পরিবেশন করে চট্টগ্রামের মেটাল ব্যান্ড ডিউ ড্রপ ১৯৯৮ সালে । এছাড়াও দৃক মেটাল জনরায় পরিবেশন করে “মোরা ঝরনার মত ” গানটি ।
মেটালে নজরুলকে খুব মানায় । কারণ মেটাল নিজেই একটা দ্রোহের প্রকাশ । আমরা যারা মেটাল ভক্ত ছিলাম তারা প্রায় সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ি আর্টসেলের কারা ঐ লৌহকপাট গানটি শুনতে । শুনেই দিলখুশ এতটা মেধার পরিচয় যে এই ব্যান্ড রাখবে তা ভাবিনি । জীবন থেকে নেয়া সিনেমায় সে সুর ও বিশাল স্নেয়ার এবং সেতারের সংগীতায়োজনে এই গানটি শুনেছিলাম ঠিক তাই ড্রাম ও গিটারে তুলে দেখিয়েছে ব্যান্ডটি । কোন দিক থেকে আবেদনে কোন ঘাটতি রাখেনি । শুনেই মনে হয়েছিল “ সাবাশ ব্যাটা আর কে ( রকার্সদের) ভুল ধরবে !”
পরশু এক অগ্রজের কাছ থেকে শুনলাম এ আর রহমান নাকি নতুন সংগীতায়োজনে এই গান আবার পরিবেশন করেছে এক ঝাঁক নবীন শিল্পী দিয়ে । অগ্রজের থেকে জেনে আজ গানটা শুনলাম । প্রথম শুরুতেই শুনে মনে হলো আসলেই আমি “কারা ঐ লৌহকপাট” গানটি শুনছি না । এতটাই জঘন্য পরিবর্তন কেউ করতে পারে ? কিন্তু পরক্ষণেই আবিষ্কার করলাম এই গানটা আসলে এই প্রথম এভাবে গাওয়া হয়নি । এর আগেও একইভাবে এই গান পরিবেশ করা হয়েছিল !
১৯৮০ সালে কলকাতায় বিপ্লবী সূর্য সেনকে নিয়ে একটা সিনেমা করা হয় “চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন ” নামে । সেখানেও এইরকম এক অপভ্রংশের আয়োজন করা হয় এই গানকে ঘিরে । সম্ভবত এই গানের কোন স্বরলিপি নেই তারপরও একটা দ্রোহের গানকে এমনভাবে গাওয়ার কোন অর্থ থাকে না । সিনেমাতে গানের যে দৃশ্যায়ন তা কোন ভাবেই জীবন থেকে নেয়া সিনেমার চাইতে কোনমতেই উন্নত বলা যায় না । তা যে কেউ দুটো গানের ভিডিওকে পাশাপাশি দেখলেই বোঝা যাবে । আমাদের দেশে দ্রোহের গানকে যতটা যত্ন দিয়ে গাওয়া হয় ভারতে তা কিন্তু হয় না । নজরুলের গান নিয়ে তাদের অবহেলাটা সত্যিই বেশ হতাশাজনক ।
শ্রদ্ধেয় কমল দাশগুপ্তের সুরে গান “পৃথিবী আমারে চায়” গানটি একদম অবহেলা ভরে হেমন্ত মূখ্যোপাথ্যায়কে গাইতে শুনেছি । এছাড়াও বাংলাদেশের শিল্পীদের গানও ঠিক সেই অবহেলা ভরে গাইতে দেখা যায় ভারতীয় শিল্পীদের । এটা আসলেই মেনে নেয়া যায় না । ওনারা এক প্রকার অহমিকা সবসময় দেখিয়ে এসেছে । তার অন্যথা হয়নি এ আর রহমানের ক্ষেত্রেও । অবশ্য উনি সেই ১৯৮০ সালের গানটারই আধুনিক সংস্করণ করে পরিবেশন করেছেন একতারা ও বাঁশি প্রয়োগ করে । সেক্ষেত্রে ওনার দোষটা কমই বলা যায় !
আসলে এটা ভারতীয় মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির কাজ । অনেক আগে থেকেই এ চলে আসছে । এটাকে রোধ করা সম্ভব নয় কারণ আজকাল যেকোন গানের ধারাতে আমরা ভারতীয় সংস্করণকে অনুসরণ করছি । এমনকি আজকাল দেখছি রক গান মানেই হলো “অনুপমের” মত ঘুমন্ত আবহ নিয়ে করা ! এইসব শুনলে ভাবতে অবাক লাগে এক সময়ের বর্ণিল বাংলার রক কালচার কোথায় গিয়ে থেমেছে । আপাতত এখানেই থামছি !
১৯৮০ সালের সিনেমার গানটি
জীবন থেকে নেয়া সিনেমার গানটি
এবং আর্টসেলের মেটাল সংস্করণ