মাঝে মাঝে হতাশা পেয়ে বসে। হাজারো পাওয়ার মাঝে ছোট কিছু না পাওয়ার কষ্ট মনটাকে পোড়ায়। কি করব স্যার ! আমি সাধারণ মানুষ। আমার অন্তহীন চাহিদার সাথে আমি নিজেই তাল মেলাতে পারি না। নিরন্তর বহমান, ব্যস্ত এই নগরজীবনে তাই আমার আর "হিমু হওয়া" হয়ে উঠে না। নির্মোহ জীবন !!- সেতো চরম আরাধ্য। তবে কী স্যার, আমি জানি- হাজারো তরুণের হৃদয়ে "হিমু" সাহস জোগায়। চাওয়া-পাওয়ার বিশাল ফারাক মুহুর্তেই উবে যায় কোন এক অলীক চরিত্রের ফিসফিসানিতে।
প্রায় সময় একা লাগে। মনে হয়, "আমার জন্য বোধহয় কোথাও কেউ নেই।" কিন্তু তারপরও একটা হাসিমুখের মুখোশ পরে ঘুরি। আমি স্যার আপনার মত অত সাহসী না যে "বাকের ভাই"দের কথা ভাবব। হোক না সে "বাকের ভাই" আমি নিজেই!! আজকের পৃথিবী আমাকে শুধু স্বার্থপর হতেই শেখায়। কারও জন্য আমার মনে কোন প্রেম জাগে না। যা আসে তাতে শুধুই কামনার হোলিখেলা অনুভব করি। কারও নীল তোয়ালে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছা আমার হয় না। সবসময় লাভ-লোকসান হিসেব করতে করতে কারও জন্য বুকটা কাঁদেও না। "মায়া" নামক অনুভূতি যেন বহূদুরে ফেলে এসেছি।
হ্যা, স্যার, আমিও টিউশনী করি। কিন্তু আমার ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে আমি কোন "তিতলী-কনকা"-কে খুঁজে পাই না। পড়ানোর সময় ছাপানো অক্ষরগুলো ঝাপসা হয়ে আসে। চোখের সামনে শুধু চারকোণা সাংখ্যিক কাগজেরা ভেসে বেড়ায়। আমার যে অনেক চাহিদা স্যার !!
আমার কথাতো অনেক বললাম। আপনি হয়তো আমাকে চরম আত্নকেন্দ্রিক একজন মানুষ ভাবছেন। কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে স্যার, আজকের সময়ে কেউ কারও নয়। কোন বৃদ্ধ পিতা আজ আর রাগ করে পুত্রের বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় না। কিভাবে যাবে স্যার? আজকালকার পুত্রালয়ে পিতারা অপাংক্তেয়। সামাজিক স্ট্যাটাসের কাছে সম্পর্কেরা খুব সহজেই বিক্রী হয়ে যায়।
কষ্ট লাগছে স্যার? শুধু শুধু কষ্ট কেন পাবেন !! যে শহরে নিয়ন বাতির আলো হারিয়ে দেয় "জ্যোৎস্নার আলোকে", সে শহরে এমনটাই কি হওয়া স্বাভাবিক না? বাদল দিনের প্রথম কদম ফুলের কোন মূল্য যান্ত্রিক জীবনে নেই।
থাক, এবার স্যার আপনাকে কিছু আশার কথা বলি। এখন কিন্তু স্যার "দারুচিনি দ্বীপ" আর অস্পৃশ্য কোন স্বপ্ন নয়। এখন হাজারো মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে "জ্যোৎস্নাময় সৈকত"। হয়তো সেখানেই কোন এক মুহূর্তে কেউ কেউ "হিমু" নামক দুর্লভ পাথরের খোঁজ পেয়ে যায়। এই হিমুরা খালি পায়ে হাঁটে না, তাদের গায়ে হয়তো কোন হলুদ পাঞ্জাবীও থাকে না। কিন্তু ফুটপাতে শুয়ে রাত কাটানো হাজারো খালি পায়ে জুতো পরাতে তারা ছুটে যায়।
এই প্রজন্মেই স্যার, কেউ কেউ বাকের ভাইয়ের মত বড় হৃদয়ের হয়। তাদের হাতে হয়তো কোন রুপালী চেইন থাকে না। কিন্তু অনুভূতিতে থাকে মমতার শৃঙ্খল। হয়তো এদের মাঝেই কেউ কেউ কোথাও সবার অগোচরে তিতলী-কনকাদের গড়ে তুলছে প্রাণান্তকর চেষ্টায়।
তাই স্যার এই শহরে এখনও "জ্যোৎস্না" মাঝে মাঝে উঁকি দেয়। ব্যস্ত প্রাণীগুলো হঠাৎ ব্যস্ততা ভুলে গিয়ে আশায় বুক বাঁধে। দুঃখগুলো তখন হারিয়ে যায় বেণু জলে ভেসে !!
উৎসর্গঃ শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আহমেদ