অতি সম্প্রতি প্রকাশিত ৭১ এর যুদ্ধশিশু বইয়ের সাথে আমার নামটি উচ্চারিত হচ্ছে বারবার। অনেকেই জানতেন না মুক্তিযুদ্ধের এ অজানা অধ্যায় উন্মোচনকালে আমার ভূমিকা কি ছিল, কানাডার প্রথম বাংলা পত্রিকা 'দেশে বিদেশে'র ভূমিকা কি ছিল! অনেকে আজ বিস্মৃত। টরন্টোতে এবার বইটির প্রকাশনা উৎসবে হলভর্তি দর্শকদের সামনে লেখক-গবেষক মুস্তফা চৌধুরী তাঁর মুখেই বললেন শুরুটা কিভাবে হয়েছিল।
মনে পড়ে 'দেশে বিদেশে' পত্রিকায় যখন এ অজানা অধ্যায়ের ঘোষণা দিতে গেলাম সে সময় ৭১ এর সাথে 'ওয়ার বেবি' শব্দটা কেমন জানি বেমানান লাগছিল। বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের কোন অভিধানেই 'ওয়ার বেবি'র সরাসরি কোন অর্থ ছিল না। কোথাও লিখা হয়েছে 'জারজ সন্তান', কোথাও লিখা হয়েছে 'অবাঞ্চিত সন্তান', 'পরিত্যাক্ত সন্তান' ইত্যাদি। এসব শব্দগুলোর আলাদা আলাদা ইংরেজি রয়েছে এছাড়া সবগুলো শব্দই আমার কাছে নেতিবাচক বলে মনে হলো। ভাবতে ভাবতে একসময় মনে হলো 'যুদ্ধশিশু' শব্দটি কেমন হয়? '৭১ এর যুদ্ধশিশু'!
ব্যাস, পরদিন পত্রিকার প্রথম পাতায় লারা জরিনার ছবিসহ ছাপা হয়ে গেলো 'আসছে মুক্তিযুদ্ধের এক অজানা অধ্যায় '৭১ এর যুদ্ধশিশু'। পত্রিকার পাঠকরা চমকে উঠলেন! 'এ ধরনের কোন শব্দ তো কখনও শুনিনি!' 'এরা কারা?' ইত্যকার নানান প্রশ্ন ঘোরপাক খেতে লাগলো পাঠকদের মনে। খবর হয়ে গেলো এক শহর থেকে অন্য শহরে। এক দেশ থেকে অন্য দেশে. অবশেষে বাংলাদেশে।
আজ আমি খুব খুশি। প্রথমতঃ বাংলা অভিধানে একটি নতুন শব্দ যুক্ত করতে পেরে। দ্বিতীয়তঃ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ নতুন অধ্যায়ের আমিও একজন অংশীদার বলে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, যতদিন মুক্তিযুদ্ধের কথা লিখা হবে, যতদিন যুদ্ধশিশুর কথা বলা হবে- ততদিন আমার নামটিও উচ্চারিত হবে ভেবে আমি আনন্দিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৩৩