কোয়ান্টাম কণা (আলোক বা পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা) পরিমাপ এবং তা কাজে লাগানোর নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করে পদার্থবিজ্ঞানে ২০১২ সালে নোবেল জিতেছিলেন ফরাসি বিজ্ঞানী সার্জ হারোস এবং মার্কিন বিজ্ঞানী ডেভিড ওয়াইনল্যান্ড। এই আবিষ্কার প্রচলিত কম্পিউটারের ধারণাই বদলে দেবে।
পদার্থ থেকে একটি কণাকে আলাদা করার সঙ্গে সঙ্গে তাদের কোয়ান্টাম বৈশিষ্ট্য হারিয়ে যায়। তাই কণার কোয়ান্টাম অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও পরিমাপ এত দিন অসম্ভব বলে মনে হতো। কিন্তু হারোস এবং ওয়াইনল্যান্ড এমন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যার মাধ্যমে বিনষ্ট না করেও কোয়ান্টাম কণা নিরীক্ষা করা সম্ভব। এর মাধ্যমে পদর্থবিদ্যায় নতুন যুগের সূচনা হলো।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারঃ
বিখ্যাত কল্পবিজ্ঞান লেখক এইচ জি ওয়েলসের 'টাইম মেশিন'-এর মতোই কোয়ান্টাম কম্পিউটারও এখন পর্যন্ত কাল্পনিক। তবে একে বাস্তবে রূপ দেবে হারোস ও ওয়াইনল্যান্ডের গবেষণা। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমী অব সায়েন্সের (পদার্থবিদ্যায় নোবেল বিজয়ী নির্বাচন করে এই প্রতিষ্ঠান) মতে, 'কোয়ান্টাম কণা নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছেন এ দুই বিজ্ঞানী। কোয়ান্টাম কণা ধ্বংস না করেই এর পরিমাপের উপায় বের করেছেন তাঁরা। বর্তমানে প্রচলিত কম্পিউটার গত শতাব্দীতে যেমন আমাদের জীবনযাত্রা আমূল পাল্টে দিয়েছিল, তেমনি এই শতাব্দীতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার পাল্টে দেবে তথ্যপ্রযুক্তি, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং কম্পিউটিংয়ের সব ধারণা।
নতুন কী?ঃ
বর্তমানের কম্পিউটার কাজ করে বাইনারি পদ্ধতিতে। কম্পিউটারের বিশাল তথ্যভাণ্ডার সংরক্ষণ করার ক্ষুদ্রতম একককে বলা হয় বিট। এই পদ্ধতিতে ০ এবং ১_এই বিট হিসেবে তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। যেমন_ডেসিমিল ১০, যার বাইনারি রূপান্তর হবে ১০১০, যা সংরক্ষণের জন্য আমাদের দরকার হয় কমপক্ষে ৪-বিটের রেজিস্ট্রার। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার কাজ করবে কোয়ান্টাম বিট বা কিউবিট ব্যবহার করে। এখানে একই সঙ্গে ০ অথবা ১ এবং ০ ও ১ উভয় পদ্ধতিতে তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। ফলে হিসাব বা তথ্য সংরক্ষণে প্রতিটি কোয়ান্টাম কম্পিউটার হবে অনেক গুণ বেশি ক্ষমতার। তথ্য সংরক্ষণের ক্ষমতাও বেড়ে যাবে বহুগুণ। এর অতি ক্ষুদ্র একটি মাইক্রোচিপ সংরক্ষণ করতে পারবে লক্ষ-কোটি টেরাবাইট তথ্য। অতি দ্রুততায় করতে পারবে লক্ষ-কোটি তথ্যের নির্ভুল গণনা। তথ্য প্রক্রিয়াকরণের দানব কোয়ান্টাম কম্পিউটার অ্যাটম আর ইলেকট্রনের শক্তিতে কম্পিউটিং জগৎকেই পাল্টে দেবে।
হালের জনপ্রিয় 'এম-কমার্স', 'অনলাইন ব্যাংকিং'-এর মতো সেবাগুলো আরো নিরাপদ ও সহজ করতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিংয়ের ধারণা যথেষ্ট গুরুত্ব রাখবে বলে প্রযুক্তি-বিশ্লেষক ও বিজ্ঞানীদের অভিমত। এসব ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থা কঠিন করার জন্য বর্তমানে যে জটিল এলগরিদম (গাণিতিক পদ্ধতি) ব্যবহার করা হচ্ছে, তা শতভাগ নিরাপদ নয়। এ ক্ষেত্রে প্রচলিত কম্পিউটারের বদলে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ব্যবহার করলে কঠিন কোড তৈরি সম্ভব হবে। ফলে হ্যাকারের পক্ষে নিরাপত্তাব্যবস্থা ভেদ করা হবে দুঃসাধ্য।
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বদৌলতে আগামী দিনে এমন ঘড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে, যা বর্তমানের সিজিয়াম ঘড়ি বা পারমাণবিক ঘড়ির তুলনায় শতগুণ নিখুঁত সময় দেবে। ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং জগতের সাফল্য যে সুনিশ্চিত_এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। এখন শুধু অপেক্ষা কাঙ্ক্ষিত কোয়ান্টাম কম্পিউটারের।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১২:৩৮