somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেনিন মানে অতীন নয়, ভবিষ্যৎ - জর্জ বার্নার্ড শ’

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেনিন মানে অতীন নয়, ভবিষ্যৎ - জর্জ বার্নার্ড শ’

আমি নিজে লেনিনের মতো। আমি একজন বিপ্লববাদী। আমার মনে হয় আমি একজন বিপ্লববাদী হিসাবেই জন্মেছি। ১৯১৭’র আগে আমি লেনিনের নাম কখনও শুনিনি। তখন আমি ইংল্যান্ডে ছিলাম। ওখান থেকেই আমি এসেছি। ওখানকার মানুষের অবস্থাও আমারই মতো। এরপরও লেনিন সম্পের্কে ব্যক্তিগতভাবে আমরা খুব বেশি কিছু জানিনি।

লেনিনের পড়াশুনা, আবিষ্কার, মৌলিক ধ্যানধারণা সম্পর্কে এই সন্ধ্যায় আপনাদের কাছে অন্যান্য বক্তারা বললেন। কিন্তু আশ্চর্যের কথা, রাশিয়াতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে যে ছাপ ফেলেছেন, অন্যান্য যে সমস্ত দেশ তাঁর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে কিছুই জানে না বা তাঁকে দেখেওনি সেখানেও তিনি একইরকম গভীর ছাপ ফেলেছেন।

আপনাদের আমি একথা বোঝাতে পারব না। কেন এমন ঘটেছিল আমি জানি না। এর যেন এক অদ্ভূত চুম্বকীয় শক্তি আছে। এরকম ঘটনা কীভাবে ঘটে বিজ্ঞান এখনও তা বিশ্লেষণ করে বলতে পারেনি। তবুও এই রাশিয়ায় মতোই এ কথা সর্বত্রই সত্য। তিনি তাঁর সমিতির (সংগঠনের) সভ্যদের মধ্যেএকজন ছিলেন। এই সমিতিতে অসাধারণ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন, দৃঢ়চিত্ত এবং রাজনৈতিক ক্ষমতাসম্পন্ন বহু মানুষ ছিলেন। এঁদের অনেকেই লেনিনের থেকে নানা বিষয়ে এগিয়ে ছিলেন। বিরাট কর্মযজ্ঞে এঁদের সহায়তার জন্য লেনিন এঁদের কাছে ঋণী। তা সত্ত্বেও অসাধারণ বিশিষ্ট মানুষগুলির মধ্যেও তিনি অনন্য ব্যক্তিত্ব হিসাবে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছেন।

আমি যা বলছি তা আপনাদের বোঝাতে পারব না। আমি আপনাদের এক অদ্ভূত ঘটনার কথা বলতে পারি। রাশিয়াতে যেখানে বহু মানুষ গভীরভাবে লেনিনকে জানে সেখানে তিনি যেমন সকলকে ছাপিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন, ইংল্যান্ডে যেখানে তাঁকে প্রায় কেউই জানে না, সেখানেও তিনি একইভাবে দাঁড়িয়ে আছেন।

লেনিন মারা গেছেন বলে আপনারা একটিবারও ভাববেন না যে লেনিনের গুরুত্ব, লেনিনের বিরাট প্রয়োজনীয়তা অতীতের বিষয়। ভবিষ্যতের দিকে আপনাদের দৃষ্টি দিতে হবে। ভবিষ্যতের জন্য তাঁর গুরুত্ব কোথায়? হ্যাঁ, তাঁর প্রয়োজনীয়তা আছে। লেনিন যে পরীক্ষা করেছেন,যার প্রধান কারিগর তিনি, আমাদের কাছে তিনি যার মূর্ত রূপ, সামাজিক সংগঠন নিয়ে তাঁর সেই পরীক্ষার পরাজয় ঘটলে সভ্যতা ভেঙে পড়বে, যেভাবে আগে বহু সভ্যতা ধ্বংস হয়ে গেছে।

সাম্প্রতিক ইতিহাস গবেষণা থেকে আমরা জেনেছি পৃথিবীতে বহু সভ্যতা ছিল। আমাদের মতোই সেই সব সভ্যতার ইতিহাস। পশ্চিমী ধনতান্ত্রিক সভ্যতা আজ যেখানে পৌঁছেছে ওই সব সভ্যতাও যখন সেখানে পৌঁছায় তখন তাদেরও দ্রুত অবক্ষয় শুরু হয়েছে। যার ফলে গোটা ব্যবস্থাই সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। আর মানবজাতি প্রায় বর্বর যুগের কাছাকাছি ফিরে গেছে। মানবসভ্যতা বারবার ওই বিশেষ স্তরটা অতিক্রম করার চেষ্টা করেছে এবং বারবার তার পরাজয় ঘটছে।

এখনওই বিশেষ স্তর পার হওয়ার পদ্ধতি লেনিন সংগঠিত করেছেন। তাঁর এই পরীক্ষা শেষপর্যন্ত ক্রিয়া করলে, অন্যান্য দেশগুলি তাঁর এই পথ এবং শিক্ষাগুলি অনুসরণ করলে এবং সারা পৃথিবীতে কমিউনিজমের এই মহান পরীক্ষা ছড়িয়ে পড়লে আমরা ইতিহাসের এক নতুন যুগে প্রবেশ করব। আগে যেমন পরাজয় বরণ করেছি, ধ্বংস হয়ে গেছি, আবার নতুনভাবে শুরু করে, আবার সেই দুর্দশার মধ্য দিয়ে হেঁটে সেই একই দুঃখজনক পরিণতিতে পৌঁছেছি, সেই ঘটনা আরঘটবে না। মানব ইতিহাসের এমন এক যুগে আমরা পৌঁছাব যার সম্পর্কে বর্তমানে আমাদের কোনও ধারণা নেই।

আর ঠিক এখানেই আমাদের কাছে লেনিনের তাৎপর্য।

লেনিনের দূরদৃষ্টি যেভাবে ভবিষ্যতকে দেখতে পেয়েছে, যদি ভবিষ্যৎ সত্যিই তাই হয়, তাহলে আমরা সকলেই সুখী হব। নির্ভয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাব। কিন্তু যদি এই পরীক্ষা বিফল হয়, গৃহীত না হয়, পৃথিবী যদি পুঁজিবাদের পথেই চলতে চায়, তাহলে আপনাদের কাছ থেকে বিষণ্ণ হৃদয়ে আমি বিদায় নেব বন্ধু।

(‘লেনিন ইন প্রোফাইল’ রচনাসংগ্রহ থেকে)
[বিখ্যাত ইংরজে সাহিত্যিক ও চিন্তাবিদ জর্জ বার্নাড শ’ ১৯৩১ সালে রাশিয়া ভ্রমণকালে এক অনুষ্ঠানে এ বক্তৃতাটি করেন। এটি অনুবাদ ও প্রকাশ করেছে কলকাতা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক গণদাবী ( ৬৬ বর্ষ ২১ সংখ্যা, ৩-৯জানুয়ারি ২০১৪)।]
২১ জানুয়ারি কমরেড লেনিনের মৃত্যুবার্ষিকী সামনে রেখে তাঁর সংগ্রামী স্মৃতির প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×