পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের বিপদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান
আগামীকাল বিকেলে বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ-এর উদ্যোগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধনে অংশ নিন
গত ২ নভেম্বর ২০১১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অতি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি সাক্ষরিত হল। বাংলাদেশ সরকার ও রাশিয়া সরকারের মাঝে সম্পাদিত এই চুক্তির মধ্যে দিয়ে পারমানবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্পর্কিত এক অধ্যায়ের সূচনা হয়। চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়ার সহায়তায় পাবনার রূপপুরে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের চামেলী হলে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান বাংলাদেশের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। রাশিয়ার পক্ষে চুক্তিতে সই করেন সে দেশের পরমাণু শক্তি করপোরেশন-রোসাটমের মহাপরিচালক সের্গেই কিরিয়েংকো।
এই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আলোচনা উঠে এসেছে নিউক্লিয়ার প্রযুক্তির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক সম্বন্ধে। আমরা এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে যা যা বক্তব্য এসেছে তার পুংখানুপুংখ বিশ্লেষণ পরে উপস্থাপন করবো। বর্তমানে অত্যন্ত প্রাসংগিক বলে ভ্যানগার্ড এপ্রিল ২০১১ সংখ্যার লেখাটি এখানে দেয়া হল।
পরমাণু বিদ্যুৎ : জাপানের অভিজ্ঞতা ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ
।। ভ্যানগার্ড প্রতিবেদন ।।
গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে জাপান প্রথমে ভয়াবহ ভূমিকম্প ও সুনামি এবং এর পরপরই ফুকুশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে ভয়াবহ তেজস্ত্রিয় দূষণের শিকার হয়েছে। জাপানের সীমা ছাড়িয়ে এ তেজস্ত্রিয় দূষণ চীন এমনকি প্রশান্ত মহাসাগরের অপর পাড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপকূলেও ছড়িয়ে পড়েছে। জাপানের পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর গোটা বিশ্বজুড়ে পরমাণু বিদ্যুৎ নিয়ে ব্যাপক শোরগোল পড়েছে, বিভিন্ন দেশের রাজনীতিতে পরমাণু বিদ্যুৎ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঠিক এমনি একটি সময়ে বাংলাদেশেও পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের তোড়জোড় আমরা লক্ষ্য করছি।
বাংলাদেশে প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ-এর কথা শোনা যায় ১৯৬২ সালে, পাকিস্তান আমলে। তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খানের উদ্যোগে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রূপপুরে এ প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। সেখানে জমিও অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু কিছুদিন এ নিয়ে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গেলেও পরবর্তীতে প্রকল্পটি হিমাগারে চলে যায়। প্রায় ৪০ বছর প্রকল্পটির কোনো খোঁজ ছিল না। ২০০০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের বাংলাদেশ সফরের পর, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার প্রকল্পটিকে আবার সচল করে। তখন শোনা গিয়েছিল, প্রকল্পের সব রকম সহযোগিতা আসবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। ওই বছরের অক্টোবর মাসে শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্র সফরের কয়েকদিন পূর্বে দু’দেশের মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যায়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু ওই তৎপরতাও এক সময় চাপা পড়ে যায়। এরপর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের (২০০৮) সময় প্রথম এ ব্যাপারে বড় ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয় এবং মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালের ১৩ মে রাশিয়ার সঙ্গে প্রাথমিক একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর গত ২৪ ফেব্রম্নয়ারি ’১১ রাশিয়ার সঙ্গে এক হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিষয়ে চুক্তি করেছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা)। জাপানের দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন মহলের প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান জানিয়ে দিয়েছেন, দেশের বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে পারমাণবিক বিদ্যুতের বিকল্প নেই। তিনি আরো জানিয়েছেন, জাপানের ঘটনায় সরকার আরো সতর্ক হবে। নির্মিতব্য প্রকল্পটি ১০ মাত্রারও বেশি ভূমিকম্প এবং ঘূর্ণিঝড় সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন এবং তৃতীয় প্রজন্মের আধুনিক প্রযুক্তির। ফলে এখানে দুর্ঘটনার কোনো ধরনের সম্ভাবনা নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এপ্রিল মাসের শুরুতে মস্কো গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি রাশিয়ার কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন। সব ঠিক থাকলে প্রধানমন্ত্রী আগামী জুলাইয়ে রাশিয়া সফর করবেন এবং সেখানে চূড়ান্ত চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ অর্থনীতির চালিকাশক্তি, তাই বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান দরকার। দেশের অর্থনীতির সাথে বিদ্যুৎএর সম্পর্ক খুব ওতপ্রোত হলেও জনসংখ্যার মাত্র ৪৫% বিদ্যুৎ সেবা পান। তবে তাও নিরবচ্ছিন্ন নয়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং একটা স্বাভাবিক বিষয়, গ্রামাঞ্চলে সেটা আরো প্রকট। সরকারি হিসেবেই দৈনিক বিদ্যুৎ ঘাটতির পরিমাণ ১ হাজার মেগাওয়াট, কারো কারো মতে এ ঘাটতি দেড় থেকে দুই হাজার মেগাওয়াট। এ অসহনীয় পরিস্থিতিতে নতুন বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা হলে যে-কোনো নাগরিকেরই খুশি হবার কথা। কিন্তু সংশয় জেগেছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার নিয়ে। কারণ পরমাণু বিদ্যুৎএর সাথে জাতীয় নিরাপত্তা, পরিবেশ, স্বাস্থ্য ইত্যাদি অনেকগুলো গুরম্নত্বপূর্ণ বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত যে বিষয়টি গভীর পর্যালোচনার দাবিদার।
পারমাণবিক বিদ্যুতের পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত আছে। আমরা মূলত পারমাণবিক বিদ্যুতের বিপদের প্রধান দিকগুলো এখানে সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করব।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কতটুকু নিরাপদ?
পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রসঙ্গে প্রথমেই যে কথাটি চলে আসে তা হল এর নিরাপত্তা ও প্রযুক্তির বিষয়টি। বিজ্ঞানের যে-কোনো অবিষ্কারই এক ধাক্কায় সফলতার মুখ দেখে না, এবং সে কারণেই প্রতিটি প্রযুক্তিই নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নিখুঁত ও নিরাপদ হতে থাকে। প্রযুক্তি এবং আর্থিক সামর্থে অগ্রসর দেশগুলো পরমাণু প্রযুক্তি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো দেশই পরমাণু জ্বালানির নিরাপদ ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারেনি। পারমাণবিক শক্তির আবিষ্কার ও এ প্রযুক্তির ব্যবহার খুব বেশি দিনের নয়। এ সংক্রান্ত পরীক্ষাটি প্রথম সম্পাদিত হয় ইউরোপে ১৯৩৮ সালে। তারপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কয়েক বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করে প্রথম পারমাণবিক বোমা। যার দানবীয় রূপ হিরোশিমা-নাগাসাকিতে দেখা গেছে। পরমাণু প্রযুক্তি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা আর হাজার লক্ষ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা সমান কথা। তারপরও সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তিগুলো তাদের সামরিক-রাজনৈতিক স্বার্থে পরমাণু শক্তি নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা জনমতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েই চালাচ্ছে। ওই শক্তিগুলো নিজেদের সামরিক-রাজনৈতিক এবং বাণিজ্যিক স্বার্থে অনুন্নত ও দুর্বল দেশগুলোকে তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার অধীনস্থ করে।
জাপান প্রযুক্তিতে অত্যন্ত অগ্রসর একটি দেশ। তাদের দেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা আমাদের মতো প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা দেশগুলোর জন্য একটা হুঁশিয়ারি। এছাড়া জাপানের ঘটনার পর পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় দেশ জার্মানি ও ফ্রান্সে বিষয়টি নিয়ে যে তোলপাড় শুরু হয়েছে সেটাও আমাদের বিবেচনায় নেয়া দরকার। ইতোমধ্যে জার্মানি তাদের নিজস্ব সাতটি পারমাণবিক জ্বালানিকেন্দ্র আপাত বন্ধ ঘোষণা করলেও পরমাণু জ্বালানি ইস্যুকে ঘিরেই প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে ৫৮ বছর ধরে ক্ষমতাসীন সিডিইউ সরকারের পতন ঘটেছে। সেখানে পরমাণু জ্বালানির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গ্রিন পার্টি বিজয়ী হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, রাইনল্যান্ড প্রদেশে পরবর্তী যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সেখানেও গ্রিন পার্টি বিজয়ী হবে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পরমাণু শক্তিনির্ভর দেশ ফ্রান্স ফুকুশিমার দুর্ঘটনার পর বিশ্বের পরমাণুনীতির সংষ্কার দাবি করেছে। আর জাপানের প্রধানমন্ত্রী নাওতা কান মন্তব্য করেছেন, জাপানের পরমাণুকেন্দ্রগুলো ধ্বংস করে ফেলা উচিত। আমাদের পাশের দেশ ভারতেও বিজ্ঞানীমহল দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলাচিঠি লিখে সব ধরনের পরমাণু প্রকল্প বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে তা রাশিয়ার ওপর এক ধরনের নির্ভরশীলতা তৈরি করে দেবে। কেননা শুধু রাশিয়ার প্রযুক্তি সহায়তা বা ইঞ্জিনিয়ারই নয়, বরং বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিচালনার জন্য যে কাঁচামাল দরকার হবে (ইউরেনিয়াম), তার সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে সব সময় আমাদের সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে। এমনকি আমাদের জাতীয় স্বার্থ ক্ষুন্ন করে হলেও। এ প্রকল্প যতদিন চলবে ততদিন দুইটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতার নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পারে? আমরা অতি সম্প্রতি দেখেছি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য ইরানের ওপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া আশির দশকে ইসরায়েলি বিমান হাজার মাইল উড়ে গিয়ে ইরাকের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে বোমা ফেলে তা ধ্বংস করে দিয়েছিল। আজকের দিনে আর যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন নেই। ‘সাইবার ওয়ার’ই যে-কোনো পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস তথা অকার্যকর করার জন্য যথেষ্ট।
পারমাণবিক স্থাপনা থেকে তেজষ্ক্রিয়তা কতভাবে ছড়ায় এবং তার প্রভাব মানুষ ও পরিবেশের ওপর কত ভয়াবহ হয় সেটা একটা বিরাট আলোচনার বিষয়। আমরা সে দিকে যাব না। শুধু সংক্ষেপে দু-একটি বিষয় উল্লেখ করব।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় বিপদ হল নানা রকম দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা, জাপানের ঘটনায় যা নতুন করে প্রমাণিত হল। এর আগে সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি এবং কড়া নিরাপত্তা মান সংরক্ষণকারী দুনিয়ার উন্নত দেশগুলোতেই ছোট বড় মিলিয়ে অসংখ্য পারমাণবিক দুর্ঘটনা ঘটেছে যার অনেকগুলো ঘটনাই তারা চাপা দিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি সংগঠনের জরিপ অনুসারে কেবল ১৯৮৬ সালেই সেদেশের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত শক্তি কেন্দ্রগুলোতে ২৮১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাছাড়া ১৯৭৯ সালে পেনসিলভানিয়ার থ্রি মাইল আইল্যান্ড কেন্দ্র এবং ১৯৮৬ সালে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউক্রেনে অবস্থিত চেরনোবিল কেন্দ্রের ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা সবারই জানা। চেরনোবিল দুর্ঘটনায় তাৎড়্গণিক মৃত্যু নেই, কিন্তু আজ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৮০ লক্ষের বেশি মানুষ। জাতিসংঘের রিপোর্ট অনুসারে, এদের মধ্যে ৪৬ লক্ষ মানুষ বেলারুশের। তীব্র তেজষ্ক্রিয়তার দরুণ খুব দ্রুত মারা গেছেন ১০ হাজার লোক, এখনও অবধি মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ হাজার যার মধ্যে ৩০০০ মারা গেছেন আত্মহত্যা করে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্জ্যপদার্থ থেকে নির্গত তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের ফলে পরিবেশ দূষণের মাত্রাও খুব ভয়াবহ। এই বর্জ্য পদার্থের মধ্যে থাকে প্লুটোনিয়াম পরমাণুর বিভিন্ন আইসোটোপ। যেমন প্লুটোনিয়াম ২৩৯, ২৩৮, ২৪১ ইত্যাদি। এগুলোর তেজষ্ক্রিয়তা বজায় থাকে হাজার হাজার বছর ধরে, অর্থাৎ হাজার বছর ধরেই এগুলো দূষণ ছড়ায়। এই বর্জ্যসমূহ নিরাপদে নিষ্কাশনের কোনো উপায় এখনও আবিষ্কার করা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্র এত দিন লাসভেগাস থেকে ১০০ মাইল দূরে পাহাড়ের গভীরে এই পারমাণবিক বর্জ্য পুঁতে রাখত। ২০১০ সালে পাহাড়ে পুঁতে রাখার কর্মসূচি পরিত্যক্ত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি ফান্ড রয়েছে, যার পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে আমরা এই পারমাণবিক বর্জ্য পুঁতে রাখব কোথায়? ঘণবসতিপূর্ণ এ দেশে এমন কোনো পরিত্যক্ত অঞ্চল নেই যেখানে আমরা পারমাণবিক বর্জ্য সরিয়ে রাখতে পারি। মাটির গভীরে পুঁতে রাখলে ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে যা আমাদের দেশে বিরাট বিপর্যয় নামিয়ে আনবে। ফলে পারমাণবিক বর্জ্য আমাদের ঘাড়ে এক বিরাট সমস্যা হিসাবে আবিভূত হবে।
এই বর্জ্য নিষ্কাশনের সমস্যা ছাড়া আরও সমস্যা আছে। পারমাণবিক চুল্লীকে ঠাণ্ডা রাখার জন্য তাকে ঘিরে ঠাণ্ডা পানির প্রবাহ চালানো হয় (জাপানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল ওই পানি দিয়ে ঠান্ডা করার প্রযুক্তি বা কুলিং সিস্টেম অচল হয়ে পড়ায়)। যদি কোনোভাবে ওই পানির পাইপে ছিদ্র বা ফাটল সৃষ্টি হয় তাহলে প্রতিদিন চুল্লীতে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ পানি তেজষ্ক্রিয়াযুক্ত হয়ে পড়বে। এর ফলে ওই পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত নদী বা সাগরের পানিও দূষিত করবে। জাপানের ফুকুশিমা ও আমেরিকার থ্রি মাইল আইল্যান্ডের ঘটনায় আমরা জানি তেজষ্ক্রিয়তাযুক্ত পানি এই মূল পানির প্রবাহের সাথে মিশে আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকার, এমনকি প্রশান্ত মহাসাগরের ওপারের জনগণকেও বিরাট স্বাস্থ্যঝুঁকির মাঝে ফেলেছে। আমাদের এই নদীবহুল-পানিবহুল দেশে একটি ছোট ঘটনাই কি যথেষ্ট নয় সারাদেশের মানুষকে ক্যান্সারের ঝুঁকির মাঝে ঠেলে দিতে?
তাছাড়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে লোকদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র (গ্লাভস, পোষাক ইত্যাদি) পরিপূর্ণভাবে তেজষ্ক্রিয়ামুক্ত করার পদ্ধতি এখনও জানা নেই। ২০ জানুয়ারি ২০০০ নিউইয়র্ক টাইমস-এর এক রিপোর্টে জানা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে আজ পর্যন্ত সেখানে পারমাণবিক অস্ত্র কারখানায় কর্মরত ৫ লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। এসব পরিস্থিতি বোঝাতেই নিউজিল্যান্ডের নোবেল জয়ী বিজ্ঞানী জন পোর্টার বলেছিলেন, “মানুষ এখনও পরমাণু চুল্লীর সাথে বিশ্বাসে ঘর করবার মতো বড় হয়ে ওঠেনি।”
এসব বিপদের দিক কোনো কিছুকেই বিবেচনায় না নিয়ে সরকারের তরফ থেকে এখন যে কথাটি বলা হচ্ছে তাহল, রূপপুরে আনা হবে তৃতীয় প্রজন্মের রিঅ্যাক্টর, যা অত্যন্ত নিরাপদ। তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায় দ্বিতীয় প্রজন্মের তুলনায় এতে দুটি বৈশিষ্ট্য উন্নততর - এতে তেজষ্ক্রিয়া পানি বাইরে আসবে না এবং অধিক পুরু স্টীলের নিরাপত্তা বেষ্টনী। এর ফলে খরচও হবে প্রায় চার গুণ। কিন্তু প্রশ্ন হল, এতসব জানার পরও জার্মানি, ফ্রান্স ও আমেরিকার মতো প্রযুক্তিতে উন্নত দেশ কেন নতুন পারমাণবিক চুল্লির বিষয়ে অনাগ্রহী? ইতোমধ্যেই বিজ্ঞানীরা চতুর্থ প্রজন্মের প্রযুক্তির দিকে ধাবিত হচ্ছেন, এবং সেটা নিশ্চয়ই নিরাপত্তার কথা ভেবেই। যদি তৃতীয় প্রজন্মের প্লান্ট যথেষ্ট নিরাপদ হতো তাহলে এতো দ্রুত কি বিজ্ঞানীরা তা পরিবর্তনের কথা ভাবতেন? বলা দরকার যে অতি উন্নতমানের ইউরেনিয়াম ব্যবহার না করলে তৃতীয় প্রজন্মের প্লান্টের কর্মদক্ষতা ব্যাপক পরিমাণে হ্রাস পায় এটা প্রমাণিত। এর কি কোনো সমাধান আমাদের হাতে আছে? পণ্য বিক্রেতা সবসময়ই বিজ্ঞাপনে তার পণ্যের গুণাগুণ বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলে, এমনকি যা নেই তাও প্রচার করে। কিন্তু ক্রেতাও যখন বিক্রেতার ভাষায়, বিজ্ঞাপনের ভাষায় কথা বলে তখন সত্য-মিথ্যা যাচাই করা সত্যিই দুরূহ হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ একটি ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকা। কিন্তু সে ঝুঁকিকেও উড়িয়ে দিয়েছেন বিজ্ঞান ও তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকলেও রূপপুর পরমাণু বিদ্যুকেন্দ্র রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করার মতো করে তৈরি করা হবে। কিন্তু সমস্যাটা তো শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভূমিকম্প সহনক্ষমতার সাথে সম্পর্কিত নয়। বড় ধরনের ভূমিকম্পে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরে প্রচুর পরিমাণে পানির প্রয়োজন উৎপন্ন তাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য। সেই পানির যোগান তখন কীভাবে মেটনো হবে? আর শুধু চুল্লী নয়, ভূমিকম্পের ফলে পরমাণু বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বড় দুর্যোগের জন্য আমরা সাধ্যমতো প্রস্তুতি নেব, কিন্তু যে প্রযুক্তি দুর্যোগের ফলে, যে কোনো ধরনের দুর্ঘটনার ফলে বোমায় রূপান্তরিত হবার একাধিক নজির আছে, সেই প্রযুক্তি ঘরে তুলে আনার অর্থ কি?
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কি সস্তা?
এক সময় অনেকেই ভেবেছিল, পারমাণবিক শক্তির সাহায্যে স্বল্প খরচে অফুরন্ত শক্তি উৎপাদনের চাবিকাঠিটা মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনও সেদিন এ আবিষ্কারকে ‘প্রাগৈতিহাসিক মানুষের প্রথম আগুন আবিষ্কারের পর সবচেয়ে বড় বিপ্লব’ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। চল্লিশের দশক থেকেই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে পরপর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয়। পরে এ তালিকায় যুক্ত হয় কানাডা, চীন, ভারত, পাকিস্তানসহ আরও অনেক দেশের নাম। কিন্তু কিছুদিন পরেই এ উৎসাহে ভাটার টান লাগে। দেখা গেল, পারমাণবিক শক্তি সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে তা ব্যবহারের মাত্রাও কমতে থাকে। হিসেব করে দেখা যাচ্ছে, একই ক্ষমতার একটা তাপ-বিদুøৎকেন্দ্র স্থাপনে প্রয়োজনীয় পুঁজির চেয়ে একটা পারমাণবিক বিদ্যুকেন্দ্র স্থাপনে প্রয়োজনীয় পুঁজির পরিমাণ আড়াই থেকে তিন গুণ বেশি। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ খরচও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। আবার আয়ু শেষ হওয়ার পর তা নিরাপদে ভেঙে ফেলতে হলেও খরচ পড়ে নতুন চুল্লী বসানোর খরচের প্রায় দ্বিগুণ। অর্থাৎ খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি।
১৯৯৬ সালের এক হিসেব অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে ১ কিলোওয়াট-ঘণ্টা পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে যতটুকু অর্থ খরচ হয়েছে তা ওই একই পরিমাণ বিদ্যুৎ তেল থেকে উৎপাদন খরচের ৪৯%, প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে উৎপাদন খরচের ৫৭% এবং কয়লা থেকে উৎপাদন খরচের সমান। অর্থাৎ অংকের হিসেবে পারমাণবিক বিদ্যুৎ আর কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎএর খরচ সমান; তেল আর গ্যাস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের খরচ পারমাণবিক বিদ্যুতের চেয়ে একটু বেশি। কিন্তু অন্যান্য ফ্যাক্টর হিসেবে ধরলে পারমাণবিক বিদ্যুতের খরচ কয়লা তো অবশ্যই, অন্য যে কোনো উৎস থেকেও অনেক বেশি হবে। ফলে এইসব হিসেব-নিকেশ করে বলা যায়, পারমাণবিক বিদ্যুৎ নিরাপদতো নয়ই, সস্তাও নয়।
পরমাণুর রাজনীতি : লুণ্ঠিত গ্যাস-কয়লা
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস-কয়লা-পানি-বায়ু প্রভৃতি বিপুল প্রাকৃতিক উৎস আমাদের দেশে আছে। এসব নিরাপদ পথ থাকতেও অনিরাপদ এবং ভয়ঙ্কর পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের প্রয়োজন কেন? তাও আবার পরের কাছ থেকে ধার করে? এর পেছনে একদিকে আছে শাসকদলের বাহবা নেয়ার প্রচেষ্টা যে তারা দেশকে বিদ্যুৎ স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য উদগ্রীব। পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন তাদের কাছে নাকি প্রেস্টিজিয়াস ইস্যু! এর সাথে আছে সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের নানামুখী অপতৎপরতা এবং তাদের স্বার্থ যে সক্রিয় সেটা আমরা আগেই বলেছি। বিষয়টি একটু খোলাসা করে বলা যাক।
সেই ১৯৫৩ সালে চারটি পশ্চিমা কোম্পানি বেকটেল, মনসান্টো, ডাউ কেমিক্যাল এবং প্যাসিফিক গ্যাস ও ইলেকট্রিক একটা প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছিল, অদূর ভবিষ্যতে কেবলমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে কোনো পারমাণবিক চুল্লী বসানো কিছুতেই লাভজনক হবে না। তাহলে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পকে লাভজনক করা হবে কীভাবে? আমরা জানি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত প্লুটোনিয়াম পরমাণু পারমাণবিক বোমা তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রূপপুরের প্লুটোনিয়াম বর্জ্যেও কি একই উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে?
এছাড়া আমাদের গ্যাস এবং কয়লার মজুদ যদি আমরা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি তাহলে নিকট ভবিষ্যতে আমাদের কোনো জ্বালানি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ইতোমধ্যে আমাদের দেশের শাসকদের যোগসাজসে মার্কিনসহ সাম্রাজ্যবাদী কোম্পানিগুলো তেল-গ্যাস ক্ষেত্রসমূহ হস্তগত করছে। দেশের কয়লা সম্পদ নিয়েও নানামুখী চক্রান্ত চলছে। এর বিরম্নদ্ধে বাম-গণতান্ত্রিক দেশপ্রেমিক শক্তির নেতৃত্বে জনগণের প্রতিরোধও আছে। কিন্তু শাসকদের আগ্রহ দেশের সম্পদ দেশীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্যবহার করার দিকে নয়, তাদের আগ্রহ সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানির হাতে দেশের সম্পদ তুলে দেয়ার দিকেই। এর কারণও আমাদের জানা। এসব তৎপরতার আড়ালে আছে বিপুল পরিমাণ অর্থের লেনদেন, নানা সুযোগ-সুবিধা এবং ক্ষমতায় যাওয়া ও টিকে থাকার ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতা।
এটা সবার জানা পারমাণবিক বিদ্যুতের জন্য শুধু চুল্লী নয়, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত ইউরেনিয়াম এমনকি প্রকৌশলী-মিস্তিরি পর্যন্ত সবকিছুই আমাদের আমদানি করতে হবে। ফলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানো বাবদ মন্ত্রী-আমলাসহ দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তাদের পকেটে একটা মোটা অংকের কমিশন জমা হবে। এ কাজের কন্ট্রাক্টের সাথে যুক্ত থেকেও বুর্জোয়া বৃহৎ ব্যবসায়ীদের বেশ ভালই লাভ হবে। শোনা যাচ্ছে, বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিষয়ে রাশিয়াও আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বুর্জোয়া শাসকগোষ্ঠী শাঁখের করাতের মতো জনগণকে কাটছে। একবার দেশের গ্যাস-কয়লা সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে তুলে দিয়ে, আরেকবার বিদ্যুৎ-জ্বালানি সংকটের কথা বলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে।
আমরা বিজ্ঞানের অন্য যে-কোনো আবিষ্কারের মতো পরমাণু শক্তির ব্যবহারের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু এর জটিল প্রক্রিয়া সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান, দক্ষতা-অভিজ্ঞতা ও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা আয়ত্ত্ব করা ছাড়া ব্যবহারের যে ঝুঁকি রয়েছে তা এড়ানোর পক্ষে। সাথে সাথে পরমাণু শক্তির ব্যবহার নিয়ে বিশ্বরাজনীতিতে সাম্রাজ্যবাদী শিবিরের যে আধিপত্য বিস্তার করার চেষ্টা আছে তার কবল থেকে মুক্ত থাকার পক্ষে।
কিন্তু আশার কথা হল, সারা দুনিয়ার মতো আমাদের দেশেও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসানোর বিরুদ্ধে মনোভাব ক্রমশ জোরালো হয়ে উঠছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং উচ্চশিক্ষার সাথে যুক্ত বিজ্ঞানের শিক্ষক-ছাত্র, শিক্ষিত মহল, যারা পারমাণবিক বিষয়ের মতো জটিল বিষয়গুলো সম্পর্কে গভীরভাবে জানার সুযোগ পাচ্ছেন, তাঁদের দায়িত্বটা একটু বেশি। আমাদের প্রত্যাশা তাঁরা এই বিপদ সম্পর্কে সাধারণ জনগণকে সচেতন করবেন। রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংষ্কৃতিক সংগঠন, বিজ্ঞান সংগঠন এবং গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন দেশপ্রেমিক ব্যক্তিবর্গ সকলকেই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
আরো কিছু লিংক
Click This Link
Click This Link