somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিপাইবাঁধ নিয়ে বাদ-প্রতিবাদ ও ভারত রাষ্ট্রের চরিত্র বিচার -৩

২৯ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৯:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত পর্ব
Click This Link
টাটা-বিড়লা গোষ্ঠীর উত্থান
আজকের টাটা-বিড়লা-বাজাজ কোম্পানির উত্থান ঘটে মূলত ১৯ শতকের শেষ দিক থেকে। এ সময় টাটা সুদে টাকা খাটাত। পরে টাটা পরিবার চীনের সাথে আফিমের ব্যবসায় নামে। আর বিড়লা নজর দেয় বস্ত্রশিল্পের দিকে। গড়ে তোলো 'এমপ্রেস কটন মিল' (৪০-এর দশকে এসে সেটার নাম পাল্টে রাখে 'স্বরাজ কটন মিল')। আর তাদের উত্থানের সাথে ভারতের জাতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসও একভাবে যুক্ত, কারণ তারা ভারতবাসীর মনে জাগ্রত জাতীয়তাবোধের সুযোগ নিয়েছে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে ছিল মাড়োয়ারী-গুজরাটি ব্যবসায়ীরা।
এ সময়ের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল ১৯০৫-এর বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা ও তার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন। এ আন্দোলন প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ উভয়ভাবেই ভারতীয় পুঁজিপতিদের বিকাশে ভূমিকা রেখেছে। বঙ্গভঙ্গ-রদ আন্দোলনে বিলাতী পণ্য বয়কট, চরকা-খাদি আন্দোলন ইত্যাদি কর্মসূচি ছিল। এ আন্দোলন সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ 'বঙ্গদর্শন' (নবপর্যায়) পত্রিকায় এক প্রবন্ধে লিখেছেন, স্বদেশী আন্দোলনের ফলে আসলে 'গুজরাটি মিল মালিকদের ভাণ্ডার উপচাইয়া পড়িতেছে'।
তৎকালীন কংগ্রেস নেতা পট্টভী সীতারামাইয়া মূল্যায়ণ হল -- "বিদেশী বস্ত্র বর্জন করে স্বদেশী বস্ত্র ব্যবহারের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশীয় শিল্পপতিদের যে সাহায্য দেওয়া হয়েছে তা সরকারি ক্ষমতা দিয়েও করা যেত না।"
টাটা যখন ইস্পাত কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে নামে তখন বাজার থেকে পুঁজি সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেয়। স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী দেশবাসীর প্রতি আবেদন জানালেন টাটার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য। কারণ তাঁর মতে, সেটাই হবে ‘patriatic duty of all Indians’।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ওপর এই হিন্দু ব্যবসায়ী-শিল্পপতি-পুঁজিপতিদেরই ছিল নিরঙ্কুশ প্রভাব। অনেকই হয়ত জানেন যে গান্ধী থাকতেন বিড়লা হাউজে। বিড়লা পরিবার এবং ঘনশ্যামদাস বিড়লা ছিলেন গান্ধীর তথা কংগ্রেসের বড় ডোনার বা দাতা। বাজাজ গ্রুপের স্থপতি যমুনালাল বাজাজও ছিলেন গান্ধীর ঘণিষ্ঠ। একইভাবে কংগ্রেস নেতা পট্টভী সিতারামাইয়া ছিলেন এলাহাবাদ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। গান্ধীর ওপর তার প্রভাব সম্পর্কে শুধু এ তথ্যটুকুই যথেষ্ট যে ১৯৩৯ সালে ত্রিপুরী কংগ্রেসে বাংলা, পাঞ্জাব প্রভৃতি অঞ্চলের বিপ্লবীদের সমর্থনপুষ্ট হয়ে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু গান্ধী মনোনীত প্রার্থী সীতারামাইয়াকে পরাজিত করে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ঘটনা গান্ধী এবং কংগ্রেসের দাতা শিল্পপতি-পুঁজিপতিদের হতচকিত করে দেয় এবং তাদের চক্রান্তে শেষ পর্যন্ত সুভাষ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।
এখানে বলে রাখা দরকার যে কংগ্রসের অভ্যন্তরে দুটি ধারা যুগপৎ অবস্থান করছিল। প্রথমটি ব্রিটিশের সাথে সহযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ করত যার তাত্ত্বিক পরিচয় হল গান্ধীর 'অসহযোগ-অহিংস' আন্দোলন। অপর অংশটি হল বিপ্লববাদী ধারা, যারা সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ভারতকে স্বাধীন করার মনোভাব পোষণ করতেন -- যাদের নেতা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন চিত্তরঞ্জন দাস, সুভাষ বসু প্রমুখ। আসলে এ দু অংশের পেছনে ছিল ভারতীয় পুঁজির দুই অংশ। উপরের অংশ -- যারা ব্রিটিশ শিল্পপুঁজির সাথে গাঁটছড়া বাঁধা ছিল, আর নিচের অংশ যারা ব্রিটিশ পুঁজির সাথে কোনো রকম সম্পর্কে যুক্ত ছিল না, বরং অনেকটা স্বাধীনভাবে ব্যবসায়-বাণিজ্য করত। এদের চিহ্নিত করা হয় comprador এবং nationalist হিসাবে। ১৯৩০-এর আগ পর্যন্ত এ দু' অংশের বিরোধ ছিল, এর পর তারা একীভূত হতে শুরু করে। এ বিষয়ে আমরা পরে আসছি।
উপনিবেশ আমলে দুই ধরনের পুঁজির মিলনের ফলে শিল্পপুঁজির আবির্ভাব ঘটেছিল। (১) বাণিজ্য পুঁজি বা বণিকী পুঁজি এবং (২) সুদী পুঁজি -- যা জমি বা সম্পদ বন্ধকীর ভিত্তিতে দাদন ব্যবসায় চালাত এবং সুদের বিনিময়ে ঋণ দিত। এ উভয় ধরনের পুঁজির মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিরোধ ছিল, আবার মিলনের প্রক্রিয়াও ছিল। এবং এদের মিলনের মধ্য দিয়ে ভারতের বুকে শিল্পপুঁজির আবির্ভাব ঘটে। একই সাথে চলতে চলতে ব্যাংক পুঁজিরও অভ্যুদ্দয় দেখা দেয়। পাঞ্চাব ন্যাশনাল ব্যাংক স্থাপিত হয় ১৮৯৫ সালে, ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ১৯০৬ সালে (এর স্থপতি টাটা গ্রুপ), ইন্ডিয়ান ব্যাংক ১৯০৭ সালে, সেন্ট্রাল ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া ১৯১১ সালে এবং ব্যাংক অব মাইশোর (মহিশুর) গড়ে উঠে ১৯১৩ সালে। (তথ্যসূত্র P. A. Wadia & G. W. Joshi – Money and Money Market in India) অল্প কিছুদিনের মধ্যে বিড়লা গোষ্ঠীও তাদের নিজেদের ব্যাংক নিয়ে বাজারে হাজির হল, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। সীতারামাইয়ার এবং এলাহাবাদ ব্যাংকের কথা আমরা বলেছি।
এই যে শিল্পপুঁজির আবির্ভাবের পাশাপাশি ব্যাংক পুঁজিরও আবির্ভাব ঘটল, এটা দুনিয়ার উপনিবেশের ইতিহাসে একটা অভাবনীয় ঘটনা। আর কোনো উপনিবেশে এরকম ঘটেনি।
পরের পর্ব
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০০৯ সকাল ৮:৪৮
২৭টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×