পৃথিবী এবং অন্তহীন রহস্যে ঘেরা মহাশুণ্য, পর্ব-১
বিশ্ব জগতসমূহের আশ্চর্য্য সৃষ্টি কৌশলে মহান স্রষ্টার রয়েছে অসীম এবং নিখুত কারুকার্যতার পরিষ্কার ছাপ। আমরা পৃথিবীতে বসবাস করি। পৃথিবীতে আমাদের জন্ম, এখানে বেড়ে ওঠা, পৃথিবীকে কেন্দ্র করে আমাদের জীবন। একসময় পৃথিবীকেই মনে হতো বিশাল থেকে সুবিশাল সৃষ্টি। কিন্তু পৃথিবী এখন আর অজেয় নেই। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত, উত্তর মেরু-দক্ষিন মেরু থেকে শুরু করে পূর্ব-পশ্চিম সবই জয় করার পরে পৃথিবী এখন বলতে গেলে আমাদের হাতের মুঠোয়। পৃথিবীর পরতে পরতে পড়ে গেছে আমাদের পায়ের ছাপ। হিমালয়ের চূড়ায় পড়েছে আমাদের পদচিহ্ন। এন্টার্কটিকার বরফের কঠিন আস্তরণে আমরা এঁকে দিয়েছি বিজয়ের প্রতিচ্ছবি। দিন যত যাচ্ছে, পৃথিবীর সীমানা পেরিয়ে আমাদের মনযোগ এখন দূর-সুদূরে, আরও দূরে, বহু দূরে। মহাশুণ্যে ভাসমান আমাদের নিজস্ব পৃথিবীর নিকট কিংবা দূর প্রতিবেশী অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র-মিল্কিওয়ে-গ্যালাক্সি-ব্লাক হোল নিয়ে এখন আমাদের ভাবনা। পৃথিবী এবং পৃথিবীর বাইরে মহান রব্বুল আলামিনের সুবিশাল সৃষ্টি নিয়ে মানুষের এই যে জানার আগ্রহ- অজানাকে, অচেনাকে জয় করার প্রত্যয় এবং প্রচেষ্টা এটা বহু পুরনো। কিছু আমরা জানতে পেরেছি, কিছু পারিনি। কিছু অমিমাংসিত রহস্য রয়েছে যার কুলকিনারা আজ অবদি করতে পারেনি মানুষ। তবে থেমে নেই গবেষনা। মানুষ ছুটে চলছে রহস্যের সন্ধানে। রহস্যে ঘেরা মহাবিশ্বের কতটুকু জেনে নেয়া যায় সেই প্রচেষ্টায়। এ প্রচেষ্টা চলতে থাকবে হয়তো পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। আল্লাহ তাআ'লার অসীম সৃষ্টির রহস্য উদঘাটনে মানুষের আপ্রান এই চেষ্টা দেখে সত্যি ভালো লাগে। যারা এসব গবেষনায় নিরন্তর রত, তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জেগে ওঠে। হোন না তারা অন্য ধর্মের বা বর্ণের। সবচেয়ে বড় আশার কথা, গবেষনায় যুক্ত অধিকাংশ বিজ্ঞ এবং জ্ঞানী ব্যক্তিরা তাদের গবেষনার ভেতরেই লাভ করেন মহান স্রষ্টার পরিচয়! আর অনেকেই ফিরে আসতেও সক্ষম হন তাওহিদের অনন্ত আলোর পথে। জীবন তাদের পাল্টে যায়। আল্লাহ তাআ'লার শুকরিয়া। তিনি সকলকে সত্যের পথে ফিরে আসার তাওফিক দান করুন। স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা তাঁর অসীম সৃষ্টি নিয়ে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেন-
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاخْتِلاَفِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لآيَاتٍ لِّأُوْلِي الألْبَابِ
নিশ্চয় আসমান ও যমীন সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ সম্পন্ন লোকদের জন্যে।
الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىَ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ رَبَّنَا مَا خَلَقْتَ هَذا بَاطِلاً سُبْحَانَكَ فَقِنَا عَذَابَ النَّارِ
যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষযে, (তারা বলে) পরওয়ারদেগার! এসব আপনি অনর্থক সৃষ্টি করেননি। সকল পবিত্রতা আপনারই, আমাদিগকে আপনি দোযখের শাস্তি থেকে বাঁচান। -সূরা আলে ইমরান, আয়াত, ১৯০-১৯১
দৃষ্টি যদিও আজ আমাদের মহাশুণ্যের অন্তহীন জগতের প্রতি, তবু স্বীকার করতে সংকোচ নেই, এই পৃথিবীর কতটুকুই বা জানি আমরা! পৃথিবীকে আমরা জয় করেছি ঠিকই, কিন্তু পৃথিবীর কতকিছুই তো এখনও এমনই রয়ে গেছে যা আমাদের জানার বাইরে। আমরা পৃথিবীর আভ্যন্তরিণ অবস্থাদি এবং পৃথিবীর বাইরের অন্তহীন মহাশুণ্য নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কয়েকটি পর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপস্থাপনের প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ। আজ পৃথিবীর মাটি এবং পানির নিচের কিছু রহস্য নিয়ে আলোকপাত করার প্রত্যাশা। তাওফিকদাতা কেবলমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা। তাঁর নিকটেই সাহায্য প্রার্থনা করছি।
পৃথিবী পৃষ্ঠ এবং এর অভ্যন্তরভাগঃ
আপাত দৃষ্টিতে আমরা দেখি, মাটি কিংবা পাথর দ্বারা আচ্ছাদিত পৃথিবী পৃষ্ঠ। কোথাও নরম মাটি তো কোথাও আবার কঠিন শিলা। কোথাও শক্ত মাটি, কোথাও আবার পাহাড়-পর্বতে ঘেরা কঠিন পাথুরে মাটির আবরণ। কিন্তু এই ভূ-পৃষ্ঠের এই আস্তরণের গভীরে মাটির নিচে কি আছে?
মাটির নিচে ভূ-পৃষ্ঠের গভীরে রয়েছে কয়েকটি স্তর। প্রথমতঃ ভূ-পৃষ্ঠ হতে শুরু করে প্রায় ৪০ কিলোমিটার গভীর পর্যন্ত সাধারণ মাটি, শিলা ও খনিজ পদার্থের স্তর। আমরা দৈনন্দিন জীবনে যে পানি ব্যবহার করে থাকি, আমাদের জীবন রক্ষাকারী পানি সংরক্ষিত থাকে এই স্তরটিতেই।
দ্বিতীয়তঃ এর পরের স্তরে রয়েছে প্রায় ৭৫০ কিলোমিটার গভীরতা বিশিষ্ট একটি আবরণ, যার প্রায় পুরোটাই গলিত শিলা। এই গলিত শিলাগুলো ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়, ফলে উপরের শিলা-মাটির স্তর আলাদা হয়ে কয়েকটি ব্লকে ভাগ হয়ে যায়, যা কি না প্লেট নামে পরিচিত। এইসব প্লেট নড়াচড়ার ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয় বলে বিজ্ঞানীদের অভিমত। পাহাড় কিংবা সী-ফ্লোর সৃষ্টির পিছনেও এসব প্লেটের ভূমিকা রয়েছে বলে ধারণা ভূ বিজ্ঞানীদের।
তৃতীয়তঃ যে স্তরটি তার পুরুত্ব প্রায় ২,৩০০ কিলোমিটার, যাকে পৃথিবীর উপকেন্দ্র বলা হয়। এই অঞ্চলের তাপমাত্রা কিন্তু অস্বাভাবিকভাবে বেশি, অর্থাৎ ৪০০০-৫০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
চতুর্থতঃ এর নিচেই রয়েছে পৃথিবীর কেন্দ্র, যার ব্যাস ২,৪০০ কিলোমিটার এবং তাপমাত্রা পূর্বের উপকেন্দ্র থেকে আরও বেশি, অর্থাৎ, ৫০০০-৭০০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
ধারণা করা হয়, পৃথিবী তৈরি হতে ১০-১০০ মিলিয়ন বছর সময় লেগেছে এবং ধীরে ধীরে এটি একটি সুস্থির আকার ধারণ করেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আজকের দিনে আপনি পৃথিবীপৃষ্ঠে যত বড় স্থাপনা বা যা কিছুই তৈরি করেন না কেন, তাতে কিন্তু পৃথিবীর ভর একটুও বাড়ছে না। এর কারণ হচ্ছে, আপনি যা কিছুই এখানে তৈরি করেন সেসব তৈরির উপাদানগুলো কিন্তু এই পৃথিবী থেকেই আসছে, আউটার-স্পেস, অর্থাৎ পৃথিবীর বাইরে থেকে নয়। ফলে স্থাপনার চাপে মাটি নিচের দিকে দেবে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
কতটুকুই বা জানি আমরা!
তবে ভূ-অভ্যন্তরের প্লেটসমূহের গঠন এবং স্থিতিশীলতার উপর ভিত্তি করে একেক অঞ্চলে চাপ সহনীয় মাত্রা একেকরকম। আর এ কারণেই ভূ-প্রকৃতির বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের নতুন স্থাপনা গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। উপরোল্লেখিত তথ্যগুলো মূলতঃ বিজ্ঞানীদের অনুমান নির্ভর। কারণ, এ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মাটির নিচে মাত্র ১২.২২৬ মিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। বাদ বাকি গবেষনা এখনও চলমান। এখান থেকেই আমরা অনুমান করতে পারি যে, আমাদের জানার পরিধিটি কত ছোট। মহাকাশ, মহাশুণ্য জয়ের নেশায় ছুটে বেড়ালেও আমাদের পায়ের নিচের মাটির নিচের প্রায় অনেককিছুই আমাদের নিকট এখনও কিন্তু অজানা রহস্য হয়েই রয়ে গেছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা এ কারণেই হয়তো 'রূহ' -এর আলোচনায় আমাদের সীমিত জ্ঞানের বিষয়টি কুরআনে হাকিমে জানিয়ে দিয়েছেন-
وَمَا أُوتِيتُم مِّن الْعِلْمِ إِلاَّ قَلِيلاً
আর তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে।
মাটির নিচের রহস্য অনুসন্ধানে গর্ত খননঃ
পৃথিবীর অভ্যন্তর ভাগ এবং মহাশুন্যের অজানা রহস্য নিয়ে গবেষনা বহু পুরনো হলেও বিগত শতকের শেষার্ধে অর্থাৎ, ১৯৭০ সাল থেকে বিজ্ঞানীরা তৎপর হয়ে ওঠে এ বিষয়ে। আমেরিকা, রাশিয়া, এবং জার্মানির বিজ্ঞানীরা গর্ত খুড়ে মাটির নিচের রহস্য জানতে সচেষ্ট হয়। ১৯৮৭ সালে জার্মান কেটিবি 'বোর হোল' নামক একটি বিশালাকারের গর্ত খনন করে, যা ছিল প্রায় ৯১০১ মিটার গভীর। তবে রাশিয়া ছাড়িয়ে যায় জার্মানিকে। তারা বিশ্বের সব থেকে গভীর গর্ত 'কোলা সুপার ডিপ' খনন করে, যার গভীরতা ১২,২২৬ মিটার। কিন্তু ১২ হাজার ২০০ মিটার গভীরে যাওয়ার পরেই বাধে বিপত্তি। গর্তের ভিতরকার তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে ১৮০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডে পৌঁছে যায়। পরবর্তীতে তারা পরীক্ষা করে দেখতে পায়, আর ১০০ মিটার নিচে গেলে তাপমাত্রা বেড়ে ৩৮০ ডিগ্রী অতিক্রম করতে পারে এবং সে তাপমাত্রায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে যেতে পারে বা গলে যেতে পারে মনে করে তারা গর্ত খনন করা বন্ধ করে দেয়। তারা তখন বিশ্ববাসীকে জানায় যে, অধিক তাপমাত্রার কারণে এরপরে আর গভীরে যাওয়া সম্ভব নয় বিধায় প্রকল্পটি রাশিয়া বন্ধ করে দিবে। কিন্তু গোপন সূত্রে জানা যায়, প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, তাপমাত্রা বাড়ার পর বিজ্ঞানীরা গর্তের মধ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির একটি ডিভাইস প্রেরন করেছিল যার মাধ্যমে তারা ভয়ঙ্কর কিছু শব্দ রেকর্ড করে যা শুনে মনে হচ্ছিল, লক্ষ লক্ষ মানুষের আর্তচিৎকার এবং চিৎকারের মাঝে কেহ কেহ ধমক দিচ্ছে। এই শব্দ শুনে বিজ্ঞানীরা রীতিমত ঘাবড়ে যায় এবং এটাকে দোযখের অস্তিত্ব বলে ধারণা করেন। বড় ধরনের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে ১৯৯৪ সালে গর্তটিকে বন্ধ করে চিরতরে সিলগালা করে দেয়া হয় এবং সকল পর্যটকদের জন্য স্থানটিতে গমন স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ করে দেয়। আজ অবদি সেই ১২ হাজার ২২৬ মিটারের নিচে কি আছে তার প্রকৃত সন্ধান বিজ্ঞানীরা খুঁজে পায়নি এবং এর ফলে এটি মানব জাতির নিকট একটি অজানা রহস্য হিসাবেই আজও রয়ে গেছে।
পানির আধার সাগর-মহাসাগরে কত অজানাঃ
পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগ পানি, একথা আমরা সকলেই জানি। ভূপৃষ্ঠের ৭০.৯% অংশজুড়ে পানির অস্তিত্ব রয়েছে এবং পৃথিবীর প্রায় সমস্ত জীবের জীবনধারণের জন্যই পানি একটি অত্যাবশ্যক পদার্থ। পৃথিবীতে প্রাপ্ত পানির ৯৬.৫% পাওয়া যায় মহাসাগরে, ১.৭% ভূগর্ভে, ১.৭% হিমশৈল ও তুষার হিসেবে, একটি ক্ষুদ্র অংশ অন্যান্য বড় জলাশয়ে এবং ০.০০১% বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত মেঘ, জলীয় বাষ্প হিসেবে ও বৃষ্টিপাত, তুষারপাত, ইত্যাদিরূপে। পৃথিবীর পানির মাত্র ২.৫% হল বিশুদ্ধ পানি এবং বাকি ৯৮.৮% হল ভূগর্ভস্থ পানি ও বরফ। বিশুদ্ধ পানির ০.৩%-এরও কম অংশ পাওয়া যায় নদীতে, হ্রদে ও বায়ুমণ্ডলে এবং তার চেয়েও ন্যূনতর অংশ পাওয়া যায় বিভিন্ন জীবের শরীর ও উৎপাদিত পণ্যে। পৃথিবীতে পানি প্রতিনিয়তই বাষ্পীভবন, ঘনীভবন, বাষ্পত্যাগ, ইত্যাদি বিশিষ্ট পানিচক্র মাধ্যমে ঘূর্ণমান। বাষ্পীভবন ও বাষ্পত্যাগের কারণেই পৃথিবীতে বৃষ্টিপাত, তুষারপাত ইত্যাদি ঘটে।
মানব জাতিসহ অন্যান্য প্রাণীর জীবনধারণের জন্য সুপেয় পানি অপরিহার্য। গত কয়েক দশকে পৃথিবীর প্রায় সকল প্রান্তেই সুপেয় পানির চাহিদা এবং সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু তবুও প্রায় একশ কোটি মানুষ নিরাপদ পানি ও প্রায় আড়াইশ কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত শৌচাগার থেকে এখনও বঞ্চিত। নিরাপদ পানির ব্যবহারের সাথে মাথাপিছু মোট দেশজ উৎপাদনের সুস্পষ্ট পারস্পরিক সম্পর্ক রয়েছে। কয়েকজন পর্যবেক্ষক অনুমান করেছেন যে ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যার অর্ধেকাংশেরও বেশি পানি সংক্রান্ত সঙ্কটের সম্মুখীন হবে। নভেম্বর, ২০০৯-এ প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুসারে ২০৩০ সালের মধ্যে কয়েকটি উন্নয়নশীল অঞ্চলে যোগানের তুলনায় পানির চাহিদা ৫০% ছাড়িয়ে যাবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ পানি বহু রাসায়নিক পদার্থের দ্রাবক হিসেবে কাজ করে এবং বিভিন্ন শিল্পে শীতলীকরণ এবং পরিবহনের কাজে সহায়তা করে। মানুষের ব্যবহৃত বিশুদ্ধ পানির প্রায় ৭০% ব্যবহৃত হয় কৃষিকার্যে।
মহাসাগরে সবচেয়ে গভীর স্থানঃ
আমরা জানি পৃথিবীর সব থেকে উচ্চতম স্থান মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া, যার উচ্চতা ৮,৮৪৭.৭৩ মিটার এবং মহাসাগরের সব থেকে গভীরতম স্থানের নাম মারিয়ানা ট্রেঞ্চ, যার গভীরতা ১১,০৩৪ মিটার। প্রশান্ত মহাসগরের পশ্চিমাংশে অবস্থিত মারিয়ানা দ্বিপপুঞ্জের নামে এখানকার নামকরণ করা হয়েছে। মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের ঠিক পূর্বদিকে এর অবস্থান। দৈর্ঘ্যে ২৫৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ৬৯ কিলোমিটার মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরতম স্থানের নাম চ্যালেঞ্জার ডিপ। বিজ্ঞানীদের ধারনা, এখানকার গভীরতা ১১ কিলোমিটার, কিন্তু এর সঠিক পরিমাপ এখনও অজানা। এখানকার পানির চাপ স্বাভাবিকের থেকে ১ হাজার গুন বেশি যা প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১৫৭০০ পাউন্ড এবং পানির ঘনত্ব স্বাভাবিকের থেকে ৫ শতাংশ বেশি। এখানে কোনদিন সূর্যের আলো পৌঁছায় না।
মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে পৌঁছালেন তারাঃ
নিকষকালো অন্ধকারাচ্ছন্ন গভীরতম এই স্থানের পানির তাপমাত্রা ১ থেকে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করে। উল্লেখ্য যে, এভারেস্টের চূড়ায় আরোহন করা মানুষের সাধ্যের মধ্যে হলেও মারিয়ানা ট্রেঞ্চের গভীরে পৌঁছানোর প্রত্যাশা মৃত্যুকে আলিঙ্গনের সামিল। ১৯৬০ সালের জানুয়ারী মাসে সুইস মহাসাগর প্রকৌশলী জ্যাক পিকার ও মার্কিন নৌবাহিনীর লিও ট্রালেন্ট ডোনাল্ড ওয়ালস্ ফরাসী নির্মিত ব্যাটিস্কাপ তিয়াস্তে করে চ্যালেঞ্জার ডিপে অবতরণ করেন এবং ১০ হাজার ৯১৫ মিটার গভীরে ২০ মিনিট অবস্থান করেন। এটাই মানুষের পক্ষে সমুদ্রের গভীরে যাওয়ার সব থেকে বড় রেকর্ড। ২০ মিনিট সমুদ্রের গভীরে অবস্থানকালে তারা যেসব প্রাণীর সন্ধান পেয়েছেন তা পৃথিবীর বিজ্ঞানীদের নিকট তা ছিল সম্পূর্ণ নতুন। তাদের এই আবিষ্কার বিজ্ঞানীদেরকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে যে, সমুদ্র সম্পর্কে আসলে তারা কতটুকু জানতে পেরেছে। সমুদ্রের গভীরে পানির চাপ এতটাই বেশি যে লৌহখন্ড যেখানে বাঁকা হয়ে যায় সেখানে মেগ্যালোডনের মত বৃহৎ প্রাণীরা কিভাবে বেঁচে থাকে এই রহস্যের কোন কিনারা আজও হয়নি। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লার অসীম কুদরত দেখে বিস্ময়ে হতবাক হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
বিস্ময়ের আরেক নাম বারমুডা ট্রায়াঙ্গলঃ
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল বিজ্ঞানীদের নিকট আজও একটি অমীমাংসিত রহস্য। ৪ লক্ষ ৪০ হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত দক্ষিন আটলান্টিক মহাসাগরের এই স্থানটিকে শয়তানের ত্রিভুজ বলেও ডাকা হয়। ভুলেও কোন জাহাজ বা বিমান এই ট্রায়াঙ্গলে ঢুকে পড়লে মুহূর্তেই তা চিরতরে হারিয়ে যায় বলে জনশ্রুতি রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন অভিমত উপস্থাপন করলেও আজ অবদি এর আসল রহস্য সকলের নিকটই অজানা। কারও কারও মতে এটি ভিনগ্রহে প্রবেশের পথ এবং এটা এলিয়েন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যেখান দিয়ে ভিনগ্রহীরা প্রবেশ করে বলে কথিত। বিজ্ঞানীদের সকল হিসেবের বাইরে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের রহস্যময় সৃষ্টি এই বারমুডা ট্রায়াঙ্গল আজও মানুষের নিকট একটি অমিমাংসিত রহস্য।
ড্রাগন ট্রায়াঙ্গল; মহাসাগরের আরেক বিস্ময়ঃ
রহস্যে ভরপুর মহাসাগরের রহস্যের শেষ নেই। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের মতই আরেকটি ভয়ঙ্কর অঞ্চলের নাম ড্রাগন ট্রায়াঙ্গল। ধারণা করা হয়, মহাসাগরে ১২ টি ভয়ঙ্কর স্থান রয়েছে যার মধ্যে ড্রাগন ট্রায়াঙ্গল অন্যতম। ডেভিল সি বা শয়তানের সাগরের মধ্যে অবস্থিত এই ড্রাগন ট্রায়াঙ্গল, যাকে প্রশান্ত মহাসাগরের আতঙ্কও বলা হয়। এই সীমানার মধ্যে প্রবেশ করা মাত্রই বিশাল জাহাজ ও বিমান মুহূর্তেই অজানা গন্তব্যে চলে যায়, যার অস্তিত্বও কোনদিন খুঁজে পাওয়া যায় না বলে জনশ্রুতি বেশ প্রসিদ্ধ। মহান রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টি এই রহস্যময় স্থানটি যুগ যুগ ধরে বিজ্ঞানীদের নিকট একটি অমিমাংসিত রহস্য। এককথায় বলা যায়, বিজ্ঞানীদের অবদান মানব জীবনে অনেক কিন্তু আজ অবদি তারা মহান আল্লাহর সৃষ্টি রহস্যের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশও উদঘাটন করতে সক্ষম হয়নি। মহান রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে তাঁর সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে আরও বেশি বেশি জানার মাধ্যমে তাঁকে চেনার এবং জানার তাওফিক দিন। আর তাঁর হুকুম মেনে চলার মাধ্যমে তাঁর প্রিয়পাত্র হওয়ার কিসমত নসিব করুন।
তথ্য সূত্রঃ উইকিপিডিয়া, অনলাইন সংবাদ মাধ্যম এবং অন্যান্য জার্নাল।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:২৩