প্রতিবাদকারীরা দ্য হেগের পিস প্যালেসের সামনে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের সমর্থনে একটি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে। 10 ডিসেম্বর, 2019 এএফপি
বাঙালি মেয়েরা না কি নোংরা, তাদের না কি মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর কেউ ছোঁবেও না!!!!!!!!!!!!
নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি করেছে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। রোহিঙ্গাদের শান্তির সন্ধানে করা এ মামলায় গতকাল মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ বাংলাদেশ সময় বেলা তিনটায় বিচারের শুনানি শুরু হয় দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে। আইসিজে (International Court of Justice) বা, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত এই মামলায় শুনানি শুরু করেছে। মামলার আরজিতে মিয়ানমারে গণহত্যা বন্ধে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালিয়ে মিয়ানমার বৈশ্বিক সনদ লঙ্ঘন করেছে কি না, তার বিচারই আইসিজে (International Court of Justice) বা, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের এই শুনানির উদ্দেশ্য। অবশ্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এর আগে উত্থাপিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (The International Criminal Court) এ এখনো তদন্তাধীন। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতও (The International Criminal Court) দ্য হেগ শহরেই অবস্থিত।
গুরুত্বপূর্ণ এই মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ আদালতে অভিযোগ উত্থাপনকারী দেশ গাম্বিয়া প্রথম তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছে। আজ বুধবার ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ মিয়ানমার তার অবস্থান তুলে ধরার কথা। এরপর আগামীকাল বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ সকালে গাম্বিয়া এবং একই দিন বিকেলে মিয়ানমার প্রতিপক্ষের যুক্তি খণ্ডন ও চূড়ান্ত বক্তব্য পেশ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। জানা গেছে, আইসিজে (International Court of Justice) বা, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের নিয়মানুসারে এই ধরণের মামলার রায় পেতে স্বল্পতম আট সপ্তাহ থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত লাগতে পারে।
গতকালকের শুনানিতে অংশ নেয়া আইনজীবীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের তাফাদজ পাসিপান্দো একজন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণের কথা অস্বীকার করতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি বলেছেন, সেনাবাহিনী এবং বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর কেউ নোংরা বাঙালি মেয়েকে ছোঁবে না। ওরা আকর্ষণীয় নয়। শুধু তাই নয়, এই আইনজীবী আরও বলেন, ফেসবুকে ‘ফেক রেপ’ নামে যে পেজ খোলা হয়েছে, সেটির নিয়ন্ত্রণও হচ্ছে স্টেট কাউন্সিলরের দপ্তর থেকে।
অং সান সু চি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর, স্টেট কাউন্সিলর মানে, তিনি সেদেশের রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রধান নির্বাহী এবং দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি একজন নারী। একজন নারী হয়ে নারীর প্রতি এই যে কটাক্ষ, এই যে ঘৃণা, এই যে রেসিজম এর কোনো নজীর কি সভ্য পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি পাওয়া যায়?
১০/১২ লাখের এক বিশাল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী- যারা মিয়ানমারের বৈধ নাগরিক, তাদের অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে, ঠান্ডা মাথায় নির্মম নির্যাতনের মাথায় বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য একটি ভয়ঙ্কর দুর্যোগ। আর সে কারণে বাংলাদেশরই প্রথমে উচিত ছিল আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করা। অং সান সু চি এবং তার সাঙ্গপাঙ্গ মানবতাবিরোধী অপরাধীগোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক আদালতে তোলার কাজটি ছিল নিতান্তই আমাদের। কিন্তু নানান কারণে আমরা তা করতে পারিনি। সেই পরিমান সাহস, শক্তি এবং অভিজ্ঞতা হয়তো এখনও আমরা অর্জন করে উঠতে পারিনি। তবু অন্তত: ভালো লাগছে এই ভেবে যে, শেষপর্যন্ত অপরাধী অং সান সু চিগং আজ আদালতের কাঠগড়ায়।
আমাদের হয়ে সুদূরের দেশ গাম্বিয়া মামলা করেছে। রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে বিচারে গাম্বিয়াকে সব ধরনের সহযোগিতা আর সমর্থন দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে কানাডা ও নেদারল্যান্ডস। গাম্বিয়ার এই অনবদ্য অবদান ইতিহাসের পাতায় চির স্মরণীয় হয়ে থেকে যাবে। নিকট প্রতিবেশী দেশ না হয়েও নিছক মানবতার দায়কে নিজের কাঁধে নিয়ে যাদের এই প্রচেষ্টা, এই উদ্যোগ- তাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম। ধন্যবাদ, কানাডা ও নেদারল্যান্ডস দেশ দু'টিকেও।
ভাবতে অবাক লাগে, এই অং সান সু চিকেই না কি নোবেল দেয়া হয়েছিল। এইরকম জ্বলজ্যান্ত একজন রেসিস্ট, যার আগাগোড়া রেসিজমে পরিপূর্ণ, মানুষের প্রতি যার উদগ্র ঘৃণা আর হিংসায় যিনি জ্বলে পুড়ে মরেন নিজের ভেতরে, তিনি কি করে নোবেল পেতে পারেন?
অং সান সু চি আদালতে! তিনি মানবতাবিরোধী ধর্ষক, নির্যাতনকারীদের পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য আদালতে দাঁড়িয়েছেন! গণহত্যা, ধর্ষণের সাফাই গাইছেন!! ধন্য ধন্য ধন্য অং সান সু চি!!! স্বার্থক তার জন্ম!!!! ধন্য তার মানবজনম!!!!!
সর্বজনীন এখতিয়ার নীতির আলোকে নেদারল্যান্ডসের আইসিজে (International Court of Justice) তে কোনো দেশ বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়ে থাকলে তাকে গ্রেপ্তার করার নজির রয়েছে। সু চি এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে চলমান মানবতাবিরোধী এই মামলাটি সর্বজনীন এখতিয়ার নীতির আলোকে হয়েছে বলে শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এই নীতির আলোকে মামলায় নেদারল্যান্ডসে গত সেপ্টেম্বরে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে একজন সিরীয় বিদ্রোহী নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। আর্জেন্টিনায় সু চি এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের বিরুদ্ধে একই ধরনের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ইতোপূর্বেই জারি হয়েছে। আমরা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জাতিগতভাবে নির্মূলের উদ্দেশ্যে নির্যাতনকারী মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং তাদের দোসর বৌদ্ধ মানবতাবিরোধীদের পক্ষ হয়ে তাদের বিস্তর অপরাধ জায়েজ করতে সাফাই গাইতে যাওয়া সু চি এবং তার সাঙ্গপাঙ্গদের নেদারল্যান্ডস এর আইসিজে (International Court of Justice) প্রান্তর থেকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করার দাবি জানাচ্ছি।
এই ব্লগের কোথাও বলিনি যে, পোস্ট শিরোনামে ব্যবহৃত 'বাঙালি মেয়ে' বলে অং সান সু কি বাংলাদেশি নারীদের বুঝিয়েছেন। তার দৃষ্টিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাঙ্গালি। যদিও এটি তার ডাহা মিথ্যাচার। রোহিঙ্গা সম্প্রদায় বাংলাদেশি নন। তারা বাংলাভাষাভাষীও নন। মূলত: রোহিঙ্গা নারীদেন প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি যে কতটা অমানবিক সেটা বুঝানোর জন্যই এই শিরোনাম। সুতরাং এই কথাটি নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলকে অনুরোধ করছি।
ছবি: অন্তর্জাল।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০১