মানুষের সম্মান ও মর্যাদা এবং কাউকে অবজ্ঞা ও উপহাস করার পরিণতি
প্রাককথন; সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষ:
সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ। আল্লাহ পাক মানুষকে বিশেষ জ্ঞান দান করেছেন যা অন্য কোনো মাখলূককে দেননি। জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণে মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব উপাধিতে ভূষিত করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلاً
'নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।' -সূরা বনি ইসরাইল : ৭০
We have honoured the sons of Adam; provided them with transport on land and sea; given them for sustenance things good and pure; and conferred on them special favours, above a great part of our creation.
সৃষ্টিজগতে মানুষই সবচে' সম্মানিত:
এই বিশ্ব জগতে মহান আল্লাহ তাআ'লার সৃষ্ট তামাম জীবের ভেতরে মানুষই সর্বাপেক্ষা সম্মান এবং মর্যাদার অধিকারী। মানুষের চেয়ে অধিক সম্মানের অধিক মর্যাদার আর কেউ নেই। এমনকি আল্লাহ পাকের আরেক সৃষ্টি নিষ্পাপ ফেরেশতাদের চেয়েও মানুষের মর্যাদা বেশি। মানুষ আল্লাহ তাআ'লার অন্যতম সৃষ্টি। আল্লাহ তাআ'লার প্রিয় মাখলূক। বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, আকল দিয়ে, জ্ঞান দিয়ে তিনি তাদের চমকপ্রদ অবয়বে সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠ আসনে বসিয়েছেন। মানুষ আল্লাহ তাআ'লার প্রতিনিধি। মানুষ সৃজনশীল, বুদ্ধিসম্পন্ন এবং দায়িত্বশীল। কূল কায়েনাতের যাবতীয় বস্তুনিচয়কে সৃষ্টি করা হয়েছে মূলত: মানুষের সেবা করার জন্য। তারা মানুষের সেবায় নিত্য নিয়োজিত। এসব দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের মর্যাদা ও অধিকার নিশ্চিত করেছে ইসলাম। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা অসাধারণ সুন্দর করে সৃষ্টি করেছেন মানুষের আকার-আকৃতি-অবয়ব-দৈহিক গঠন। আল্লাহ তাআ'লা ইরশাদ ফরমান,
لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ
'আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে।' -সূরা আত ত্বীন : ৪
We have indeed created man in the best of moulds,
মানুষ সৃষ্টিকর্তার প্রতিনিধি:
মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মানুষকে নিজের প্রতিনিধি বা খলিফা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। মানুষকে কেন্দ্র করেই বিশ্বলোক-বিশাল এই ভূ-ভাগ-বিশ্বচরাচরের সৃষ্টি-উদ্ভব। সৃষ্টিকূলের মধ্যে একমাত্র মানুষই বুদ্ধি-বিবেক এবং জ্ঞানসম্পন্ন প্রাণী। এছাড়া মহান স্রষ্টা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা মানুষকে বিশেষ কিছু ক্ষমতা দিয়ে ধন্য করেছেন, যা অন্য কোনো প্রাণিকে দান করেননি। মানুষকে তিনি বাকশক্তি দিয়েছেন এবং মাধ্যমে যাবতীয় সৃষ্টির ওপর তাকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। চারিত্রিক গুণাবলীর দিক থেকে মানুষকে ফেরেশতার চেয়েও মর্যাদাসম্পন্ন করা হয়েছে। কারণ, ফেরেশতাদের কোনো জৈবিক চাহিদা নেই। মানুষের মাঝে এসব থাকা সত্বেও যারা তাদের চারিত্রিক সততা বজায় রেখে চলতে সক্ষম তাদের ফেরেশতাদের চেয়েও অধিক মর্যাদার স্থান দেয়া হয়েছে। সৃজনশীলতা মানুষের মর্যাদার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আল্লাহ তাআ'লা মানুষকে এমন ক্ষমতা দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন যে, তার আত্মরক্ষা, আত্মোন্নতি বিধানের জন্য সে সবসময় আবিষ্কার ও সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত। প্রাণীর মধ্যে মানুষ একমাত্র দায়িত্বশীল। কারণ একমাত্র তারাই ভদ্রতাপূর্ণ সুশৃঙ্খল সমাজে শান্তি-সৌহার্দ্যের সাথে বসবাস করে। সামাজিক সহমর্মিতা ও সম্প্রীতি শুধু মানুষের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। অধিকন্তু, পার্থিব কৃতকর্মের জন্য মানুষের জন্য নির্ধারিত আছে জান্নাত ও জাহান্নাম। ভালো কাজ করলে রয়েছে জান্নাত আর মন্দ কাজ করলে জাহান্নাম। বুদ্ধি-চেতনা, জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সৃজনশীলতা ও চিন্তা-গবেষনায় মানুষকে দান করা হয়েছে বিশেষ স্বাতন্ত্র্য। এর সাহায্যে সে সমগ্র ঊর্ধ্বজগৎ ও অধঃজগৎকে করায়ত্ব করে নিজের কাজে নিয়োজিত করতে সক্ষম। পবিত্র কুরআনে পাকে বর্ণিত হয়েছে,
أَلَمْ تَرَوْا أَنَّ اللَّهَ سَخَّرَ لَكُم مَّا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَأَسْبَغَ عَلَيْكُمْ نِعَمَهُ ظَاهِرَةً وَبَاطِنَةً وَمِنَ النَّاسِ مَن يُجَادِلُ فِي اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَلَا هُدًى وَلَا كِتَابٍ مُّنِيرٍ
'তোমরা কি দেখ না আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে যাকিছু আছে, সবই তোমাদের কাজে নিয়োজিত করে দিয়েছেন এবং তোমাদের প্রতি তাঁর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নেয়ামতসমূহ পরিপূর্ন করে দিয়েছেন? এমন লোক ও আছে; যারা জ্ঞান, পথনির্দেশ ও উজ্জল কিতাব ছাড়াই আল্লাহ সম্পর্কে বাকবিতন্ডা করে।' -সূরা লুকমান : ২০
Do ye not see that Allah has subjected to your (use) all things in the heavens and on earth, and has made his bounties flow to you in exceeding measure, (both) seen and unseen? Yet there are among men those who dispute about Allah, without knowledge and without guidance, and without a Book to enlighten them!
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে,
وَسَخَّرَ لَكُم مَّا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مِّنْهُ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَاتٍ لَّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
'এবং আয়ত্ত্বাধীন করে দিয়েছেন তোমাদের, যা আছে নভোমন্ডলে ও যা আছে ভূমন্ডলে; তাঁর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে।' -সূরা জাসিয়া : ১৩
And He has subjected to you, as from Him, all that is in the heavens and on earth: Behold, in that are Signs indeed for those who reflect.
এ শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষনা প্রদান করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা ফেরেশতাদের আদম আলাইহিস সালামকে সিজদা করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনুল কারিমের বাচনিকে,
وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلاَئِكَةِ اسْجُدُواْ لآدَمَ فَسَجَدُواْ إِلاَّ إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ
'এবং যখন আমি হযরত আদম (আঃ)-কে সেজদা করার জন্য ফেরেশতাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলীস ব্যতীত সবাই সিজদা করলো। সে (নির্দেশ) পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল।' -সূরা বাকারা : ৩৪
And behold, We said to the angels: "Bow down to Adam" and they bowed down. Not so Iblis: he refused and was haughty: He was of those who reject Faith.
ইসলাম মানুষের মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে:
এমনকি মানুষের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা বিবেচনা করেই তার জান-মাল, বিবেক-সম্ভ্রম, ধর্ম ও বংশ রক্ষা করার জন্য ইসলাম বহু বিধিবিধান প্রণয়ন করেছে। মানুষের ধর্ম রক্ষার জন্য জিহাদের নির্দেশনা; তার জান ও রক্তকে হিফাজত করার জন্য কিসাসের বিধান জারি করেছে। মানুষের সম্মান ও সম্ভ্রম রক্ষা করার জন্য গিবত-শেকায়েত ও পরনিন্দার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মানুষের বংশপরম্পরাকে রক্ষা করার জন্য জিনা-ব্যভিচারের পথ রুদ্ধ করে বৈবাহিক জীবনাচারের নির্দেশ প্রদান করেছে। মানুষের মেধা-মনন, বিবেক-বুদ্ধি সতেজ ও পরিশোধিত রাখতে সকল প্রকারের মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ করেছে। মানুষের সম্পদকে রক্ষা করার জন্য সব রকমের চুরি, ডাকাতি, লুটতরাজ, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি ও প্রতারণার পথ রুদ্ধ করার নির্দেশনা দান করা হয়েছে। মর্যাদার দিক থেকে ইসলাম মানুষকে যেমন সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত করেছে তেমনি দায়িত্ব-কর্তব্যের বিচারেও মানুষের অবস্থানকে রেখেছে সর্বশীর্ষে। সেরা জীব হিসেবে মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপ হিসাব কষে কষে ফেলতে হয়। ইচ্ছে করলেই মানুষ যা খুশি তা করতে পারে না। মানুষের আছে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় বাধা নিষেধ। ইচ্ছা ও কর্মে স্বাধীন হলেও মানুষের দায়বদ্ধতা প্রচুর। মানুষকে নিজের সম্মান ও মর্যাদা সংরক্ষণে যেমন সচেতন হতে হবে ঠিক তেমনি অন্যের সম্মানহানী হয় এমন কাজ থেকেও বিরত থাকতে হবে সদা সর্বদা।
ইসলামে মানুষের ব্যক্তিগত সুনাম ও সম্মান নষ্ট করা তো দূরের কথা বরং তা রক্ষা করার জন্য নিকট ও দূর আত্মীয়সহ সকলের সাথে সদয় আচরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
وَاعْبُدُواْ اللّهَ وَلاَ تُشْرِكُواْ بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالجَنبِ وَابْنِ السَّبِيلِ وَمَا مَلَكَتْ أَيْمَانُكُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يُحِبُّ مَن كَانَ مُخْتَالاً فَخُورًا
'আর উপাসনা কর আল্লাহর, শরীক করো না তাঁর সাথে অপর কাউকে। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় মুসাফির এবং নিজের দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক-গর্বিতজনকে।' -সূরা নিসা : ৩৬
Serve Allah, and join not any partners with Him; and do good- to parents, kinsfolk, orphans, those in need, neighbours who are near, neighbours who are strangers, the companion by your side, the wayfarer (ye meet), and what your right hands possess: For Allah loveth not the arrogant, the vainglorious;-
কাউকে বিদ্রুপ করার অবকাশ নেই ইসলামে:
ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষকে খারাপ নামে ডাকা অথবা কাউকে বিদ্রুপাত্মকভাবে ডাকা উচিত নয়; বরং এর পরিবর্তে সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের সুনাম, মর্যাদা অক্ষত রাখার জন্য যথাযথ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কুরআনুল কারীমে বলা হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِّن نِّسَاء عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
'মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম।' -সূরা হুজুরাত : ১১
O ye who believe! Let not some men among you laugh at others: It may be that the (latter) are better than the (former): Nor let some women laugh at others: It may be that the (latter are better than the (former): Nor defame nor be sarcastic to each other, nor call each other by (offensive) nicknames: Ill-seeming is a name connoting wickedness, (to be used of one) after he has believed: And those who do not desist are (indeed) doing wrong.
অপরের সম্মান রক্ষায় ইসলাম সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়:
ইসলামে মানুষের সুনাম ও সম্মান রক্ষার জন্য অত্যন্ত সতর্কতামূলক বাণী উচ্চারণ করেছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ
'মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু।' -সূরা হুজুরাত : ১২
O ye who believe! Avoid suspicion as much (as possible): for suspicion in some cases is a sin: And spy not on each other behind their backs. Would any of you like to eat the flesh of his dead brother? Nay, ye would abhor it...But fear Allah. For Allah is Oft-Returning, Most Merciful.
ইসলাম অন্যের গৃহে প্রবেশেও শিষ্টাচার শেখায়:
একে অপরের গৃহে প্রবেশ করার বিধান সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَدْخُلُوا بُيُوتًا غَيْرَ بُيُوتِكُمْ حَتَّى تَسْتَأْنِسُوا وَتُسَلِّمُوا عَلَى أَهْلِهَا ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
'হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য গৃহে প্রবেশ করো না, যে পর্যন্ত আলাপ-পরিচয় না কর এবং গৃহবাসীদেরকে সালাম না কর। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।' -সূরা নূর : ২৭
O ye who believe! enter not houses other than your own, until ye have asked permission and saluted those in them: that is best for you, in order that ye may heed (what is seemly).
হযরত আবূ হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের কোন ভাই যাতে করে অন্য মুসলিম ভাইকে ছোট না করে অর্থাৎ তার মান ও সম্মান ক্ষুণ্ন না করে। কেননা প্রত্যেক মুসলিম এর প্রতি অন্য ভাই এর রক্ত, মাল ও সম্মানকে ক্ষুণ্ন করা হারাম করা হয়েছে। (রক্ত দ্বারা উদ্দেশ্য হত্যা করা)।” -সহীহ মুসলিম-৪/১৯৮৬, হাদীস-২৫৬৪
ইসলামের দৃষ্টিতে একজন মুসলমান কর্তৃক অন্যের সুনাম, মর্যাদাকে নষ্ট করা তো দূরের কথা; বরং সর্বদা সে আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকে যে, কখনও সে অন্যকে কষ্ট দিচ্ছে কি-না। যেমন ইকরামা রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, ‘আমার যতদূর মনে পড়ে আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহাকে বলতে শুনেছি, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাত তুলে দু‘আ করতে দেখেছেন। তিনি এই দু‘আ করছিলেন, “হে আল্লাহ! আমি মানুষ, মানুষসুলভ দুর্বলতাবশতঃ আমি যদি তোমার কোন মুমিন বান্দাকে যদি কোনভাবে আঘাত দিয়ে থাকি বা কোনরূপ কষ্ট দিয়ে থাকি তবে এজন্য আমাকে শাস্তি দিও না।’’ -আহমাদ, আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬১০
ইসলামে যেকোন ব্যক্তির সম্মান ও সুনাম রক্ষা করা একটা পবিত্র বিষয় যা অলংঘনীয়। এ সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্জের ভাষণে বলেন, “তোমাদের রক্ত, তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের সম্মান তোমাদের জন্য ঠিক তেমনি পবিত্র, যেমন তোমাদের আজকের এই দিন এই মাস এই শহর পবিত্র।’’ -ইবনে মাজাহ, হা/৩০৫৫
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা অবশ্যই ধারণা থেকে বেঁচে থাক। কেননা ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা। কারো দোষ খুঁজে বেড়িও না, গোয়েন্দাগিরিতে লিপ্ত হয়ো না এবং (বেচা-কেনায়) একে অপরেরকে ধোঁকা দিয়ো না। পরস্পরে হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষ ভাব রেখো না, একজন থেকে আর একজন বিচ্ছিন্ন হয়ে যেও না। বরং সবাই এক আল্লাহর বান্দা হয়ে ভাই ভাই হয়ে যাও।’’ -বুখারী হা/৬০৬৬
আবু দারদা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “আমি কি তোমাদেরকে সিয়াম, সালাত ও সদকার মর্তবা থেকেও শ্রেষ্ঠ বিষয় সম্পর্কে বলব না?’ সবাই আরজ করলেন, ‘আল্লাহর রাসূল! অবশ্যই বলুন।’ তিনি বললেন, ‘বিবাদরতদের মাঝে শান্তি স্থাপন করা। আর জেনে রেখো, পরস্পর কলহ-বিবাদই তো মানুষকে মুড়িয়ে দেয়।’’ -মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ২৭৫০৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৯১৯; জামে তিরমিযী, হাদীস : ২৫০৯
উবাদাহ বিন সামিত রাদিআল্লাহু আনহু ও আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তাঁরা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তুমি কারোর কোনো ধরনের ক্ষতি করো না। তেমনিভাবে তোমরা পরস্পর একে অপরের ক্ষতি করার প্রতিযোগিতা ক[রো না।’’ -ইবন মাযাহ : ২৩৬৯, ২৩৭০
আবু সিরমাহ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি অন্যের ক্ষতি করতে চায়, আল্লাহ তায়ালা তার ক্ষতি করেন। তেমনি ভাবে যে ব্যক্তি অন্যের উপর কঠিন হয় আল্লাহ তায়ালাও তার উপর কঠিন হন।’’-[ইবন মাযাহ : ২৩৭১
মহান আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন বলেন,
لَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
'ধর্মের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।' -সূরা মুমতাহিনা : ৮
Allah forbids you not, with regard to those who fight you not for (your) Faith nor drive you out of your homes, from dealing kindly and justly with them: for Allah loveth those who are just.
إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَى إِخْرَاجِكُمْ أَن تَوَلَّوْهُمْ وَمَن يَتَوَلَّهُمْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
'আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম।' -সূরা মুমতাহিনা : ৯
Allah only forbids you, with regard to those who fight you for (your) Faith, and drive you out of your homes, and support (others) in driving you out, from turning to them (for friendship and protection). It is such as turn to them (in these circumstances), that do wrong.
ইবনে আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়ায রাদিআল্লাহু আনহুকে ইয়েমেনে পাঠানোর সময় বলেন, মাজলুমের বদ-দু‘আকে ভয় কর, কেননা তার বদ-দু‘আ ও আল্লাহর মাঝখানে কোন বাধা নেই।” -তিরমিযী : ১৯৬৩
মানবতার লালন ও সংরক্ষণের প্রতি ইসলামের এতই সুস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি যে যুদ্ধাবস্থায়ও সে মানবাধিকারের প্রতি পুরোপুরি লক্ষ্য রাখার শিক্ষা দেয়। প্রথম খলিফা আবু বকর রাদিআল্লাহু আনহু যখন সিরিয়ায় সেনা পাঠান তখন তাদের ১০টি নির্দেশ দিয়ে দেন। সে নির্দেশ ছিল এই :
১. নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের কেউ যেন হত্যা না করে,
২. লাশ যেন বিকৃত করা না হয়,
৩. আশ্রম, প্যাগোডা ও কতারিতে উপাসনারত সন্ন্যাসী ও তপস্বীদের কষ্ট দেয়া যাবে না। কোনো উপাসনালয় ভাঙা যাবে না,
৪. ফলবান বৃক্ষ যেন কেউ না কাটে এবং ফসলের ক্ষেত যেন পোড়ানো না হয়,
৫. জনবসতিগুলোকে (সন্ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে) যেন জনশূন্য না করা হয়,
৬. পশুদের যেন হত্যা করা না হয়,
৭. প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা চলবে না,
৮. যারা আনুগত্য স্বীকার করবে তাদের জানমালকে মুসলমানদের জানমালের মতো নিরাপত্তা দিতে হবে,
৯. গণিমতের সম্পত্তি যেন আত্মসাৎ করা না হয় ও
১০. যুদ্ধে যেন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা না হয়। -মুসান্নাকে ইবনে আবি শায়বাহ : ষষ্ঠ খণ্ড, পৃ: ৪৮৭-৪৮৮
ইসলামী রাষ্ট্রে শাসকের জন্য কারো আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা কতটুকু এবং এই ক্ষেত্রে নাগরিকের অধিকার কতটুকু উমার রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর একটি ঘটনা থেকে তা সহজে অনুমান করা যায়। আব্দুর রহমান ইবনু আওফ রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদা তিনি উমার রাদিআল্লাহু আনহুর সাথে মদীনার প্রজা সাধারণের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য বের হলেন। হাটতে হাটতে হঠাৎ একটি বাড়ির ভেতরে থাকা প্রদীপ তাদের দৃষ্টিগোচর হল। অতঃপর তারা সেদিকে যেতে লাগলেন। তারা বাড়ির নিকটবর্তী হয়ে দেখলেন দরজা আটকানো একটি ঘরের মধ্যে একদল লোক রয়েছে এবং সেখানে উচ্চস্বরে আওয়াজ হচ্ছে। তখন উমার রাদিআল্লাহু আনহু আব্দুর রহমানের হাত ধরে বললেন, তুমি কি জান এ বাড়ীটি কার? তিনি বললেন, না। উমার রাদিআল্লাহু আনহু বললেন, এ বাড়ীটি রাবী‘আহ বিন উমাইয়া ইবনে খালাফের। হয়তো তারা মদ পান করছে, তুমি কি মনে কর? আব্দুর রহমান বললেন, আমি মনে করি, আমরা আল্লাহর নিষেধকৃত পন্থায় এখানে এসেছি। আল্লাহ তাআ'লা আমাদেরকে নিষেধ করে বলছেন, ‘তোমরা গোয়েন্দাগিরি কর না” [সূরা হুজুরাত : ১২] অথচ আমরা গোয়েন্দাগিরি করছি। একথা শুনে উমার রাদিআল্লাহু আনহু তাদের ছেড়ে ফিরে আসলেন।” -মুছান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হা/১৮৯৪৩; হাকেম হা/৮১৩৬
মানবতা ও নৈতিকতার কোনো স্তরেই নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি ও অহেতুক রক্তপাতকে সমর্থন করা হয় না। হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য, প্রতিশোধ গ্রহণের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য যারা নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে তারা মানবতাবর্জিত ও সভ্যতার শত্রু। শান্তি, সাম্য ও মানবিক ধর্ম ইসলাম মানুষের জানমাল রক্ষা করার জন্য সব ধরনের জুলুম, অন্যায় ও রক্তপাত নিষিদ্ধ করেছে। ইসলাম নিরপরাধ মানুষ হত্যা করাকে শিরকের পর বড় অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কবিরা গোনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।” -বুখারি : ৬৮৭১, মুসলিম : ৮৮
নিরীহ মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার চেয়ে ভয়াবহ পাপ আর সমাজে নেই। ইসলামী শরীয়তে পৃথিবীর সব মানুষ মিলে যদি একটি অন্যায় হত্যাকা- ঘটায়, তবে কিয়ামতের দিন সবাইকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যদি আসমান ও জমিনের সব অধিবাসী একজন মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যার জন্য একমত হয়, তবে আল্লাহ তাদের সবাইকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।” -মুসনাদে আহমদ
চূড়ান্ত বিচারের দিনে অন্যায় হত্যাকান্ডের মোকদ্দমা দিয়েই বিচারকার্য শুরু হবে। “কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফায়সালা হবে তা হলো, রক্তপাত বা হত্যা সম্পর্কিত।” -বুখারি : ৬৩৫৭
নিরপরাধ মানুষ হত্যাকারীকে দুনিয়াতেও মৃত্যুদণ্ড বা অর্থদণ্ডের মতো কঠোর শাস্তি ভোগ করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,
وَلاَ تَقْتُلُواْ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللّهُ إِلاَّ بِالحَقِّ وَمَن قُتِلَ مَظْلُومًا فَقَدْ جَعَلْنَا لِوَلِيِّهِ سُلْطَانًا فَلاَ يُسْرِف فِّي الْقَتْلِ إِنَّهُ كَانَ مَنْصُورًا
'আর তোমরা সেই জীবনকে হত্যা কোরো না, যা আল্লাহ হারাম করেছেন- সংগত কারণ ছাড়া। যে অন্যায়ভাবে নিহত হয়, আমি অবশ্যই তার অভিভাবককে (মৃত্যুদণ্ড, অর্থদণ্ড বা ক্ষমার) অধিকার ও ক্ষমতা দান করেছি। সুতরাং এ ব্যাপারে সে যেন সীমা লঙ্ঘন না করে। নিশ্চয়ই সে হবে সাহায্যপ্রাপ্ত।' -সূরা বনি ইসরাইল : ৩৩
Nor take life - which Allah has made sacred - except for just cause. And if anyone is slain wrongfully, we have given his heir authority (to demand qisas or to forgive): but let him nor exceed bounds in the matter of taking life; for he is helped (by the Law).
দুনিয়ার শাস্তি ভোগ করার পরও পরকালে অন্যায় হত্যাকারীর জন্য রয়েছে ভীষণ শাস্তি। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ أَن يَقْتُلَ مُؤْمِنًا إِلاَّ خَطَئًا وَمَن قَتَلَ مُؤْمِنًا خَطَئًا فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ وَدِيَةٌ مُّسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ إِلاَّ أَن يَصَّدَّقُواْ فَإِن كَانَ مِن قَوْمٍ عَدُوٍّ لَّكُمْ وَهُوَ مْؤْمِنٌ فَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةٍ وَإِن كَانَ مِن قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُمْ مِّيثَاقٌ فَدِيَةٌ مُّسَلَّمَةٌ إِلَى أَهْلِهِ وَتَحْرِيرُ رَقَبَةٍ مُّؤْمِنَةً فَمَن لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ شَهْرَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ تَوْبَةً مِّنَ اللّهِ وَكَانَ اللّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا
'মুসলমানের কাজ নয় যে, মুসলমানকে হত্যা করে; কিন্তু ভুলক্রমে। যে ব্যক্তি মুসলমানকে ভূলক্রমে হত্যা করে, সে একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং রক্ত বিনিময় সমর্পন করবে তার স্বজনদেরকে; কিন্তু যদি তারা ক্ষমা করে দেয়। অতঃপর যদি নিহত ব্যক্তি তোমাদের শত্রু সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে এবং যদি সে তোমাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন সম্প্রদায়ের অন্তর্গত হয়, তবে রক্ত বিনিময় সমর্পণ করবে তার স্বজনদেরকে এবং একজন মুসলমান ক্রীতদাস মুক্ত করবে। অতঃপর যে ব্যক্তি না পায়, সে আল্লাহর কাছ থেকে গোনাহ মাফ করানোর জন্যে উপর্যুপুরি দুই মাস রোযা রাখবে। আল্লাহ, মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।' -সূরা আন-নিসা : ৯২
Never should a believer kill a believer; but (If it so happens) by mistake, (Compensation is due): If one (so) kills a believer, it is ordained that he should free a believing slave, and pay compensation to the deceased's family, unless they remit it freely. If the deceased belonged to a people at war with you, and he was a believer, the freeing of a believing slave (Is enough). If he belonged to a people with whom ye have treaty of Mutual alliance, compensation should be paid to his family, and a believing slave be freed. For those who find this beyond their means, (is prescribed) a fast for two months running: by way of repentance to Allah. for Allah hath all knowledge and all wisdom.
وَمَن يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا
'যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন, তাকে অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।' -সূরা আন-নিসা : ৯৩
If a man kills a believer intentionally, his recompense is Hell, to abide therein (For ever): And the wrath and the curse of Allah are upon him, and a dreadful penalty is prepared for him.
বরং এমন অত্যাচারী ব্যক্তি কিয়ামতের দিন দ্বিগুণ শাস্তির সম্মুখীন হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالَّذِينَ لَا يَدْعُونَ مَعَ اللَّهِ إِلَهًا آخَرَ وَلَا يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَلَا يَزْنُونَ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا
'(দয়াময় রহমানের বান্দা তারাই) যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্যের ইবাদাত করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সংগত কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচারে লিপ্ত হয় না। যারা এ কাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন হবে।' -সূরা আল-ফুরকান : ৬৮
Those who invoke not, with Allah, any other god, nor slay such life as Allah has made sacred except for just cause, nor commit fornication; - and any that does this (not only) meets punishment.
يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا
'কিয়ামাতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ হবে এবং তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে।' -সূরা আল-ফুরকান : ৬৯
(But) the Penalty on the Day of Judgment will be doubled to him, and he will dwell therein in ignominy,-
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “হত্যাকৃত ব্যক্তি কিয়ামতের দিবসে হত্যাকারীর মাথার অগ্রভাগ নিজ হাতে ধরে এমনভাবে নিয়ে আসবে যে হত্যাকারীর গলার রগসমূহ থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকবে। তখন হত্যাকৃত ব্যক্তি এ কথা বলতে বলতে হত্যাকারীকে আরশের কাছে নিয়ে আসবে ‘হে প্রভু! সে আমাকে হত্যা করেছে।” -মুসনাদে আহমদ : ২৫৫১, তিরমিজি : ২৯৫৫
কাউকে উপহাস করা উচিত নয়:
কাউকে উপহাস করা যাবে না। অনর্থক কথা বলার ফলে প্রায়শই উপহাসের বিষয়গুলো নিজের জ্ঞাতে কিংবা অজ্ঞাতে কথায় কথায় প্রকাশ হয়ে পড়ে। এই কারণে প্রয়োজনাতিরিক্ত কথাও অনর্থক কথার অন্তুর্ভুক্ত। সাধারণ কথা থেকে টেনে শয়তান গোনাহের দিকে কখন যে নিয়ে যাবে তা টেরও পাওয়া যাবে না। সিধেসাদা ও সরল প্রকৃতির কিছু মানুষ সকল কালে সকল সমাজেই থেকে থাকে। এদেরকে নিয়ে কিছু মানুষ হাসি-তামাশা করে থাকেন, বিষয়টা এমন যে, এই সরল সোজা মানুষেরাই যেন একটা কৌতুক এবং হাসি তামাশার বিষয়বস্তু। কিন্তু কথা হল, সে কৌতুক যদি এই পরিমাণে সীমাবদ্ধ হয় যাতে সে খুশি থাকে তাহলে তা আপত্তিকর নয়। পক্ষান্তরে এই হাসি তামাশা ও কৌতুক যদি তাকে অতিষ্ট করে তোলার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সে যদি বিব্রতবোধ করে, লজ্জিত হয়, বিরক্তবোধ করে, যা তার অন্তরে কষ্ট দেয়, তার খারাপ লাগে, তাহলে এমতাবস্থায় উক্ত কৌতুক ও রহস্য অনেক বড় গোনাহের কারণ হবে। এই জাতীয় ঠাট্টা মশকরা নিসন্দেহে নিন্দনীয় এবং বর্জনীয়।
কারণ, এটা বান্দার হক্বের সাথে সম্পৃক্ত। পূর্বোক্ত আয়াতে কারিমায় আল্লাহ তাআ'লা মুআশারাতের দিকনির্দেশনামূলক বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ ফরমান,
لا يسخر قوم من قوم
'কেউ যেন কারো উপহাস না করে।'
عسى ان يكونوا خيرا منهم
'হতে পারে যাদেরকে উপহাস ও তাচ্ছিল্য করা হচ্ছে তারা (আল্লাহর নিকট) তোমাদের থেকে উত্তম।'
এরপর আল্লাহ তাআ'লা বলেন, ولا نساء من نساء 'অনুরূপ কোনো মহিলা অপর মহিলাকে তাচ্ছিল্য করবে না।' عسى ان يكن خيرا منهن 'হতে পারে তাচ্ছিল্যকৃত মহিলা তোমাদের চেয়ে আল্লাহর নিকট উত্তম।'
কুরআনুল কারীমের এই আয়াতে আল্লাহ তাআ'লা সুস্পষ্টভাবে কাউকে নিয়ে উপহাস করতে শক্তভাবে নিষেধ করেছেন।
এই আয়াতে মহিলাদেরকে বিশেষভাবে দ্বিতীয়বার উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও আয়াতের প্রথম অংশের দ্বারাই মহিলা-পুরুষ সকলে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছে। তারপরও মহিলাদের ব্যাপারটা বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ আল্লাহ তাআ'লাই সম্যক অবগত।
তবে এর দুটি হিকমত বোঝা যায়। যেমন-
১. সাধারণত মহিলাদের মধ্যে এ অভ্যাসটি বেশি পরিলক্ষিত হয়,তাই তাদেরকে বিশেষভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
২. যেহেতু পুরুষদের মজলিস ভিন্ন হবে এবং মহিলাদের মজলিস ভিন্ন হবে, তাই পৃথক পৃথক উল্লেখ করে বোঝানো হয়েছে যে পুরুষ-মহিলার মজলিস ও চলাফেরা ভিন্ন ভিন্ন হওয়া উচিত। আজকাল যেরূপ নারী-পুরুষের যে অবাধ মেলামেশা এ আয়াতে ইঙ্গিতে তা নিষেধ করা হয়েছে।
কাউকে ঠাট্টা ও উপহাস করা কবীরা গোনাহ:
উক্ত আয়াতে কাউকে উপহাস করাকে সুস্পষ্ট গোনাহ সাব্যস্ত করা হয়েছে। বিশেষভাবে এ কথাও বোঝানো হয়েছে যে, তোমরা অন্যকে যে তাচ্ছিল্য করছো, এর দ্বারা তোমরা নিজেকে বড় ও উত্তম ভেবেই অপরকে তাচ্ছিল্য করছো। এ তো চরম অহংকার যে নিজেকে উত্তম ভেবে অপরকে তুচ্ছ ভাবা হচ্ছে।
তবে স্মরণ রেখো, আল্লাহ তাআ'লা বলছেন, 'ওই সহজ-সরল সিধেসাদা যে ব্যক্তিকে তুমি তাচ্ছিল্য করছো, সে আল্লাহ তা’আলার নিকট কতটুকু মর্যাদাশীল, তা তুমি জানো না। সুতরাং, কারো শুধু চেহারা দেখেই তুমি তো বলতে পারো না যে, আল্লাহ তা’আলার সাথে তার সম্পর্ক কতটুকু গভীর।'
প্রত্যেক বান্দার সঙ্গেই আল্লাহ তা’আলার বিশেষ একটি সম্পর্ক থাকে, এর মাঝে অনুপ্রবেশ করার কি অধিকার তোমার? তুমি কি জানো, সে আল্লাহর সাথে কী সম্পর্ক গড়ে নিয়েছে? তোমার কি জানা আছে, সে আল্লাহর কত প্রিয়? কারো শুধু বাহ্যিক অবয়ব দেখেই কোনো মন্তব্য করা যাবে না। কেননা, মানুষ জানে না কার সাথে আল্লাহর সাথে আন্তরিকভাবে কতটুকু গভীর সম্পর্ক।
কাউকে জাহান্নামী বলা জায়েয নেই:
কিছু লোককে দেখা যায়, কথায় কথায় তারা অপরকে জাহান্নামী বলে বসে। কারো ব্যাপারে কোনো দোষ দৃষ্টিগোচর হলেই বলে দেয় যে, সে তো জাহান্নামী, তার অমুক অমুক দোষ। নাউযুবিল্লাহ! আস্তাগফিরুল্লাহ! তারা ঠিক জানেও না যে, কথাগুলো কতটা মারাত্মক! জান্নাত-জাহান্নামের ফয়সালা দেয়ার ক্ষমতা তো একমাত্র আল্লাহ তা’আলার হাতে। তো সে এই ফয়সালা দেয়ার অধিকার কোত্থেকে পেল? তাকে এতবড় দু:সাহস কে দিল? হতে পারে, 'জাহান্নামি আখ্যায়িত ব্যক্তি' তাওবা করে জান্নাতি হয়ে যাবেন। সুতরাং, কাউকে এ ধরনের কথা কোনো অবস্থায়ই বলা উচিত নয়।
ব্যক্তির অন্তরের অবস্থা আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন। বাহ্যিকভাবে কাউকে খারাপ, বদকার, ফাসেক মনে হলেও হযরত হাকীমুল উম্মত থানভী (রহ.)-এর পরামর্শ হলো, তার ব্যাপারে এই চিন্তা করবে যে, হতে পারে আল্লাহ তা’আলা তার ভেতরে এমন কোনো ভালো গুণ রেখেছেন, যার বদৌলতে তার সাথে আল্লাহর সাথে এমন মজবুত সম্পর্ক হয় যার উসিলায় তোমার চেয়ে মর্যাদায় সে আগে বেড়ে যাবে। আজ যদিও মন্দ মনে হচ্ছে, কাল হয়তো আল্লাহর রহমতে এমন পরিবর্তন হবে যে সবাইকে পেছনে ফেলে দেবে।
কাউকে দেখে নিজেকে বড় মনে করা, তার থেকে নিজেকে উত্তম মনে করা এবং ওই ব্যক্তিকে ছোট মনে করাকেই তাকাব্বুর বা অহংকার বলা হয়। অহংকার মারাত্মক ক্ষতিকর একটি জিনিস।
আল্লাহ তা’আলা দয়া করে সকল মুমিনকে তা থেকে হেফাজত করুন।
গোনাহগার অপরাধীকে তাচ্ছিল্য করাও হারাম:
এ জন্য আল্লাহ তা’আলার উক্ত ইরশাদ ব্যাপকভাবে সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য –
عسى ان يكون خيرا منهم
“হতে পারে ওই সব লোক তাদের থেকে উত্তম।” বাক্যটি ব্যাপক,মুত্তাকী পরহেযগার, গোনাহগার সকলেই অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপ- يا يسخر قوم من قوم বাক্যটিও ব্যাপক অর্থবোধক।
কেউ কারো উপহাস যেন না করে চাই উপহাসকারী যত বড় মুত্তাকী-পরহেযগারই হোক এবং উপহাসকৃত ব্যক্তি যত বড় ফাসেক ও গোনাহগারই হোক না কেন।
হ্যাঁ,এটা জায়েয আছে যে অমুক ব্যক্তির এ কাজটি গোনাহের কাজ এবং তা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইবে। কিন্তু গোনাহের কারণে গোনাহগার ব্যক্তিকে তাচ্ছিল্য ও অপমান করা বৈধ নয়।
কথাটি এভাবে বুঝতে পারো গোনাহগারকে মূলত অসুস্থ মনে করো। কেউ যদি কোনো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তার ওপর দয়ার আচরণ করা হয়। তার সাথে রাগ করা যাবে না,তাচ্ছিল্য ও অপমান করা যাবে না।
তো গোনাহগার বেচারাও একজন গোনাহের রোগী। কে বলতে পারে,হয়তো আল্লাহর নিকট তার কোনো কাজ পছন্দনীয় হয়ে আছে,যার বদৌলতে তাকে মর্যাদাবান করে দেবেন।
এ জন্য কখনো কাউকে তাচ্ছিল্য ও উপহাস করা যাবে না। তুমি বাহ্যিকভাবে যত বড় মুত্তাকী-পরহেযগারই হও, কিন্তু হতে পারে তোমার চেয়ে ওই উপহাসকৃত ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অনেক মর্যাদাবান।
ইঙ্গিতেও কাউকে উপহাস করা বৈধ নয় :
কাউকে ইশারা-ইঙ্গিতে উপহাস করাও এর অন্তর্ভুক্ত। কারো কথাবার্তা,চালচলন বা গঠন-প্রকৃতি নিয়ে টিকা-টিপ্পনী মারা ও হাসাহাসি করা,যার কারণে সে কষ্ট পায়,তাও হারাম।
এক হাদীসে এসেছে,একদা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জনৈকা স্ত্রীর ব্যাপারে আলোচনা প্রসঙ্গে ঈঙ্গিতে তাঁর গঠন বেঁটে হওয়ার কথা বললেন,শুধুমাত্র হাতের ইশারায় তা বলেছিলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে বললেন,আয়েশা! তুমি মারাত্মক ভুল করেছ। হযরত আয়েশা (রা.)-কে কঠোরভাবে নিষেধ করলেন যেন কখনো কারো কোনো বিষয় নিয়ে তাচ্ছিল্য না করা হয়। যেরূপ সামনাসামনি কারো কোনো বিষয় নিয়ে এমন কথা বলা,যাতে ওই লোক কষ্ট পায়,তা তো মারাত্মক গোনাহ। সাথে সাথে উক্ত ঠাট্টা ও উপহাস যদি তার সামনে না করে তার অনুপস্থিতিতে করা হয় তাহলে তাতে দ্বিগুণ গোনাহ। উপহাস করার গোনাহ এবং গীবত করার গোনাহ।
হাসি-রহস্য ও উপহাসের মাঝে বিস্তর পার্থক্য:
কখনো কখনো বন্ধুদের মজলিসে পরস্পর হাসি-মশকরা হয়ে থাকে,যাতে এ কথা নিশ্চিত হয় যে এর দ্বারা কোনো সাথী মনে কষ্ট পায় না এবং ওই সব কথায় কেউ অপমান বোধ না করা নিশ্চিত হয় তাহলে তা বৈধ।
কিন্তু যদি এই সম্ভাবনা থাকে যে এর দ্বারা কারো মনে কষ্ট আসতে পারে কিংবা কেউ অপমান বোধ করবে তাহলে এ ধরনের হাসি-তামাশা কখনো বৈধ হবে না।
কাউকে উপহাস করার পরিণতি ভয়ংকরঃ
একটি হাদীসে এসেছে,যারা অন্য কারো উপহাস করে,তারা তো এই উপহাস করে বসেই থাকে,কিন্তু তাদের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। আখিরাতে তাদের সাথেও এ ধরনের উপহাস করা হবে। জান্নাতের দরজা খুলে তাদেরকে জান্নাতের দিকে ডাকা হবে,কিন্তু তারা যখন এগিয়ে এসে দরজা দিয়ে ঢুকতে যাবে,অমনিই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে এবং তারা ফিরে যাবে। এরপর পুণরায় দরজা খুলে তাদেরকে ডাকা হবে,আবার যেইমাত্র তারা এগিয়ে এসে ঢুকতে যাবে তখনই দরজা পুনরায় বন্ধ করে দেওয়া হবে। এভাবেই তার সাথে বারবার উপহাস করতে থাকবে। একপর্যায়ে সে নিরাশ হয়ে আর জান্নাতের দিকে যাবে না। এই শাস্তি এই জন্যই যে তুমি দুনিয়ায় তোমার কথাবার্তায় কাউকে উপহাস করে কষ্ট দিয়েছিলে এখন দেখো এর মজা কী রূপ।
এ জন্যই সাবধান হওয়া উচিত,যেকোনো কথা বলার আগে মেপেজুখেচিন্তাভাবনা করেই তবে বলতে হবে।
রহস্য ও কৌতুকের সীমারেখা:
কেউ কেউ মানুষের উপহাস করাকে সাধারণ রহস্য ও কৌতুকের অন্তর্ভুক্ত মনে করে থাকে। অথচ উভয়ের মাঝে বিস্তর ব্যবধান।
হাসি-রহস্য হচ্ছে ওই সব কথাবার্তা,যার দ্বারা সকলের মনে প্রফুল্লতা আসে।
হযরত রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও তা প্রমাণিত। তবে শর্ত হলো, এ ক্ষেত্রে কোনো মিথ্যা ও অসারতার আশ্রয় নেওয়া যাবে না, কাউকে অপমান করা যাবে না। তাহলে তা বৈধ।
একটি হাদীসে এসেছে, জনৈকা বৃদ্ধা মহিলাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোনো বৃদ্ধা জান্নাতে যাবে না। এতদশ্রবণে বৃদ্ধা মহিলা কান্না আরম্ভ করল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আসল কথা হলো বৃদ্ধ অবস্থায় কেউই জান্নাতে যাবে না। অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশের সময় আল্লাহ তা’আলা সকলকে যৌবন অবস্থা ফিরিয়ে দেবেন।
তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওই বৃদ্ধার সাথে রহস্য করতে গিয়ে কথাটি একটু ঘুরিয়ে বলেছেন,যা বৃদ্ধা বুঝতে পারেনি। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কথায় অসত্যের মিশ্রণ হয়নি এবং ওই বৃদ্ধার মনে কষ্ট বা সম্ভ্রমহানিও হয়নি।
অনুরূপ একটি হাদীসে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর কাছে এসে বললেন, তোমাকে আমি একটি উটের বাচ্চা দেব তখন লোকটি বলল, হুজুর! আমি তো বাহনের উট চেয়েছি, বাচ্চা দিয়ে কী কাজ হবে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বাহনের উপযুক্ত বড় উটটিও তো কোনো একটি উটনীর বাচ্চা হবে।
সামান্য সময়ের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটির সাথে রহস্য করলেন। কিন্তু এতে কোনো অসত্যের আশ্রয় নেওয়া হয়নি এবং কাউকে কষ্টও দেওয়া হয়নি। এসব অবশ্যই বৈধ।
তবে এমন বৈধ কৌতুকও মাঝেমধ্যে হয়ে গেলে মন্দ নয়, কিন্তু নিয়মিত এতে লিপ্ত হয়ে যাওয়াও কাম্য নয়। মাঝেমধ্যে হলে ভালো।
তবে অবশ্যই ধর্তব্য যে এসব কৌতুক রহস্যের মধ্য দিয়ে কোনো মিথ্যার প্রচার যেন না হয়, কারো প্রতি দোষারোপ বা গীবত না হয়। সর্বোপরি কেউ যেন কষ্ট না পায়। অন্যথায় তা মারাত্মক গোনাহ হিসেবে বিবেচিত হবে।
সারকথা হলো, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের উঠাবসা, চলাফেরা ও কথাবার্তা লাগাতার চলতে থাকে। মুখ দিয়ে কী বের হচ্ছে এর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, এতে কি কারো মনে কষ্ট দেওয়া হয়ে যাচ্ছে কি না, তারও খবর নেই। কী হবে এর পরিণতি।
পরিণতি সম্বন্ধে বেখবর হওয়া কখনো উচিত নয়। দুনিয়ার কাজকারবারে লিপ্ত হয়ে আখিরাতকে ভুলে যাওয়া অত্যন্ত বোকামি।
এ কথা স্মরণ রাখা উচিত, দুনিয়া থেকে আমার চলে যেতে হবে, আল্লাহর সামনে অবশ্যই দাঁড়াতে হবে। প্রতিটি কাজ ও কথার জন্য আমার জবাবদিহি করতে হবে।
অসতর্কতা ও গাফিলতিতে আমার থেকে যেন এমন কোনো কথা ও কাজ প্রকাশ না পায়,যার ফলে আখিরাতে আমার পরিণতি খারাপ হয়। এ জন্য সর্বদা অন্তরে আল্লাহ তা’আলাকে স্মরণ রাখবে। আল্লাহর নিয়ামতসমূহের শুকরিয়া জ্ঞাপন করবে।
শেষের কথা:
কথা ও কাজে সর্বদা সতর্কতার সাথে লক্ষ্য রেখে চলতে হবে। সকল ক্ষুদ্রতা পরিহারে আল্লাহ তাআ'লার নিকট তাওফিকপ্রার্থনা করতে হবে। আল্লাহ তাআ'লার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত বান্দা- আম্বিয়ায়ে কেরাম, সাহাবায়ে কেরাম এবং নেককার ওলী আউলিয়াগনের জীবনাচরণ অধ্যায়ন করতে হবে। এটি আখিরাতের ফিকির এবং আল্লাহ তাআ'লার স্মরণ লাভের অন্যতম মাধ্যম। আর আল্লাহ তাআ'লার স্মরণ যার অন্তরে সদা বিদ্যমান, সকল মানুষকে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে, পৃথিবীতে আল্লাহ তাঅা'লার প্রিয় প্রতিনিধি হিসেবে সম্মান এবং মর্যাদার চোখে দেখা তার পক্ষেই সম্ভব। আল্লাহ তাআ'লা নিজ দয়ায় আমাদের সকলকে এসবের তাওফিক দান করুন।
এর বিপরীতে কাউকে অবজ্ঞা ও উপহাস করার পরিণতি অনুধাবন করে সেই মোতাবেক জীবন যাপন করার তাওফিক দান করুন। আর যেহেতু মানবসমাজে কোনো রকম অশান্তি সৃষ্টি, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, হানাহানি, উগ্রতা, বর্বরতা, সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ড কোনো বিবেকবান ও ধর্মপ্রাণ মানুষের কাম্য নয় সেহেতু আল্লাহ তাআ'লা দয়াপূর্বক আমাদের সকলকে এসব গর্হিত কাজ থেকে বিরত থেকে তাঁর প্রিয় বান্দা হওয়ারও তাওফিক দান করুন।
কেন এই পোস্ট:
দীর্ঘ পোস্ট পাঠের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। এই পোস্টটি আমার অত্যন্ত প্রিয় মানুষ, সুলেখক ভুয়া মফিজ ভাইকে নিবেদন করছি। তার একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই পোস্টের চিন্তা মাথায় আসে। তার জন্য অভিনন্দন এবং শুভকামনা।
ছবি: অন্তর্জাল।